অবশেষে একটি কোঠার
নিয়তি।
দূরে দূরে সরে যায়
ছিপছিপে নদী উবু জনপদ,
আগাছার সমাহারে পড়ে
থাকে ল্যান্ডস্কেপ,
দক্ষিণমুখী জানালার
কপাটের কবজা খুলে আসার
পরে ছায়ার বিমর্ষ পতন।
তক্তপোষের ওপরে দিবসের
ছায়া এলিয়ে আছে।
দীর্ঘতর মলিন আলোতে
মেঘের ছায়া পড়েছে। ঘরের
ভিতরে মেঝে জুড়ে নানান
পোকামাকড়ের অবস্থান,
ভেঙ্গে যাওয়া মাটির
কলসির টুকরো টাকরা।
দরজার চৌকাঠের ওপারে
উঠোন, উঠোনের মধ্যে
প্রাচীন বৃক্ষ, ডাল
থেকে ঝুলছে ঢিল বাঁধা
মানতের লাল সুতো। কিছু
সুতো ছিঁড়ে পড়ে আছে
ঘাসের ওপরে। পাশে ময়াল
সাপ খরগোস গিলছে। পথ নয়,
ধূসর জমিতে কাঠকয়লার
রেখার মতন মানুষের পায়ে
চলার দাগ। দুই ধারে
সমতল তরঙ্গহীন জমি।
গোটা কোঠাটির অন্দরে
অসাম্য বিবরণ। টেবিল
থেকে গড়িয়ে কাপড় ছুঁয়ে
ছিটেফোঁটা আলো, অন্ধকার
পোষা বেড়ালের যেন
স্থির। কোঠার ভিতরে
মগ্ন বনবাস আছে। বিষয়ের
ব্যাখ্যা সরে গেছে।
চুইয়ে গড়ানো ব্যাখ্যার
ব্যাখ্যা অনাদরে
অযত্নে। হঠাৎ ছায়া শরীর
নয়, কিন্তু অস্পষ্ট
কোনো ছায়ার মতো কোঠার
অন্দরে প্রবেশ করে,
কোনো কোনো জিনিস অন্য
স্থানে সরিয়ে রেখে দিয়ে
এলো করে দিয়ে গেল। আবার
কিছু জিনিস যেমন চেয়ার,
জলচৌকি, দেওয়ালে গাঁথা
মাদুর, দ্রুততর
ম্যাজিকের বিশেষ কিছু
বস্তুর নামা ওঠা,
কিন্তু শব্দহীন, ভাঙ্গা
অনুরণনের মধ্যে চলমান।
জানালার ওপাশে বহুদূরে
গ্রামজীবন, বনগামী পথের
পাশে। দলছুট গবাদি।
পাখির ডাক ঝিমানো, দূরে
মাঠকর্মীর মাঠে
চেল্লানির শব্দ অনেকটা
রাত শেষের ক্ষীণ
প্যাঁচার ডাক একটানা।
গাছের পাতায় পাতায়
বাতাস শীতল। বৃষ্টি হতে
পারে। উত্তর পশ্চিম
কোণে মেঘ কালো। আয়োজন
চলছে ঋতুমাফিক ঝড়ের।
বইয়ের পাতা পাশ ফিরল
নতুন ভাঁজে, অনন্য
বিবরণে। শুরু হল প্রথম
লাইন থেকে মনোযোগ,
পুরানো আদ্যিকালের
বিন্যাস আর ধারালো
কাঁটাচামচের একঘেয়ে
সংলাপ।
শুধু কেনই বা রক্ত
মাংসের জন্মদিবস ফিরে
ফিরে আসে। কেনই বা
পরমান্ন, কেক আর
মোমবাতি জ্বালানো, আদর
শ্রদ্ধা আহ্লাদ আমোদ
বেড়ালের নরম লোমশ
শরীরের মতো পুতু পুতু
অনুভব। কেই বা বলতে
পারে, কোনো একটি মহৎ
চিত্রকলার জন্মদিবস ?
