শক্তিধর বসাকের অশক্ত
শরীরটা বারান্দার
পিলারে হেলান দিয়ে
বসেছে রোজকার মতো। আজ
কেমন দমকা হাওয়া
দিচ্ছে থেকে থেকে ।
সৃষ্টিধরের নাতনিটা, ঐ
রুনু না রানু যার নাম-
দূর থেকে চেঁচিয়ে
বলেছিল দুদিন আগে- বড়
একটা ঝড় আসতিচে,
শুনিচো ঠাকুরদা?
তা রুনু বা রানু একা নয়,
দূর থেকে কথা বলাই
আজকাল সকলের দস্তুর। এ
সময় নাকি কাছে এলেই
ভাইরাস, কাছে এলেই অসুখ,
মৃত্যু! উফ! খুব
প্রয়োজনেও তাই ধারে
কাছে ঘেঁষছে না কেউ। এ
কেমন সময়- ভাবতে ভাবতে
শক্তিধর মেয়েটাকে
উত্তর করেছিল- ঝড়ের কথা
শুনি নেই তয় টের
পাইচি।
টের পাইচো?- মেয়েটা
অবাক হয়ে তার দিকে
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে
চলে গিয়েছিল। হয়তো ওর
কথা বিশ্বাস করেনি, কে
জানে। এই মেয়েটা অবশ্য
বিশ্বাস না করলেও কখনো
তর্ক করে না, পাল্টা
প্রশ্নও নয়। এ মেয়ে
এই বংশে যাকে বলে গোবরে
পদ্মফুল, পড়ালেখায়
ভালো, নরম সরম। শক্তিধর
কিন্তু সত্যি টের
পেয়েছিল ঝড় একটা
আসছে। কদিন থেকেই এমন
কড়কড়ে রোদের মধ্যে
কথা নেই বার্তা নেই রোজ
বিকেলে জম্মের বৃষ্টি
নামছে আর সে কী গুমোট সে
কী গুমোট রে বাবা! এ যদি
ঝড়ের আভাস না হয় তো আর
কীসের?
হাওয়াটা বাড়ছে।
টিনের চালে মেহগনি
গাছটার ডালপালা সব
বাড়ি খাচ্ছে এখন।
দুয়েকটা পাতা এসে
পড়লো তার সামনেও।
শক্তিধরের তখন মনে
পড়ছে ঘরের পুব বরাবর
লম্বা টিংটিঙে নারকেল
গাছটার কথা। ঝড় যদি
বেশি বাড়ে, তাহলে
গাছটা সহ্য করতে পারবে
তো? যদি না পারে তাহলে এই
লম্বা টানা দেয়া
টিনশেড ঘরটার গতি কী
হবে? বাকি ঘর
বারান্দাগুলোর?
চারদিকে ঝুপ করে
অন্ধকার নেমে এলো।
বিদ্যুৎ বন্ধ করে
দিয়েছে। এখন একটু
হাওয়া বইলেই
বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়
এলাকায়, বিশ্রী
ব্যাপার। অবশ্য আজ তো
ঝড় আসার দিন, এমনিও
বন্ধ করত। শক্তিধরের
ঘরে একটা টিভি কী রেডিও
কিছু নেই, ভাঙাচোরা
মোবাইলটায় কোনোরকমে
কথা বলা যায়, ঝড়ের
সঠিক সংবাদ তাই সে জানে
না। কখন আসবে, কোথায়
আঘাত হানবে জানতে পারলে
হতো।
উঠোনের উল্টোদিক থেকে
হঠাৎ উলুধ্বনি ভেসে
এলো। শ্যাওলা পড়া ইটের
ঐ দোতলাটাতে পরেশ আর
রূপেশের ঘর। ওদেরই
বউয়েরা কেউ
সন্ধ্যেপ্রদীপ দিচ্ছে
বোধহয়। বোসপাড়ার তিন
তলা মসজিদটা থেকে
আজানের সুরও হাওয়া
কেটে কেটে এলো প্রায়
একই সঙ্গে।
ভর সন্ধ্যেবেলা অমন
আলিস্যি নিয়ে বোইসে
থাকতে নেই রে শক্তি-
আদুরে গলাটা কোন
সুদূরের পার থেকে ডাক
দিয়ে ওঠে আচমকাই। কত
বছর পর এই গলা শুনল সে!
