করোনার দিনগুলোতে এক
বদ্ধ ঘরে বাঁচতে বাঁচতে
এবং সবসময় সাদা মাস্ক
পরে থাকতে থাকতে একদিন
তার মনে হলো, যত সমস্যা
ওই নাকে। কেননা সেই তো
শ্বাসের মাধ্যমে
জীবাণুকে আহ্বান করে
শরীরে। রোগ প্রতিরোধের
জন্য মধ্যরাতে সে এই
সিদ্ধান্তে উপনীত হলো
যে, নাক কেটে ফেলায়
সবকিছুর সর্বোত্তম
পন্থা। পরেরদিন দোকান
থেকে সবচেয়ে ধারালো
ব্লেডটি কিনে বাথরুমের
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
ঘ্যাচাং করে নাকের
মুণ্ডটি কেটে ফেলল সে।
শুরুতে অবশ্য একটু ভয়
লাগছিল তার। কিন্তু
গলগল করে রক্ত বেরুতেই
তার ভেতর পৈশাচিক আনন্দ
জন্মালো। যত ভেবেছিল অত
ব্যথাও লাগলো না।
ঝামেলাও হলো না
শ্বাস-প্রশ্বাসে।
এভাবে কেটে গেলো একটা
সপ্তাহ। কিন্তু তার
মনের খচখচানি থেকে
গেলো। কেননা তার সুন্দর
চোখ দুটোও করোনার
গুপ্তচর হিসেবে কাজ
করে। এবার সে নিজের
মনকে বুঝিয়ে দোকান থেকে
কাঁচি কিনে আনলো এবং
একই পদ্ধতিতে উপড়ে ফেলল
দু'চোখ। তারপর সে কল
ছেড়ে দিয়ে সজোরে
অনেক্ষণ কাঁদলো
ভবিষ্যতে কোনোকিছুই
দেখতে না পাওয়ার দুঃখে।
তার অশ্রুজলের বদলে
বাথরুমের ফ্লোর ভেসে
গেলো লাল লাল রক্তে।
তবুও সে মনকে মানালো এই
বলে যে, এখন থেকে আর
নেগেটিভ কোনো নিউজই
পড়তে হবে না এবং যাদের
চোখ নেই তারা তো
অন্তরের চোখেই সব
অবলোকন করতে পারে।
সেইদিন থেকে সে অন্তরের
চোখ দিয়ে দেখা শুরু
করলো। হাতড়াতে হাতড়াতে
সে সওদাপাতি-
রান্নাবান্না করে।
এভাবে সে সবকিছুতে
অভ্যস্ত হয়ে গেলো।
কিন্তু তারপরও একটা
অভ্যাস কমলো না তার।
বিনাকারণে নাকে ও চোখে
হাত দেওয়া। হঠাৎ হঠাৎ
অসাবধানবশত তার হাত এমন
বিটলামি ও বিট্রে করা
শুরু করলো তার সঙ্গে।
অবশেষে সে দেরিতে হলেও
বুঝলো, সব দোষ দুই
হাতের। হাতই যদি না
থাকে তবে করোনায়
আক্রান্ত হওয়ার কোনো ভয়
নেই বললেই চলে। যে
চিন্তা সেই কাজ।
হাতড়াতে হাতড়াতে মাছ ও
মাংস কাটার দা নিয়ে সে
ঢুকে পড়লো বাথরুমে।
যেহেতু সে ডানহাতি
সুতরাং ডান হাতেই দা'টি
ধরে লম্বা করে দেওয়া
বাঁ হাতের কব্জিতে সে
এক জোরে কোপ বসালো।
পিচকারির মতো রক্ত
বেরিয়ে সুন্দরভাবে
বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো বাম
কব্জি। আঙুলগুলো
সামান্য একটু কেঁপে
লাফিয়ে অতঃপর নিস্তেজ
হয়ে গেলো। কিন্তু
বিপত্তি বাঁধলো ডানহাত
কাটা নিয়ে। কিভাবে ডান
কব্জি বিচ্ছিন্ন করবে
এই ভাবতে ভাবতে তার
তন্দ্রা এলো। কিন্তু
এখন ঘুমানোর সময় নয়। সে
যদিও দু'পায়ে দা ধরে
চেষ্টা করলো ডানহাত
কাটতে, কিন্তু সম্ভব
হলো না। তবে হঠাৎ একটা
বুদ্ধি খুঁজে পেয়ে সে
উঠে দাঁড়ালো। ডানহাতে
দা নিয়ে রক্তাক্ত
অবস্থায় দ্রুতবেগে ঘর
থেকে বেরিয়ে গেলো সে আর
হাঁপাতে হাঁপাতে
কসাইয়ে দোকানে গিয়ে
বললো, 'ভাই, দয়া করে আমার
ডানহাতটা একটু কেটে
দেন।'
.