তাহার এই বেশ ভালো
হইয়াছে। তাহার আনন্দ
হইয়াছে যথাযথ। কথাটা
একপ্রকার একদা
বামফ্রন্ট যেমন
ঠাকুরদেবতাদিগের
প্রতি ভরসা হারাইয়া
পল্লিবাসীদের সচেতন
করিতে পূজা মণ্ডপের
বাহিরে স্টল বসাইত,
তাহার মতো শুনাইতে
পারে। আবার কেহ না
চাহিলে তিনি তো
শুনিবেনই না, তাহার
কাছে ইহার কোনোরূপ
প্রতিফলন নাই। যাহা
হউক, আস্তেধীরে
ব্যাপারটা ওয়াড়
ফাটাইয়া তুলোর ভিতরে
প্রবেশ করা যাউক।
এক্ষণে বলিয়া রাখিলে
সুবাধা হয় যে সামাজিক
দুরত্ব রাখিতে রাখিতে
সেই বিষয়ে ডক্টরেট
করিয়া ফেলিয়াছেন এমন
মানুষও আপনাদের
আশেপার্শ্বে দেখিতে
পাইবেন। তাহাদের মধ্য
হইতে একজনকে যদি
র্যাণ্ডম স্যাম্পেল
থেকে কালেক্ট করা
যায়,তাহা হইলে
পূর্ববর্তী প্যারার
তাহার বলতে কি বা
কাহাকে বুঝাইতে চাহিয়া
হইয়াছে তাহা অনুধাবন
করিতে বিশেষ সুবিধা
হইয়া থাকে। আলোচ্য
ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি
খানিক কমলাকান্তের
ন্যায়। তাহার
পরিপার্শ্ব দিয়া মাঝে
ঝড়ঝাপ্টা অনেকই
গিয়াছে। তিনি
বটবৃক্ষের ন্যায় অচল,
স্থবির। তাহার হাতের
রেখা বাড়িতে বাড়িতে
কপালে প্রবেশ করিলেও
তাহার কোনো পরিবর্তন
লক্ষ্য করা যায় নাই,
কোণো স্ত্রীলোকের
হাতের রেখার সহিত
গাঁটছড়া বাঁধিতে পারে
নাই। ইতিমধ্যে রাজ্যে
একবার ও কেন্দ্রে
বারকেয়ক সরকার বদল হইয়া
গিয়াছে। তাহাতেও তাহার
ব্যাচেলর থেকে
মিস্টার্স (মিসেস এর
পরিবর্তিত লিঙ্গ
বোঝাইতে চাহিয়া) ডিগ্রী
লাভ করা হয় নাই।
ক্রমাগত সাপ্লির চোটে
তিনি প্রাকারান্তরে
তিনি মিঙ্গেল হইবার
প্রচেষ্টা হইতে নিজের
স্বহস্ত ধুইয়া
ফেলিয়াছেন। তিনি খানিক
ইহাও যে বুঝিতে পারেন
নাই যে ‘আপনার ভবিষ্যৎ
আপনার হাতেই’ বলে যে
বাক্যবন্ধ গণশৌচালয়ের
দেওয়ালে লিখিত হইয়া
থাকে, তাহা কতটা সঠিক!