শক্তিধর বুঝতে পারে না
ডাকটা কোনদিক থেকে এলো।
ধুর! ওর মনের ভুল! ওই ডাক
এখন আসবেই বা কোত্থেকে!
মা তো সেই কত বছর আগেই এক
দিন টুপ করে মরে গেল।
তবু মার আওয়াজের মতো
কথাটায় যখনই তার মনে
হলো আসলেই এমন আলসি
দিয়ে বসে থাকা ঠিক
হচ্ছে না এই অবেলায়,
অমনি বাতাস কেটে কেটে
সেই আদুরে ডাকটা আবার
ভেসে এলো-
দেহিচিস কীরাম হাওয়া
হচ্চে! এ্যাহোন কেউ
এরাম কইরে বোসে থাহে!
ডাকটা সারা গায়ে মেখে
নিতে নিতে সে উঠে
দাঁড়ায়। এই ঝড়ো
হাওয়ার প্রথম ঝাপটার
সাথে মা এসেছে এ
বাড়িতে! মা মা মা মা মা!
শক্তি মনে মনে প্রাণ
ভরে ডাকে। এত বছর পরে
সেই তারার দেশের
মানুষটার কণ্ঠের
মায়ায় সে যেন হঠাৎ
সেই ছোট্ট ছেলেটা হয়ে
গেছে। সত্যি সত্যি যেন
অবিকল সেই মা মা ঘ্রাণ
ফিরে এসেছে বাড়িটায়।
সেই যে, যেবার খুব ঝড়
হলো লক্ষ্মীপুজোর দিনে,
এমন ভর সন্ধ্যেবেলায়,
লালপেড়ে সাদা শাড়ি
পরা মা ওকে বুকের ভেতর
নিয়ে বসে ছিল ঘরে।
খুড়িমা, সৃষ্টি,
ঠাকুরদা- সবার মুখের
হাসি নিভে গিয়েছিল
ততক্ষণে, ঠাকুরদার
দোকানের ছেলেগুলো
গোলার ধারে দাদুর
কাছারিতে বসে ছিল,
সেদিন ঘিয়ের ময়ান
দেয়া আটার লুচি আর
নারকেল ভেজে ছোলার ঘন
বাল হয়নি এ বাড়িতে।
আজ এই ঝড়ো দিনে এত বছর
পরে শক্তিধরের হঠাৎ সেই
লুচি খেতে ইচ্ছে করে,
ঘিয়ের ঘ্রাণে জিভে জল
আনা ফুলকো ফুলকো লুচি।
মা, কতদিন লুচি খাই নেই!
আমার খুব লুচি খাতি
ইচ্চে হচ্চে জানো!
ছোট্ট শক্তি যেন মায়ের
আঁচল ধরে আবদার করে,
যদিও মার আঁচল খুঁজে
পাওয়া তো দূরের কথা,
তার দেখাই মিলছে না
কোথাও, কেবল কণ্ঠটা
ভেসে আসছে কোথা থেকে।
শক্তির কথা শুনে অদৃশ্য
মার কি মন কেঁদে ওঠে? মা
কেমন ভেজা গলায়
তাড়াতাড়ি বলে ওঠে- আয়
বাবা, ঘরে আয়। বৃষ্টি
হবে এ্যাহোন।
শক্তিধর ঘরে যায়,
সত্যিই তো বৃষ্টি এই
এলো বলে। ঘরটা
ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।
আন্দাজে টেবিল হাতড়ে
ছোট্ট টর্চ লাইটটা
জ্বালে সে। অন্য সময় এ
শুধু কাজে লাগে
রাতবিরেতে কলপাড় আর
ল্যাট্রিনে যাওয়ার
সময়। ঘরের অন্ধকার সেই
টিমটিমে আলোতে ঈষৎ ফিকে
হয়।
ওরে শক্তি, শুনিচিস,
রূপেশ এই জাযগা বোলে
বেইচে দেবে- মার গলা
শুনে শক্তিধরের ভালো
লাগে। এতক্ষণ
সাড়াশব্দ না পেয়ে ও
ভেবেছিল মা চলে গেছে।
শুনিচি মা- ঠান্ডা
গলায় জবাব দেয় সে।
এ তোর বাপ-ঠাকুরদার
ভিটে, বেচতি বেচতি সব তো
বেচিই দিলি শক্তি।
বাপ-ঠাকুরদার নাম এমন
কইরে মুছে ফেললি চলে!
