বকলস। একেবারে শুরুর
দিনগুলো
ব্যতিরেকে,বকলস
সভ্যতাতেই মানুষের
আজন্ম স্বতঃসিদ্ধতা।
তবু বকলস ছিঁড়েই বের
হতে চেয়েছিলো ওরা। জর্জ
ফ্লয়েড বা আমাদের রতন
সামন্ত কিন্তু বকলসেই...
যেমন ধর এখন রাত..
প্রায় ১১৭ বছরের বুড়ো
নিমগাছটাকে ধরে
ক্রমাগত ঝাঁকিয়ে
চলেছিলো রতন। বাইরে
চাইনিজ এল ই ডির মত
চাঁদ। ঝিকোনো সাদা আলোর
মাঝে,দাঁড়িয়ে
মাঝারি,রুখুসুখু
লোকটার ঝাঁকুনি খেয়ে
বুড়ো নিম মাঝরাতে
হুড়মুড় করে জেগে
ওঠে,বলে—
- রতন?
- বুড়ো তুই আমার সব
খেয়েছিস,এবার আমিই তোকে
খাবো
- কী হয়েচে,রতন?
- জানো না যেন কিছু,তাই
না? আবার নেকিয়ে ডাকছো
রতন...
- তোমার বুড়ো ঠাকুর্দার
আমার বন্ধু।
- তো? ঠাকুর্দার বন্ধু
হলেই সাত খুন মাফ?
- খুন করলাম?
- ও যেন কিছুই
জানোনা,ভাজা মাছ উল্টে
খেতেও জানো না!
- না জানিনা।
- বুড়ো মিচকে শয়তান,তুমি
আমাদের সব খেয়েছো।
- আমি?
- রাঙাপিসি? মনে নেই?
রাঙাপিসি বরাবরের
লাজুক ছিলো। গান
ভালোবাসতো প্রবল। অথচ
কখনও গলা খুলে গাইতো
না,অশোক কাকু
রাঙাপিসিকে গান শেখাতে
আসতো প্রতি শনিবার।
অতুলপ্রসাদ আর
রজনীকান্তর গান।
রাঙাপিসি জীবনে তার
দিকে চোখ তুলে দেখতোও
না। হ্যাঁ রাঙা পিসি
ইস্কুলে এক ক্লাসেই
দুবার। তাতে কী! সবাইকে
কি পাস করতেই হয়? তার
জন্য গঞ্জনাও সহ্য করতো
প্রবল। কিন্তু তাতে তো
কিছু হয়নি। সে নিজেও
বিশ্বাস করতে শুরু
করে,তার মাথায় গোবর
পোরা আছে! গোল লাগলো তো
অন্য জায়গায়,অশোককাকুর
রাঙাপিসিকে দেওয়া
চিঠি,ঠাকুর্দার হাতে
পড়লো। মনে পড়ে,পিসিকে
তখন বন্ধ করে রাখা
হয়েছিলো চিলেকোঠার
ঘরে। খাবার দেওয়াও
নিষেধ। কিন্তু মা ঠিক
খাবার দিত। আমায়
বলতো,যা দিয়ে আয় তপুকে।
রতন খাবার দিতে গেলে
রাঙাপিসি জিজ্ঞেস
করেছিলো,খোকন,অশোকদা
কিছু খেতে পায়? জানাতে
পারিস?
রতন জানিয়েছিলো,সে এত
জানেনা,তবে অশোককাকু
না'কি রাঙাপিসির বন্ধু
মানদা পিসিকে বিয়ে
করবে। বাকিটা জানে,বুড়ো
নিমগাছটাই। কারণ,সেদিন
ছিলো পূর্ণগ্রাস
সূর্যগ্রহণ। দিনের
বেলাই আঁধার নেমেছিলো
হঠাৎ! আর সন্ধ্যে পার
হবার আগেই জানা
গেলো,রতনদের
নিমগাছে,রাঙাপিসি
ঝুলছে,একাই...
