‘ডোডো,ডু নট বি আ
লুজার,বি আ ফাইটার।
এন্ড আইডেন্টিফাই হু ইজ
একচুয়ালি দ ভাইরাস। ইজ
ইট এন ইনভিজবল স্মল
ক্রিয়েচার? অর উই দ পিপল?
ডোডো উত্তর জানেনা। তাই
বাবার কাছেই ছুটলো।
দিন চার আগে অবশ্য ডোডো
দাদাইকে পড়াচ্ছিলো।
টাং টুইস্টার। দাদাই
প্লিজ স্পিক লাউদার উইদ
মি...
বেটি বটার বট সাম
বাটার
বাট সি সেইড দ বাটারস
বেটার...
৫ বছরের ডোডো মাষ্টার।
দাদাই অমিতেশ ছাত্র !
কিন্তু সেটা তরশু রাত
১১.৩৩ অবধি। পরশু সকাল
থেকে ডোডো আর দাদু
অমিতেশের বিচ্ছেদ৷
কারণ অমিতেশের গা'টা
ছ্যাঁকছ্যাঁকে গরম।
জ্বর সেভাবে আসেনি।
কিন্তু আসতে কতক্ষণ।
অমিতেশ নিজেই
জানিয়েছিলেন বৌমা
জিনিয়াকে৷ সময় মন্দ৷
এটা তথ্য গোপন করে
যাবার সময় নয়।
মুখ্যমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীরা গোপন
করছে,করুক! তারা আবার
কবে সমাজ বন্ধুই বা
হয়েছে। অমিতেশ তা কেন
করবে! গা ম্যাজ ম্যাজও
করছিলো। তরশু সারাদিন
শুয়ে বসেই কাটিয়েছে।
কিন্তু পরদিন একেবারে
ফিট! নো হাঁচি কাশি,গলা
ব্যথা! পারফেক্টলি
অলরাইট। ভোর হতে না
হতেই স্যান্ডেল জোড়া
পায়ে গলিয়ে,গঙ্গার ধারে
গেছিলো। এ সময়ে পুলিশও
ঘুমায়। কাঁহাতক আর
ঘরবন্দী থাকাই যায়? এত
সকালে ,কয়েকটা
নেড়িকুত্তা ছাড়া কুএ
কোথাও নেই!
কীর্তনওয়ালা নিতাই এর
সাথে দেখা হল। রোজগার
মতই স্নান
সেরে,মন্দিরগুলোয়
ঢুকছে জল দিচ্ছে। আর
হরিনাম সংকীর্তন...
অমিতেশ কে দেখে সে একটু
খুশিই৷ মাস্ক সরিয়ে
অমিতেশ জিজ্ঞেস
করে,নকুলদানা কই? নিতাই
মুখ ব্যাজার করে উত্তর
দিয়ছে,খাবার জুটছেনা,আর
নকুলদানা! পকেট হাতড়ে
শ’তিনেক টাকা
পেয়েছে,নিতাই এর হাতে
তুলে দিতেই নিতাই পায়ে
হাত দিয়ে প্রণাম করতে
গেলে অমিতেশ পিছিয়ে
গেছে। আরে কর কি নিতাই।
তুমি খেতে পাওনা,আমি
পাই। এটা আমার দায়িত্বো
তো। এর জন্য প্রণাম
করবে কেন। ছিঃ ছি! আর
তুমি তো জানো।এ সময়ে
দূরত্ব রাখতে হয়। নিতাই
কৃতজ্ঞ চিত্তে তাকিয়ে
ছিলো। অমিতেশ রওয়ানা
দিয়েছে
এপার্ট্মেন্টের দিকে।
এত সকালে দোকান পাট
খোলে না। পরে আবার বের
হলেই হবে। দোতলার সেন
গিন্নি দেখেছে
ফ্ল্যাটে ঢোকার সময়।
জিনিয়া ঘুম থেকে উঠতেই
লাগিয়েছে। নটা বাজে।
জিনিয়া ব্রাশ করছিলো।
সবারই এখন অনির্দিষ্ট
কালের ছুটি। তাই দেরীতে
ওঠা। অমিতেশ বললো,বৌমা
ব্যাগটা দাও। টুকিটাকি
জিনিসগুলো নিয়ে আসি।
জিনিয়া উত্তর করলো না।
শুনতে পায়নি ভেবে,আবার
রিপিট করলো,বৌমা বেলা
হলে কিছুই পাবোনা।
পুলিশ এসে দোকান বন্ধ
করাবে। জলদি দাও।
এবার আর জিনিয়া নয়।
পুত্র বাপ্পা বের হল।
অন্যদিন এ সময়ে সে
ওঠেনা। মনে হয় বৌমা
ডেকে তুলেছে।
-বাবা তোমার কি না
বেরোলেই নয়? এত বেরিয়ে
কি হয় বলতো...হাই তুলতে
তুলতে ছেলে বলছে।
- না বেরোলে জিনিসগুলো
পাওয়া যায়না।
-বাবা ভাইরাস ছুঁলে
ছত্রিশ ঘা! তুমি
শিক্ষিত লোক। দেখছো তো
শ্মশানও পোড়াতে
চাইছেনা৷ কত হ্যাপা!