বিবাহ সঙ্গম ও
পারলৌকিক ক্রিয়া
অনিবার্য ধারায় কিছু
কাজকম্ম। নির্ধারিত
সময় চিহ্ন ধরে
অনুষ্ঠানসূচি
অনিবার্য যাপনের
শৃঙ্খল। দিন সুন্দর
রাত্রি সুন্দর প্রভাত
নরম, দুপুর তেজি
ডানপিটে।
মেঝের ওপরে পড়ে থাকা
লিনোকাটের ছাপ জেগে
উঠছে। বনভূমির ফালি জলে
ঘড়িয়াল, উঃ উঃ... উদের
জলডুব ডাক, মাথা উঁচু
উঁচু দানবীয় বৃক্ষের
শাখা প্রশাখা থেকে
শুকনো পাতার পতন।
পরাজিত সৈনিকের দলের
আহত শব্দ।
ক্যানভাস দেওয়ালে ঠেস
দিয়ে রাখা, হ্যান্ডমেড
পেপারে জলরঙয়ের
বিন্যাসগুলি ছড়ানো
ছেটানো। গ্রামচিত্র,
মাটির ওপরে কুমির বিচরণ
করছে। ধবধবে সাদা হাঁস
নদীর পারে। ডিঙ্গির
কান্না জলরঙয়ের সাথে
গড়িয়ে পড়ছে। ফুলদানি,
লন্ঠন, ভাঙ্গা কাঁচের
জার, পিচের গাড়ি,
রোডরোলার, ইরানি
ল্যাম্প। সভ্য শহর থেকে
অনেকদূরে একটি
হাবাগোবা জনপদে
বৃষ্টির জমে থাকা জল।
পাবলো পিকাসোর
গুয়্যেরনিকা রচনায়
অনুপ্রাণিত হয়ে কয়েকজন
অনুকরণবাদীর কয়েকটি
প্রতিবাদী রচনা।
বিভূতিভূষণের
আরণ্যকের ভাবধারায়
কিছু ল্যান্ডস্কেপ।
একটি মানুষের মস্তিস্ক
রাখা আছে সাদা কাঁচের
প্লেটের ওপরে। ইজেল,
রঙয়ের প্যালেট ফলের
শহরে উটপাখির ডিম
আমগাছে হালকা হলুদ
রঙয়ের মুকুল।
কোঠা ঘর স্টুডিও মাটির
উঠোন টালির কাঠের চালে
সজনে গাছের ছায়া। ছায়ার
নিচে শতচিহ্ন মাদুর।
একটি নোটবই। নোটবইয়ের
নিচে একটি খোলা ডায়েরি।
ডায়েরির পাতায় লেখা
ইন্দ্র দুগার
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নন্দলাল বসু এডগার
দেগাস ডুরার ক্লদ মনেট
পেরি অগাস্তে রেনোয়া
হেনরি মাতিস ক্যামিলি
পিসারো আইজ্যাক
লেভিতান...... দরজায় টোকার
শব্দ। ঠক ঠক ঠক... কেউ এল
বুঝি। কোঠার ভিতরে তেল
রঙয়ের ঝাঁঝালো গন্ধ।
থেমে গেল ক্যানভাসের
ওপরে ব্রাশের শব্দ।
দরজায় টোকার শব্দ শুনে
কোঠার পিছনের ফুঁকো
দিয়ে চলে গেল কেউ একজন।
কিন্তু কিছুটা দূরে
গিয়ে আবার ফিরে এল একজন
একটি মানুষের ছায়ার
ছদ্মবেশে। তুলে নিল
কয়েকটা বই। ছবি আঁকার
জন্য ব্রাশ। একটি ঝোলা।
বেড়িয়ে যাওয়ার আগে বলে
গেল,-ভাজা চিনা বাদাম।
ফিরে আসতে কয়েকদিন দেরি
হবে। শহরে যেতে হবে রঙ
কেনার জন্য। সাইকেলের
কিছু মেরামতি কাজ আছে।
আর কিছুক্ষণের মধ্যে
চারুবাবু এসে পড়বে।
জলরঙের মধ্যে জেগে উঠছে
একটি রেল স্টেশন।
ইঞ্জিনের ধোঁয়া।
স্টেশন চত্ত্বরে
কুয়াসা গড়াচ্ছে।
কিছুটা হালকা সাদা
কাগজের মধ্যে বাদামি
অন্ধকার, পাশে কাগজের
সাদা রেখে ক্রমাগত
বিন্যাস চলছে।
তুমি কি ট্রেনে করে
যাবে ?
