নিঃসঙ্গ
লক্ষ-লক্ষ মাইল উঁচুতে,
মহাকাশে,
জনমানববিহীন ভাসমান
একটি স্পেস-স্টেশনে
পোস্টিং পেয়ে
এসে জয়েন করেছে এক
স্টেশনমাস্টার।
একদিন একটি রকেট এসে
প্রচুর
বোঁচকা-বুঁচকিসহ তাকে
নামিয়ে দিয়ে,
ফুয়েল-টুয়েল নিয়ে কোথায়
যে চলে গেল কোন আসমানের
ওপারে...
সে-ও কত দিন আগে!
মৃত্যুরও অধিক হিম আর
নির্জনতা...
মানুষটি একা-একা থাকে,
খায়, ঘুমায়-- ওজনহীন,
নিঃসাড়, নির্ভার...
মাঝে মাঝে নভোপোশাক পরে
বাইরে সাঁতার কেটে আসে
শূন্যে,
তখন সে বাঁধা থাকে
ধাতুরাংতা-রচিত সে-এক
লম্বা লাঙুলে,
স্টেশনের মাস্তুলের
সঙ্গে।
কাছে-দূরে কোত্থাও কেউ
নেই,
কোনো প্রেত-প্রেতিনী,
অথবা কোনো যম-যমী,
জিন-পরি, ভগবান-ভগবতী,
ফেরেশতা-ইবলিশ কাঁহা
কিচ্ছু নেই, কেউই ঘেঁষে
না কাছে, যে,
তার সঙ্গে একটু কথা
বলবে, কফি খাবে।
এমনকি মানুষটা যে একটু
ভয় পাবে, তারও উপায় নেই
নিজের সঙ্গেই তাই
নিজেরই মিথুন ও মৈথুন,
খুনসুটি, হাসাহাসি,
সাপলুডো খেলা...
কেবল রজনীস্পর্শা,
ভীষণবর্ণা এক
গন্ধরাজ্ঞী ফুটে থাকে
অবাধ, অনন্তরায়,
বহুকাল দূরে।
নির্বাসন
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে
আকাশ ঢাকা
গায়ে তার জ্বলে
কোটি-কোটি
প্ল্যাংক্টন
তারই মাঝে একা একটি
শ্যামলা মেঘে
সহসা তোমার মুখের
উদ্ভাসন।
হয়তো এখন আকাশ নামছে
ঝেঁপে
মেঘ ও মেঘনার ছেদরেখা
বরাবরে
ঝাপসা একটি মানুষীর
ছায়ারূপ
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে
অগোচরে।
দূর গ্রহে বসে ভাবছি
তোমার কথা
এতটা দূরে যে, ভাবাও যায়
না ভালো
ভাবনারা হিম-নিঃসীম
ভ্যাকুয়ামে
শোধনে-শোষণে হয়ে যায়
অগোছালো।
অথচ এখানে তোমারই শাসন
চালু
তোমার নামেই বায়ু হয়ে
আমি বই
তোমারই আবেশে বিদ্যুৎ
জাগে মেঘে
তোমার রূপেই ময়ূর
ফুটেছে ওই।
মধুকর আজ ভুলে গিয়ে
মাধুকরী
রূপ জপে তব,
কায়মনোগুঞ্জনে।
মনন করছে তোমারই
বিম্বখানি
ধ্যানে ও শীলনে, স্মরণে,
বিস্মরণে।
গন্ধকের এই গন্ধধারিণী
গ্রহে
তটস্থ এক বিকল জীবের
মনে
ক্ষার, নুন, চুন,
অ্যাসিড-বাষ্প ফুঁড়ে
চমকিয়ে যাও থেকে-থেকে,
ক্ষণে-ক্ষণে।
উপমান
তোমার মুখের ওপর ঝেপে
নেমে আসছে বেসামাল
কেশদাম, খেয়ালি
হাওয়ায়।
চুলের ফাঁক দিয়ে উঁকি
দিচ্ছে এক লালচে নির্জন
দুষ্টব্রণ, গণ্ডদেশে
তোমার--
যেন পুঞ্জাক্ষ আনারসের
ঝোপে এক ছোট্ট রূপদক্ষ
গিরগিটি...
অতিদূর অতীত থেকে ভেসে
আসে দূরগামী তূর্ণ
ট্রেনের সিটি।