হেঁটেও নয়, ছুটেও নয়,
সাপের মত।
দূরেও নয়, কাছেও নয়, গভীর
কত।
আলোও নয়, অমাও নয়, যায় যে
দেখা।
আজও নয়, কালও নয়, ভাগ্যে
লেখা।
(‘পাগলা সাহেবের কবর’-
শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায়)
মানুষের মন যেন সেই
অলৌকিক কবরের মতই এক
গোলকধাঁধা, যার হদিশ
পেতে বড় বড়
মনস্তত্ত্ববিদরাও
নাকাল হন । সাধারণ
মানুষ তো কোন ছার ! আমরা
প্রতিনিয়তই ভুল করি ,
ভুল
দেখি , ভুল শুনি , ভুল
ভাবি , আবার ভুলেও যাই ।
আর এই ভুলের সুত্র ধরেই
উঠে আসে নানা
আধি - ব্যধির খোঁজ । আজ
চলচ্চিত্রের ও পত্র
পত্রিকার কল্যাণে আমরা
বাচ্চাদের ক্রমাগত
ভাষা শিখতে ভুল করা , ভুল
লেখা , পড়তে অসুবিধা
ইত্যাদিকে মনোনিবেশ না
করতে পারার অসুখ
( ‘ অ্যাটেনশান ডেফিসিট
ডিসঅর্ডার ’ ) ,
ডিস্লেক্সিয়া এমনকি
অটিসমও হতে পারে বুঝে
মনোবিদের সাহায্য নিই ।
বাস্তবিকই , ভুল করা
মাঝে মধ্যে সাধারণ হলেও
, তা নিয়মিত রুটিন বা
ক্রমবর্ধমান হলে তা
অনেক ক্ষেত্রেইকোন
অস্বাভাবিকতার বা
মানসিক রোগের প্রাথমিক
লক্ষণ ।
“ বনবাসিনী শকুন্তলা
রাজার কাছে কত অভিমান
করলে , রাজাকে কত অনুযোগ
করলে , সেই কুঞ্জবনের
কথা , সেই দুই সখীর কথা ,
সেই হরিণ - শিশুর কথা –
কত কথাই মনে করিয়ে দিলে ,
তবু রাজার মনে পড়ল না । ”
(‘ শকুন্তলা ’ –
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
‘ অ্যামনেসিয়া ’ বা
স্মৃতি ভ্রংশ হল গিয়ে
আংশিক স্মৃতি হারানো ,
যাতে কোনও ঘটনা বা
পুরানো / নতুন স্মৃতি
ভুলে গেলেও বাকি সবই
অটুট থাকে । মস্তিষ্ক
বা মানসিক আঘাত থেকে
শুরু করে জ্বর – জারি ,
টাইফয়েড ,
এন্সেফেলাইটিস , মদ বা
ড্রাগের নেশা অনেক
কিছুই হতে পারে এর কারণ
। তবে কিনা চিকিৎসার
সাথে বা নিজের থেকেও
স্মৃতি অনেক ক্ষেত্রেই
আবার ফিরে আসে দেখা
গেছে ।শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায়ের ছোটদের
গল্পের চরিত্রেরা যেমন
স্মৃতি হারিয়ে ফেললেও
তা ফিরে আসে (‘ মনোজদের
অদ্ভুত বাড়ি ’ , ‘ ভূতুড়ে
ঘড়ি ’ , ‘ পটাশগড়ের
জঙ্গলে ’ ) ।
আবার ইদানীং এর বহুল
পরিচিতি ও প্রয়োগ
বিভিন্ন ভারতীয় সিনেমা
ও সিরিয়ালে এক লক্ষণীয়
বিষয় । আর কিছু না হোক
হিন্দি সিরিয়াল পিছু
একজন করে
স্মৃতিভ্রংশের রুগি
মিলবে সচ্ছন্দে ।এ নিয়ে
সিনেমাও কিছু কম হয়নি ;
অমিতাভ বচ্চন ও আমজাদ
খানের ‘ ইয়ারানা ’, কমল
হাসান ও শ্রীদেবী
অভিনীত ‘ সাদমা ’, আমির
খানের ‘ গজনী ’ , আবার
হলিউডের গ্রেগরী
পেকের
‘ স্পেলবাউণ্ড ’, টম
ক্রুজের ‘ ভ্যানিলা
