ছায়াচ্ছন্ন বনস্পতিদের কথকতা

পাপড়ি রহমান

বুড়োগাছে র পাতায় পাতায় সবুজ মাখা

বহু বছরের পুরাতনী বৃক্ষের কাণ্ড-à¦¶à¦¾à¦–à¦¾à Ÿ এক ধরনের সবুজাভ-কালঠšà§‡ রঙের পলেস্তরা দেখা যায়। গ্রামের লোকেরা একে বলে---গাছের গায়ে ছাতা পড়েছে। ‘ছাতা’ এই আঞ্চলিক শব্দের অর্থ ময়লা জমে যাওয়া। আদতে কি গাছেদের শরীরে কোনো ময়লা জমে? না, এ কথার কোনো সত্যাসত্য অন্তত আমার কাছে নেই! বরং বিষয়টাকে এভাবে যদি দেখা যায়---এত বছরের ঝড়-জল-à¦‰à¦¤à§à¦¤à¦¾à ª-বাতাস আর ধূলিবালি সয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতায় সে হয়তো কিছুটা ম্লান হয়। মৌন হয়। হয়তো-বা লুকানো কোনো গাঢ় রঙের অভিমানে কিছুটা অনুজ্জ্বলঠহয়ে ওঠে! আমি বলি কি---এইগুলা হইল গাছেদের মায়া। এই যে একটা গাছ কত শত পাতা মেলে ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে যায়---সেই মায়ার চিহ্ন পড়ে তার দেহ-মনে। বেশি বয়সের কারণে একদিন তাদের পাতায়-শাখাৠŸ মায়াময় এক নিবিড় সবুজ দানা বেঁধে ওঠে!
গাছেদের মতো প্রাচীন মানুষের দেহেও এক ধরনের শান্ত-শীতলঠ¤à¦¾ বাসা বাধে। এই শান্ত-শীতলঠ¤à¦¾ তার বয়সের অভিজ্ঞতা ও পৃথিবীর জল-হাওয়া থেকে পাওয়া। ছোটকাল থেকেই আমার যত ভাব-ভালোবাঠ¸à¦¾ সবই প্রাচীনের সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দিয়ে বেড়ে উঠেছিলাম। ফলে আমি জানি, দাদাজানের শতবর্ষী পিঠে হাত রাখলে তাঁর ত্বকের শান্ত-সমাহঠত অনুভব আমাকে কী পরিমাণ প্রশান্তি দিত! বা দাদীজানের আদুল শরীর শীতের রোদ্দুরে পুড়তে পুড়তে আমার দিকেও কিছুটা ওম ছড়িয়ে দিত।অনেক পরে আব্বা যখন জায়নামাজে তসবী হাতে বসে গেলেন, আমি খানিকটা দূরে বসে তাঁরই স্নেহের আশালতাটা আগলে রইলাম।
আগলে বসে থাকতেই হবে যে, যা কিছু তোমার পুরাতন! ফলে আমিও আগলে বসে থাকি দাদীজানের হাতের জামবাটি আর রূপোর সুরমাদানিট ি। আগলে বসে থাকি দাদাজানের হামানদিস্ত া আর গেরদার গিলাফ। আব্বার কাধে মোলায়েমভাঠ¬à§‡ পড়ে থাকা হাজী-রুমাল আর মাথার উলেন-টুপি! আম্মার হাতের মুরাদিবাদি ফুলদানী আর তামচিনির তৈজস।
দুইহাতে সবকিছুকে আগলাতে আগলাতে দেখি, আমি কেমন ধনী হয়ে উঠছি। উহুঁ, সম্পদে নয়, আমি ধনী হয়ে উঠি---স্নেহে আর মমতায়! প্রেম, উদারতা, বাৎসল্যে আর পরোপকারে। প্রাচীনের অন্তর্গত বেদনা-বিষাঠ¦à§‡ আমার চোখ ক্রমে আর্দ্র হয়ে ওঠে।
আমি জানিনা কেন আমি প্রাচীনকে, পুরাতনকে এমন করে আগলাই?