রতন আবার ঝাঁকালো,কি হল
উত্তর দাও।
বুড়ো নিম তেমন কিছু
বলেনি,বলার সুযোগই বা
কই দিলো রতন। সে কেবল
ঝাঁকিয়েই চলছিলো আর গাছ
নিজেকে বাঁচাতেই কেবল
অস্বীকার করতে চাইছিলো
সব,যেভাবে অস্বীকার
করতে চায় কেউ চরম
সত্যকেও।
আসলে বুড়োনিম ছিলো
উঠোনের দক্ষিণ
প্রান্তে। আর রতন ছিলো
তার ঘরে। আসলে কিছুই
ঘটেনি,কেবল রতনের ইচ্ছে
গিয়েছিলো বুড়ো নিমকে
ঝাঁকাতে। রতন তখন
শুয়ে,যেমন থাকে।
রতনের শুয়ে থাকাটা বড়
অদ্ভুত! কখনও মাথার
তেলচিটে বালিশটা রতনের
বুকের ওপর। কখনওবা জলের
কুঁজোর মত পাশবালিশটা
পিঠের নীচে। কখনও সে
ব্যাক স্ট্রোক,কখনও
বাটারফ্লাই...মফস্বল
শহরে লকডাউন হয়েছে সেই
মার্চ ২৩ থেকে। সে
ইস্তক রতন
সাঁতারেই,একা। কেবল
রতনের ভেতর একটা কুকুর
ডাকে। আর ওপর নীচের
কষের দাঁতগুলো
ক্যানাইন টিথ...
মাটি ভেদ করে চাঁদ উঠে
আসলে,জগন্নাথ ও
শ্যামাচরণের ছায়া দেখা
যেত পাশাপাশি হাঁটছে।
বন্ধকী কারবার,দিব্যি
জমেছিলো,শহরের বেড়ে
ওঠার সাথেই। টিনের
চাল,সুরকির গাঁথনি
ছেড়ে,লোকজনের তখন পাকা
ইঁটের ঘর বানানোর হিড়িক
পড়েছে খুউব। রমরম করে
বাড়তে লাগলো কারবার।
রাস্তাঘাটে চলা দায়!
সারাদিন মাছির মত লোক
ভনভন করে!এ রতনদের যা
ভাগ্য,যেমন
হয়...শ্যামাচরণের
ছায়াটা এগিয়ে গেলো।
জগন্নাথ ভ্যানিশ!
রতন শ্যামাচরণের বুকের
ওপর উঠে বসেছে,গলা টিপে
ধরায় শ্যামাচরণের
বাহাত্তুরে খাঁচাটা
অতি দ্রুত উঠছে নামছে,
- ও রতন আমায় ছেড়ে দে বাপ
আমার!
- বন্ধুর সাথে গদ্দারি
করতে গায়ে লাগেনি?
- কী বলছিস রতন? আমি আর
গদ্দারি! তোর বাপের নয়া
পয়সার মুরোদ ছিলো
না,কোথ থেকে সব উমদো
ঝুমদোদের নিয়ে হাজির
করত। যাদের ধার মেটানোর
ক্ষমতাই নেই।
- তাতে তো তোমার লাভই
হয়েছিলো শ্যামা খুড়ো।
গিলতে সুবিধে হয়েছে ওই
সব খেতে না পাওয়া
মানুষগুলোর বাড়ি-ঘর।
এমনি আজ এত পয়সা করেছ?
- আহ! রতন লাগছে ছাড় বাপ
আমার। বুড়ো মরলে তোরে
জেল খাটতে হবে,সে কথা
ভুলিসনেকো!
- আমার বাপটাকে যে
মারলে,কই তোমায় তো জেল
খাটতে হয়নি!
- তোর বাপ আবার
ব্যাটাছেলে নাকি! সে
মিনসের মরদ হবার খেমতা
নেই,ললিতার সাথে নকশা
করতে শুরু করলো৷ ললিতার
পেট বাঁধালো। অমন
ম্যাদমেদে পুরুষের
মরণই ভালো।
- এই বুড়ো মুখ সামলে কথা
বলবি। তোর ললিতার ওপর
লোভ ছিলো। আমার বাপ
তাতে বাঁধা দেয়,তাই তুই
পথের কাঁটা সরিয়ে ছিলি।
- লাগছে রতন। ছাড় বলছি।
তোর বাপকে মেরে আমার কী
লাভ! যাতা বানিয়ে বললেই
হয়ে গেল? তা এত যখন
বক্তিমে মারছিস,পুলিশে
দিস নাই কেন?
- পুলিশ,তোমরা শালা লাল
পার্টির লোক। দেশে
তোমাদের শাসন,পুলিশ আর
কবে গরীব মানুষের কথা
শোনে? আর থানা পুলিশ
করলে,কেচ্ছা ছড়াতো।
তুমিই আমার বাপ কে মেরে
ওই নিমগাছে ঝুলিয়ে
দিয়েছিলে। স্বীকার
করতে সমস্যা হয় খুড়ো!
- রতন আমার লাগছে ছাড়।
কেচ্ছা থেকে আর বাঁচলি
কই? সেই তো তোর মাকে মরতে
হল!
