আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা
না গেলেও ঈদের আমেজে
ঢাকা শহর হুহু করে
ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
আগামীকাল ২৬ মার্চ থেকে
দেশে ছুটি শুরু হতে
যাচ্ছে, স্কুল কলেজ
আগেই ছুটি হয়ে গেছে।
ঢাকা ত্যাগ করার যতগুলো
মুখ আছে তা দিয়ে দলে দলে
আনন্দিত যাত্রীরা
হুড়মুড় করে ছুটছে গ্রাম
অভিমুখে।
কোভিড-১৯ এর খপ্পরে
সারা বিশ্ব।
আক্রান্তের সংখ্যা লাখ
লাখ, মৃতের সংখ্যা
হাজার হাজার, যা লাফিয়ে
লাফিয়ে বাড়ছে। বেড়েই
চলেছে। অকল্পনীয়
দ্রুততায় ছড়িয়ে পড়ছে
এটি। ভাইরাসটি যেন না
ছড়াতে পারে সেজন্য
দেশের পর দেশ লকডাউন
হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশেও ছুটি ঘোষণা
করেছে, সরকার।
ভালো লাগছে আমরাও ছুটি
পাচ্ছি। ভালো লাগছে এটা
ভেবে যে আমার বাচ্চাটা
আমাদেরকে একটু কাছে
পাবে। ফেরার পথে আমি
বেশ কিছু বাজার করে
বাসায় এলাম। বাসায়
ঢোকার মুখে দেখি বড় বড়
করে লেখা “ঠিকা বুয়া ও
ড্রাইভারদের বাসায় আসা
বন্ধ করুন”।
খালাকে ডেকে সব বুঝিয়ে
বলে, বেতন হাতে দিয়ে চলে
যেতে বললাম। সে ছলছল
চোখে বলল আম্মাগো,
বাসায় বইসা থাকি কি
করুম? আপাতত বাসায় থাকো,
বের হইও না। সময় ঠিকঠাক
হলে আমি ফোন দেব। আর
হ্যাঁ, সামনের মাসের
এইদিনে এসে বেতন নিয়ে
যেও। আইচ্ছা, কামগুলা
সাইরা নেই, এই বলে সে
কাজে লেগে গেল, বাজার
সদাইগুলি ধুয়ে মুছে
তুলে ফেলল। কিছু ভিজিয়ে
রাখল। কাজ শেষে সে আমার
কন্যাকে আদর করে, তার
জন্য কিছু বাজার
এনেছিলাম সেগুলি নিয়ে
আদ্র চোখ মুখে চলে গেল।
আমার বাচ্চার জন্মের পর
থেকেই সে আছে আমাদের
সাথে। সকালে আসে আর আমি
বাসায় ফেরার পর চলে
যায়। বলা চলে আমার
সংসার ও কন্যা ওই খালার
কাঁধে চড়েই এতটা এসেছে।
রাতে সাব্বির ফিরে এলো।
ওকে কেমন যেন বিধ্বস্ত
লাগছে। ক’দিন ধরে ওর
জ্বর কাশি। দেশে এখন
ফ্লুর সিজন, তবু আতংক
লাগে। একবার টেস্ট
করিয়েছে কিছু আসেনি,
আবার সারছেও না। যেহেতু
ওর প্রজেক্টে
বিদেশিরাও কাজ করে,
সেজন্যই ভয়টা বেশি। এর
মধ্যে আরো একদিন
ক্লিনিকে গিয়েছিল।
অবশ্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
বলে ওদের কাজের চাপ খুব
বেড়ে গেছে। রাতেও বাসা
থেকে অনলাইনে কাজ করতে
হয়।
এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়াতে
বাড়াতে বললাম ‘কি
ব্যাপার তোমার জ্বর কি
বেড়েছে?
সে ছিটকে সরে গিয়ে বলল-
কাছে এসো না।
আতঙ্কিত বুক ধরাস কেঁপে
ওঠে।
জ্বরটা খুব বেড়েছে।
মাথা ছিড়ে পড়ছে।
কাশিটাও যাচ্ছেনা বলতে
বলতে সে সোজা আমাদের
শোবার ঘরে ঢুকে গেল।
এরপর আমাদের
ওয়ার্ডরোবটা ঠেলতে
ঠেলতে বাইরে নিয়ে এলো।
মসৃণ মেঝে ঠেললেই নড়ানো
যায়।
-আরে! এসব তুমি কি করছ?