স্কাই ’, জিম ক্যারির ‘
দ্য ম্যাজেসটিক ’,
ম্যাট ডেমনের
‘ বোর্ণ আইডেনটিটি ’,
জুলিয়ান ম্যুরের ‘ দ্য
ফরগটেন ’, ড্রিউ
ব্যারিমোর অভিনীত ‘ ৫০
ফার্স্ট ডেটস ’, সবই
অ্যামনেসিয়ার বক্স
অফিসে জয়জয়কার ।
“ সে আবার হাসি থামিয়ে
বলল , “ না , না , শুধু এর
জন্য নয় । মনে কর , একজন
লোক আসছে ,তার এক হাতে
কুলপিবরফ আর- এক হাতে
সাজিমাটি ,আর লোকটা
কুলপি খেতে গিয়ে ভুলে
সাজিমাটি খেয়ে ফেলেছে —
হোঃ হোঃ , হোঃ হোঃ ,হাঃ
হাঃ হাঃ হা — “ আবার
হাসির পালা। ” (‘ হ য ব র ল
’ – সুকুমার রায় )
বয়স হলে যে লোকে ভুলে
যায় , এ কথা সবাই
মোটামুটি জানে (কে কভু
সিধু জ্যাঠা কবে ! )।
চলতি ভাষায় বলে
বাহাত্তুরে ধরা বা
ভীমরতি । চিকিৎসা
শাস্ত্রে এরই নাম ‘
বিনাইন সেনেসেন্ট
অ্যামনেসিয়া ’ , ইদানীং
যাকে প্রায়ই গুলিয়ে
ফেলা হয় আরও জটিল ,
স্মৃতি বৈকল্যর (
ডিমেনশিয়া ) অসুখ , ‘
অ্যালঝাইমারস ’ এর সাথে
। সেরেব্রাল
কর্টেক্সের এই রোগের
দরুন মস্তিস্কের কোষ
দ্রুত মরে যাওয়ায় ধীরে
ধীরে স্মৃতি ও অন্যান্য
জ্ঞান ক্রমশই বিলুপ্ত
হতে থাকে ।দুরারোগ্য এই
ব্যাধির প্রতিরোধ বা
নিবারণের বিশেষ কিছু
উপায়ও নেই । ধীরে ধীরে
হারাতে থাকে শুধু প্রিয়
স্মৃতিরাই নয় , প্রিয়
মানুষেরাও - চেনা
পৃথিবী অচেনা ঠেকে ,
তারই সাথে কখনও যোগ হয়
সন্দেহ রোগ
( ‘ প্যারানোইয়া ’ ) ।
প্রখ্যাত শিশু
সাহিত্যিক লীলা
মজুমদার থেকে হলিউডের
চার্লটন হেস্টনও এর
কবলে পড়েছেন । অ্যালিস
মানরোর ‘ অ্যাওয়ে ফ্রম
হার ’ , ডেবরা ডিনের ‘
দ্য ম্যাডোনাস অফ
লেনিনগ্রাদ ’,
ক্রিস্টোফ ফিশারের ‘
টাইম টু লেট গো ’ , লিসা
জেনোভার ‘ স্টিল আলিস ’ ,
ক্রিস্টিন হারমেলের ‘
দ্য স্যুইটনেস অফ
ফরগেটিং , নিকোলাস
স্পার্কসের
বেস্টসেলার বই ‘ দ্য
নোটবুক ’ এ সবকটি
উপন্যাসই
অ্যালঝাইমারসগ্রস্ত
দম্পতি বা বাপ
ঠাকুরদাদের নিঃসঙ্গতা
আর সম্পর্কের নানা
টানাপড়েনের জীবন্ত
দলিল । ‘ দ্য নোটবুক ’
এবং ‘ অ্যাওয়ে ফ্রম হার
’ এই দুটি বইএর
চলচ্চিত্র রূপও আবার
দারুন ভাবে সফল ।
‘ দ্য নোটবুকের ’
নায়িকা , অ্যালি ,
অ্যালঝাইমারসে ভোগা
একবৃদ্ধা , প্রতিদিন
সকালে তাকে হাসপাতালে
এসে গল্প শোনান আরেক
বৃদ্ধ , নোয়া , তার
পুরানো নোটবই থেকে ।
অ্যালি ও নোয়ার প্রেমের
গল্প শুনতে শুনতে মগ্ন
হয়ে যান অ্যালি , শেষে
তার মনে পড়ে যে এই বৃদ্ধ
নোয়াই তার স্বামী , এই
গল্প তাদেরই প্রেমের ।
এই চমকের পরে
স্মৃতিমেদুরতায় ডুবে
যান অ্যালি ও তার
পরিবার । পরের দিন থেকে