- কেচ্ছা আমাদের
ছাড়েনি। আমিও তোমায়
ছাড়বো না। ঠিক আমার
বাপের মত করেই মেরে
ঝুলিয়ে দেব তোমায় ওই
নিমগাছে,চল বুড়ো...চল...
আসলে এসব কিছুই হয়নি।
শ্যামাচরণ খুড়ো ছিলো
টাউনের নদীর পারের
অট্টালিকায়। আর রতন
ছিলো তার ঘরে। আসলে এসব
কিছুই ঘটেনি,কেবল রতনের
ইচ্ছে গিয়েছিলো
পিতৃবন্ধু
শ্যামাচরণকে মারতে।
রতনের শুয়ে থাকাটা ছিলো
বড়ই অদ্ভুত! পা দুটোকে
পেটের কাছে গুটিয়ে এনে
শুয়ে থাকে ঘন্টার পর
ঘন্টা... জিভ বার করে
হাঁফায়। কখনো দু হাত
দিয়ে পাগুলোকে ধরে
অপেক্ষা করে। মফস্বল
শহরে লকডাউন হয়েছে সেই
মার্চ ২৩ থেকে। সে
ইস্তক রতন ঝাঁপিয়ে পড়ার
অপেক্ষা করে একাই... কেবল
রতনের ভেতর একটা কুকুর
ডাকে। আর ওপর নীচের
কষের দাঁতগুলো
ক্যানাইন টিথ...
চাঁদের গায়ে পাখনা
লাগলে,মা হয়ে যায়
কখন...মা রান্না
করলে,কাছে এসে বসে
ললিতা। মা'র আঁচলে মুখ
রাখলে কেমন যেন
হলুদ-লঙ্কার গন্ধ! বড়
প্রিয় সে গন্ধ আর রতনের
মাঝে ললিতা মাসিই
একমাত্র পার্টিশন।
কালোকোলো ললিতার গায়ের
গড়ন ভালো। মুখশ্রীও
মিষ্টি। ঠাট আর যমকও
আছে! ললিতা তাড়া করে
রতনকে,এই ধেড়ে ছেলে এত
মা মা কিসের! রতন
পালায়,একদৌড়ে উঠোনে
পৌঁছে দেখে সেখানে বাবা
আর শ্যামাখুড়ো সেখানে
বসে হিসেব নিকেশ করছে।
ললিতা তাদের জন্য চা
নিয়ে আসে৷ চোখে চোখে
কথা হয়,কার সাথে, সে
বোঝার বয়স রতনের নয়।
ফাঁক পেয়ে রান্নাঘরে
মাকে খুঁজতে গেলে,দেখে
রান্না করছে ললিতা। মা ??
- মা'কে কোথায় লুকিয়ে
রেখেছিলে ললিতা মাসি?
খুনখুনে গলায় বুড়ি
ললিতা উত্তর দেয়,
- তোর মাকে লোলিতা কুথায়
লুকাবে রে? সে নিজেই
লুকিয়ে ছিলো।
- আমার সুস্থ সবল মার
সেটা তো ভীমরতির বয়স
নয়,যে লুকোচুরি খেলবে!
ইয়ার্কি মারছ?
- তোকে সে ছেলেবেলায়
ডেঁপো ভাবতাম। যত বয়স
বাড়ে,দেখি তুই আরও
ভোঁদাই! লুকোচুরির বুঝি
বয়স হতি হয়! সব বয়সের
মানিষ খেলে,খেলতে চায়!
- তা,তুমি কার সাথে
লুকোচুরি খেলতে,বাবা না
শ্যামাখুড়ো?
- ওমা! আমার বুঝি ঘর
সংসার ছিলো না? ছেলে
মেয়েগুলো এমনি বড় হয়ে
গেল? ওদের বাপ নেই,আমি না
খাওয়ালে,কে খাওয়াতো? এর
মাঝে লুকোচুরির সময় কই
রে ভোঁদাই!
- দেহ বেচে খাবার জোগাতে
লজ্জা হতোনা?
- দেহ বেচতি হবে ক্যান
রে! গাছে আম পাকলে,এমনিই
মাছি ভন ভন করে। আম নিজে
গিয়ে বলবে,এসো আমি
পেকেছি!
- তুমি পোয়াতি হলে,আমার
লক্ষ্মী মা'টাকে মরতে
হলো।
- তার,আমি কি করতি পারি?
আমি কয়েচিলাম তুমি মরো
গা!