-প্লিজ, একটু চুপচাপ
থাকো, মামণিকে আমার
কাছে আসতে দিও না। এরপর
আমার মুখ দিয়ে কোন শব্দ
বের হয় না।
ওয়ার্ড্রোব আনা শেষে
আমার আর কন্যার বাকি
জিনিসপত্র সে গ্লাভস
হাতে পাশের রুমে এনে
দিয়ে একরকম টলতে টলতে
ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ
করে দিল। বন্ধ দরজার
ওপাশ থেকে টলমল করে
বলল-
-শোন, বহু চেষ্টা করেছি,
আইইডিসিআর এ লাইনে
দাঁড়িয়েছিলাম, টেস্ট
করাতে পারিনি।
অন্যান্য প্যাথলজিও
জ্বর কাশি শুনে ঢুকতেই
দিচ্ছেনা। সেদিন যে
টেস্ট
করিয়েছিলাম...কাশির
দমকে বাক্য অসম্পূর্ণ
থেকে যায়।
যেহেতু এ রুমে বাথরুম
আছে আমি এখানেই থাকব।
তোমরা পাশের রুমে
থাকবে। আমি ঘর থেকে বের
হবনা, তোমরাও আসবেনা।
আমি রাফির কাছ থেকে
ওষুধ টষুধ নিয়ে এসেছি।
রাফি অবশ্য বলেছে ভয়
পাওয়ার কিছু নেই।
যেহেতু আমার সেরকম কোন
লক্ষণ নাই অবশ্য কাশিটা
আছে।
মিলি! এই মিলি কথা বলছ না
কেন!
কি বলব! মেয়েকে বুকে
জড়িয়ে যুগপৎ বিস্ময় ও
বিপন্নতা নিয়ে বসে
থাকি।
-জানো মিলি, একবার
ভেবেছিলাম গ্রামের
দিকে বা অন্য কোথাও চলে
যাই। কিন্তু কোথায় কার
কাছে যাব! তোমাদেরকে
একা ফেলে যেতে ইচ্ছে
করল না। আবার তোমাদের
কাছে আসাটাও বিপদের।
বহু ভেবেছি। তারপর
কিভাবে কেমন করে বাসায়
এসেছি জানিনা। একসময়
দেখি আমি আমাদের বাসার
গেটে দাঁড়ানো। এসে আমি
কি ভুল করলাম মিলি?
-প্লিজ, এবার একটু থামো।
তুমি বাথরুমে যাও,
চেঞ্জ করে নাও। পারলে
নাহয় গোসল করে নাও। আমি
খাবারের ব্যবস্থা করি।
টেবিলে খাবার দাবার
দিয়ে ওর দরজায় টোকা
দিলে বলল- ওয়ান টাইম ইউজ
বাটিতে সব খাবার দিয়ে
দরজার সামনে রেখে সরে
যাও। আমি নিয়ে নেব।
রান্নাঘরে চলে গেলাম।
মাথা কাজ করছে না, সব
এলোমেলো লাগছে। কিন্তু
সিলভিয়ার জন্য নিজেকে
ঠিক রাখতে হবে।
শুরু থেকেই সিলভিয়া
বাবাই বাবাই করে
যাচ্ছে। কিছুক্ষণ
কান্নাকাটিও করল। এখন
আর কিছু বলছে না। রঙ
পেন্সিল দিয়ে বসিয়ে
দিয়েছি, এটি ওর খুব
প্রিয় কাজ। বাটিতে ভাত
তরকারি সাজিয়ে ওর দরজার
সামনে রেখে দিলাম।
মেয়ের খাবার থালায় নিয়ে
মেয়ের হাত ধরে পাশের
ঘরে গেলাম। মেয়েকে
খাইয়ে, পরিস্কার করে
ওকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পাশের রুমের দরজা খোলার
শব্দ... ও খাবার নিল।
-মা বাবাই কেন ওই রুমে
ঘুমাবে? আমরা কেন এই
রুমে ঘুমাব?