ব্যাপার খুব সামান্য
হইলেও উল্লেখ করার মতো
যে, তাহার মস্তিষ্ক
প্রায় সেইভাবেই
নিউরোনগুলিকে নির্দেশ
দিয়া অভ্যাস করিয়া
ফেলিয়াছে যে, এখন
শুধুমাত্র একজোড়া জুতো
বা একজোড়া মোজা শপিং মল
থেকে কিনিয়া বাহির
হইলেই তাহার নিজেকে
দম্পতি বলিয়া মনে হইয়া
থাকে। ইহার পশ্চাতে যে
সেইদ্রব্যগুলি একটি
করিয়া কিনিবার সুযোগ
নাই, একথা তিনি বিশ্বাস
করিতে চাহেন না। অতএব
তর্ক এবং বহুক্ষেত্রে
তাহার দ্রব্যটি আর
কিনিয়া হইয়া ওঠে না,
এমনও বারকয়েক হইয়াছে।
বাইকের সিটের
পশ্চাতদিক যখন প্রায়
সমস্ত কোম্পানীই এমন
করিয়া দিয়াছে যে, কেহ
বসিলে সওয়ারীসমেত
তাহাদেরকে
বিক্রম-বেতাল বলিয়া
ঠাহর হয়, সেই বাজারেও
তাহাকে একলাই বাইক
চালাইতে হয়। তাহাকে
সরকার বা বিরোধীপক্ষের
ক্যাডারদের সোশ্যাল
ডিসট্যান্সিং
বুঝাইবার দরকার আছে কি
না সে নিয়ে কোনো মনোজ্ঞ
প্রবন্ধ প্রকাশের
প্রয়োজন নাই।
রেস্তোরাঁয় কাপল
স্টেবিলে বসিলে যাহার
উল্টোদিকে ভক্ভকে
শূন্যতা ছাড়া আর কেহই
থাকে না তাহাকে ডবল
বেডের প্রয়োজনীয়তা
বুঝাইতে যাবার কারণে এক
শয্যাদ্রব্য
বিক্রেতার দোকানের
কর্মচারীর কাজ
হারাইবার উপক্রম
হইয়াছিল। পরে অনেক
আলাপআলোচনার মাধ্যমে
তাহাকে বহাল রাখা
গিয়াছিল।
সিঙ্গেল বেডে শুইয়া
শুইয়া ঘুম আসিতে তাহার
কাছে যারপরনাই দেরি
করিয়া ফেলিয়া যখন
ফাইনালি জিভ কাটিয়া
আসিয়াই পড়ে, তখনও সেই
ঘুমকেও জড়াইয়া ধরিতে
লজ্জা পাইবার কারণে কত
যে বিনিদ্র রজনী তাহাকে
কাটাইতে হইয়াছে তাহার
ইয়ত্তা আজ অবধি নাই,
ফলস্বরূপ দপ্তরে
বিলম্ব ও উর্দ্ধতন
কর্তৃপক্ষের কাছে
রদ্দা জুটিয়াছে
বহুবার। তাহার
স্বপ্নের ভিতর সে
দেখিতে পায়, একটি
নির্জন রাস্তা। হ্যাঁ,
আপনি ঠিকই অনুধাবন
করিয়া ফেলিয়াছেন যে সেই
রাস্তায় তাহাকে একাই
হাঁটিতে দেখা যাইতেছে।
চারিদিকে কোনো
জনমনিষ্যি নাই। দূর
থেকে একটি আলোর রেখা
দেখা যাইতেছে। তার
কাছাকাছি যাইবার পর
তাহার মালুম হয় যে সেই
ল্যাম্পপোস্টোটিও
তাহারই মতো একা। এখানেই
তাহার স্বপ্নের ইতি ঘটে
নাই। সে আরো দেখিতে
পায়। সে আগাইয়া
চলিয়াছে, কি কারণে,
কিসের টানে সে বিষয় ঘুম
ভাঙ্গিবার পর তাহার
তেমন করিয়া মনে থাকে
না। তবে, যাহা মনে থাকে
তাহা ভয়ঙ্কর। তাহার আশে
তাহার ছায়াটিও নাই।
ছায়াটি দাঁড়াইয়া
রহিয়াছে। খানিক
শ্লেষের সহিত যে
হাসিতেছেও না তাহাকে
অবলোকন করিয়া, এমন কথাও
হলপ করে সে বলিতে পারে
নাই। সুতরাং
নিদ্রাভঙ্গের পর তাহার
হাতে জলের গ্লাসটিও
দিবার কেহই থাকে না।
অনেক আর্টিকেল বা গুগলে
বা অনেক সংবাদপত্রের
ক্রোড়পত্রে যখন
একাকিত্ব নিয়া ফিচার
প্রকাশ করা হইয়া থাকে,
সে সেগুলিকে যারপরনাই
গুরুত্ব সহকারে পাঠ
করিয়া, মুচকি ও ফিচেল
হাসি মিশ্রিত এক হাসি,
হাসিবার লোভ সামলাইতে
পারে না। তাহার কাছে
পাশে থাকার মতো ভগবান
তাহার শরীরে যে
অঙ্গগুলি দুটি করিয়া
দিয়াছেন, সেগুলি ব্যতীত
আর কিছুই নাই। যথা – চোখ,
কান, নাসারন্ধ্র.........