শক্তি জবাব দেয় না।
চোখের সামনে আবার সেই
পুরোনো
দরদালানওয়ালা
বাড়িটা ভেসে ওঠে। এ
জায়গা তখন ঠিকঠাক শহর
হয়ে ওঠেনি। ত্রিশ বিঘা
জমির ওপর ছড়ানো নারকেল
বাগান, ঘাট বাঁধানো
পুকুর, ঠাকুরদার পাকা
দোকান যাকে লোকে চিনত
সুনীল স্যাকরার দোকান
বলে, কাছারিঘর- সব যেন
ফিরে ফিরে আসে আবার।
বাড়ির প্রাচীরের ভেতর
তিনটা বড় টানা আলাদা
টিনশেড দালান, বাবাদের
তিন ভাইয়ের, তারপর
দোতলাটা হলো একটু একটু
করে। ঠাকুরদা আর বাবা
খুড়োরা মিলে একদিন কেমন
হইহই করত এ বাড়ি, সব সময়
কেমন গমগম করত উৎসবের
দিনের মতো।
তারপর একদিন সব ভাগ হলো,
সব। দালান, দোতলা, গাছ,
মাটি, সবকিছু। সময়ে ভাগ
হলো, সময়ে সব চলেও গেল
অন্য হাতে। সব যেতে
যেতে এখন কেবল খুব খুব
একা হয়ে টিকে থাকলো
নড়বড়ে এই থাকার
ঘরগুলো। ছেলেপুলে
লেখাপড়া কাজকর্ম না
শিখলে বাপ দাদার জমি
বেহাত হতে আর কতদিন
লাগে! সুনীল স্যাকরার
চকমেলানো বাড়ির
জায়গায় তাই অন্যদের
উঁচু উঁচু
ফ্ল্যাটবাড়ি আর
দুতিনটে অনামি
কোম্পানির
অ্যাপার্টমেন্ট উঠতে
সময় লাগেনি। সেইসব
উঁচু উঁচু নানা কায়দার
বাড়ির মাঝে শ্রীহীন এই
বাড়িটা যেন একটা
বেমানান বিচ্ছিন্ন
দ্বীপ।
বসাকবাড়ি মোড়ের বড়
বড় বাড়িগুলোতে থাকতে
আসা আজকালকার মানুষেরা
বসাকবাড়িটা চেনে না,
যারা বাড়িটা চেনে তারা
দেখেনি তাদের
ফ্ল্যাটবাড়ির ঝকঝকে
টাইলসের নিচেই পলি আর
বালিতে দম হারানো
পুকুরটার রূপোলি জল,
দাদুর দোকানে থরে থরে
রাখা সোনার গয়নার
ঝিলিক। রূপেশ এই
অবশিষ্ট সাতাশ কাঠা
জমিটুকুও আর রাখতে
চাইছে না, বেচে দিয়ে
নাকি ওপারে চলে যাবে।
কতবার রূপেশকে বলতে
চেয়ে পারেনি। কী বলবে!