- শ্মশান ক্লীবলিঙ্গ।
তার ক্ষমতা নেই,এমন
আচরণের। থাকলেও করতোনা!
মানুষই এমন ইনসেন হয়ে
ওঠে সময়ে সময়ে,পৃথিবীর
ইতিহাস পড়লে দেখবে। আর
ভাইরাস তো সামান্য
জীব,এ হল প্রকৃতির
প্রতিশোধ বুঝলি। তার
বাড়ি তার ঘর,তুমি,তোমার
মত দুদিনের মানুষ এসে
অন্যায়ের পর অন্যায়
করেই চলেছ,তার বাড়ি
ঘরে। প্রকৃতি বাড়িউলি
কেন মেনে নেবে বলতে
পারো? ইতিহাস তো পড়লে না
কখনও!
- বাবা,তোমার এই জ্ঞানের
কথা ছাড়ো। ঘরে থাকো।
বৌমা,ফুট কাটলো,বাবা
মাস্ক পড়ে কথা বল।
তোমার না জ্বর!
-আমার আর জ্বর নেই বৌমা।
আর একদিন একটু গা
ম্যাজম্যাজ করেছে। তার
মানেই ফ্লু! আর আমি
তোমার থেকে দু মিটার
দূরে। একটু সেনসিবলি
কথা বলো। তুমি না ছাত্র
পড়াও। যাক,আমি মাস্ক
পরি,না পরি৷ ঘরেই
রইলাম। তোমাদের
ইনফেকটেড করার বাসনা
আমার নেই। কখনও ছিলোও
না। পারলে,মানুষের
উপকারই করি। আর নিজের
সন্তান,তার স্ত্রীকে
আমি ইনফেকটেড করে দেব!
আমি কী তেমন মানুষ?
বাপ্পাকে জিজ্ঞেস করো।
সে জানে অতীতের কথা।
আমার সেবার চিকেন পক্স
হয়েছিলো। বাপ্পার
মা'কেও ঘরে ঢুকতে
দিইনি। শিক্ষিত
মানুষকে এসব আলাদা করে
বোঝাতে হয়?
জিনিয়া উত্তর করে,বাবা
এই রোগটাতো
শিক্ষিত,উচ্চবিত্তের
মানুষেরই৷ তাদের
পাপে,গরীবের এই হাল!
- শোনো বৌমা,শিক্ষা
ভেতরে আলো জ্বালে।
শিক্ষিত তো তুমিও।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের
শিক্ষিকা। রোগের সাথে
পাপ পূণ্যের কি
সম্পর্ক? আমি আমার বাপ
কাকা কমুনিস্ট
ভাবধারায় বড় হয়েছি। এসব
ভুলভাল বকোনা। আর
প্লেনে চড়া লোককে ধনী
বলছো,তা আমার পুত্র কত
ধনী আমি জানিনা,সে
নিয়মিত প্লেনে চড়ে। আর
বিদেশও যায়। এ রোগ যারা
বহন করে এনেছে,তারা
সবাই জেনে বুঝে নিয়ে
এলো বলতে চাও,তারা কি
সকলেই ইবসেনের গণশত্রু?
নেহাত বাপ্পার এই সময়ে
মিডল ইস্টে যেতে হয়নি
তাই! হলে কি একই কথা
বলতে? সুবিধাবাদী ভাবনা
ছাড়ো,এটা সংকটের সময়!
বাপ্পা এগিয়ে এসে
ম্যানেজ দেবার চেষ্টা
করে।
- বাবা রেগে যাচ্ছো কেন?
এসব সিপিয়েম সুলভ জ্ঞান
মারিওনা তো। স্পষ্ট কথা
স্পষ্ট করে বললে কানে
লাগে? কেন ভোরে গঙ্গার
ধারে যেতে হয়? প্রশাসন
এত বার বারণ করছে
যেখানে?