আবার শুরু হয় ভোলা ও
গল্পচ্ছলে অ্যালিকে
খুঁজে পাওয়ার খেলা ।
পাঠক বুঝতে পারে যে
স্মৃতিচারণই অ্যালিকে
বর্তমানে নিয়ে আসার
একমাত্র চাবিকাঠি , যা
প্রতি মুহূর্তেই
হারিয়ে
যেতে পারে ।
“ হিজি বিজ্ বিজ্ বলল ,“
একজনের মাথার ব্যারাম
ছিল ,সে সব জিনিসের
নামকরণ করত । তার জুতোর
নাম ছিল
অবিমৃষ্যকারিতা , তার
ছাতার নাম ছিল
প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ,
তার গাড়ুর নাম ছিল
পরমকল্যাণবরেষু —
কিন্তু যেই তার বাড়ির
নাম দিয়েছে
কিংকর্তব্যবিমূঢ় অমনি
ভূমিকম্প হয়ে বাড়িটাড়ি
সব পড়ে গিয়েছে । হোঃ হোঃ
হোঃ হো—”(‘হ য ব র ল’-
সুকুমার রায়)
পিটার বিখসেলের ( অ্যা
টেবল ইজ্ অ্যা টেবল )ও
ডোরিস করতির ‘
ল্যাভেন্ডার ব্লুজ্ ’
আবার একটু অন্য ধরণের
ভুলে যাওয়া নিয়ে লেখা ।
তাদের গল্পের
চরিত্রেরা ভাষা ও বাচিক
প্রকাশের ক্ষমতা
ক্রমশই হারাতে থাকেন যা
আফ্যাসিয়ার অন্যতম
লক্ষণ । আফ্যাসিয়া রোগে
মস্তিষ্কের যে অংশটি
ভাষা নিয়ন্ত্রণ করে
তাকে আক্রান্ত করে , ফলে
প্রথমতঃ কথা লিখতে বা
বোঝাতে অসুবিধা হয় যা
ক্রমে লেখা পড়তে না
পারা , জিনিসের সঠিক নাম
না মনে পড়া , এবং শেষে
ভাষার ব্যাবহার
পুরোপুরি বিস্মৃত
হওয়ায় গিয়ে ঠেকতে পারে
। ‘ ল্যাভেন্ডার
ব্লুজ্ ’- এর আর্থার
হঠাতই এক দিন ফোনের
উত্তর দিতে গিয়ে থমকে
দাঁড়ান , ভাষা খুঁজে না
পেয়ে স্ত্রী ডোরিসকেই
ফোন ধরিয়ে দেন । রোগ
গুরুতর হয়ে দাঁড়ালে ( ‘
গ্লোবাল আফ্যাসিয়া ’ )
তিনি একেবারেই স্ত্রীর
ওপর নির্ভরশীল হয়ে যা্ন
। ভাষা হারানোর দুঃখ ,
হতাশা , আবার ইশারার
সংলাপের ক্ষুদ্র
নিরাপত্তায় বাঙময় হয়ে
ওঠে এই প্রৌঢ় দম্পতির
জীবন যাপন ।
পিটার বিখসেলের ছোট
গল্প ‘ আইনে টিশ ইস্ট এন
আইন টিশ ’ (বাংলায় ‘ একটা
টেবিল শুধু একটা টেবিল
’)আপাত দৃষ্টিতে একটি
মজার গল্প মনে হলেও, তার
বীজ লুকিয়ে আছে অবসাদ ও
আফ্যাসিয়ায় । এক
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ
একাকিত্ব কাটানোর
জন্যে বিভিন্ন জিনিসকে
নতুন নাম দেওয়ার খেলায়
মাতেন । কিন্তু এই আজব
শখের দরুন তিনি আসল
নামগুলি ও বাচিক প্রকাশ
ক্রমে ভুলে যাওয়ায় বাকি
লোকেরা আর তার কথা
বুঝতে পারে না , না তিনি
তাদের । অতঃপর তিনি
নিজেকে গুটিয়ে নিতে
নিতে আরোই একলা হয়ে যান
। আবার , তার কাল্পনিক
দুনিয়া খাড়া করার
প্রবণতা এবং তার ফলে
বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে যাওয়া ডিসোসিয়েটিভ
ডিসঅর্ডারের অন্যতম
লক্ষণ ।
“চেয়ে দেখি রুমাল তো আর