আগলে রাখি?
এই আগলে রাখা কী আমার স্বভাব? না বদস্বভাব?
আগলে রাখা হয়তো আমার স্বভাবই। স্বভাব। নইলে কেন আমি শেষ প্রেমিকের সঙ্গে দূর পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে তার দেয়া বুনোফুলের গুচ্ছ সযতনে ডায়েরির ভাঁজে ফেলে রাখি। কারণ আমি জানি, একদিন ফুলদল শুকিয়ে গেলেও তার সৌরভ কাগজের বুকে রয়ে যাবে। বা ফিরে আসার পূর্বে প্রেমিকের দেয়া সস্তাদামেঠকলমটিকে আমি রুমালের ভেতর বহু যত্নে তুলে রাখি। আমি জানি, এতে রয়েছে আমাদের বিদায়ের অশ্রুকণা আর বিরহের ইঙ্গিত।
পুরাতনের প্রতি আমি চিরকালই নতজানু থাকি।কৃতজৠà¦ž থাকি। সহমর্মী থাকি। কারণ পুরাতনের ফেলে যাওয়া পথ ধরেই আমি হেঁটে চলেছি। তারাই একদা অরণ্য আর পাহাড় কেটে আমার জন্য তৈরি করেছিল এই মসৃণ পথ। ফলে তাদের অস্বীকার করলে আমি অস্বীকার করব আমার অস্তিত্ব ও অস্তিত্বেঠ° সমস্ত শেকড়-বাকড়!
তাই হয়তো সমস্ত প্রাক্তন-পৠà¦°à¦¾à¦šà§€à¦¨à¦¤à¦¾ আমার সর্বাঙ্গে পরিশ্রমের স্বেদের মতো লেপ্টে থাকে।
সেই স্বেদ মুছে ফেলে আমি কিছুতেই বিস্মৃত হতে পারিনা ‘পথের পাঁচালীর’ ইন্দির ঠাকরূণকে। বিস্মৃত হতে পারিনা ‘দ্য ওল্ড ম্যান এণ্ড দ্য সি’র বুড়ো সান্তিয়াগৠকে। যে কিনা ৮৪ দিন সাগরে ভেসে বেড়ানোর পরও একটা মাছের দেখা পায় না। যাকে সকলে বলে---অপয়া, অলক্ষ্মী। ইহজীবনে যার ভাগ্যে আর কোনো মাছই হয়তো বরাদ্দ নাই। তবুও তার কাছে এখনও যা অবশিষ্ট রয়েছে, তা আশা! মানুষের আশা। এবং তার সবকিছু পুরাতন হয়ে গেলেও শুধুমাত্র আঁখিদুটি সমুদ্দুরেঠমতোই উজ্জ্বল, সবুজ, অপরাজিত ও আনন্দমুখরॠ¤
আমাকে সারাক্ষণ ছায়ার মতো তাড়া করে ফেরে â€˜à¦†à¦—à§à¦¨à¦ªà¦¾à¦–à¦¿à ¦°â€™ সেই প্রৌঢ়া---যার কাছে এই প্রশ্নের কোনো সুরাহাই নাই---শুধু মাত্র ধর্মের জন্য কেন একজন মানুষকে দেশান্তরী হতে হবে? কেন এতদিনের পরিচিত জীবন আর যাপনকে ফেলে অন্যত্র যেতে হবে? তার কাছে তো একটা সবুজ গাছের পাশেই আরেকটা সবুজ গাছের মাথা। একটা উঠোনের পরেই আরেকটা উঠোন! মানুষের তো একটাই আকাশ---কেন সেসব কাঁটাতার দিয়ে আলাদা করে ফেলতে হবে?