‘মারিওনা’ শব্দটা কানে
লাগে। অমিতেশ,আর কথা
বাড়ায় না।
- দেখ বাপ্পা, আমার বয়স
বেড়েছে। চুলগুলো সাদা
হয়নি,পেকেছ। তোমার থেকে
তেত্রিশ বসন্ত আমি
বেশি দেখেছি। এখন
পঁইষট্টি। আমায় জ্ঞান
দিওনা। আমার পরিবার সব
সময়েই বিপদে মানুষের
পাশে থেকেছে। বিপদে গা
ঢাকা দিয়ে বসে থাকার
লোক আমরা নই। আমি আবার
বের হবো। এটি এম থেকে
টাকা তুলতে হবে।
- বাবা ইন্টারেস্ট যে
হারে কমিয়েছে এ
ক’দিনে,কয় টাকাই আর
পাবে। ও টাকা না তুললেও
চলবে।
- তুমি হয়ত অনেক উপার্জন
করো। আমার যা সামান্য
আয়,তা আমার
কষ্টার্জিতই। তা তোমার
কাজে না লাগলেও,আমি
দিই। দিয়েই খাই। আমায়
বার্ডন ভাবার কারণ নেই।
আর তোমার টাকার দরকার
না থাকতে পারে, এই সময়ে
বহু মানুষ অভূক্ত।
তোমাদের নাৎসি
প্রধানমন্ত্রীর মানুষ
মরলে কিছু যায় আসেনা।
আমার যায় আসে। আমি টাকা
তুলে তাদের দেব। বেশি
না হোক অন্তত ২৫টা
পরিবারে তো ডাল ভাত
জুটবে। তুমি
ভেবোনা,তোমার বাবাকে
নিয়ে। যেমন ঘুমিয়ে থাকো
সারা দিন,ঘুমাও।
ডোডো উঠেছে ঘুম থেকে।
দাদাইকে দেখেই দৌড়ে
আসতে যাচ্ছিলো। জিনিয়া
আটকে দেয়, দাদাই এর শরীর
ভালো না। যাবে না।
ডোডো এবার পা ছড়িয়ে
কাঁদতে বসে।
নিজে রুমে ঢুকে দরজা
লাগিয়ে দেবার আগে
অমিতেশ বলে ,কাগজটা দিও
বৌমা।
- বাবা কাগজ বন্ধ করে
দেওয়া হয়েছে।
-কেন?
- সংক্রমণ ছড়ায় যদি...
- উফফ! বারবার লিখছে,কাগজ
থেকে সংক্রমণ ছড়ায় না৷
তবু…
গজগজ করতে করতে অমিতেশ
নিজের ঘরে ঢুকে ভেতর
থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়।
কেবল ডোডো এসে
কাঁদছিলো,
ধাক্কাধাক্কি করছিলো
দরজায়। কাঁদুক। উপায়
কী! জিনিয়া সরিয়ে নেয়।
ডোডোকে বোঝাচ্ছিলো,
ডোডো উই নো ইউ লাভ
দাদাই,এন্ড দাদাই টু।
বাট ইউ কান্ট লাভ
দাদাই'জ ডিজিজ!
দাদাই কিন্তু দিব্য
আছেন। আছেন মানে,দশ বাই
বারো ঘরবন্দী মানুষ
যেমন থাকে! নিউজটা
শুনতে টিভির সামনে
বসতো। সেটাও ড্রয়িং এ।
এখন টিভি দেখতে বসলেই
ওরা আবার আতঙ্কিত হবে।
কথায় কথা বাড়বে। কি
দরকার! ওরা যখন ভয়
পাচ্ছে। থাক। দেখবেই
না। আর দেখেই বা কি হয়!
মৃত্যু মিছিল! আতঙ্ক।
আর কত! এসবই অবশ্য
গতপরশুর কথা। জিনিয়া
জানিয়েছে দুপুরের
খাবার রেখেছে টেবিলে।
অমিতেশ উত্তর করেনি।
রাতের খাবার রেখে
বাপ্পা জানালো।
অমিতেশ,যথারীতি উত্তর
করেনি। এক আধদিন না
খেলে শরীর হাল্কা থাকে।
এমনটাই নিজেকে
বুঝিয়েছে। অভিমানটা
ঠিক কার ওপর অমিতেশ
নিজেও জানেনা। এটা
জানে,বিপদ আসলে মানুষ
স্বার্থপর হয়ে ওঠে।
এমনকি নিজ ঔরসজাত ও পর
হয়ে যায়! সকালে উঠে ঘরের
জানলা খুলে দিয়েছিলো ।
খানিক প্লেগ পড়েছে।
পড়তে ভালো জানলা দিয়ে
বহুদিন পর পাখি দেখেছে।
মাছরাঙা, দোয়েল,
টুনটুনি। মানুষের আগেই
এরা এসেছিলো পৃথিবীতে।
মানুষ এত ভয়ংকর এদের
সরিয়ে দিয়েছিলো। কেবল
নিজের কথাই ভাবে।
অদ্ভুত। অমিতেশ
সারদাচরণ উচ্চ
বিদ্যালয়ে জীব
বিজ্ঞানের শিক্ষক
ছিলেন। ইভোলিউশনের
গল্পগুলো তার জানা,জানা
ইমোসিস্টেমের কথাও।
ক্লাসে সেগুলোই পড়াতেন
মন দিয়ে,গল্প বলে।
মানুষ আর বোঝে কই!