-বাবাইয়ের তো জ্বর তাই
ওই রুমে ঘুমাবে। মেয়ের
রেশমচুলে আঙুল চালাতে
চালাতে বলি।
-মা! বাবাইয়ের জ্বর হলে
তো তুমি আমি মাথা টিপে
দেই চুল টেনে দেই...
বাবাই বলে আহ! কী আরাম!
মা চল আমরা বাবাইয়ের
কাছে যাই।
মা, বাবাইকে চা দাও মা।
তুমি যে লেবু আদা কি কি
দিয়ে বাবাইকে চা বানিয়ে
দাও, বাবাই বলে সিলভিয়া
রে তোর মায়ের চা খেলেই
আমার জ্বর দৌড়ে পালায়।
সেটা দাও না মা...ওমা...
মেয়ে ফোফাতে থাকে। কী
বলব! কী করব! ভেতরে ঝড়
বইছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
ক্লান্ত হয়ে মেয়েটা
ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমটা গাঢ়
হবার জন্য অপেক্ষা করি।
এরপর সন্তপর্ণে উঠে
পড়ি।
বন্ধ দরজার সামনে
দাঁড়াই। ও কি ঘুমিয়ে
পড়ল! শ্রবণেন্দ্রিয়
তীক্ষ্ণ করে বোঝার
চেষ্টা করার আগেই,
শব্দেরা ভেসে আসে-
-মিলি, দাঁড়িয়ে না থেকে
চেয়ার টেনে বস। দূরে
বস। মামণি ঘুমাল? মিলি!
সাড়া দিতে আমার সময়
লাগে...
-হু, ঘুমিয়েছে। আচ্ছা
তুমি ধরে নিচ্ছ কেন
তোমার খারাপ কিছু
হয়েছে?
-আমি কিছুই ধরে
নিচ্ছিনা। কেবল একটু
সাবধান থাকছি। আমি
ঠিকঠাক ওষুধ
খাচ্ছি...তুমি চিন্তা
করনা...।
-ভাত খেয়েছ? নাপা খেয়েছ?
তার আগে গোসল করেছ?
ভাইয়া কি বলেছে? এসব
মুখস্ত তোতার বুলি একের
পর এক বলতে থাকি...
এভাবে সীমান্তের এপার
ওপার কথা বলতে বলতে রাত
গড়াতে থাকে। জ্বরতপ্ত
সাব্বিরের কন্ঠ ক্রমশ
ম্রিয়মাণ হয়ে এলে বলি-
তুমি এবারে ঘুমিয়ে পড়।
হু, যাও তুমিও ঘুমাও।
এডিস মশার ভয়ে মশারি
দেই। মশারির ভেতরে
মেয়েটা হাতপা ছড়িয়ে
ঘুমাচ্ছে। বাবার জন্য
অনেক কেঁদেছে। এখনও
হেঁচকি উঠছে।
জানালার পাশে দাঁড়াই।
আম গাছটার মুকুলসম্ভার,
সবুজ পাতা, ডালপালা
ফাগুন বাতাসে দুলছে।
ওরা কেমন মুক্ত,
বিপরীতে আমরা বন্দী।
নিওনবাতির আলোয় সব
অপার্থিব লাগে।
নিশিজাগা কুকুরগুলো
নিশ্চুপ। সাইরেন
বাজাতে বাজাতে নিশুতি
এ্যাম্বুলেন্স ছুটে
যায় ফাঁকা রাস্তা ধরে।
শরীরে ক্লান্তি থাকলেও
ঘুম আসেনা। সমস্ত
ইন্দ্রিয় সজাগ।
স্মৃতির ভেতর গুঁজে
থাকে স্মৃতির ভোমর...