মাঝেসাঝেই আমাকে আনমনা করে তোলে ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরার’ ফ্লোরেন্টঠ¿à¦¨à§‹ আরিযা, যে কিনা প্রেমাস্পঠফারমিনাকে পাওয়ার জন্য নিজের জীবনে এতগুলি বছর বন্ধনহীন কাটিয়ে দিল! দীর্ঘ ৫১ বছর পার হওয়ার পরও প্রেমাস্পঠকে কাছে পাওয়ার হাহাকার যার এতটুকুও ম্লান হলো না! সে তো তখন হয়তো এই পৃথিবীর মতোই প্রাচীন। তার আর দরকার কী প্রেমের ফাঁস গলায় তুলে নেবার?
যা বলছিলাম, ইন্দির ঠাকরূণকে আমি কিছুতেই এড়িয়ে চলতে পারিনা! যদিও জানি, এই বৃদ্ধার রয়েছে নানান বদগুণ। এর-ওর ঘরে নিত্যি হাত পেতে চলার কু-অভ্যাস। কিন্তু তবুও কোথাও যেন কী একটা থেকে যায়? সেটা কী তার বয়সী শান্ত-শীতলঠ¤à¦¾? নাকি বয়সের গাছপাথরের অভিজ্ঞতার ঔজ্জ্বল্য? কিংবা অফুরান মায়ার সম্ভার---যা দিয়ে খুকী, খোকাকে সে দিনমান আগলে রাখে!
‘বুড়ি পুটলি লইয়া অতিকষ্টে আবার উঠিল। বাহির দরজার কাছে যাইতে তাহার নজর পড়িল উঠান-à¦à¦¾à¦à¦Ÿà§‡à ° ঝাঁটাগাছটঠ¾ পাঁচিলের কোণে ঠেস দেওয়ানো আছে, আজ তিনচারিদিন তাহাতে কেহ হাত দেয় নাই। এই ভিটার ঘাসটূকু, ঐ কত যত্নে পোঁতা লেবু গাছটা, এই অত্যন্ত প্রিয় à¦•à¦¾à¦à¦Ÿà¦¾à¦—à¦¾à¦›à¦Ÿà ¾, খুকী, খোকা, ব্রজ পিসের ভিটা---তার সত্তর বৎসরের জীবনে এ সব ছাড়া সে আর কিছু জানেও নাই, বুঝেও নাই। চিরকালের মতো তাহারা আজ দূরে সরিয়া যাইতেছে।‘< br /> (পথের পাঁচালী, বিভূতিভূষঠ£ বন্দ্যোপাঠ্যায়)
ঝাঁটাটা তেমনি পড়ে আছে। বুড়ি ছিলনা বলে ওই ঝাঁটার তেমন সদব্যবহার হয় নাই। লেবু গাছ থেকে শুরু করে মামুলি কাঁটাগাছ সবই তো বুড়ির অতি প্রিয়। অতি চেনা। এই ধরণীতে ইন্দির বুড়ির মতো যা কিছু, সকলি কেবল মায়ার ডোরে বাঁধা!
â€˜à¦–à¦¾à¦¨à¦¿à¦•à¦•à§à¦·à ¦£ পরে ফণী বুড়ীর চোখের পাতা বুঝাইয়া দিতেই কোটরাগত অনেক খানি জল শীর্ণ গাল দুটা বাহিয়া গড়াইয়া পড়িল।
ইন্দির ঠাকুরূণের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিন্দি পুর গ্রামে সেকালের অবসান হইয়া গেল।
(পথের পাঁচালী, বিভূতিভূষঠ£ বন্দ্যোপাঠ্যায়)
সেই আফ্রিকান প্রবাদটি ঝট করে মনে পড়ে যায়---
যখন কোনো প্রবীণ মারা যায়, তার সঙ্গে একটি গ্রন্থাগাঠ° ধ্বংস হয়ে যায়!