পিঁপড়েরা চলেছে
দলবেঁধে কোথায় যেন। দেখ
এদের কত ইউনিটি। তাই কত
কোটি বছর এরা টিঁকে
গেল। মানুষই কেবল
অদ্ভুত। মারা মারি
খুনোখুনি,সবাই কেবল
নিজেরটাই বোঝে। ভাবতে
ভাবতেই কেমন যেন শৈশবে
চলে গেছিলেন অমিতেশ!
সেখানে দেখাও হয়ে গেল
বাবা মার সাথে। বাবা
অখিল রঞ্জন ছিলেন
অবিভক্ত কমিউনিস্ট
পার্টির মেম্বার। জেল ও
খেটেছেন। বাবা যখন
জেলে,অমিতেশদের বাড়িতে
কমিউনিটি কিচেন চলতো।
অনেক খাবার জুটতোনা।
কিন্তু ডাল ভাতের অভাব
হয়নি। আর বাঁচার জন্যতো
অনেক খাবার খেতেই
হবে,এমন কথা কেউ কোথাও
বলেনি। বাবার প্রিয়
উদ্ধৃতি ছিলো, বলছিলো,
আপনারে লয়ে বিব্রত
রহিতে আসে নাহি কেহ
অবণী পরে/ সকলের তরে
সকলে আমরা, প্রত্যেকে
আমরা প্রত্যেকের তরে।
সেটা অন্য সময়।
পঞ্চাশের মন্বন্তরের
গল্প শুনেছিলেন অমিতেশ
বাবার কাছে। সে বড়
কষ্টের সময়। বাপ কাকারা
বহু লোকের প্রাণ
বাঁচিয়ে ছিলো নিজেরা
আধপেটা খেয়েও। সে অবশ্য
অন্য সময়। মানুষ এত
স্বার্থপর হয়নি তখনও।
অমিতেশ জন্মান ১৯৫৫।
বাবা মারা যান,১৯৭৬ এ।
আর একবছর বাঁচলে
বামফ্রন্ট সরকারের
ক্ষমতায় আসাটা অন্তত
দেখে যেত। বাবা যেদিন
মারা যান, বাড়িতে
লোকধারণের জায়গাও ছিলো
না। কম্যুনিস্ট
ইন্টারন্যাশনাল গাইতে
গাইতে বাবাকে নিয়ে
যাওয়া হয়েছিল শ্মশানে।
সারা শরীর লাল পতাকায়
মোড়া। আর কত যে
ফুল,রিক্সাওয়ালা, মুটে,
কুলি-কামিন,
ঠেলাওয়ালা...মা
সুনীতাবালা বলেছিলেন,
খোকা বাবার সম্মানটুকু
রাখতে হবে কিন্তু। টাকা
পয়সা অনেকেরই হয়। তোমায়
মানুষ হতে হবে। যে
মানুষ পরার্থে বাঁচে।
কথা দাও। অমিতেশ মা’র
হাতে হাত রেখে কথা
দিয়েছিলো। অমিতেশ তখন
একুশ সবে। তারপর অনেক
কষ্টের ইতিহাস। অবশেষে
চাকরি জুটলো এই
সারদাচরণ স্কুলে।
বেহালারর কলোনি পাড়ায়
একটা ভাড়া বাড়িতে
থাকতো। বিয়ে করলো
১৯৮৫তে। তপতীও
অমিতেশের পার্টি কমরেড
অলোকের বোন। অলোক মারা
যায় ছত্রিশগড়ে, শ্রমিক
সংহতি গড়তে ওখানেই পড়ে
থাকতো। পুলিশ তাকে
কুকুরের মত গুলি করে
মেরেছিলো। সে অনেক আগের
কথা। তারপর বাপ্পা হলো
১৯৮৮ তে। কেমন যেন ছবির
মত আজ সব মনে পড়ে
যাচ্ছে। একা থাকার এই
সুবিধে। সে বছরেই তো
বেহালা সর্ষে তেলের
ঘটনা। তখন অমিতেশরা
বেহালার ভাড়া বাড়িতে
থাকে। কতই বা আর মাইনে
পায়। বাপ্পার জন্ম ও
বিদ্যাসাগর
হাসপাতালেই। একে একে
ভেজাল সর্ষের তেল খেয়ে
অসুস্থরা এসে ভর্তি
