তারপর হোসে প্রবেশ করলো
এক অন্ধ টানেলে। যার
আদিগন্ত বিস্তৃত
আঁধার। টানেলের
দেওয়ালগুলো প্রথমে
বোঝেনি। অনিবার্য
হোঁচট আর ঠোক্কর। যে
কেউ দিনকানা
হেঁজিপেঁজি ও জানে,আলোই
দৃশ্যমানতার প্রধান
শর্ত। আলো নেই তো দেখার
সুযোগ কই? ধরা যাক
অন্ধত্বও আলোহীন এক
অবস্থান। আর হোসে হয়তো
অন্ধ। টানেলের দেওয়াল
স্পর্শ করা
মাত্র,প্রথমে ঠাহর না
পাক,পরে একসময় আঁধার
থিতিয়ে এলে,হোসে
স্পর্শমানতায় চিনে
ফেললো অক্ষর। আর পেয়ে
গেল দিকনির্দেশ। খুব
ধীর প্রশান্তিতে সে
হেঁটে বের হয়ে এলো
টানেল থেকে। সামনে
প্রশস্ত উদ্যান।
যেখানে অক্ষর ফুল ফুটে
আছে। হোসে স্বগতোক্তি
করছিলো,অক্ষরও এক
দৃশ্যমানতা,আলো৷ নয় কী?
আর্কাদিয়ার সমস্যাও
তার মতই ইউনিক! অথবা
ভীষণ কমন,কেবল
আর্কাদিয়াই তাকে ইউনিক
ভাবে। সে মূক। তা বলে
তার বাকি ইন্দ্রিয়ের
সমস্যা নেই। সে ব্যথা
পেলে নীল রঙের আকাশ
আঁকে। তার সুখের রঙ
গোলাপি। বিষাদ হল
তেজপাতা রঙ। সে চিৎকার
করতে চাইলে কালোর মাঝে
নখ দিয়ে ছিড়ে বার করে
আনে সাদা! প্রেমিকার
প্রতি ভালোবাসার কথা
বলতে সে ছড়িয়ে গম রঙের
ডিব্বা। আসলে
আর্কাদিয়া কথা বলেনা।
আসলেই আর্কাদিয়া কথা
বলে,ওই যে দুহাতে ধরা
তুলি,তা দিয়েই ও অক্ষর
আঁকে। ও হয়ত ভুলে
গেছে,হাজার হাজার বছর
আগের পৃথিবীতে সমস্ত
ভাষাই ছিলো দৃশ্যকাব্য!
তাই ও কাঁদছে...আর সারা
আকাশ জলে ছলচ্ছল!
বুয়েন্দিয়াকে বিপদ
বোঝাতে তার
সঙ্গীসাথীরা লাল পতাকা
ওড়ায়। হাত জড় করে বুকের
কাছে আনলে বুয়েন্দিয়াও
বোঝে এটা প্রার্থনার
সময়। শিশুর ঠোঁটের নড়া
চড়া দেখেই ও বুঝে
যায়,শিশু আদর
চাইছে,না'কি তার অভিমান!
ওই যে নড়াচড়া,স্থান
পরিবর্তন মানে কেউ সরে
গিয়ে কেউ কাছে আসলে সে
বুঝতে পারে তার নাম
রাজনীতি। ও পাতার শব্দ
বোঝে,বাতাস সম্পর্কে
তার অভিজ্ঞান তাকে ঝড়
আসার কথা বোঝায়। মাটিতে
কান পেতে সে শোনে
অতিমারী বা
দুর্ভিক্ষের আগমনী!
বুয়েন্দিয়া বধির। তাতে
কি'ই বা আসে যায়? ও
শব্দকে চলমান দৃশ্যের
মত করেই অনুধাবন করে।
বধির বলে শোকে তাপে
নিজেকে নির্বাসনে
রাখার পর তার যেদিন
বোধি লাভ হল,ও জানলো
পৃথিবীর প্রতিটি
রাষ্ট্রপ্রধান ও তো
বধির। তাই বুয়েন্দিয়া
প্রকাশিত হয়,যেভাবে
বৃষ্টি শেষে আকাশ৷
তেমাথায় দাঁড়িয়ে ও ডেকে
নেয় আর্কাদিয়া আর
হোসেকে। তারপর আত্মার
বিনিময়ে সে বা তারা হয়ে
ওঠে হোসে আর্কাদিয়া
বুয়েন্দিয়া!
তারপর রহস্যময় জিপসি
মেলকিয়াদেস যেদিন
মাকোন্দোয় এসে
পৌঁছলো,হাতে তুলে দিলো
পাণ্ডুলিপি,যা ছিলো
তাদেরই পারস্পরিক বংশ
বৃত্তান্ত,তা সে সযত্নে
রেখে দেয়,কোনো এক উত্তর
প্রজন্মের অরলিয়ানোর
অপেক্ষায়।
সেটা এক অদ্ভুত
দিন,যেদিন বৃষ্টিও পরে
আবার রোদেরও
ঝিলিমিলি,যেদিন শীত আর
গরম দুই ই একই সাথে
বর্তমান,সেই বসন্ত দিনে
এলকেমি বিদ্যে শিখে
ফেলা অরলিয়ানো উদ্ধার
করে ফেলে পাণ্ডুলিপির
মর্মার্থ!
সেই তখন আকাশ জুড়ে
রামধনু,আর অরলিয়ানোর
হাতে ধরা পাণ্ডুলিপির
ছবি থেকে অক্ষর উড়ে
বেরিয়ে পাখি হয়ে
আকাশে...
সৃষ্টি হচ্ছে মহাকাব্য
নিঃসঙ্গতার একশো বছর,
অথবা আমাদের করোনা
অতিমারীর সেনারিওতে
ঐহিক অন লাইনের
'ক্যান-ভাষ'।
হে পাঠক নিমগ্ন
হোন,তাকিয়ে দেখুন
আরকাতিকায় এখন একে একে
হাজির হচ্ছেন, জলজ
ভেনিস থেকে
মাইকেলএঞ্জেলো,ল্যুভর
থেকে সেজান,সূর্যমুখীর
ক্ষেত থেকে
ভিনসেন্ট,তাহিতি দ্বীপ
থেকে গঁগা,এথেন্স থেকে
হোমার,সিন্ধু তীর থেকে
ব্যাসদেব...
যেভাবে যাত্রা শুরু হয়
আর কি!
ঋণঃ স্থিরচিত্র, পিং
ওয়াং