‘দ্য ওল্ড ম্যান এণ্ড দ্য সি’র সান্তিয়াগৠরও নাই কোনো পিছুটান। সে পড়ে থাকে একেলা একটা ঝুপড়িঘরে। কিন্তু সমুদ্দুরেঠহাতছানি সে অগ্রাহ্য করতে পারে না। বুড়ো হয়েছে বলে হয়তো মাছেরাও আর তার বড়শির আধার খেতে চায় না। কিন্তু সে নিরাশাবাদৠনয়। ফলে ৮৪ দিন পরে হলেও ধরে ফেলে এক বিরাটাকায় মাছ। যাকে তীরে নিয়ে আসতে আসতে বৃদ্ধের জীবন প্রদীপ নিভু নিভু হয়ে পড়ে, কিন্তু সে হাল ছাড়ে না। কারণ এই পৃথিবীর দানা খুঁটে খেতে খেতে সান্তিয়াগৠজেনে গেছে---à¦†à¦¶à¦¾à¦•à ‡ জলে ভাসিয়ে দেয়া যাবে না, কিছুতেই না।
‘No one should be alone in their old age, he thought.’
মোদ্দা কথা এই চিন্তাই তাকে অসাধ্য সাধন করিয়ে নেয়।
সান্তিয়াগৠর মানসিক জোরের জায়গাটা দেখি---
‘Most people were heartless about turtles because a turtle’s heart will beat for hours after it has been cut up and butchered. But the old man thought, I have such a heart too.’
‘Let him think that I am more man than I am and I will be so.’
(The Old man and the Sea, Ernest Hemingway)
বয়সের ভারে ক্লান্ত হওয়া স্বত্বেও ‘আগুনপাখি⠀™à¦° সেই প্রৌঢ়া নারীর হাত ধরে কী অনায়াসেই না স্মরণ করা যায় সাতচল্লিশ-ঠূর্ব অখণ্ড এই ভুবনডাঙ্গঠ¾à¦° উত্থান-পতন, নির্মাণ ও ক্ষয়। রাঢ়বঙ্গের এই ধূলি ধূসরিত জনপদের এক বয়স্ক নারীর জবানীতে উঠে এসেছে জীবন মন্থনের অমৃত ও গরল। যা সমষ্টির নিজেরই বিষয়। মাটি লগ্ন এক প্রৌঢ়া নারীর বসতভিটে আগলে দেশত্যাগ অস্বীকার প্রকাশ করে ভ্রান্ত রাজনীতির ভেদনীতি, অসার দেশভাগ ও লড়াকু জীবন।
এ যেন এক বহু প্রাচীন বনস্পতি! যার শেকড় মাটির অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত। যিনি ফুরিয়ে যেতে যেতেই পূর্ণ হয়ে উঠেন। ভেঙে পড়তে পড়তেই জোড়া লেগে যান। জীবনের অমোঘ সত্যের মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়ে দেন এই প্রৌঢ়া। বয়সের গাছপাথর যার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে, যেন ওই পূর্ণতা দান করে।
‘ঠিক তাই হলো। কত্তা আমাকে বেশি কথা বললে না। মেঝ-খোকাও বেশি কিছু বললে না। সে এ্যাকন এ্যাকটু গোটা মানুষ। এই তার স্বাস্থ্য, এই জোয়ান যেন অন্য মানুষ। আমারই কোলে এতটুকুন ছিল, আমারই বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে কিছুতেই বিশ্বাস হয় না, অচেনা লাগছে, কথা বলতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। বুঝতে পারছি, এখন আমার কাছে কিছু থাকার সময় লয়, আমার কাছ থেকে সব চলে যাবারই সোমায়।’
কবি সুকান্তের লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে---এসে ছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান…
অবাক লাগে, এই প্রৌঢ়া ফুরিয়ে যেতে যেতেই যেন নিজেকে পূর্ণ করে তোলেন!
‘চারাগাছ এক জায়গা থেকে আর জায়গায় লাগাইলে হয়, এক দ্যাশ থেকে আর দ্যাশে লাগাইলেও বোধহয় হয়, কিন্তুক গাছ বুড়িয়ে গেলে আর কিছুতেই ভিন মাটিতে বাঁচে না।‘
এই জীবনদর্শন অতি পুরাতনী ছাড়া আর কেই-বা এমন করে দিতে সক্ষম?
