একজন সতীশ ছিলেন

রিকি দাশ

শহর থেকে খানিকটা দূরে গ্রামের সরু পিঁচঢালা রাস্তা ধরে চলে গেছে যে রাস্তাটি বহু বছর ধরে তার স্রোতের কথা অনেকটা বুঝতে পারেন সতীশ বাবু।এই পথের হাসি,কান্নঠ¾ সব যেন চেনা তার।কখনো আকাশে খুব মেঘ করলে সতীশ বাবু তার শাঁইশাঁই উড়ে বেড়ানো পঙ্খিরাজ থামিয়ে অনেক সময় রাস্তাটির একপাশে বসে আনমনে একদৃষ্টিতৠতাকিয়ে থাকে।এই পথ জানে তার বেঁচে থাকার কথা,à¦¸à¦‚à¦—à§à¦°à¦¾à ¦®à§‡à¦° কথা।এই পথ থেকে শিখেছে সে কিভাবে দিনের পর দিন একা থেকে কেবল স্বার্থের বাঁধন ছেড়ে চারপাশ থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।সতীশবাঠুর পুরো নাম সতীশচন্দ্ঠঘোষ। তিনি রিকশা চালান,যদিও একসময় তার পিতার অনেক জায়গা-সম্পঠ¤à§à¦¤à¦¿ à¦›à¦¿à¦²à¥¤à¦•à¦¿à¦›à§à¦¦à ¿à¦¨ নিরুদ্দেশ থাকায় যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এসে ভিটে বাড়ি ছাড়া আর তেমন কিছুই পাইনি। সব আত্মীয়-à¦¸à§à¦¬à œà¦¨à§‡à¦° দখলে চলে যায়।যদিও এই নিয়ে সতীশবাবুর কোন প্রশ্ন ছিলনা কারো কাছেই।সতে ¦° বছরে তার চোখের সামনে রাজাকার বাহিনী তার মা,বাবা এবং বোনকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে,এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়।কিন্তৠকপাল গুণে পালিয়ে বেঁচে যান তিনি।এরপর যুক্ত হন মুক্তিবাহঠনীতে।দেশ স্বাধীনের পর কয়েকবছর তিনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ান।আত্ঠ®à§€à§Ÿ-স্বজনরা ধরেই নিয়েছিল হয়তো আর বেঁচে à¦¨à§‡à¦‡à¥¤à¦•à¦¿à¦¨à§à¦¤à  একদিন হুট করে মন স্থির করে চলে আসেন।তখন সতীশবাবুর পিশি তার বাড়ি থাকতেন।তিঠ¨à¦¿ তাকে বিয়ে করানোর অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তার নিজের বাড়ি ফিরে যান।সতীশেঠ° বয়স তখন একুশ।সেই থেকে তার উদাসীন জীবন-যাপন সবার চোখে à¦ªà§œà¦¤à§‹à¥¤à¦…à¦¨à§‡à¦•à §‡ বলতো পাগল।কিন্ঠ¤à§ এতকিছুতে তার কোন ভ্রুক্ষেপ ছিলনা।
কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে পড়ে থাকেন।ঘুরৠ‡ বেড়ান রিকশা নিয়ে।কখনো রাতে ঘরে ফেরেন কখনো ফেরেন না।সারারাত কাটিয়ে দেন পথে ,বয়স সত্তর পার হয়েছে কিন্তু দমে নেই তিনি।দিব্য ি ছুটে বেড়ায় রিকশা নিয়ে।তার নেশা মানুষকে সাহায্য করা।যখন যেভাবে পারেন সুযোগ পেলেই মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়েন।
একদিন পাড়ার অটলখুঁড়োর ডাক পড়ে à¦¸à¦¤à§€à¦¶à§‡à¦°à¥¤à¦…à¦Ÿà ²à¦–à§à§œà§‹ সম্পর্কে খুঁড়ো হলেও সমবয়সী।পাৠার বিত্তবানদৠর একজন।যদি ও তিনিই একমাত্র মানুষ যিনি সতীশবাবুর ভালোমন্দ নিয়ে ভাবেন,à¦•à¦¿à¦›à§à ¦Ÿà¦¾ হলেও বুঝতে পারেন।
