প্রার্থনা
খুব বেশি মাথা তুলব না।
সামান্যই জল—কিংবা
পরিত্যক্ত ভূমি। কোমল
হেলেঞ্চার মতোই মাথা—
তুলবার আয়ু, দাও হে
প্রকৃতি জননী। জীবন পরম
আদরের, রেখো শুধু
অস্থিচর্মসার।
বার্নিশ আলোর ঝুটা কোষে
তুলে এই টুকু দাও! মেলে
দেয়া শাড়ির ভাঁজে
নিতান্তই গৌণ মৃদু
হাওয়া—সেটুকুই
নিশ্বাস হবে, এর বেশি
মোটে চাইব না। দিব্যি
দিচ্ছি— ছড়াব না
মর্মমূল, শাখাপ্রশাখা।
কত শীত, কাদাজলে পার হলো
প্রলম্বিত আয়ু! গায়ে
নিয়ে অন্যের পোশাক
লম্বা ঘুমে কাটিয়েছি
দিন! আত্মখননের পর
মাত্রই তো পেয়েছি অমৃত।
দোহাই তোমাকে, বিবর্তন
শিখে যাব, ছেঁটে নেব
ডানার বিস্তার। ইচ্ছের
অনন্ত প্রশাখা।
বাড়বাড়ন্ত গুটিয়ে নিয়ে
সামান্যই শ্যাওলা হয়ে
যাব। প্রণত প্রার্থনা
করি, এইটুকু ঘাসজন্ম
দাও।
কুমিরের খিদে
কুমির আছে জেনেও একদিন
জলে নামব।
বিকেলের পর্দায় তখন
আলোর ফড়িঙ পুচ্ছ নাচিয়ে
উড়বে। সামান্যই দূরে
কোনো গ্রাম, মায়ের মতো
ভালোবেসে অপেক্ষা
সাজায় নবান্নের থালায়।
গেঁয়ো কোনো বোন—
ভালোবাসা না শিখেও
ছুঁয়ে দেয় গাল। আর ঘেমো
গন্ধ নিয়ে নাংগা এক ভাই
রোদ মেখে ছুটে আসে। এক
হাতে ব্রাহ্মীফুল, অন্য
হাতে ফুটো বল— তাকে কি
দারিদ্র্য নাম ডাকা
যায়!
টানা রাত্রির বৃষ্টি
শেষে জলঝরা বর্ষার
নীরবতা, ঝালর উড়িয়ে
ফেলে যায় ধুলোর
উড়ানকথা। এইসব পিছুটান
ছিঁড়ে নিতে শ্বাসকষ্ট
হবে। তবু নামতে হবে
জলে। কুমিরেরা বহুদিন
ক্ষুধার্ত।
অনিশ্চিতের পর
রোদে পুড়ে যাচ্ছে জমি।
সেখানে কোনো পিঠ নেই।
চাষির অন্তর ভরে ওঠা
ফসল স্থিতধীর চোখে নিভে
যায়। সিঁড়িভাঙ্গা
মাটিতে শুয়ে আছে রাতের
অসুস্থ চাঁদ। চোখের
পাতায় ফুঁ দিয়ে ছুটে
গেছে দুষিত বাতাস। কারও
মনের ভিতরে আজকাল জলঝরা
বর্ষার নীরবতা। লসাগু ও
গসাগু সেরে স্কুলবালক
ঘুমিয়েছে অঙ্কের ওপর।
তার স্বপ্নে মাঠের
হুটোপুটি, বয়সের
কোলাহল। অজানা
অনিশ্চয়তা রাতের
জানালা ধরে বসে আছে।
ট্রেন নেই, বাস নেই,
ভেঁপু থামিয়ে লঞ্চেরা
দাঁড়িয়ে আছে। জলঘাট
কথিত বন্ধুর মুখের মতো
থমথমে। এবার আমাদের আর
পাহাড়ে যাওয়া হবে না।
জানি না কখন আবার অনন্ত
হরিধ্বনির পর পাহাড়
জাগবে, মানুষ জাগবে।
কাঁচাপাকা চুলের
পুরুষটিও শান্তিতে
ঘুমিয়ে আয়না দেখবে।
সকালের আলোয় মিলিয়ে
যাবে ডার্কসার্কেল।
অজস্র গ্রহাণু ভেঙে
প্রেমিকের প্রথম
স্পর্শের মতো আমরা জেগে
উঠব। মৈথুন শিল্পের দাগ
নিয়ে ফের যাব সান্দাকফু
অথবা স্বর্গরোহিণী।