তাই যাব।
এতটা পথ হেঁটে ? স্টেশন
তো অনেক দূরে ?
সাইকেল আছে।
চারুবাবু কখন আসবেন ?
ওয়ান আপ ১২৮৬,
নাসরিনপুর এক্সপ্রেস।
ওই ট্রেনেই তো তুমি
যাবে ?
তাই তো যাব, আর তো ট্রেন
নেই ?
তাহলে তোমার হাতে আর
সময় নেই। তাড়াতাড়ি যাও।
ও। তুমি তো আমাকে রঙয়ের
তালিকা দিলে না ?
আমি ভাবলাম তুমি নেবে
না ?
না দিলে কি করে নেবে ?
তুমি বলো লিখে নিচ্ছি।
লেখ, -ভেরিডিয়ান গ্রীন,
কোবাল্ট ব্লু,
প্রুসিয়ান ব্লু, খড়ের
মাঠের জন্য ইয়েলো অকার
সাথে স্কারলেট রেড,
দূরের সবুজ মাঠের জন্য
স্যাব গ্রীন, লেমন
ইয়েলো।
আর আখ্যানের জন্য
কিছু?
ক্যানভাস ? তিন বাই
আড়াই-চারটে, চার বাই
তিন-দুটো...ব্রাশ বারো দশ
চোদ্দ পনের আর ছয় নম্বর..
রেখার জন্য চারকোল,
তিসির তেল বড় দুই শিশি।
তাহলে বিষয় নির্বাচন
করে ফেলেছ ?
চূড়ান্ত নয়। ভাবনার
মধ্যে আছে।
আর কিছু ?
বিশ্ববিদ্যালয় বা আর্ট
স্কুল ভাবো...প্রদর্শনী
কক্ষ ভাবো...পথের গায়ক
ভাবো।
তোমার এতটা হেঁয়ালি
ভাবনার সঙ্গে পাল্লা
দিতে পারছি না।
তুমি তাড়াতাড়ি চলে
যাও। ট্রেন বন প্রান্তর
ছুঁয়ে অনেকটা বাঁক
নিয়েছে। আর সময় নেই।
দ্রুত চলে যাও। না হলে
যাওয়ার বিভ্রম তোমাকে
আঁকড়ে ধরবে।
কোঠার ভিতরে পোকাগুলি
ক্রমশ কাঠ ফুটো করছে।
আর থেকে থেকে চিনচিনে
শব্দ করছে। বেশ কিছু
ক্যানভাস টাল খেয়ে আছে।
কয়েকটি ক্যানভাসের
পাইন কাঠের ফ্রেমিংয়ে
দেওয়াল চুইয়ে বৃষ্টি
জলের দাগ দিয়েছে। সমস্ত
ক্যানভাসের মধ্যে
ছড়িয়ে আছে নানান
চিত্রের বিন্যাস।
অধিকাংশই নিসর্গ। আবার
বেশ কিছু ক্যানভাসে
স্টিল লাইফের বিন্যাস।
আলো আঁধারে ফুলদানি।
ক্রীম তোয়ালের সামনে
কিছু কাঁচা সব্জি-যেমন
ফালি কুমড়ো গোটা পেঁপে
পাশে ফুলকপি বসে আছে
বৈষয়িক গিন্নির মতোন,
এলিয়ে আছে কয়েকটি বিট
গাঁজর আর পালং পাতা।
অন্য একটি স্টিল লাইফের
বিন্যাসে শুধু আপেল
ছড়ানো ছেটানো, পাশেই
সাদা কাপড়ের ওপরে
রক্তাক্ত ছুরি কাঁচের
গ্লাসে অর্ধেক জল পিছনে
একটি পানামা টুপি। অন্য
একটি স্টিল লাইফের
বিন্যাসে একটি
কঙ্কালের মাথা, একটি
মদের বোতল ছেঁড়া চামড়ার
জুতো। প্রতিটি ছবির
নিচে লেখা আছে,-স্মৃতির
উদ্দেশে বিশ্ববিখ্যাত
শিল্পিদের নাম –হেনরি
মাতিস পল সেজান পল
গ্যগা ভিনসেন্ট ভ্যান
গঘ গোপাল ঘোষ অমৃতা
সেরগিল... আবার চারদিকে
ছড়ানো ছেটানো ছবিতে
ক্যানভাসে নদীর জল উপছে
ভেসে যাচ্ছে। ধানের