রুমাল নেই,দিব্যি
মোটা-
লাল টক্টকে একটা
বেড়াল গোঁফ ফুলিয়ে
প্যাট্ প্যাট্ করে আমার
দিকে তাকিয়ে আছে!” (হ য ব
র ল)
‘হ য ব র ল’র আজব দৃশ্য
বা ‘ মণিহারা ’র
ফণীভূষণের কংকাল দেখা
পাঠকের কাছে যতই
উপভোগ্য হোক না কেন ,
বাস্তবে আজগুবি জিনিস
দেখা , দৈববাণী শুনতে
পাওয়া , নিজেকে হঠাৎ
বিখ্যাত চরিত্র ভাবা ,
আমূল প্রত্যক্ষ (
হ্যালুসিনেশান ) এবং
মতিবিভ্রমের ( ডিলিউশান
) তাৎপর্য বহন করে
।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
ছোট গল্প ‘ জীবিত ও মৃত ’
গল্পে , মৃত্যুর মুখ
থেকে ফিরে আসা
কাদম্বিনী চরিত্রটি
ঠিক বুঝতে পারে না সে
বেঁচে আছে না মরে গেছে ,
তাঁর মৃত্যু দিয়েই তার
মীমাংসা হয়। এডগার
অ্যালান পো’র গল্পে বার
বার ঘুরে ফিরে হাজির হয়
আমূল প্রত্যক্ষ ও
মতিবিভ্রমের রোগীরা ,
তাও আবার গল্পকারের
রূপে ; ‘ দ্য ফল অফ দ্য
হাউস অফ আশার ’, ‘ দ্য
ব্ল্যাক ক্যাট ’,
‘ দ্য পিট অ্যান্ড দ্য
পেন্ডুলাম ’, ‘ দ্য টেল
টেল হার্ট ’ -এর
চরিত্ররা এক অদ্ভুত
পরাবাস্তব অবস্থায়
পৌঁছে যায় , সেই দুনিয়া ‘
ননসেন্স ’- এর থেকে
আলাদা , ছায়ায় মায়ায়
গহীন , ভ্রান্ত চিন্তার
অবাধ বিচরণ ভুমি। কোনও
বস্তু বা লোককে অকারণ
ঘৃণা , ভয় ও সন্দেহ করতে
করতে চরিত্ররাক্রমেই
রোগের জালে জড়িয়ে পড়ে।
অচিরেই গল্পগুলির
সমাপ্তি ঘটে বীভৎস
হত্যা বা ধ্বংসলীলায় ।
‘ দ্য ফল অফ দ্য হাউস অফ
আশার ’ এর ঝুল পড়া
রহস্যময় বাড়িটি যা
গল্পের শেষে , আশারের
সাথে ভেঙে চুরমার হয়ে
যায় তা মানসিক রোগে
জীর্ণ মনেরই রূপক ।
‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’ ও
‘দ্য টেল টেল হার্ট’-এর
মূল চরিত্ররা আবার ‘
প্যারানোইয়া ’, ‘
স্কিৎজোফ্রেনিয়া ’, এবং
‘ অবসেসিভ কম্পালসিভ
ডিসঅর্ডারের ’ বিলক্ষন
দাবিদার । প্রসঙ্গতঃ
রবার্ট লুইস স্টিভেনসন
-এর ‘ ডঃ জেকিল মিঃ হাইড
’ সাহিত্যে এই ধরণের
চরিত্রের পথিকৃৎ ।
সিডনি শেল্ডনের ‘ টেল
মি ইয়োর ড্রিমস’ওএইরকম
হ্যালুসিনেশান ,
মতিবিভ্রম
ওদ্বিখণ্ডিত
ব্যক্তিত্বের অসুখ
নিয়ে লেখা একজনপ্রিয়
সাইকো থ্রিলার , মন
বিজ্ঞান ও রহস্যের
আশ্চর্যবেস্টসেলিং
মিশেল ।
হিচককে্র ‘ সাইকো ’ ও ‘
মার্নি ’ , পরবর্তী
কালের ‘ রেকুঅ্যাম ফর আ
ড্রিম ’ ,‘ দ্য সেল ’ ,
‘ স্পাইডার ’, ‘ ফ্রম হেল
’ , ‘ শাটার আইল্যান্ড ’ ,
ও ‘ ব্ল্যাক সোয়ান ’
চলচ্চিত্রগুলি আমূল
প্রত্যক্ষ ও
মতিবিভ্রমকে সার্থক
নাটকীয় রূপ দিয়েছে । এর
মধ্যে ‘ দ্য সেল ’, ‘
স্পাইডার ’,
‘ ফ্রম হেল ’ ও ‘ ব্ল্যাক
