একটা সময় ছিল যখন
বার্ধক্যের দিকে
তাকিয়ে থাকতাম। সমস্ত
তরুণেরাই অমন তাকিয়ে
থাকে।গাড়িতে চাপলেই
উড়ুউড়ু মন যেমন
দিকচক্রবালের ওপারে কি
আছে খুজঁতে বসে! মন তখন
স্বপ্নের
জ্যোৎস্না-ডুরে লেপা এক
আলকাতরা রঙ মসৃণ
হাইওয়ে, আর ইচ্ছাগুলো
যেন উইন্ডস্ক্রিনের
সামনে ঝিলিক দেওয়া
বিরতি সংকেতহীন সুগম
দূরত্বের তুমুল
সায়োনারা।
ভাবছিলাম—ঠিক কতো বয়স
হলে পরে মেগাপ্লেক্স
হয়ে ওঠে স্মৃতি?একা
থাকার এই সীমায়িত
চৌহদ্দিতে গড়ে উঠল কি
ক্লান্ত শোণিত-ঘর?
কোয়ারান্টাইন্ড
নিজস্ব বাগানবাড়ির
চারপাশে কেনো এত অজস্র
মৃতস্বপ্নের ভূরি ভূরি
ঢেউঢিবি?কবে আর আমার এই
অসংখ্য ছিদ্রয়ুক্ত
শুখা মাটির মেঠো
ফুলদানিতে হাজির হবে
মেঘফুলের শুভ-শুদ্ধি
উপচার? দি সোস্যালিস্ট
ইউনিভার্স । ঊনসত্তরীয়
এই পড়ন্ত বিকেলে হাজার
দুয়ারি অনুভবের
প্রতিটি পাল্লা খুলে
দেব তাই; নিজেরই গেঁথে
তোলা লক্ষণগণ্ডির
বাইরে দাঁড়াব! উপস! কত যে
স্মারক, কতো কত্তবার যে
মুহূর্তের প্রদক্ষিণ,
জেগে উঠছে—প্রার্থনা !
সেল-বাজারের
বিক্রিবাট্টা এবারে
লাটে উঠেছে,লাটের
হুকুমে। অথচ,এক আকাশ
বৃষ্টির শপথ নিয়ে নদী
নাকি উষ্ণ হয়েছিল
এবারেও,চৈত্রের
শুরুতেই। মাঠ ভরা ধানের
গুঙ্গিয়ে ওঠা আর্তনাদ
কি তোমার
‘বাতানুকুলিত” মরমে
পশিয়াছে, হে ফুকুয়ামা,
এই বুঝি তোমার ‘end of history ‘ ?
এমনতরো ঘুরঘুট্টি
আঁধারে চতুর্দিকেই তো
গুঞ্জ রহা হ্যায়
বহ্ন্যুৎসবেও হার না
মানা ভিজে কাঠের
গুমরানো কান্না!শুনিতে
পাচ্ছো না?স্পিক্টি নট
জারি হয়েছে,স্তূপ হয়ে
তাই চাদ্দিকে পড়ে রয়েছে
মাস্ক-এর কুলুপ ঠাসা
ঢের ঢের চুপকথা ! এই তো
কানে এলো—
কোয়ারান্টাইনড সব
মানুষগুলোর
চৌহদ্দিতেই নাকি
দেবদারুর সমান
পারমানেন্ট গাঁথনি
তোলায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে
— তিরতির দৈনন্দিন
বিষন্নতা! মাল-মশলাও
জড়ো করেছে দেদার।
মনরেগার পয়সা পাবে
আশ্বাস পেয়েছে;, তাই
লকডাউন ভেঙ্গে ভিড়
জমিয়েছে। শুনেছি ফতুর
হয়ে গিয়েছে ওরা,
ফ্রি-সেলে বিকোতে হয়েছে
যেহেতু একবুক অক্সিজেন!
কী আর করা যাবে!
চৈত্রবাজারের ফি-সেল
চুকিয়ে প্রতিবছরই
অক্সিজেন-ময় হয়ে ঘরে
ফিরত ওরা। দুলে দুলে
উঠত পর্দা। চায়ার
সোনাকণায় বিভোর সুঠাম
শালগাছ— টগবগে নিজস্ব
৩২ ,কায়াসাথি মদগ্ররবী
দাপুটে পঁচিশ আর আর আর
শরীর ঢিবির নীচে
অস্থি-মজ্জা-মাস,কেমন
এক অস্থির
অনুভব—ঢিপটিপ, টিপধিপ...