মাঠে আগুন বিন্দু সমগ্র
হয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ
করছে। আবার সান্ধ্য
কুয়াসার আবহে কাঠকুটো
পুড়ছে। কেটলিতে চায়ের
জল ফুটছে পাশে তিনজন
ক্ষেত মজুর কথোপকথনে
মগ্ন। অন্য একটি
ক্যানভাসে দেখা যাচ্ছে
এক মহিলা কোলবালিশের
ওপরে এলিয়ে আছে।
বহুদূরে একটি মানুষের
মিছিল হাতে তাদের
কুঠার। আবার বেশ কিছু
ছবি সাংঘাতিক ভাবে
অভিব্যক্তিবাদের
শিকার। কোঠার ভিতরে
ছড়িয়ে আছে তেল ও জল
রঙয়ের টিউব, বোর্ড পিন,
রঙের ব্রাশ মোছার জন্য
ফালি কাপড়, রঙ মিশ্রণের
জন্য প্যালেট। তিসির
তেলের গন্ধ ঝিম ঝিম
করছে। একটি ভাঙ্গাচোরা
টুল, নড়বড়ে, একটু নড়লেই
কাত হয়ে হেলে যাচ্ছে।
কোঠার দরজা একটু ফাঁক
হয়ে গেল। আলতো
অন্ধকারকে আহত করল
উঠোনের ফালি রেখার আলো।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে
চারুবাবু বলল,-- ঘাটে
নৌকো বেঁধে এসেছি।
দুপুরের জোয়ারে ফিরে
যাব।
একটা ছুতো, একটা বাহানা,
হাঃ হাঃ ঘাটে বাঁধা
নৌকো ...বনভূমির মধ্য
দিয়ে নদীর প্রবাহ নিয়ে
এলেন চারুবাবু ?
বিশ্বাস করো, একটা
বাহানা গড়ে নিতে হয়।
বেশ কয়েকদিন পরে এলেন
যে ?
কেমন জানি গোলমাল হয়ে
যাচ্ছে সব। তোমার এখানে
আসার ভাবনাটি নিজেই কেন
যে বারে বারে হত্যা
করেছি। কে জানে ? যাক গে,
তোমার কটা ছবি সম্পূর্ণ
হল বলো তো?
একটাও না। ছবি শুরু
করতে পারছি কিন্তু শেষ
করতে পারছি না। কোনো
কারণ নয়, অথচ কেন
অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে,
এমনই হয় বোধ হয়।
সবটাই খসরা, তাঁরা
বলেছেন।
কে বলেছেন ?
পৃথিবীর সব চিত্রকর।
শুনতে পারছেন একটা কিছু
ঘোষণা হচ্ছে না ?
ওরা প্রতিবার এমন ঘোষণা
করে, ঘোষণাটি গ্রাম
পঞ্চায়েতের দায়িত্বের
মধ্যে পড়ে, কিন্তু হয়, হয়
তো হয়, প্রবল অথবা না
হওয়ার মতন কিছু হয়ে
যাওয়ার মধ্য দিয়ে।
ঘূর্ণিঝড়।
তাই বলছে। শুনতে পারছি।
কিন্তু আকাশ দেখে বোঝা
যাচ্ছে না ঝড়বৃষ্টির
হতে পারে।
নদী নিয়ে এলেন যে,
প্রতিবার আসেন সাইকেল
চালিয়ে আর আজ এই প্রথম
এলেন ঘাঁটে নৌকো বেঁধে।
আমি কোঠার ভিতরে অন্য
কাজগুলি সেরে নিই।
তোমার পেইন্টিংগুলি
আলাদা করে রাখি, কিন্তু
কোঠার ভিতরে আরও অনেক
ছবি ছিল যে...বাকিগুলি
কোথায় গেল?
ফেলে দিয়েছি।
মানে?
মানে আর কি, কেরোসিন
ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছি।
সে কি?