- তা,তোমার পেটের
বাচ্চাটার বাপ কে
ছিলো,আমার বাপ না
শ্যামখুড়ো?
- তোর বাপ ছিলো নামে
জগন্নাথ,কাজেও। ভালো
আমি তারেই বেসেচিলুম।
কিন্তু সে মানিষ
সাক্ষাৎ ভগমান। তারে
দোষ দিই ক্যামনে?
- তা,দোষ করলো
শ্যামখুড়ো,ঘাড়ে চাপলো
বাপের৷ এ ক্যামন ধারা
বিচার?
- জগতের নিয়ম তো এমন
ধারাই। ভালো মানিষের
ঘাড়েই দোষ চাপে।
- তুমি তখন বলনি কেন? যে
শ্যামাখুড়োর কাজ,আমার
বাপ নির্দোষ।
- তুইও বলিস বটে! আমি
হলেম গিয়ে খারাপ
মেয়েছেলে। বলি আমার কতা
কে শুনবে? তায় আবার
শ্যামদাদা লাল পার্টির
নেতা। দোষ করলি পরেও
তার দোষ কই?
- আমি তোমায় মারতে এসেছি!
এ নাও বিষ৷ খাও দেখি।
চোখ জুড়োই।
- এ্যাই হল সাত কাজের এক
কাজ। এই জন্যি তোর
বাপকে আমি
ভালোবেসেচিলুম। আমি যে
মরতেই চাইচি,এ তোকে কে
বললো বল দিকিনি!
এই দ্যাক না বাপ,এই পাগল
মেয়েটাকে নিয়ে পড়ে আচি
ঘরে,এক দানা খাবার নেই।
তা হ্যাঁরে রতন তোর বউ
এর কী খবর? তারে তো
অনেকদিন দেকিনা! সে কই?
আসলে এসব কিছুই হয়নি।
আসলে ললিতার এক কামরার
ঘর ছিলো শ্রীকলোনিতে,
আর রতন ছিলো তার বাড়ির
ঘরে। আসলে এসব কিছুই
ঘটেনি,কেবল রতনের ইচ্ছে
গিয়েছিলো ললিতাকে
জিজ্ঞেস করতে,বিষ
খাওয়াতে। পারেনি!
রতনের শুয়ে থাকাটা ছিলো
বড়ই অদ্ভুত! আঙুল
উঁচুতে তুলে যেন কিসব
লিখে চলেছে... মফস্বল
শহরে লকডাউন হয়েছে সেই
মার্চের ২৩ থেকে। সে
ইস্তক রতন কি তবে বিচার
চাইছে, একাই... কেবল
রতনের ভেতর একটা কুকুর
ডাকে। আর ওপর নীচের
কষের দাঁতগুলো
ক্যানাইন টিথ...
তবু জোছনায় ভরে বাসি
ঘর,সাদা কালো
দৃশ্যপটে,মনোরমের
উপাখ্যান। রতনের
সাদাকালো ঘরের জানলায়
কি করে যে পুটুস
ফুটেলো,তা কেবল ঈশ্বর
জানে! মল্লিকা প্রায়
একপ্রকার নিজেই
এসেছিলো,রতনের ঘরে।
তেমন কিছু নেই,তবু তো
মানুষটা ভালো। মল্লিকা
দেখতে না সুন্দর,না
কুৎসিত। তবে পরিশ্রমী।
গেঞ্জি ফ্যাক্টরিতে
রতনের সাথেই কাজ করতো
মল্লিকাও। তারপর যা হয়!
ঘরেতে ভ্রমর আসে
গুণগুণিয়ে। মল্লিকাও
এলো। চার হাতে রোজগার।
স্বচ্ছলতা না থাকলেও
খেয়ে পড়ে চলে তো যেতই!
তারপর...জোছনা করলো আড়ি।
গরমের রাত! খিড়কি খুলে
শোওয়াই দস্তুর। ভ্রমর
খিড়কি দিয়েই উড়ে গেলো
দূরে কোথাও!
- কেমন আছো?
- আছি৷ এতদিন পর হঠাৎ আজ?
মুরোদ গজালো না ডানা?
- দেখতে এলুম। সংসার
কেমন চলছে!
- আর তো না এলেই পারতে।
তোমার অভিশাপে বরটা তো
মরলো।
- অত চোলাই খাবে,আর মরবে
না? তা আর একটা বিয়ে
করলেই তো হয়!
- আবার বিয়ে করবো,আর রতন
সামন্তর অভিশাপে সে
আবার মরবে! লাভ কী! তারচে
আগে তোমায় মারি। তারপর
না হয় করবো।
- চল মরি একসাথে। মরবে?