ঢিপঢিপ ধিপধিপ...সুখ
এবার অফ-ব্যালান্স শিট
‘কন্টিনজেন্ট’ আইটেম।
ফলত, আমাদের এই
অতি-সুরক্ষিত
আধুনিকতাই অবশেষে একটি
ফুটনোটের মতন
কারেক্টেবল
অডিট-খুঁতখুঁত। নাইক
তোমার ব্যাখ্যামতো
জাস্ট একটি
অফ-ব্যালান্স শিট
‘কন্টিনজেন্ট
লায়াবিলিটি! আহ হা; মিলে
গেছে ব্যালান্স
শিট।ডেবিট-ক্রেডিট!আর
কেনো? ইওরোপে ওরা
ষাটোর্দ্ধোদের
চাঁদমারি ঠাউরেছে।
এখানে সুদ কমেছে ,মানে
উপার্জন! কটৌতি লাগু
হয়েছে ভ্রমণে।আমাদের
জীবন যেন আবার
লেভিয়াথনীয় nasty, brutish & short !
এই অ-সামাজিক জঘন্যতা
কি অনতিক্রম্য ? এ কি
কেবলমাত্র এক বামপন্থী
শোরগোল? এই সার্বিক
ক্ষত থেকে যদি সার্বিক
মুক্তি না চাই,
তাহলে,চলো ভাই—
বাণপ্রস্থে যাই!
মুনিঋষিগণ ধ্যানস্থ
হন—নির্জনতায়।লকডাউন
সেই (অ)-পার্থিব সুযোগ
এনে দিয়েছে। তুলনপত্র
বলা হলে লোকে এড়িয়ে
যাবে, কিন্তু ব্যালান্স
শিট নাম দিলে হিসেবী
লোকজন হাতে তুলে নিলেও
নিতে পারে বা পারেন।এই
সুয়োগ। সমাজস্থ অনেকের
হয়ে এখন ‘ক’ফোঁটা চোখের
জল’ স্টাইলে ব্যক্তিগত
হিসাবটি টুকে রাখতে
হবে। প্রথমে লাভ-ক্ষতি!
চোখ বুজোলেই দেখতে পাই—
ভবিষ্যত ছোট হয়ে যাচ্ছে
কেমন!
কেন এমন লস অব “ফিউচার
ইকনমিজম’।‘সযত্নলালিত
’ নিজস্ব পুরানো
ইতিহাস-এর আ-মূল উৎপাটন?
কেন? সোমবারের দুপুর
ফিরে যাচ্ছে রবিবারের
দুপুরে; কেন এমন
দিগভ্রান্তি—ইস! আমারই
প্রস্তাবে ছিল কি
অ্যান্টিক্লকওয়াইজ
হাঁটাচলার এমনতর
একুশশতকীয়
অবিমৃষ্যকারিতা?
সদলবলে পিছনে ফিরে
তাকানো!স্তূপীকৃত হতে
থাকা ধ্বংসস্তূপ
ধ্বংসস্তূপ আর
ধ্বংসস্তূপ ! হতভম্ব
,বিসদৃশ
‘কালোয়াতি’-মার্কা এক
কাঁচ্চা কাবাড়িখানা
এমন,
বিষন্নতা-হতাশা-দুঃখময়
ার চৌপহর! ফুলদল
প্রস্ফুটিত হইতেছে
ভাবিয়া আনন্দিত হইব
আমি! আহ-হা!,পাখিরা গান
গাহিতেছে,বনে নয়,শহরে
ঢুকে পড়েছে পশুরা—এমন
সব ছবি পোস্ট করছেন
অনেকে । আশ্রয়ের
নিবিড়তায় হাঁটতে থাকা
মানুষের
মৃত্যুদ্বন্দ্ব কেন
সাঁটানো থাকেনা ওইসব
রসিক দেওয়ালে? পিঙ্ক
চাঁদের অনিবার্যতার
জায়গায় টাঙ্গানো হয় না
কেন কালো এক বাস্তবিক
চাঁদ ? হিরণ মিত্রের
ক্যানভাস হয়ে উঠুক বরং
আমার / আমাদের লেখোনী !
২৫০ কি,মি হেঁটে আদিম
মানুষ চলেছে ভিন্নতর
যাত্রায়; অটপসি
বলছে—খাদ্য নয়,তার চোখে
ছিল নিশ্চিত আশ্রয়ের
জাগতিক স্বপ্ন !
ভবিষ্যত ছোট হয়ে যাচ্ছে
কেমন । গ্লোবাল পথ ছেড়ে
লোকাল হতে বলেছেন কেউ
কেউ ।স্মিত উজ্জ্বল চোখ
কি প্রসব করিবেন ফের
মিশকালো শূন্যতা? কেন
ফের এমন নিস্তব্ধতার
নোনা দরিয়া? কেন আর
পেন-ডাউন ? জখম
শব্দ-সৈনিকের
দোস্তি-ইয়ারি,কিসের এই
যুদ্ধ-প্রস্তুতি? বিশাল
বিশ্ব আঙ্গিনা থেকে
নিজেরই ঘরের মধ্যে
কোয়ারান্টাইন্ড হয়ে
যাওয়া কোনো কাজের কথা
নয়। স্বদেশি প্রকল্প
থেকে স্বয়ং
রবীন্দ্রনাথ কি এই
জন্যেই নিজেকে সরিয়ে
নিয়েছিলেন?