সোয়ান ’
আবারদ্বিখণ্ডিত
ব্যক্তিত্ব অসুখের (
ডিসোসিয়েটিভ
আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার )
টানাপোড়েনকেও চমৎকার
রহস্যর মোড়কে
উপস্থাপনা করে।
প্রসঙ্গতঃ মানসিক অসুখ
নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা
বা কুসংস্কারেরও শেষ
নেই ; চতুর্দশ শতাব্দীর
ইংরেজরা বেডল্যামে
যেতেন পাগলদের দেখে
আমোদ পাওয়ার জন্যে ,
বর্তমানে মানসিক রোগের
ভুল ব্যাখ্যাকে
উপজীব্য করে হয়ে যাচ্ছে
একের পর এক ধারাবাহিক ও
চলচ্চিত্র ।
প্রেম , পুনরায় মাথায়
আঘাত , শক ট্রিটমেন্ট ,
ঝাড় ফুঁকের কল্যাণে
ফিরে আসছে স্মৃতি , সেরে
যাচ্ছে পাগলামি ,
কাগজের ‘ অব্যর্থ
বশীকরণী ’ বিজ্ঞাপনের
মত। এক দিকে যেমন ‘
ফিশার কিং ’ এ এক পাগলের
প্রলাপ ও আমূল
প্রত্যক্ষ নাটকীয়তা
ছাড়িয়ে অর্থবহ হয়ে ওঠে ,
‘ অ্যা মোমেন্ট টু
রিমেম্বার ’
অ্যালঝাইমারসের
নির্মমতার সত্যকে
অতিক্রম করে বার্তা
পাঠায় ধৈর্য ও
মানবিকতার , অন্য দিকে
আছে মনোবিকারগ্রস্ত
রোগী / খুনিদের নিয়ে
তৈরি বাণিজ্যিক ছবি যা
মনোরোগীদের আরই
অন্ধকারে ঠেলে দেয় ,
হাসি বা বিদ্বেষের আড়াল
থেকে ( ‘ আন্নিয়ান ’ )। ডি
ভুগরা’র লেখা ‘ ম্যাড
টেলস ইন বলিউড ’ * এমনই
হিন্দি সিনেমার
‘পাগলামির’ ইতিহাস।
আবার লসন এবং ফুটস**
ডিজনির ৩৪ টি ছোটদের
ছায়াছবিকে চিন্হিত
করেন ‘ পাগল ’ বা ‘
পাগলামি ’ শব্দের পুনঃ
পুনঃ প্রয়োগ তাও আবার
কাউকে ভুল / খারাপ
বোঝানোর ক্ষেত্রে , যা
শিশুদের মধ্যে মানসিক
রোগীদের প্রতি ভুল
ধারণা বা বিদ্বেষ
ঢুকিয়ে দিতে যথেষ্ট।
সব মিলিয়ে, মনের ভুল খুব
একটা নিরীহ জিনিস নয় ।
জ্বর বা মদ গাঁজা
ইত্যাদি নেশা ছাড়াও ভুল
বকা , ভুল দেখা বা ভুলে
যাওয়ার মধ্যে নিহিত
থাকতে পারে আগামী
অসুখের বীজ । কিন্তু
তাই বলে আমাদের ডিএসএম **
( DSM )হাতে মাঠে নেমে
অনভিজ্ঞ , ভুলভাল
মতামতের ওপর ভরসা না
করে থেরাপিস্টের মতামত
নেওয়াই মঙ্গল ।নয়ত
আমরাও হিন্দি
সিরিয়ালের আনাড়ি ,
পক্ষপাতদুষ্ট
পরিচালকদের মত করতে
থাকব অজস্র অবাঞ্ছিত
ভুল ।
*Bhugra, D. Mad tales from Bollywood: the impact of social,
political, and economic climate on the portrayal
of mental illness in Hindi films. 2005.
**Lawson, A., &Fouts, G.Mental Illness in Disney
Animated Films. The
Canadian Journal of Psychiatry. 2004.
***DSM V–আমেরিকান
সাইকিয়াট্রিক
অ্যাসোসিয়েশান (APA ) এর
মুদ্রিত মানসিক রোগ
নির্ণয় ও পরিসংখ্যানের
ম্যানুয়াল।