বেঁচে থাকতে তো একসাথে
থাকা হলো না। মরি
একসাথে তাইলে না হয়
একসাথে থাকা যাবে।
অবশ্য তোমার যা স্বভাব!
আবার না পালিয়ে যাও।
- তা রতন বাবু,কেউ সাধ
করে পালায়? ভাত দেবার
ক্ষমতা নেই,কিল মারার
গোঁসাই৷ এর দিকে
তাকিওনা। অমুকের সাথে
হেসো না। তা বাবা চার
হাজার টাকা ঘরে দিয়ে এত
হুকুম জারি করলে হয়? তায়
আবার বউ ও খেটে খায়৷
এমন নয়,যে একা রোজগেরে!
তা হলে না হয় বউ এক মাথা
ঘোমটা টেনে সোয়ামি বাড়ি
ঢুকলে,পা ধুইয়ে দিতো!
- তা যা বলেছো। তাহলে
মরবে না? আমায় মরতে হবে!
তা বেশ! আমায় মারো তাহলে
ল্যাঠা শেষ!
- নাগো রতন ঠাকুর,বদ্দি
মেরে হাত গন্ধ করবে এমন
বান্দা মল্লিকা কাহার
নয়।
- মল্লিকা কাহারের তবে
মোটা টাকা রোজগার করা
বর দরকার,তাই তো?
- মারবো মুখে ঝাঁটার
বাড়ি৷ বেশি কথা
কয়োনাকো। কুলো পানা
চক্কর!
আসলে এসব কিছুই হয়নি।
মল্লিকা ঘর বেঁধেছিলো
লেদ কারখানার বসন্তর
সাথে টাউন থেকে কিছু
দূরে কাহার পল্লীতে।
বসন্তটাও মরলো! কপাল
বলে একেই৷ বাচ্চা
কাচ্চা নেই,মল্লিকা
একাই থাকে
কাহারপল্লীতেই। একা।
আসলে এসব কিছুই ঘটেনি।
মল্লিকাও রতনের মুখে
ঝাঁটা মারেনি। রতন ও
যায়নি কোথাও। কেবল
রতনের ইচ্ছেরা গেছিলো
মল্লিকাকে দেখতে।
রতনের শুয়ে থাকাটা ছিলো
বড়ই অদ্ভুত! উপুড় হয়ে
শুয়ে আছে। শরীরের
নিম্নাংশ নামছে,উঠছে।
ধর্ষণ করছে? কাকে? মাঝে
মাঝে গোঙানির শব্দ,নাকি
আদর বোঝা যায় না ভালো!
মফস্বল শহরে লকডাউন
হয়েছে সেই মার্চের ২৩
থেকে। সে ইস্তক রতন আদর
না ধর্ষণের অপেক্ষায়
একাই... কেবল রতনের ভেতর
একটা কুকুর ডাকে। আর
ওপর নীচের কষের
দাঁতগুলো ক্যানাইন
টিথ...
লকডাউন উঠে গেছে! রতনের
গেঞ্জি ফ্যাক্টরির
চাকরিটা গেছে। ঘরে দানা
পানি নেই বহুদিন! রতন
শুয়েই৷ নীচ আর ওপরের যে
কষের দাঁত জোড়া
ক্যানাইন টিথ হয়ে
যেত,পরিস্থিতির চাপে
তারাও থমকে! ভেতরের
কুকুরটাও চুপ।
পরিযায়ীরা ঘরে ফিরছে
একে একে। ললিতা তার
পাগল মেয়ে আর মল্লিকাও
কি তবে হাঁটতে শুরু
করেছে রতনদের বাড়ির
দিকে? কে জানে!
রতনের শুয়ে থাকার
ভঙ্গিটা বড় অদ্ভুত! চিৎ
হয়ে শুয়ে থাকা রতনের
বাম হাত বুকের কাছে,ডান
হাতের তর্জনী আর
অনামিকা উত্থিত! কেবল
পঁয়ষট্টি ডিগ্রির
জোছনায় রতনের ঘর ভাসছে!
বকলস ছিঁড়েই বের হতে
চেয়েছিলো ওরা,জর্জ
ফ্লয়েড বা আমাদের
জগন্নাথের ছেলে। এখন সে
বিড় বিড় করছে
একাই...বকলসের নামগান
নাকি বকলস ছেঁড়ার
বিপ্লব,সে কেবল
জগন্নাথ,তার ছেলে
জানে,বুড়ো নিমগাছ,অথবা
বাকিরাও!