বস্তুত,সাতসকালেই
জানালা খুলে নজরে পড়ে
যে ভূগোলের সীমাহীনতা!
গত তিন চার দশক নয়,
তিন-চার শতক ধরেই বরং
আন্তর্জাতিকতায় বেশ
অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি আমরা
: কাশ্মীর টু
কন্যাকুমারিকা। শহর
কলকাতার এমন প্রাসাদ
–বৈভব তো তারই ফসল।
গান্ধীজির উক্তিটি ছিল
keep your windows open । কেন আমরা এই
সময়ের সার্বিক
বিষন্নতাকে সুয়োগে
বদলে নেবো না ? এ তো
রামায়ণের যুগ নয়।
ইনফরমেশন এজ!নেট-এজ,
আইপ্যাড-আইনেট
ওয়ার্ল্ড ...
আমাদের সম্পদ— অমেয়
মানবসম্পদ।
ইকনমিস্টরা বলছেন যে
সাতকান্ডের পরেও চীন আর
ভারত + ইকনমি । ইয়েস!
কোভিড পজিটিভ নয়।
জিডিপি-তে পজিটিভ। দে
আর ইন দ্য নর্থ অব দি
লক্ষণরেখা। দ্যাটস ইট।
এটাই বটমলাইন-হে
ফুকিয়ামা। তোমার এণ্ড
অব হিস্ট্রি এখনও
দিকচক্রবালের
ওপারে।পশ্চিম একটু
পিটুনি খেয়েছে বটে,
কিন্তু কইমাছের জান,
ঠিক খাড়া উতরোবে। সামলে
নেবে।নেবেই।
তুলাদন্ডে চাপানো যায়
যদি এই সময়ের
অনুভবকে,তাহলে নজরে
পড়বেই যে আ-বিশ্ব
কোয়ারান্টাইন্ড মানুষ ,
যাদের আমরা সেলফ
সেন্টারড বলেই জানতাম ,
তারাও বারান্দায় এসে
বেহালা বাজাচ্ছেন ।
চাইছেন যে পাশের লোকটিও
সুস্থ থাক ।করোনা
আমাদের মনে করিয়ে
দিয়েছে কি কি করণীয়
আমাদের । অন এ ডেলি
বেসিস। সেইসূত্রেই
হয়তো অনেকেই প্রশ্ন
তুলেছি এইসব ঘন্টা
,মোম্বাতি নই ,চাই
কংক্রীট স্টেপস । ঠুনকো
মোম্বাতির বদলে যেগুলো
আপামর মানুষের
চোখেমুখে আশার আলো
জ্বালিয়ে দেবে—সেইসব
অর্থনৈতিক কয়েকটি
কদম।সাদা হাড়ের সুদেহী
ক্যাথিড্রালে আজন্ম
খোলা থাকুক বরং দুটো
জানালা—আ-মরণ, নজরে
আসুক,চিত্রপ্রদর্শনী
চালু ঘরানারঃ
অসম্পাদিত, অবাধ ।
মুম্বাইয়া বৈভবের
মুখোমুখি
দাঁড়িয়ে,বছরদশেক
আগে,কবিতাটি
লিখেছিলাম—হাঁকপাক
জুড়ে দিয়েছে কয়েকটি
লাইন—
‘ দুটি পাতার ফাঁকে,
প্রস্ফুট কুঁড়িতে , রং
যেন লিখেছিল ‘স্বর্গ
এখানেই”
উজ্বল ক্যাপশনে
কোরা কাগজটি পেয়েছে
দখলে ধূ্সর
শব্দপুঞ্জকে...
২৩ ডিগ্রি
দ্রাঘিমায় বরফ জমেছে
ফ্রেশ ভয়াল সাপের মতন
জটিল কুণ্ডলীতে...
ঝুরি ঝুরি অলীক
স্বপ্ন ফোটে, আলকাতরায়
,হরেক সূর্য ওঠে,
দেওয়ালে
তপ্ত চুপসি
অক্ষরে—দারিদ্র্যরেখা
পোড়ে—অনন্তশয়নে তার
ম্যাজিকছাই ওড়ে
মৃন্ময়পাত্র আমি
ভেঙ্গেছি
কতো,ক্ষত-বিক্ষত শরীরে,
শবানুগমনে,
শব্দ-ক্যারাভানে”
অতি-চর্চিত ব্যবহারের
মাধ্যমে কিছু-কিছু
প্রয়াস-প্রবণতা
কৃষ্টি,লোকসংস্কৃতির
রূপ নেয় । মৃতের প্রতি
সম্মান জানাতে যেমন
ক্যান্ডেল–ভিজিল,
মিছিল। আমরা মৃত নই।
আমাদের সবার মধ্যেই
রয়েছেন ‘মেঘে ঢাকা
তারা’-র জীবন-তৃষ্ণা-- “
দাদা, আমি বাঁচতে চাই !”
এটাই শেষকথা।