১.
তুমি বুঝি কনে দেখতে
গিয়েছিলে? তুমি বুঝি
হাত, পা, নাক, মুখ, চোখ,
চুল দেখে এলে? তুমি বুঝি
মানুষ দেখোনি? তুমি
বুঝি পোশাক-আশাক দেখে
এলে। মন চিনলে না রে
মানুষ, তুমি কারে বিয়ে
করবে তবে? অন্তরও চেনো
না, অন্দরও জানো না,
তোমার যাতায়ত কেবলই
বিছানা বালিশ জুড়ে!
বেকুব ধীবর, তুমি গহীন
সমুদ্রে কেবল পুঁটি মাছ
খুঁজে গেলে? নিজের
জালেই তুমি নিজে আটকে
গেলে?
২.
চোখ দিয়া কতটুকু দেখো
তুমি, দৃষ্টি কতো দূর
যায়? পিঁপড়া যে গাছে
বাসা বানায় তারে কি
চিনতে পারে? একটা তারা
মাছ মহাসমুদ্রের
কতোটুকু দেখে এক জীবনে?
অসীমই কেবল বুঝতে পারে
অসীমেরে। সীমানা মাপা
মানুষ গজফিতায় জীবন
কাটায়। তোমার
ক্যালকুলেটরে
কতোটুকুরই বা হিসাব
ধরে?
৩.
আমি মুম, অগাধ ঋক্ষলোকে
নেহাতই এক ধূলাকণা।
আমার জন্য একটা ফুঁও
অনেক বেশি হয়ে যায়।
তুমি কি তবে এই
আণুবীক্ষণিক জীবনের
হিসাব নিতে যাবে? নিলে
নিও। আমারেও যে তুমি
গণনা ধরেছো এই সুখটুকু
দিও।
৪.
পুরাটাই কি মাটি আর
পানি? একটু আগুন দাও নাই?
একটু লোহা কি দেও নাই?
নইলে মহাজাগতকি
লীলাখেলায় অংশগ্রহণ
করবো কেমনে?
৫.
অগণন ছায়াপথের মালিক,
আমার দিশাহারা দিল তুমি
ঠিকঠাক করে দিও। আমার
জন্যে বরাদ্দে আরেকটু
দয়া-মায় রেখে দিও।
জ্বলন্ত
আগুন-নক্ষত্রের দেশে,
দূরারোহ কৃষ্ণগহ্বরের
দেশে আরেকটু আদর যত-
পেলে যাত্রা শুভ হবে
নিশ্চিতই।
৬.
মানুষ বানিয়েছে তাদের
ড্রইরুম। সেই সব
ড্রইরুমে ঝোলে মুখ ও
মুখোশ কতো। আলো আসে না,
বাতাসও আসে না। এই
এনার্জি বাল্ব আর এসির
বাতাসে মুখ ও মুখোশ
ঝোলে। মানুষ ও তার
বানানো ড্রইরুমের কোনো
আত্মা নেই বিরাজ করে না
এই মর্তলোকে। জগতের সকল
আত্মারা জাগতিক
ছেলেখেলা শেষ হলে পরে
মহাজাগতিক পারাবারে
মওলানা রুমির বয়ান
শুনতে যায়।
৭.
এই তো তোমার
পাড়া-মহল্লা আর চিপা
গলি। এই তো তোমার
লুঙ্গি-ধূতি আর
শেমিজ-কামিজ। এই তো
তোমার ছুরি-চাক্কু আর
বন্দুক-পিস্তল। এই তো
তোমার ভারত-বাংলাদেশ আর
চীন-আমেরিকা। এই তো
তোমার একরক্তি পৃথিবী
আর তার সীমানা রেখা।
এইসব নিয়ে তোমার বুঝি
এতো বাহাদূরী। এতো
তোমার মালিকানার গর্ব
আর এতো আত্মরতির
গুণগান। এইখানে বুঝি
আমার বিচার করতে আসবা
তুমি? এইখানে বুঝি আমার
উপরে ফরামায়েশ ফলাইবা?
আন্ধা, ধেন্দা, বেকুব
গেন্দা সকল, মালিকের
নকরেরও অধম তুমি, তুমি
এই তো দাড়িয়াবান্ধার
ঘরে মাতব্বরি করো!
তোমরা তো জানো না কিছু,
না-জানিলে, আদতে
তোমাদের হাউ-কাউ
ফুরালে, গভীর নির্জন
পথে আসল মাতব্বর আমারে
ডাকে তার শাহী
মহাজাগতিক দরবারে।
৮.
দিন বেচি কাজে। রাত্রি
কাটাই কামে। কাজে-কামে
পেরেশান আমি জানি কি
জীবনের মানে! এই
মহাজাগতিক জীবন আমি
পাবো কি ফিরে কোন দামে?
৯.
নেশায় বুদ হয়েছিলাম।
চাঁদ, হাসি আর মদে
রাত্রি ফুরিয়ে গেলো
কখন! বেহেশত সুরুৎ করে
সরে গেলো পায়ের তলা
দিয়ে। আন্ধা গলিতে
কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ
করে কেটে গেলো
অষ্টপ্রহর। প্রহর শেষে
দেখি, শরিয়ার প্রহরীরা
লাঠি নিয়ে তাড়া করছে।
শেখাচ্ছে জীবন-মৃত্যুর
নামতা-পাঠ। আমি তো এখনও
একবারও মাথার উপরে
তাকাই নাই তেমন করে,
দেখি নাই, আকাশগঙ্গাকে
ঠিকঠাক। ঝগড়াঝাটি শেষ
হলে আমিও যাবো
মহাজাগতিক প্যাকেজ
ভ্রমণে। একদিন।
১০.
মরে গিয়েও
ভালোবাসাবাসি অটুট
রাখতে চাই। মরে গিয়েও
এই মহাজগতের অংশ হতে
চাই। মরে গিয়েও অসীমের
মধ্যে হারাতে চাই।
জগতের দুঃখ বেদনা আর
হাসি হুল্লোড় মরে গিয়েও
চালু রাখতে চাই।