থেকে আস্তে আস্তে আপনি
কোথায় যাইতে চলিয়াছেন
সে সম্বন্ধে সম্যক
ধারণা তাহার আছে বলিয়াই
সে নিজেকে গুটাইয়া
ফেলিয়াছে। কোনো কোনো
সময় সাইকেলকেও তাহার
যথেষ্ট পরিমাণে দম্পতি
বলিয়া মনে হইবার কারণে
সে একদা কোনো প্রবন্ধ
লিখিয়া ফেলিয়াছিল।
তাহার যুক্তি ছিল,
সার্কাসে যে এক চাকার
সাইকেলের দুই পার্শ্বে
প্যাডেল করিয়া রমণীরা
সাইকেলটি চালাইয়া থাকে
সেটি হইলেই চলিত,
সাইকেলের দুটি চাকার
যৌক্তিকতা সেই অর্থে
তাহার কাছে নাই। এ নিয়ে
বিস্তর শোরোগোল পড়িয়া
যাইবে ও তাহাকে নিয়ে
সকলে উদ্বাহু হইয়া
নৃত্য করিবে এমন ধারণা
থাকার কথা ছিল না।
তথাপি ভাবিয়াছিল যে
তাহার পরে হয়তো বা
পাশবালিশসদৃশ কাউকে
পাওয়া যাইতে পারে। সে
তার যৌবনের কথা। এখন
মধ্যবয়সে আসিয়া সেসব
ভাবিয়া নস্টালজিয়ায় এক
কাপ চা বেশী খাওয়া ছাড়া
আর কিছুই করণীয় তাহার
নাই। এমনকি টেরি
পাকাইবার সময় অনেকসময়
নিজের প্রচ্ছায়াকেও তো
সেইভাবে দেখিতে পায় না
দর্পণে। অনেক কষ্টে
সাধ্যসাধনা করিয়া সে
বাছাধনকে টানিয়া আনিয়া
টেরিটি কাটার পর, যখন আর
একবার নিজেকে দেখিয়া
লইতে যাইবে দর্পণের
ভিতর, জামাটি বেল্টের
ভিতর ঠিকঠাক চেপে
বসিয়াছে কি না তখনই
প্রচ্ছায়াটি উধাও হইয়া
যায়।
তাহার কাছে, ভিড়ের
মধ্যে একা,
প্রগলভতাকেন্দ্রিক
নিজেকে একা ভাবিয়া শেষ
করে দিতে চাহিবার মতো
হাল আমলের পুরুষ বা
মহিলাদের বালখিল্য মনে
হইয়া থাকে। যাহার কাছে
দপ্তর হইতে বাড়ি
ফিরিবার পরে কলঘরে
নিজের গানের শব্দটিই
বেটোফেন, আর রাত্রে
নৈশভোজের সময় সুরার
পাত্র কেবলমাত্র একটিই,
তাহার কাছে এ সব
নিতান্তই আইনস্টাইনের
কাছে ডায়নামোর
কার্যপ্রণালী ব্যখ্যা
চাহিবার মতোই। সুতরাং...
একাকিত্ব বলিয়া যে
বিষয়টি নিয়া এত
বাক্যচর্বণ হইল তাহার
ভিতর কেহ
আত্মনির্ভরতার
সামান্যতম আভাস
খুঁহিয়া পাইলে তাহাকে
স্মরণ করিয়া দেওয়া
যাইতেছে, সমগ্র
ব্যাপারখানিই
কাল্পনিক। বাস্তবের
সাথে তাহার প্রচ্ছায়ার
কোনো সংযোগ আজ অবধি
আবিষ্কৃত হয় নাই।