‘পানি কুনোদিন ওপরদিকে গড়ায় না। দাঙ্গা হ্যাঙ্গামঠ¾à§Ÿ কই-ই দ্যাশের একটো মোসলমানকে পাকিস্তানৠযেতে দেখলম না। গেয়েছে কিনা আমি কি করে জানব? ই এলেকায় তো দেখলম না। কিন্তুক বড়োলোক আবস্থাপন্ঠমোসলমানদেঠ° লেগে ভালো ঢল নেমেছে পাকিস্তানৠর দিকে, অ্যানক মোসলমানই সিদিকে গড়িয়ে গেছে। আমার ছোট খোঁকাটিও একদিন গড়গড়িয়ে চলে গেল। ভালো হলো কি মন্দ হলো, সিকথা আমি বলতে পারব না, শুদু জানলাম আমার সব খালি হল, সাথে আর কাউকে পাব না। এই খালি সোমগসারে একা একা থাকব। কথাটা কি ভুল হলো আমার? কত্তা তো আছে এখনো। তবে খুব ভুল বোধায় লয়। কত্তা কি আছে আমার? ভেতরে ভেতরে তা মনে হয় না।‘
(আগুনপাখি, হাসান আজিজুল হক)
কী দৃঢ় ও দীপ্ত চিন্তার মানুষ এই নারী! বয়সের ভার যাকে পাহাড়ের মতো সুদৃঢ় করেছে। বয়স যাকে ঝকঝকে নুড়ির মতো স্বচ্ছ চিন্তা দিয়েছে!
কবি আবুল হাসানকে মনে পড়ে যায়---
মানুষ তার চিবুকের কাছেও একা!
‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরায়’ জীবনের বহুবিধ প্রতারণা ও বিষ সঞ্চয়ে থাকার পরও একবিন্দু প্রেমের মধুর জন্য মরীয়া হয়ে ওঠাও কেমন যেন প্রাচীনতাঠেই জয়ী করে তোলে বোধ হয়! বয়সের গাছপাথর যতই কাদার গর্তে এঁটে বসুক না ক্যান, তাকে তুবড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে না পারলে কীসের তব প্রণয়? কীসের তরে এই বেঁচে থাকা?
‘মোরে ভালোবাসায় ভুলিও না, পাওয়ার আশায় ভুলিও…।‘
কাজী নজরুল ইসলাম বুঝিবা এইরুপ প্রণয়কে মনে রেখেই এমন সুরে ভেসেছিলেন! যা আজও আমাদের আনমনা করে তোলে!
ফ্লোরেন্টঠ¿à¦¨à§‹ আর ফারমিনার প্রণয় তাই বয়সের সুউচ্চ প্রাচীরকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বেগবান স্রোতস্বিঠীতে পরিণতি পায়।
‘It was as if they had leapt over the ardous cavalry of conjugal life and gone straight to the heart of love. They were together in silence like an old married couple weary of life, beyond the pitfalls of passion, beyond the brutal of hope and the phantoms of disillusion: beyond love. For they had lived together long enough to know that love was always love, anytime and anyplace, but it was more solid the closer it came to death.’
(Love in the Time of Cholera, Gabriel Garcia Marquez)


আমায় গান শেখালো বনস্পতি !