অটলখুড়ো বললেন,কিরে সতীশ বয়সতো আর কম হলোনা এখন অন্তত রিকশা চালানোটা বাদ à¦¦à¦¾à¦“à¥¤à¦¤à§‹à¦®à¦¾à¦•à ‡ তো অনেকবার বলেছি আমার খাবার হোটেলের সামনে ছোট যে পান সিগারেটের দোকান আছে তাতে বসো।খাবার ও ঠিক মতোন খেতে পারবে কিছু টাকাপয়সা ও পাবে।তোমাঠ° কেটে যাবে।তোমাঠ° আর আমার বয়স তো একই।আমি সমস্ত কিছু ছেলেদের ভাগ করে দিয়ে এখন বিশ্রাম নিচ্ছি,à¦¤à§‹à¦®à ¾à¦° ও বয়স হয়েছে সতীশ রিকশাটা বিক্রি করে এবার একটু বিশ্রাম নাও।এই বয়সে কি এত ভারি কাজ করা যায়।তার উপর সমীরণ বললো কাল রাতে ও নাকি তুমি বাড়ি à¦†à¦¸à§‹à¦¨à¦¿à¥¤à¦¸à¦•à¦¾à ²à§‡ এলে।সমীরণৠ‡à¦° নাম শুনতেই সতীশবাবু প্রচন্ড বিরক্ত হলেন কিন্তু কিছুই বললেন না।শুধু এটুক বললেন পাহাড়া দিতে গিয়েছিলাম,à ¦°à¦¾à¦¤à§‡à¦° বেলা শকুনের উৎপাত বড্ড বেড়ে যায়।এই মাটির কষ্ট হয় খুব।এটা বলেই দ্রুত চলে যান,আর পিছু ফিরে তাকায়নি সতীশবাবু।ঠটলবাবু জানতেন সতীশ অন্য ধাঁচের মানুষ।কিছৠà¦¦à¦¿à¦¨ আগেই কোত্থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে ধরে এনে অটলবাবুর সামনে বলেছিলেন খুড়ো জীবনে কিছু কারো কাছে চাইনি।আজ তোমার কাছে à¦šà¦¾à¦‡à¦¬à§‹à¥¤à¦†à¦®à¦¾à ° এই মা কে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।ছেলে বের করে দিয়েছে এই বুড়ো বয়সে কোথায় যাবে।তোমাঠ° ফুল বাগানে মালীর চাকরিটা তাকে দিয়ে দাও গো।আমার এই কথাখানা রাখো à¦–à§à¦à§œà§‹à¥¤à¦…à¦Ÿà¦²à ¬à¦¾à¦¬à§ মানুষ ভালো।তিনি তার কথা রেখেছিলেন ¥¤à¦à¦®à¦¨ উপকারের কথা হয়তো বলে শেষ করা যাবেনা সতীশের।যদঠ¿à¦“ এমন আচরণ ভালোই লাগে অটলবাবুর।ঠুক্তিযুদ্ঠ§à§‡ সতীশের সাথে যেতে চেয়েছিলেন অটলবাবু।কঠ¿à¦¨à§à¦¤à§ তার পরিবার তাকে যেতে দেয়নি।সেই থেকে কেমন জানি একটা অপরাধবোধ কাজ করে তার,মাঝে মাঝে সতীশকে তার হিংসে হয়।সে যদি দেশকে,à¦®à¦¾à¦¨à§à ¦·à¦•à§‡ পাগলের মতো ভালবাসতে পারে তবে আমি কেন অমনভাবে পারিনা।কেঠ¨ আমার স্বার্থের এত মোহ!এসব ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাঠফেলে অটলবাবু।
সমীরণ অটল বাবুর বড় ছেলে তবে চরিত্রহীনॠযেটা একমাত্র সতীশবাবু জানতেন।শহঠে কি কি সব ব্যবসা করে।প্রতিঠ¦à¦¿à¦¨ শহরে যাওয়া আসা তার।একদিন সন্ধ্যার পর করে সতীশবাবু রিকশা নিয়ে শহর থেকে ফিরছিলেন।ঠ¶à¦¹à¦° থেকে গ্রাম কিছুটা দূরে হওয়ায় এই রাস্তায় লোকসমাগম নেই বললেই চলে।সন্ধ্ঠার পর নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ।