এমনই এক রং, যাকে
শূন্যতা দিয়ে গুণ করলে
মণি নয়, মণির চারপাশের
একাকিত্ব চোখে পড়ে।
সমুদ্রের মতো একা।
মধ্যিখানে একবুক দ্বীপ
নিয়ে জেগে থাকতে আর
ভাল্লাগে না। বুজে যাও।
দুদিকের দুটি দ্বীপ জড়ো
করো ভুরুর কোণে। তারপর
অনন্ত মহাকাশ। কখনও
আলোর ঝলক একছুট্টে চলে
যাচ্ছে এপার থেকে ওপার,
কখনও আবার বিশাল
উল্কাপিণ্ড ধাক্কা
মারছে পাতায়। মলাট
কাঁপছে তিরতির করে।
স্প্রে পেইন্টিং-এর মতো
অজস্র তারা তখন ভুরুর
মধ্যিখানে। তুমি
ব্রহ্মাণ্ড। তুমিই
ভাণ্ড। ধারণ করছ
সৃষ্টিরও আগেকার
স্রষ্টাকে। মহান অলক্ষ
থেকে তিলে তিলে পেড়ে
আনছ এমন কিছু, যার কোনো
শব্দ নেই। অক্ষরও না।
শুধু কিছু আঁচড়, সমুদ্র
ও দ্বীপ যা দেখতে পেত না,
ধরা পড়ছে মলাটে। আস্ত
এক প্ল্যানেটোরিয়াম
তখন তোমার কপালে। শ্বাস
নিলে। ধাক্কা মেরে সেই
প্ল্যানেটোরিয়ামকে
চুবিয়ে দিলে আগুনে।
আগুন না শূন্যতা – কে
বড়ো? মহাবিশ্বে আগুন না
আগুনে মহাবিশ্ব? নাকি
বৃহত্তর কেউ টান
দিচ্ছে, নামিয়ে আনতে
চাইছে তোমায়? শ্বাস
ছেড়ে দাও। ধীরে ধীরে
খোলো ঝিম। পৃথিবী, এবং
তারও ভিতরকার আরেক
ভাণ্ড দ্যাখো হে। এই
টান, মায়া ও মৃত্যুর,
এড়াতে পারছ?
তখনই সাড়া দিয়ে ওঠে মন।
এড়ানোর দরকারই বা কী!
বরং তাকিয়ে থাকো; সব
হারানোর যে রং, তার
মধ্যে বসিয়ে দাও
সর্বস্ব। দ্বিতীয় কেউ
দেখতে পাবে না। শুধু
তুমি, আর অপার এক
সম্ভাবনা ঘোরাফেরা
করবে চেতনে। হেঁটে
পেরিয়ে যাবে বাজারচলতি
একটা মোড়। চারদিক দেখে,
টুক্ করে ঢুকে পড়বে
গলিতে। সেখানে শান্তি
আছে। শান্তিরও ভিতরে
আছে উদ্গীরণ,
লাভাস্রোত, ছাই। ভস্ম
হয়ে গেলে। বাতাসবাহিত
হয়ে বেরিয়ে পড়লে
লোকালয়ে। সবার থেকে
উঁচুতে, ভাসতে ভাসতে
চলেছে তোমার নিঃস্বতা।
নিচে ওষুধের দোকান,
অটোর লাইন, পারাপারের
জন্য ঘোষণা। ওপরে
ছুটন্ত আগুন, সংঘর্ষ ও
অন্যের কক্ষপথে ঢুকে
পড়া। নেমে এসো। হাঁটতে
হাঁটতে পৌঁছে যাও
জন্মাবধি তোমার জগতে।
ওই তো, কী নিপুণ শুয়ে আছে
একটা শরীর। স্নেহবশত
যার নাম দিয়েছিলে
একদিন। আজ, হাঁ-করা মুখ
আর সন্ন্যাস-নেওয়া চোখ
দেখে, রসদ খুঁজে-বেড়ানো
অজস্র পোকা দেখে তোমার
বিশ্বাস ফিরে আসছে। এই
তো, এই পৃথিবীকেই চেনো
তুমি। চিৎকার করে
ঝাঁপিয়ে পড়ো, খুঁটে
খুঁটে তুলে ফ্যালো
সেইসব পোকা। অসাড় একটা
হাত ধরে জিজ্ঞেস করো –
কতক্ষণ আগে?
উত্তর দিল না কেউ। শুধু,
অসম্ভব এক সহ্যশক্তি
এদিক-ওদিক ধাক্কা খেতে
খেতে ঢুকে পড়ল চোখের
ভেতরে।
নতুন কোনো দৃশ্য
তারপর...