“যদি নির্বাসন দাও, আমি
ওষ্ঠে অঙ্গুরী
ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে
যাবো।
বিষন্ন আলোয় এই
বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া
মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত
নির্নিমেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত
ভূম
যদি নির্বাসন দাও, আমি
ওষ্ঠে অঙ্গুরী
ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে
যাবো”।
আগামীকালের গর্ভে
আমাদের জন্য কি আছে
জানিনা। রাত ক্রমশ সেই
অনিশ্চিত আগামীকালের
দিকে এগুতে থাকে।
পরদিন সকালে মেয়ে ভীষণ
কান্নাকাটি শুরু করে।
তাকে কিছুতেই থামানো
যায় না। সে বাবাইয়ের
কাছে যাবেই। অতঃপর
সাব্বির ওপাশ থেকেই
মেয়ের সাথে গল্প জুড়ে
দেয়। মেয়ের প্রিয় গল্প
‘সোফির জগত’। ওইটুকুন
পিচ্চি মেয়েকে সাব্বির
ইয়স্তেন গার্ডারের
কিশোরী সোফির গল্প
শোনায় একটু একটু করে,
সহজ অংশগুলো। মেয়েও
দেখি চোখ বড় বড় করে চুপ
করে শোনে।
সোফি ১৪ বছর বয়সের এক
বালিকা। আর সব টিনেজের
মতই তার নির্ঝঞ্জাট,
নিরুপদ্রব জীবন।
স্কুলে মেয়ে বন্ধুদের
সাথে ঘোরাঘুরি আর
ব্যাডমিন্টন। একেবার
সাধাসিধে একটা জীবন।
সোফির এই চেনা পরিচিত
জগতে ধাক্কা লাগে যখন
সে একটা চিঠি পায়।
চিঠিতে মাত্র একটা
লাইন- “তুমি কে”? সোফির
মনে ধাক্কা দেবার জন্য
এই একটা প্রশ্নই অনেক
কিছু। আসলেই তো সে কে?
এর পরেই সোফির কাছে আসে
২য় চিঠি –“তুমি কোথা
থেকে এসেছো”
সাব্বিরের প্রিয় কবি
‘সিলভিয়া প্লাথ’। এতই
প্রিয় যে কবির নামে সে
মেয়ের নাম রেখেছে
‘সিলভিয়া সাব্বির’ যা
পূর্ব থেকেই ঠিক করে
রেখেছিল।
সাব্বিরের জ্বর কমেনি।
নাপা ট্যাবলেট খেলে
কমে, আবার তুমুল জ্বর
আসে। শুনেছি করোনার
জ্বর হালকা, তবু মন কু
ডাকে। সকালে মেয়েকে
খাইয়ে আমি আইইডিসিআর এর
দেয়া নাম্বার গুলিতে
লাগাতার ফোন করতে
লাগলাম। কেউ ধরেনা অথবা
এনগেজড টোন আসে।
ক্লান্তিহীন করতে করতে
একবার একজন ফোন তুলে,
আমার পরিচয় জানতে
চাইলেন। বললেন উনি একজন
ডাঃ। সব খুলে বললাম উনি
বললেন করোনা মনে হচ্ছে
না, তবে শ্বাসকষ্ট, বমি
বা পেট ব্যথা করলে আবার
যোগাযোগ করতে। সেরকম
মনে করলে ওরা এসে নিয়ে
যাবে। মনে হলো নিকষ
কালো অন্ধকারে সামান্য
আলোর উঁকি। ভাইয়াকে ফোন
দিলাম সে এত ব্যস্ত বলল
তুই রাখ পরে ফোন
দিচ্ছি।
বন্ধ কপাটের দুপাশ থেকে
দুজন আনন্দ বেদনার
কাব্য রচনা করি। অজস্র
অনুভূতির বিনিময় করি।
নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে
আমাদের। এই করতে করতে
সাব্বির একবার বমি করল।
আমি এবার সমস্ত
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওর
দরজায় জোরে ধাক্কা দিতে
দিতে চিৎকার করে উঠলাম-
‘সাব্বির প্লিজ দরজা
খোল’, ‘দরজা খুলে দাও’,
‘যা হবার হবে তুমি খুলে
দাও দরজা’।
দরজা খুললেই পৃথিবীর
ফুসফুস খেকো করোনা
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে ঘর
থেকে ঘরে, মানুষ থেকে
মানুষে, স্বামী থেকে
স্ত্রীতে, পিতা থেকে
কন্যায়। সে দরজা খোলে
না। অসুখের দীর্ঘ দুপুর
একসময় বিকেল হয়।
সাব্বির নেতিয়ে পড়ে।
কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসছে।
-তোমার কি শ্বাসকষ্ট
হচ্ছে?