বছর দু'বছর পর এই জমি
বেচা টাকাটুকু তো
তারও প্রধান সম্বল
বলতে গেলে। শহরের ওপর
এত বড় জায়গা থাকতে এই
যুগে কপাল লাগে! আর
তাছাড়া জমি বেচার জন্য
রূপেশ পরেশদের
অজুহাতের অভাব আছে
নাকি? সেদিন রূপেশ
কথায় কথায় বলছিল এইসব
লক ডাউনের জন্য নাকি
সবার কাজকর্ম বন্ধ,
হাতে টাকার যোগান নেই
মোটে, এ সময় অন্তত
দু-তিন কাঠা জমির
খদ্দের পাওয়া গেলে
লাভই হয়, আপাতত অভাব
মেটে সবার। হবে হয়তো-
সেদিনের মতো আজও ভাবে
শক্তিধর। তবে মার সঙ্গে
এ নিয়ে কথা বলতে
বিব্রত লাগে। মা কেন যে
এ কথা তুললো!
ওইসব কথা কতি ভালো
লাগতিচে না মা, বাদ
দ্যাও।
ফোঁস করে একটা ভারী
শ্বাস পড়ল ঘাড়ের
কাছে। মার কি কষ্ট
হচ্ছে? অথচ ওর তো মনে
হচ্ছিল মা যদি এখন তার
কপালে একটা চুমু দিত!
শক্তিধর চোখ বুজে
অপেক্ষা করে এক দুই তিন,
অজস্র মিনিট। না, মার
সাড়া মেলে না কোথাও।
মা মা মা মা মা- ডাকটা
গলা দিয়ে উঠেও থেমে
যায়। মা মনে হয়
বাড়িটার দুঃখেই আবার
টুক করে চলে গেল।
কড়কড় করে বাজ ডাকছে।
বাইরে এখন তুমুল
বৃষ্টির তোড়। টিনের
চালে মনে হয় শত শত
ছেলেরা গোল্লাছুট
খেলছে। সৃষ্টির
নাতনিটা, ঐ যে রুনু না
রানু কী নাম এই ঝড়
বাদলায় আজ খাবার নিয়ে
আসবে তো! ওদের সাথেই তার
খাওয়া, বিনিময়ে মাসে
মাসে হাজারটা টাকা দেয়
সে। খিদির হোসেনের
আড়তের কাজটা তার চলার
মতো টাকা যোগাত এই
বিশ্রী সময়টার আগেও।
শুনেছে সবকিছু নাকি
আবার খুলে দেবে- অফিস,
আদালত, স্কুল। খিদিরের
চালের আড়ত, বড়বাজার
সব খুলে যাবে তাহলে
আবার। খুলুক, আর
এমনধারা বসে থাকতে ভালো
লাগছে না। লোকের মুখ
দেখা নেই, দুটো কথা বলার
লোক পর্যন্ত নেই- বাজে
একেবারে। আর টাকাও একটু
একটু করে কমে আসছে
সত্যি।
খিদেয় পেটটা মোচড়
দিচ্ছে, দরজার বাইরের
চায়ের দোকানটা থেকে দু
প্যাকেট বেকারি
বিস্কুট কিনেছিল কদিন
আগে, তার একটা বের করে। ঐ
দোকানে এই তো দুমাস
আগেও রাতের বেলায় চা
খেতে ওরা, আর এখন একটা
মাছিও ওড়ে না বলে দুঃখ
করছিল আলেয়া বিবি; আয়
রোজগার কমে গেছে ওর
দোকানের! কী দুনিয়া, কী
জীবন এলো পৃথিবীতে!
দাঁতের নিচে বিস্কুটের
মচমচ শব্দে কেমন আরাম
লাগে শক্তিধরের, স্বাদও
ভালো এটার। বাইরে
তান্ডব বাড়ছে ঝড়ো
হাওয়ার। নারকেল
গাছটার কথা আবার মনে
হয় তার- টিকবে তো
বাড়ির চিহ্ন ধরে রাখা
একমাত্র গাছটা? আচ্ছা,
বাড়িটাই টিকে থাকবে
তো শেষ পর্যন্ত? এই
বাড়ি আর ঐ গাছটা তো
তারই মতো অশক্ত
ভঙ্গুর! তারই মতো একা
যার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে
চলে লোকে! মা বলত বিয়ে
থা না করলে মানুষ
বয়সকালে একা হয়ে
যায়, মার কথাটা আজকাল
খুব মনে পড়ে তার, সত্যি
কথাই এটা। আচ্ছা মা কি
জানত একটা জমজমাট
বাড়ির ইটের
গাঁথুনিগুলো,
সিমেন্টের পিলারগুলো,
শ্যাঁওলা পড়া
সিঁড়িগুলো কেন এক সময়
খুব একা হয়ে যায়?