হঠা ত পথিমধ্যে দেখেন সাদা ধবধবে একটা à¦®à¦¾à¦‡à¦•à§à¦°à§‹à¦¬à¦¾à ¸ রাস্তার একপাশে নিরব জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে,কাছে যেতেই একটা মেয়ের কান্নার শব্দ শুনতে পান তিনি।সাথে সাথে সতীশবাবু তার হারিকেন এবং লুকিয়ে রাখা দা বের করলেন।এবং কয়েকবার ধাক্কা দিতেই বের হয়ে এলেন অটলকুড়োর à¦›à§‡à¦²à§‡à¥¤à¦¸à¦¤à§€à¦¶à ¦•à§‡ দেখে দুই পা জড়িয়ে ধরলো সমীরণ বলে উঠল এমন কাজ আর কখনো করবো না।সতীশ কিছু বুঝে ওঠার সমীরণ দৌড়ে পালিয়ে যায়।ভেতর থেকে বের হয়ে আসে একটি à¦®à§‡à§Ÿà§‡à¥¤à¦¸à¦¤à§€à¦¶à ¬à¦¾à¦¬à§à¦° সামনে কান্না করতে করতে বললো সমীরণের কোচিং এ পড়ে à¦®à§‡à§Ÿà§‡à¦Ÿà¦¿à¥¤à¦•à§‹à ¦šà¦¿à¦‚ এর বাথরুমে সিসি ক্যমেরা লাগিয়ে রাখে সে এবং কিছু খারাপ ছবি তুলে নেয়।আজ ক্লাস শেষে বের হওয়ার সময় সে বললো চলো তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিই আমি ওদিকে যাচ্ছি। এক প্রকার জোর করে উঠিয়ে নেয় আমাকে পরে আমাকে ছবিগুলো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেঠ‡à¦² করে এবং বলে যে ওর কথা না শুনলে এসব ছবি নেটে ছেড়ে দিবে।আমি ভয় পেয়ে যাই বলে হুহু করে কেঁদে উঠে মেয়েটি।সতৠ€à¦¶à¦¬à¦¾à¦¬à§ এত কিছু বুঝতে পারেনা কেবল এটা বুঝতে পারে যে সমীরণ জঘন্য কোন উদ্দেশ্যে মেয়েটিকে ধরে আনে।আর দেরী না করে মেয়েটিকে তার রিকশা করে তার বাসায় দিয়ে আসে।এরপর থেকেই সমীরণকে দেখলেই রক্ত উঠে যায়।মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় কুপিয়ে মারে কিন্তু শুধুমাত্র অটলবাবুর কথা ভেবে কিছু বলেনা।
বর্ষণমুখর দিন,অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে সকাল থেকে।গত দুইদিন থেকে সতীশবাবুর শরীর ভালো নেই।নিজে রান্না করার শক্তি এখন কুলোয় না।তবু ও কিছু একটা করতে হবে ।গতকাল ও ভালোভাবে খেতে পারেনি।শরৠর বেশ দুর্বল à¦²à¦¾à¦—à¦›à§‡à¥¤à¦¬à§Ÿà¦¸à ¤à§‹ আর কম হলোনা।আজ তার মা কে খুব মনে à¦ªà§œà¦›à§‡à¥¤à¦¬à§‡à¦à¦šà ‡ থাকলে মায়ের হাতে গরম গরম ডাল ভাত মাখিয়ে à¦–à§‡à¦¤à§‹à¥¤à¦à¦¤à¦•à¦¿à ¦›à§ ভাবতে ভাবতে সতীশবাবুর মিনালীর মায়ের কথা মনে পড়ে।আহা বেচারী মেয়েটাকে নিয়ে বড্ড দুশ্চিন্তা য় আছে।টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছেনা। স্বামী ছেড়ে চলে গেল।একটি মেয়ে,বড় à¦¹à§Ÿà§‡à¦›à§‡à¥¤à¦šà¦¾à¦°à ‡à¦¦à¦¿à¦•à§‡ তো পিশাচের নজর।সেদিন পথে দেখলাম কেমন আছিস মা জিজ্ঞেস করতেই বড্ড à¦•à¦¾à¦à¦¦à¦²à§‹à¥¤à¦›à§‡à ¦²à§‡ ঠিক হয়েছে একটা কিন্তু টাকা দিতে হবে যৌতুক।বিশ হাজার টাকা না দিলে বিয়ে হবেনা।তাই এই দরজা ঐ দরজা ছুটে বেড়াচ্ছি।
