'তুই এ্যাতো ছ্যাচ্চোড়
ক্যান রে ফরিদ? তোর কি
একটু লজ্জাও নাই?’
প্রশ্নের উত্তর খোঁজার
বা দেবার চেষ্টা করে না
ফরিদ। ও এখন ব্যস্ত। ওর
ডান হাতের লাড্ডুটা
খাওয়া শেষ হয়েছে। সরু
জিভ দিয়ে বাম হাতের
বাতাসাটা চেটে নিতে
নিতে ফরিদ নাভির নিচে
নেমে যাওয়া প্যান্ট
টেনে ওপরে তুলছে।
ফরিদের চিকন কোমর থেকে
বারবার প্যান্ট নেমে
যায়। ওর ফুলপ্যান্টটা
ঢিলা ধরনের। স্কুলে
পঞ্চম শ্রেণির পোশাক
ছিল এই প্যান্ট আর
আকাশি রঙের শার্ট। ষষ্ঠ
শ্রেণিতে উঠে নতুন
পোশাক পাওয়ায় পুরনোটা
ঘরে পরতে বলেছে মা।
কদিন জ্বরে ভোগায় ওর
কোমর আজ সেই প্যান্টও
ধরে রাখতে পারছে না।
বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব দেখে
বাইরে বের হবার আগে মা
বলেছে, এটা পরে যা, নয়তো
আবার সর্দি লাগবে।
মায়ের কথা খুব মেনে চলে
ফরিদ। বন্ধুর কথাও।
কেবল খাওয়ার জিনিস
সামনে এলেই সব হিসেব
কেমন গুলিয়ে যায় ওর।
আজ খাওয়ার ভাবনাতেই
একটু আগে আগে বাড়ি থেকে
বের হওয়া। পূজার
মন্ডপসজ্জা দেখতে সকলে
সন্ধ্যায় ভিড় করে,
ভিড়ের মধ্যে ভাল করে
খাওয়া যায় না। তাহেরকে
ধরেবেঁধে ও তাই
মৈনাকদের বাড়িতে নিয়ে
গেছে। মৈনাক ওর একেবারে
আপন বন্ধু। ক্লাসে দুই
বন্ধু টিফিন
পাল্টাপাল্টি করে খায়।
মাঝেমাঝে বেগুনি, চপ,
পাঁপড় সংখ্যায় একটু
বেশি করেই আনে মৈনাক।
স্কুল ছুটির আগেই সে
প্রাণের বন্ধুকে পূজার
মিষ্টান্ন খাওয়ার
নিমন্ত্রণ জানিয়ে
রেখেছে।
হাতের মিষ্টিটুকু
ফুরিয়ে যাওয়ায় কেমন যেন
উদাস উদাস লাগছে
ফরিদের। পূজা কি আজই
শেষ?
‘কত নোলা রে তোর? রা-ই
করোছ না?’
প্রশ্নের জবাব না পেয়ে
উনুনের গনগনে আঁচে ভাজা
হচ্ছে তাহেরের মগজ।
এমনিতে ও খুব ঠান্ডা
মাথার মানুষ। মা বলে,
ঠান্ডা মানুষ গরম কম হয়
আর একবার গরম হলে
ঠান্ডা হতে দেরি হয়।
তাহেরের বাবা এমন
মানুষ। এই যে কদিন আগেই
এক কান্ড হলো,
প্রতিবেশী ইরফান চাচা
বাড়ির গাঁথুনি করার সময়
কিছুতেই রাস্তার জন্য
জায়গা ছাড়বে না।
মিটিংয়ে তর্ক-বিতর্কের
সময় হঠাৎ বাবা রেগে হলো
আগুন, রাস্তার ধারে
থাকা ইট নিয়ে ইরফান
চাচার দিকে গেল তেড়ে।
সকলে বাবাকে টেনে না
ধরলে রক্তারক্তি কাণ্ড
হতো। মা বলে, তাহের ওর
বাবার মতো। রাগ হলে
একেবারে আগুন।
ডান হাতের কনু্ই দিয়ে
নির্বোধ বন্ধুর পেটে
গুঁতো মারার চেষ্টা
ব্যর্থ হলে রাগ আরও
বাড়তে শুরু করে
তাহেরের।
‘কথা বলছিস না ক্যান?