মুখের ভেতর বিস্কুটটা
কি বিস্বাদ ঠেকে হঠাৎ?
ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে
লালচে হয়ে যাওয়া জলের
বোতল থেকে ঢকঢকিয়ে জল
খায় সে। টর্চের আলো
কেঁপে গেলে দরজার দিকে
তাকায় শক্তিধর,
সৃষ্টির নাতনি খাবারের
থালা নিয়ে ঢুকেছে,
আরেক হাতে সস্তার
বাহারি ছাতার বাঁট।
মেয়েটার হাত থেকে
থালাটা নেয় সে।
ঝড়টা এদিকে আসি নেই
দাদু। কলকাতায় গেচে-
মেয়েটা হাস্যোজ্জ্বল
মুখে খবর দেয়।
ওহ্। তালি তো ভালোই
হইচে। তয় এই ঝড় থামতি
সময় লাগবিনে।
মেয়েটা মাথা নাড়ে।
তারপর ছাতাটা নামিয়ে
রাখে জায়গায়
জায়গায় প্লাস্টার
ওঠা মেঝেতে। ওর কাছে
মুখ এগিয়ে নিয়ে বলে-
দাদু, রূপেশ খুঁড়োরে
বুঝোয়ে কোইয়ো তো
বাড়িটা য্যানো না
ব্যাচে। এ বাড়ি না
থাকলি আমরা যাবানি
কোয়ানে!
এই মিটমিটে আলোতে
মেয়েটার চোখ দেখা যায়
না তবু শক্তিধর জানে সে
চোখে রাজ্যের বিষাদ আর
দুশ্চিন্তা থমকে আছে।
কলেজে পড়ে মেয়েটা,
অথচ এই বয়সে কত
চিন্তাই না করতে হয়
ওকে! আচমকাই ওকে কিছু
বলার সুযোগ না দিয়ে
ছাতাটা তুলে নিয়ে রুনু
অথবা রানু ঘর ছেড়ে
বেরিয়ে যায়।
মেয়েটা বেরিয়ে যেতে
বাড়ির প্রসঙ্গে এই
প্রথম শক্তিধরের একটা
নতুন কথা মনে হয়।
আজকের এই ঝড়জলে এ
বাড়িটা যদি টিকেই যায়
শেষপর্যন্ত তাহলে
রূপেশকে সে একবার বলে
দেখবে কথাটা। বুঝিয়ে
বললে রূপেশ যদি মানে!
একটা ক্ষীণ আশা মনে
জাগিয়ে রাখতে রাখতে
শক্তিধরের মনে হয় বহু
বহুদিন পর এইটুকু শক্তি
তার ধরতেই হবে, তার একলা
অশক্ত জীবনটার জন্য
হোক, রুনু বা রানুর জন্য
হোক আর নাহলে কেবল অতীত
হারানো এই
বসাকবাড়িটার জন্যই
হোক- রূপেশকে একবার বলা
দরকার।
শক্তিধর চোখ বুজে সেই
ছেলেবেলার দরদালান,
পুকুর, দোতলার ছাদের
স্পর্শ নিতে চায়। এই
বদলে যাওয়া দিনে আকাশ
হারানো একটা ভাঙাচোরা
একলা বাড়ি থাকুক না
বেঁচে তার মতো করে!
বাড়িটার জন্য তার
ছোট্টবেলার মতো মায়া
লাগে, আঁকড়ে ধরতে
ইচ্ছে করে এই বুড়ো
পুরনো বাড়িটা। আর তখন
হঠাৎই এক পশলা এলোমেলো
বাতাস ঘরে ঢুকে পড়ে,
সেই বাতাসের সাথে
মায়ের চুমুর মতো একটা
আলতো আদর ছুঁয়ে যায়
তার কপাল!