সাহিত্যের নিগুঢ়-à¦…à¦¨à§à¦§à •à¦¾à¦° ও বন্ধুর পথে হাঁটতে গিয়ে কত যে রক্তাক্ত হয়েছি! পায়ের তলায় সেই রক্তধারা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছি হয়তো কোনো ভাঙা পথের পাশেই। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ওপরে তাকালে দেখেছি, কোনো কোনো বৃক্ষের বড় ডাল খানিকটা ঝুঁকে পড়ে আমায় স্বান্তনা দিচ্ছেন। ছায়া দিচ্ছেন হয়তো অকারণেই! তবে চিরকাল যা হয়, সব চাইতে অধিক কূটনীতির শিকার হতে হয় সময়ের সহযাত্রীদৠর হাতেই। তাদের বাঁকা নজর ও তাচ্ছিল্য দুইটাই সমান তালে চলে! চলে বেল্টের তলা দিয়ে ছুরিকাঘাতঠ“। এইসব সয়ে নিজের পথটি নিজের আলোয় আলোকিত করে হেঁটে যাওয়া বড় সহজ কম্ম নয়।
অগ্রজদের কাছ থেকে পাওয়া অভয়, আশ্রয়, মমতা, স্নেহ আর বরাভয় হয়তো আমাকে এখনো দাঁড় করিয়ে রেখেছে, নইলে বহু পূর্বেই আমার পতন অবশ্যম্ভাঠী ছিল। তার উপর রয়েছে আমার বিদঘুটে অন্তর্মুখৠ€ স্বভাব!
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে অত্যন্ত মান-সম্পন্ঠমাসিক সাহিত্যপত্ রিকা ‘শৈলী’ তখন বোদ্ধা পাঠকের কেন্দ্রবিঠ¨à§à¦¦à§à¥¤
‘শৈলীর’ স্পেশাল ইস্যুতে আমার ‘উৎসব’ গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পরে বাংলা একাডেমীর ‘উত্তরাধিঠ•à¦¾à¦°â€™ পত্রিকায় গল্প দিলাম। কিন্তু সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিবুল্লা হ গররাজি গল্প ছাপতে। তিনি গোঁ ধরলেন, ‘শৈলীর’ মানের গল্প না হলে তিনি কিছুতেই ছাপবেন না। তখন আমি কি করি? নিজের সঙ্গেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। বহু খেঁটেখুটে, যত্ন নিয়ে লিখলাম ‘ঘুম ও স্বপ্নের মাছরাঙা পাখি’। এবং তিনি তা ছাপলেন। আজ তিনি বেঁচে নেই, কিন্তু আমার সাহিত্যের পথে আলো হয়ে রয়ে গিয়েছেন চিরকালের জন্য।
আমি তখন ‘তরুণ লেখক’ প্রকল্পের নবীশ। একদিন শুনতে পেলাম---প্রখ §à¦¯à¦¾à¦¤ লেখক ও অনুবাদক সুব্রত বড়ুয়া আমায় খুঁজছেন। খানিক অবাক হয়েই তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি অত্যন্ত প্রশংসা করলেন আমার লেখার। পরবর্তীতে তিনি আমার প্রথম গল্পবইয়ের দূর্দান্ত এক রিভিউ করলেন। যা মনে হলে আজও চোখ জলে ভরে যায়। সেই রিভিউ ‘দৈনিক সংবাদে’ ছেপে দেন আমাদের কালের শ্রদ্ধেয় সম্পাদক আবুল হাসনাত। তখন একুশে বইমেলা চলছিল। বইমেলা চলাকালীন ওই প্রকাশিত রিভিউ আমাকে ম্যারাথন রেসের শক্তি যোগায়।
এই হাসনাতভাইৠের কাছেও আমার অপরিসীম ঋণ। তিনি না থাকলে আমি হয়তো বহু পূর্বে লেখাই ছেড়ে দিতাম। রক্তাক্ত পায়ে হেঁটে পথ চলার সাহস পেতাম না! গুটানো স্বভাব নিয়ে আরও গুটিয়েই থাকতাম।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, একবার রোজাতে দৈনিক সংবাদে একটা গল্প দেই আমি। তখন সংবাদের ‘ঈদসংখ্যা⠙ বাজারে আসি আসি করছে। ইলাস্ট্রেঠ¶à¦¨ করার টাইমও নাই। হাসনাতভাই আমাকে ফোন করে বললেন, ইলাস্ট্রেঠ¶à¦¨ ছাড়াই কিন্তু যাচ্ছে আপনার গল্প।
এভাবে কত বনস্পতি কত ভাবেই না আমায় হাতেখড়ি দিয়েছেন। বহু যতন করে তাল, লয় শিক্ষা দিয়েছেন। গানের সহি সুর বারংবার ঠিক করে দিয়েছেন। কতজনের কথা না-বলা রয়ে গেল আজ। তাঁদের কথাও নিশ্চয়ই বলব কোনো একদিন!
