মৌরির গন্ধের মতো,
রক্তিম, তাঁর আভোগ,
জিরোচ্ছে কোথাও
বাতাসে। বাসকলতার পাশে,
ঘুমের শাখাগুলো নুয়ে
আছে। গিয়েছে ঝরে
বিশল্যকরনীর বুড়ি
শাখা। কারা, ওই থোকা
থোকা আঁধার নিঙড়ায়ে,
মধুকূপি ঘাসের পরে রেখে
যায়।
*
চির অচেনা সেই অসুরীর
বাঁশি, ওগো, কোথায় বেজে
ওঠে। ঘুমিয়ে পড়েছে,
তালের শুকনো খোলা।
তৃণদাম। আর বিমল কুয়াশা
এসে, ঢেকে দিয়ে গেছে
কাঠচাঁপা। তবু, ও থেকে
থেকে কিসের আজ্ঞা
প্রতীক্ষা করিছে! একটা
ঘন সবুজ রহস্য,
নাগলিঙ্গম গাছটি বেয়ে,
কোথাও, উঠে যাচ্ছে,
অনন্তলোকের দিকে।
*
দুপুর ঘন হয়ে যখন, ওই
রক্তপলাশের উপর তার,
রৌদ্র বিছিয়ে দিয়েছে;
দূর থেকে দেখা যায়,
জনহীন মাঠের মধ্যে
বাবুইতুলসী গাছটি,
একটুখানি মাথা
তুলেছে—যেন কোন সকরুণ
তারার নির্জনতা,
সূক্ষ্ম ঊর্ণায় জড়িয়ে,
এসে নেমেছে ওইখানে।
ওইখানে অন্য কোনো কলনাদ
নাই। বালিকা বঁধুর
উলুধ্বনির মতো, কেবল
ঝিঁঝিঁ ডাকছে।
*
বেছে বেছে গেঁথে নিই
সমূহ বিষাদ। তোমার! ঐ
ধূলিধূসরিত
পরশপিপুলের শীর্ষ ঢেকে
দিয়ে যাওয়া
বিকেলবেলা—সন্ধ্যার
মন্দির থেকে মায়ের
চিঠির মতো করুণ,
ঘণ্টাধ্বনি জাগে!—যেন,
সেই কবে চলে গেছে নিভৃত
অলকার পথে—এই
বিহ্বলতা—হয়তো-বা, কোনো
ঝরে যাওয়া হাসনুহানার
দেহভার লেগে
আছে—হাওয়ায়, হাওয়ায়—
*
ছায়াঘন পাকুড় গাছের
মাথায় ঝুপসি আঁধার
নেমেছে। কেউ নাই ঘাটে।
হাওয়ায় দুলছে আকন্দ
ফুলের ঝাড়। কেউ কি
গোপনে নিঃসঙ্গ হতে হতে
নিজেকেই দূরে ফেলে আসে!
বুঝিনি, ও কার মূর্ছাহত
প্রভাস্বর। যতদূরে
আঁখি মেলি, অমল মহুয়ার
শাখা। জল হতে উত্থিত
তরঙ্গেরা, এগিয়ে চলেছে,
বন্ধনসকল দগ্ধ করিতে
করিতে।