ছোঁচা কোথাকার!’
‘কীসের ছোঁচামি রে?’
‘ওহ এখন কিছু জানস না,
না? মৈনাকের মা দিলো আর
তুই মুখে পুইরা দিলি!
জানস না, ওরা প্রসাদ খায়,
হিন্দুদের বাড়ির জিনিস
পূজার দিনে খাইতে হয়
না।’
‘সর, যা…যা। খাইলে কী
হয়?’
‘গুনাহ হয়।'
গুনাহ শব্দটায় বিশেষ
জোর দিয়ে তাহের বন্ধুর
দিকে তাকায়। ও চিমটি না
কাটলে আরেকটু হলে ফরিদ
মৈনাকদের বাড়ির
ঠাকুরের সামনে রাখা
ফলের থালাতেও হাত দিয়ে
ফেলতো। চিমটি দিয়েও কি
রক্ষা আছে? মৈনাকের বড়
দিদি বড় একটা কাঁসার
থালাতে করে গাদি গাদি
বাতাসা, লাড্ডু, নাড়ু
ওদের নাকের সামনে ধরতেই
ফরিদ দুই মুঠো ভরে
ফেলেছে। এখন ওর
প্যান্টের পকেট
হাতড়ালেও এক-আধখানা
নাড়ু-বাতাসা পাওয়া
যাবে।
ফরিদ দাঁতে দাঁতে শব্দ
করে কী একটা খাচ্ছে।
তাহের বন্ধুর দিকে
তাকায়। ওর চোখ বলছে,
পারলে এক্ষুনি ও
বন্ধুকে দিয়ে কুলকুচি
করাবে। ফরিদ বন্ধুর
আগুন দৃষ্টিকে বিশেষ
পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে
হচ্ছে না।
শান্ত ভঙ্গিতে ফরিদ
একবার বন্ধুর দিকে
তাকায় তারপর তাহেরের
হাতের বাতাসা দুটো ছোঁ
মেরে নিতে নিতে বলে, 'তুই
খাইস না। তোর গুনাহ
হইব। আমার হইলে হোক।
আমি খাই। বাতাসা ভীষণ
মজা।'
ফরিদের ঠোঁটের দুপাশে
লেগে থাকা মিষ্টান্নের
গুঁড়ো দেখে তাহেরের
বুকের ভেতরে জ্বলতে
থাকে। বন্ধুর হাত থেকে
এক ঝটকায় বাতাসা দুটো
ফিরিয়ে নিয়ে ও হাঁটতে
শুরু করে, ‘যা, যা একদম
আমার চোখের সামনে আসবি
না। মাঠেও ডাকবি না আর।
যা, যা।’
ফরিদকে ছেড়ে তাহের একাই
হাঁটছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি
ফিরতে হবে। এমন
মেঘবৃষ্টির দিনে বাইরে
বাইরে ঘুরলে মা বকবে
ভীষণ। বন্ধুকে পেছনে
ফেলে অনেকটা পথ সামনে
এসেছে ও। ফরিদকে আর
দেখা যাচ্ছে না। আচমকা
তাহের থেমে যায়।
চারপাশটা দেখে নিয়ে
এবার ও বাতাসা দুটো
মুখের ভেতরে পুরে দেয়।
মিষ্টিতে মাখামাখি জিভ
রসে ভিজে যেতে যেতে
তাহের সিদ্ধান্তে
পৌঁছে যায়, ছোঁচা ফরিদ
ঠিকই বলেছে বাতাসা খেতে
ভীষণ মজা।