আরেকজনের কথা না বললেই নয়, তিনি প্রখ্যাত কথাসাহিত্ঠিক সেলিনা হোসেন। বায়োলজিক্ঠ¯à¦¾à¦²à¦¿ তিনি হয়তো আমার মা নন। কিন্তু তিনি আমার সত্যিকারেঠ° ‘মা’। তিনি না-থাকলে এই বেঁচে থাকাও বড় ভারবাহী মনে হতো। কতভাবে কত স্নেহই না তিনি আমায় দিয়েছেন। আমার কত অসুখ তিনি স্নেহ দিয়েই সারিয়ে তুলেছেন। বলেছেন---‘পঠপড়ি, যুদ্ধ করে টিকে থাকার নামই জীবন!’
এবং আমি যুদ্ধ করে টিকে থাকতে শিখলাম।
এইরুপ কিছু প্রাচীন বৃক্ষেরা আজও আছেন আমার মাথার উপরে। নিজেকে কেমন ছায়াঘেরা মনে হয়। মনে হয়, রোদ্দুরের তীব্র উত্তাপ তাঁরা আড়াল করে রেখেছেন। এইসব ছায়ারা প্রলম্বিত হোক, আরও শীতল হয়ে আমাকে নির্ভার করে তুলুক। তাঁদের করে দেয়া পথেই তো আমি হাঁটছি। সঠিক সুরে নিজের গানটি গাইতে পারছি!
হে ছায়াবৃক্ষঠ°à¦¾, তোমাদের জানাই আমার প্রণতি!


তিনি বৃদ্ধ হলেন
আমায় ছেড়ে বুড়ো হলেন আমার সুজন!

আব্বার সঙ্গে আমার ছিল দূর্দান্ত আন্ডারস্টৠযান্ডিং! আমি আব্বার কাছে কখনই কিছু চাইনি, আব্বাও আমার কাছে কখনও কিছু চায় নাই। কিন্তু আমরা দুজনেই জানতাম কার কি দরকার? কার কি লাগবে? কার কি জন্য মন খারাপ?
আমাদের দুইজনের বোঝাপড়াও ছিল মৌন ও একই কেন্দ্রাভঠ¿à¦®à§à¦–ী।
আমরা দুইজনই জানতাম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাঠথাকতেই হয়। থাকবে। থাকা উচিত। এবং এতে স্পর্শের গুরুত্ব অধিক। ফলে তাঁর স্নেহের হাত অভয় দিয়ে আমার মাথার চুলে। আমার শূণ্যহাত আলগোছে তাঁর পিঠের ওপর। নিজেদের নানান গোপনকথা ভাগাভাগি করে হেসে, আনন্দ করে, গোপনে কেঁদে একে অন্যকে খামাখাই প্রবোধ দিয়ে চালাতাম বাবা-মেয়ের জীবন।
আব্বার বয়স বাড়ার পরে যখনই আমি তাঁর হাত স্পর্শ করেছি, মনে হয়েছে এই হাত অন্যদের তুলনায় যেন সামান্য বেশি শীতল। একটু যেন অধিক হীমে মাখমাখি! কেমন যেন ম্লান, শ্যাওলা-ধরঠ¾à¥¤ কোনো বড় পাথর দীর্ঘদিন জলের তলায় পড়ে থাকলে যেমন, অনেকটা তেমন! অচেনা এক গাম্ভীর্য নাকি শান্ত-শীতলঠ¤à¦¾ অহর্নিশ যেন ছুঁয়ে থাকে পাথরটাকে! আবার পিঠে হাত রাখলে মনে হতো, বিশাল কোনো পাহাড়ের গা ঘেঁষে চলছি, যে পাহাড়কে আবৃত করে রেখেছে কোমল তৃণের সবুজ গালিচা।
হয়তো মানুষের বয়স হলে সে ক্রমে জলের তলায় পড়ে থাকা পাথর কিংবা পাহাড়ের মতো মৌন ও শীতল হয়ে ওঠে!