- উ? আমি ঠিক আছি। ভয় পেও
না। তুমি মামণিকে দেখ,
তুমি আমার সিলভিয়াকে
বাঁচিয়ে রেখ। তুমি ওকে
নিয়ে পালিয়ে যাও, অনেক
দূরে কোথাও পালিয়ে যাও।
যেখানে করোনা নাই,
যেখানে অতিমারী নাই!
যেখানে মানুষ বুকভরে
বাতাস নিতে পারে! তুমি
আমার মেয়েটাকে একটা
সুস্থ পৃথিবী দিতে
পারনা! মিলি! এই মিলি!
শোন, এই পৃথিবীটা্র বয়স
হয়ে গেছে, শালা বুড়ো হয়ে
গেছে। তুমি সিলভিয়াকে
নতুন সতেজ একটা
পৃথিবীতে নিয়ে যাবে...
মিলি...ও মিলি...
প্রলাপের উত্তর কি হতে
পারে, আমি জানিনা।
শব্দহীন অসুস্থ
বিকেলটা যখন ঝিমাচ্ছে
আমি স্নানঘরে গেলাম।
মেয়ে মেয়ের বাবা দুজনেই
ঘুমাচ্ছে। কাপড় চোপড়
ধোয়া দরকার। ঘরদোর,
দরজার নব, সিটকিনি,
বেসিনের ট্যাপ সব
স্যাভলন গরম পানিতে
মুছে নিলাম। কাপড়চোপড়
ধুয়ে গোসল সেরে দরজা
খুলে বের হয়ে স্তম্ভিত
আমি স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে
পড়লাম। হাত থেকে ঘসে
পড়ল ভেজা কাপড়ের বালতি।
অস্ফুস্টে একটা চিৎকার
দিয়ে আর আমি কিছু বলতে
পারিনা।
কতটা সময় গেছে জানিনা।
দূরে কোথায় যেন হাওয়াই
মিঠাইওয়ালা ঘন্টা
বাজাচ্ছে... না তা নয়,
আমার বাসার কলিংবেল
বাজছে... না তাও নয়।
ডাইনিং টেবিলের উপর
রাখা আমার মুঠোফোনটা
বেজেই যাচ্ছে। ধীরে
ধীরে উঠে হাত বাড়িয়ে
ফোন নিলাম।
-মিলি! তোদের খবর কি?
সাব্বির কেমন আছে? ও তো
দেখি কথাই বলতে
পারছেনা। ওর জ্বর কি
কমেনি? সিলু কেমন আছে?
কিরে তুই কি ঘুমাচ্ছিস?
কথা বলছিস না যে! গাধাটা
তো ডেঙ্গু বাঁধিয়ে বসে
আছে। আজকে ওর ব্লাড
টেস্টের রিপোর্ট
তুলেছি। গতকালই তোলার
কথা ছিল, এমন ব্যস্ততা...
শোন, আমি সন্ধ্যার পর
তোদের ওখানে আসব। কি কি
আনতে হবে জানাস।
সাবধানে থাকিস। এখন
রাখলাম ঠিকাছে?
ফোন রেখে দেয় আমার
বড়ভাই ডাঃ রাফি,
সাব্বিরের বন্ধু। না
খাওয়া না ঘুমানো
দুশ্চিন্তায় পাগল আমি
ওদেরকে দেখে চেতনা
হারিয়ে ফেলেছিলাম।
ভাইয়ার ফোন পেয়ে
আত্মজার অনুরোধে ও হয়ত
বন্ধ কপাট খুলে দিয়েছে।
বাথরুমের দরজায় হাতপা
এলিয়ে বসে আছি। ধোয়া
কাপড়গুলো মেঝেতে
গড়াচ্ছে। পড়ে গিয়ে মাথা
ফুলে আলু হয়ে উঠেছে।
সারা বাসায় কি একটা
মদির ঘ্রাণ! কোত্থেকে
সুঘ্রাণ আসছে জানিনা।
বারান্দায় মনে হয়
গন্ধরাজ ফুটেছে।
সাব্বির আমাকে
গন্ধরাজের চারা এনে
দিয়েছিল।
আমার চোখের সামনে এই
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ
সুন্দর দৃশ্য। ঘুমে বা
ডেঙ্গু জ্বরে অচেতন
পিতার বুকের উপরে
নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে
বাবার সিলভিয়া। দেখে
দেখে আমার আশ মেটেনা।