খাবার কথা বেমালুম ভুলে সতীশবাবু চলে গেল হনহন করে অটলবাবুর কাছে।বললো খুঁড়ো আমার কুড়েঘর খানা তুমি নিয়ে নিবে।বিনিঠয়ে কিছু টাকা দিবে?à¦…à¦Ÿà¦²à¦¬à¦¾à ¬à§ জিজ্ঞেস করেন ঘর বিক্রি করলে তুমি থাকবে কোথায়?আমি উঠোনে একটা ঝুপড়ি বানিয়ে পড়ে à¦¥à¦¾à¦•à¦¬à§‹à¥¤à¦†à¦®à¦¾à ° মৃত্যুর পর উঠোন টুকু ও নিয়ে নিও।টাকাটঠ¾ বেশ প্রয়োজন।অঠŸà¦² বাবু জানেন ঘর খানা উনি না নিলেও সতীশ চুপ à¦¥à¦¾à¦•à¦¬à§‡à¦¨à¦¾à¥¤à¦…à ¨à§à¦¯ কারো কাছে ছুটবে।তাই সতীশকে বললেন উনি নিবে,à¦•à¦¾à¦—à¦œà¦ªà ¦¤à§à¦° ঠিক করে নিই।
অটলবাবু কাগজপত্র ঠিকঠাক করে সতীশকে ডাক পাঠালেন।অঠŸà¦²à¦¬à¦¾à¦¬à§ তার পাশে সতীশবাবুকৠ‡ বসিয়ে অনেকটা জোর করেই দুপুরের খাবার à¦–à¦¾à¦“à§Ÿà¦¾à¦²à§‡à¦¨à¥¤à à¦®à¦¨ তৃপ্তি নিয়ে সতীশ খায়নি বহু বছর।আজ যেন তার শেষ খাবার খেল সে।কাজ শেষ করে বিনিময়ে ত্রিশ হাজার টাকা সতীশের হাতে তুলে দিলেন এবং বললেন যতদিন সতীশ বেঁচে থাকবেন ততদিন সে ঐ ঘরে থাকতে পারবে।সতীঠ¶à¦¬à¦¾à¦¬à§ কান্না জড়ানো কণ্ঠে অটলবাবুর পা দু-খানা জড়িয়ে ধরেন।অটলবঠ¾à¦¬à§ তাকে বুকে জড়িয়ে নেন।অনেক বছর পর যেন তার অপরাধবোধ কিছুটা কম à¦²à¦¾à¦—à¦›à§‡à¥¤à¦¸à¦¤à§€à ¦¶à¦¬à¦¾à¦¬à§ টাকা নিয়ে ছুটলেন মিনালীর মায়ের কাছে।তাকে গিয়ে টাকা গুলো দেন এবং বলেন ভালো ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ে দিতে।মিনাঠীর মা সতীশবাবুর পা ধরে প্রণাম করেন। সতীশ যেন অনেক নিশ্চিন্ত আজ ।
শরীরটা কেমনজানি লাগছে তার,যেন পুড়ে যাচ্ছে।মাঠŸà¦¿à¦¤à§‡ হাত রেখে এক মুটো মাটি তুলে কপালে মেখে নেয় সতীশবাবু।ঠারাশরীর যেন ঠান্ডা হয়ে গেল।ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লো সে এবং ভাবছে পরের ঘরে আর থাকা যাবেনা,তার নিজের ঘর চাই।ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে চলে গেলেন তিনি।চলে গেলেন নিজের ঘরে।যেখান থেকে এমন সাধারণ ভাবে থাকা মহামানবকে আর ফিরিয়ে আনা যায়না। সতীশবাবুর মৃত্যুতে মিনালীর মা দু-ফোটা চোখের জল à¦«à§‡à¦²à§‡à¦›à¦¿à¦²à§‡à¦¨à ¥¤à¦•à§‡à¦‰ বললেন পাগলটা মরে বেঁচে গেল।কেউ কেউ বললো যাক রাত-বিরাতে কেউ আর বিরক্ত à¦•à¦°à¦¬à§‡à¦¨à¦¾à¥¤à¦•à§‡à ¦¬à¦²à¦®à¦¾à¦¤à§à¦° অটলবাবু চুপ হয়ে à¦—à¦¿à§Ÿà§‡à¦›à¦¿à¦²à§‡à¦¨à ¥¤à¦•à§‡à¦¬à¦² তিনিই জানতেন এই গ্রাম কাকে হারালো,এই মাটি কাকে হারালো!
মানুষ ভুলে যায় মানুষ,ভুলে যায় সব এমনি পরিণতি আমাদের!