আব্বার পৃথিবীতে কি ছিল? যতদূর স্মরণ হয়, আমি ছাড়া তাঁর পৃথিবীতে আর কিছুই ছিলনা। তিনি আর কিছু বুঝি চানওনি।
আর তিনিও ছিলেন আমার সমস্ত কিছুর নিদান। আমার জুড়োবার জায়গা। জীবনে-à¦•à¦°à§à¦®à §‡-সংসারে ক্লান্ত হয়ে আমি তাঁর কাছেই বার বার ছুটে গিয়েছি। কোনোদিন কোনো প্রশ্ন করেননি। জানতেও চাননি। আমি হয়তো নিয়তি নির্ধারিত ব্যর্থতা গাঢ় প্রসাধনে ঢেকে তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছি, তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছেন আমার পরাজয় আড়াল করার ছল।
যতদিন নিজে চলার ক্ষমতায় ছিলেন টিফিনকেরিৠŸà¦¾à¦° সাজিয়ে চলে এসেছেন আমার বাসায়। প্রতি ঈদের জামাত শেষে আমার কাছেই তার আসা চাই-ই, চাই। আমি হয়তো তখন সংসারের ঘানির নিচে পিষ্ঠ হচ্ছি। আব্বার কাছে ঠাঁয় বসে থাকার ফুরসৎ আমার জোটেনি।
শেষের দিকে আর আসতে পারতেন না। আমাকেও ছুটি দিতনা এই পোড়া সংসার। সারাদিন আমার পথ চেয়ে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি। আমি হয়তো রাত এগারোটা বাজিয়ে তাঁকে দেখার সুযোগ পেতাম। অত রাতে গিয়ে দেখতাম তাঁর চোখের জলে বালিশের এককোণ ভিজে উঠেছে। কাউকে কোনো অনুযোগ-অভি ¦¯à§‹à¦— জানাতেন না এ নিয়ে। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক পরার্থপর এক মানুষ। কারো কাছ থেকে কোনো বিষয়েই সাহায্য কামনা করতেন না। নিতেনও না।
আব্বা নানাবিধ অসুখ ও বয়সে ক্রমে শয্যাশায়ীॠআমার পৃথিবী ক্রমশ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। আমি শান্তির জন্য হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছিলঠম, মেলেনি। কোনোদিন আর আমার শান্তি মেলেনি। মিলল না!
তারপর আব্বা একদিন খুব চুপিসারে চলে গেলেন। কাউকে কিছু না বলে, কোনো অভিযোগ না-জানিয়ে। আর আমি ডানাভাঙা শালিকের মতো আধেক জীবন নিয়ে এই পৃথিবীতে পড়ে রইলাম। পড়ে আছি। কত দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াই। ঘুরে বেড়াই এখানে-সেখা ¦¨à§‡à¥¤ কত নদীর কাছে যাই, পাহাড়ের কাছে। অরণ্যের ধারে। আমার সামনে অবারিত আকাশ---কিন্ত ু আমি আর আগের মতো উড়তে পারিনা। কিছুতেই নিজেকে জুড়োতে পারিনা। নিজের সমস্ত অস্থিরতাকৠ‡ সরিয়ে রেখে চুপ করে একদণ্ড বিশ্রাম আমার ভাগ্যে জোটে না!
ছুটছি, ঘুরছি, দেখছি---কিনৠতু এই পৃথিবীর কোথাও আমার আর জুড়োবার জায়গা নেই! উড়ে বেড়ানোর মতো স্নেহ-শীতল কোনো আকাশ আর নেই…!