হচ্ছে বিদ্যাসাগর
হাসপাতালে। আর তিন দিন
পর সুমিতাকে ছুটি দেবে।
সুমিতা চলে এসেছিলো।
তারপর সেই কেলেংকারী
ফাঁস হতে সময় লেগেছিল
অনেকটাই। কিন্তু
সুমিতা অমিতেশকে ঠেলে
পাঠিয়েছিল প্রতিবেশী
সামন্ত, ঘোষ,মণ্ডলদের
ঘরে। অমিতেশের মাইনে
অল্প হলে কি হবে। সে
সাধ্যমত সাহায্য
করেছিলো ওদের। সে অবশ্য
অনেক দিনের কথা। তখনও
যৌথ পরিবার টিঁকে ছিলো
টাল খেতে খেতে। আজ তো
শুধু আমি,আর আমার
পরিবার। সে পরিবারে
অবশ্য বাপ ও নেই। এই যে
দুদিন ঘরবন্দী
অমিতেশ,একবার এসে কেবল
বাপ্পা জিজ্ঞেস
করেছে,বাবা দরজার বাইরে
থেকে জিজ্ঞেস
করেছে,শরীর ঠিক আছে তো?
- অমিতেশ ম্যাড্রাসি
স্টাইলে উত্তর দিয়েছে।
হ্যাঁ,কিন্তু...
- কি জ্বর আছে এখনও?
- তোমায় ভাবতে হবে না
বাপ্পা।
- না বাবা,ডোডো ছোটো। তাই
ভাবনা আর কি!
ফিসফিসিয়ে উত্তর
করেছিলো, সে তুমি
ভেবোনা। বয়স্ক মানুষ
মানেই সে বার্ডন,সারা
দুনিয়া এইমুহুর্তে তাই
ভাবছে বটে। তুমি আর
ট্রেন্ডের বাইরে যাবে
কেন। অথচ যাওয়া উচিত
ছিলো। কেমন একটা হতাশ
লাগে অমিতেশের। এমন
সন্তান হওয়ার থেকে না
হওয়াই শ্রেয় ছিলো।
মুখটা তেঁতো লাগে। থুতু
ফেলে বাথরুম লাগোয়া
বেসিনে। এসে শুয়ে পড়ে।
কখন ঘুমিয়ে গেছিলো জানা
নেই। ঘুম যখন ভাঙলো,তখন
রাত তিনটে। লাইট
জ্বাললো। কাঁধে একটা
ব্যাগ নিলো।
শান্তিনিকেতন থেকে
আনা। তাতে দু একটা জামা
কাপড়। এটি এম কার্ড। যা
দু একটা ওষুধ খেতে
হয়,সাথে নিলো। ঘড়িতে
চারটে কুড়ি। কাক ডাকছে।
ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ
করে বেরিয়ে পড়লো। সামনে
অনেকটা পথ,হেঁটে যেতে
হবে থানায়,প্রায় সাড়ে
চার কিমি। থানায় যখন
ঢুকছে আলো
ফুটছে...মেসেজটা আর
একবার পড়লো
অমিতেশ,গভর্নমেন্ট
হিয়ারবাই রিকুয়েস্ট টু
অল সিটিজেনস,হুএভার ইজ
পসিবল প্লিজ জয়েন এজ
ভলান্টিয়ার। টুগেদার
উই উইল ফাইট এগেইনস্ট
দিস প্যানডেমিক। থানায়
এস আই মজুমদার সাহেব
তখন চা’য়ে চুমুক
দিচ্ছেন। অমিতেশের
সামনেও রাখা চা। অমিতেশ
চা খেতে খেতে কেবল তাকে
অনুরোধ করছিলেন,কিন্তু
আমায় একটা থাকার
ব্যবস্থা করে দিতে হবে
মজুমদার সাহেব।
আর কিছু পর ন’টা বাজলে
বাপ্পাদের ফ্ল্যাটে
হইচই শুরু হবে। তারও
কিছু পর ডোডো ঘুম থেকে
উঠে দাদাই এর মাথার
বালিশের নীচ থেকে বার
করে আনবে চিঠিটা,বাবা
লুক,দাদাই হ্যাজ রিটন
মি দিস লেটার… আমি
দাদাই এর কাছে যাবো। আই
মিস ইউ দাদাই...