ঘরের ভিতরে যে ছবিগুলি
দেখছেন সেই ছবিগুলিই
শুধুমাত্র নির্বাচন
করেছি। বাকিগুলি মনে হল
ফেলে দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া
ছাড়া আর উপায় ছিল না।
কোঠার ভিতরে আর জায়গা
নেই।
কেন তা করলে ?
আবর্জনা রেখে কি করব ?
আমি জায়গা করে গুছিয়ে
রেখে দিতাম। একটু
অপেক্ষা করতে পারতে।
এখন তা হলে কি কি
বিন্যাস রাখলে ?
ল্যান্ডস্কেপ,
স্টিললাইফ, প্রতিকৃতি,
আত্মপ্রতিকৃতি, সময়,
ব্যভিচার, একাকীত্ব,
বন্দিনী, বেদনা, হিংসা,
নির্বাচিত বিরামচিহ্ন,
পুনরুত্থান, স্মৃতির
সিরিজ, শহর আর বাকি সব
টাইটেলগুলি।
ঘোষণার শব্দ এগিয়ে আসছে
না?
প্রগাঢ় হচ্ছে মেঘ।
বাতাস জোরদার হচ্ছে।
ছায়া আলো অস্বাভাবিক
হয়ে উঠছে। কেমন
পাল্টাচ্ছে চারদিক।
ইজেলে সাদা ক্যানভাস
প্রস্তুত করি তাহলে ?
শুরুতে কি একবার কাগজে
জলরঙয়ের ছোঁয়া দেবে না?
এমনভাবে দিন থাকে না
রোজ, একটা বিন্যাস একটা
রচনার চেষ্টা যদি খসরা
হয়ে ওঠে।
# # #
শব্দ কখনো কখনো নিসর্গ
হয়ে ওঠে। তা যদি
দুয়ারের শব্দ হয়,
জলরঙয়ের ছড়ানোর শব্দ বা
ক্যানভাসে চলমান তুলির
শব্দ অথবা মাটির ঘরে
মাটি ল্যাপার শব্দ।
শব্দ নিসর্গ বদলে দেয়
ক্রমে ক্রমে। দিনের
দুয়ার বদলে দেয় রাতের
দুয়ারকে। রাতের দুয়ার
দিনের দুয়ার থেকে
নিঃসঙ্গ হয়। ঢেউ আছড়ে
পড়ছে, কিন্তু রঙয়ের
মধ্যে বাতাসে ঝড়ের
প্রবল আবেগ, মাঠ জমিতে
জল ছলাৎ ছলাৎ মাটি আলগা
হয়ে আসছে। নদী বাঁধ
ভাঙ্গছে, বাঁধ ভেঙ্গে
যাওয়া জল বনভূমির পথ
পার হয়ে গ্রামীণ জনপদে
প্রবেশ করে চাষবাসের
জমি ভাসিয়ে দিয়েছে।
চারুবাবু পাশের একটি
টেবিলে ঝুঁকে পড়ে কি
যেন লিখছে।
ক্যানভাস রঙয়ের
বিন্যাসে স্নান করছে।
মাটির বাড়ি গড়া হয়েছিল।
পুনরায় কালো রঙয়ের সাথে
সাদা রঙ মিশিয়ে ধূসর
টেম্পারা করে বাড়ির
অস্তিত্বটিকে মুছে
দেওয়া হল।
বৃষ্টি থেমেছে। টানা
দুইদিন ঝড় বৃষ্টি, জমি
জনপদের সমস্ত বিবরণ
মুছে গেল, মেঘ ভেঙ্গে
গেল, তেরো হাত বন্যার
ষোল হাত জল। প্লাবনের
জল ভেদ করে দুই একটা
বৃক্ষ মাথা বার করে টিম
টিম তার ওপরে পালে পালে
পাখি নেউল কাঠবেড়াল
বনবিড়াল। চারুবাবু আর
তার পাশে চিত্রনীল একটি
মাটির ঢিবির ওপরে
দাঁড়িয়ে চমৎকার একটি
চিত্রকলা প্রদর্শনী
দেখতে দেখতে বিভোর হয়ে
গেল। ওরা দুইজনে দেখছিল
সমস্ত বিবরণ, আর খুঁজে
যাচ্ছিল একটি কোঠার
নিয়তি...চারদিকে
কোঠাহীন নিসর্গ......