অন্তরীণ
ঘরবন্দী থেকে থেকে এখন
আর আলো সইতে পারি না।
ভালোলাগা, মন্দলাগা,
কান্না, বুদ্ধি, প্রেম
সব ঢাকি অন্ধকারে
ঠিকঠাক লুকোতে পারলে
দারুণ ফুর্তি
এক অলৌকিক শিহরণে
আপ্লুত হয়ে থাকি দিনভর
আনন্দকে তাই আমি কেবলই
লুকাই
আনন্দ খুব চায় রিকশা
করে সদরঘাট যেতে
চুল উড়িয়ে নৌকা চড়তে
বুড়িগঙ্গায়
বৃষ্টিতে রাজপথ ভেসে
গেলে মাছ মাছ খেলতে
চায়
যাপনটাকে উৎসব করে
তুলতে তার খুব যত্ন
আমি তবু ছোঁয়াছুঁয়ি
লুকাই ছাতার তলায়
আনন্দ বেরিয়ে যায়
অভিমান করে
অতঃপর বিমর্ষ আনন্দ
দিকশূণ্যহীন হাঁটে
অতঃপর পালিয়ে যায়
নিজস্ব মলিন কোটরে
করোনার দিনে
প্রেম
দীর্ঘ ক্রোধের কাল শেষ
হলে
আলাপের বিষয় খোঁজা শুরু
হয়, আর
কোন গল্পই জমে না ওঠার
ফাঁপড়ে
আমরা হাঁপিয়ে উঠি।
এরকম সমস্যার সময় করোনা
ভাইরাস
বেশ বাঁচিয়ে দেয়।
ফেসবুক জুড়ে স্ট্যাটাস,
কার্টুন, ভিডিওর
ছড়াছড়ি
করোনার অতীত-ভবিষ্যত
নিয়ে অন্তহীন আলোচনা
টেলিভিশনে টকশোর টকঝাল
লেকচার
আমাদের জাগিয়ে রাখে।
করোনাকালের বন্দীত্বে
আমরা ভীত হতে হতে
ক্লান্ত হয়ে পড়ি
আমাদের যাপন বদলে যেতে
থাকে
কর্মহীন ঢিলেঢালা দিন
জুড়ে থাকে
মৃত্যুর মিছিল;
স্বার্থপরতা আর
নিষ্ঠুরতার অভিজ্ঞতা
আমরা তখন পরস্পরকে কঠিন
জড়িয়ে ধরি
ফিরে পাওয়া এরকম
ঘনিষ্ঠতায়
বৃষ্টি হয়তো দিতে পারতো
বাড়তি দ্যোতনা
ধুয়ে দিতে পারতো যাপনের
ক্লেদ।
কিন্তু এ বৃষ্টির ঋতু
নয়
বসন্তে সচরাচর বৃষ্টি
হয় না।
সৌধ
ঘুরেফিরে কবর চলে আসে
যাপনে ও স্বপ্নে
এই একলাপনে বেশ কিছু
এফিটাফও ভাবা হয়ে গেছে
অথচ জানি আমার কবর হবে
খুবই সাদাসিদে
ক’দিন পরই নতুন কবরে
চাপা পড়বে আমার
দেহাবশেষ
এগুলো ভাবতে মোটেও ভালো
লাগে না
তাই তাজমহলের কথা
ভাবি।
চূড়ো থেকে ঝাঁপ দিলে
মৃত্যুটা কেমন হয়
আকাশে ভাসতে ভাসতে
মেঘেদের সাথে পাখিদের
সাথে
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
মিলিয়ে যাওয়ার মতো?
জানি মৃত্যু এতো সময়
দেয় না
হ্যাঁচকা টানে কেড়ে নেয়
বর্ণিল জীবন
বড়জোর কয়েক লহমা
তারপরই ঝপ করে থ্যাতলে
যাওয়া
তাজমহলে কি জানালা আছে
লাফ দেয়ার মতো?
যদি সরাসরি যেতে পারি
কাল যমুনায়
মরণ যদি শ্যাম সমান
অথচ মৃত্যুর পর থ্যাতা
ইঁদুরের মতো রক্তমাখা
মুখের ভাবনা
আমার মোটেও ভালো লাগছে
না