কত ঢাক বাজছে চারদিকে!!!
ধূপ-ধুনোর গন্ধে শরৎ
এসেছে। নীল আসমানি
ভালবাসা আর পুজোর গন্ধ।
নীলিমায় ধরা পড়া মন।
নদীর পাড়, রেললাইন,
কাশবন, পোকাদের ঝিল্লি
সুরে রাত। জনসমুদ্র এবং
গাড়ির ঠোক্কর
বাঁচিয়ে ৫-৬টা দিন
একটু অন্যরকমের।
প্রতি বারের মতোই
দেবীপক্ষ। পরিকল্পনা –
৩.৪৫এ ওঠা এবং টিভি
স্লটের পেন ড্রাইভে
আদি, অকৃত্রিম বীরেন
ভদ্র। আকাশবাণীর গত
কয়েক বছরের
‘মহালয়া-কেন্দ্রিক
গবেষণা’ এই সরল বাঙালির
না-পসন্দ।
স্কুল ছিল। জীবনে প্রথম
মহালয়ার দিন স্কুল
গেলাম। কেন্দ্রীয়
সরকার এনআরসি, এনপিসি,
ডিজিটাল ভারত, হিন্দু
দেশ নিয়ে গলা ফাটালেও
মহালয়ার দিন সরকারি
ছুটি নেই। বিশেষত,
কেন্দ্রীয় সরকারি
পঞ্জিকায় বহু হিন্দু
অনুষ্ঠানেই ছুটি
দেওয়া হয় না।
এবছর মহাসপ্তমীর দিন
স্কুল হয়ে ছুটি পড়ছে।
সিদ্ধান্ত নেওয়াই আছে,
ষষ্ঠী-সপ্তমী কোনও
ক্লাস করাবো না।
সাহিত্য নিয়ে গল্প করে
কাটিয়ে দেব। আমাদের
স্কুলে বাংলাভাষা
বর্জিত। চেষ্টা করেছি
আমার ছাত্র-ছাত্রীদের
সাথে আমার ছেলেবেলা এবং
দুর্গা পুজোর আনন্দ ভাগ
করে নিতে।
ছোটবেলায় স্কুল ছুটি
পড়ত ষষ্ঠীতে। সরস্বতী
পুজো ছাড়া ৫টা দিন,
যেদিন কেউ পড়তে বসতে
বলত না। নতুন জামা,
জুতো। সন্ধ্যেয় বাবা
অথবা মা পাড়ার ঠাকুর
দেখাতে নিয়ে যেত।
সিআইটি, কাঁটাকল, একের
পল্লী, পুকুরপাড়,
ফ্রেন্ডস, কর্মী সংঘ,
শীলস গার্ডেন,
সবজিবাগান, ফুলবাগান,
পুলিশ ফাঁড়ি – এই ছিল
পরিধি। ফেরার পথে
বকুনি-বিহীন কর্নেটো
অথবা ফিস্ট।
সপ্তমীর সকাল বেরোতাম
পিসিমণির সাথে।
বাঁধাধরা বাগবাজার,
মহাম্মদ আলী পার্ক,
কলেজ স্ট্রিট। অষ্টমীর
দিন সকালে অঞ্জলী দিয়ে
বিকেলে মামারবাড়ি।
সন্ধ্যেয় মামার সাথে
তিন ভাই বোন দেখতে
যেতাম বামুনপাড়া
বাজার, আনন্দ পালিত।
কোনও এক বার জেঠির সাথে
জীবনের প্রথম হোল নাইটে
দেখেছিলাম কুমোরটুলি
পার্ক, হাতিবাগান, নলীন
সরকার, কাশী বোস লেন।
নবমী আরেক মামার সাথে
বেরোতাম সাউথ
ক্যালকাটা দেখতে।
পার্ক সার্কাস থেকে
এগডালিয়া, সিংহী পার্ক,
বাবুবাগান, যোধপুর
পার্ক, সেলিমপুর, কসবা,
বাদামতলা, ৬৬ পল্লি।
একবার দু’দিন নবমী
পড়েছিল। সেবারও হোল
নাইট গেছিলাম। দশমী
কেটে যেত প্রণাম, আশিষ
এবং ঘুগনি – গজার
আহারে। পুজো শেষে
মনখারাপ।
বন্ধুদের সাথেও ঘুরেছি
– বেশিরভাগই হোল নাইট।
এখন সন্ধ্যেয় ঠাকুর
দেখা শেষ করে ছাদে
আড্ডা হয়। অথবা প্রেম।
অষ্টমীর দিন প্রেমিকার
শাড়ি এবং প্রেমিকের
পাঞ্জাবি...। আমার
প্রত্যেক অঞ্জলির
সাক্ষী মা। আমার
দশভূজা, অসুরদলনী
দেবী।
পুজো নতুন মুহূর্ত নিয়ে
আসে। ভালো – খারাপের
মিশেলে কেটে যায়
চিরন্তন এক ছেলেবেলা।
তখন জিঙ্গল হত।
কোকাকোলার ‘সপ্তমীতে
প্রথম দেখা, অষ্টমীতে
হাসি, নবমীতে বলতে
চাওয়া তোমায় ভালবাসি...’,
শালিমার অথবা থামস আপের
‘এবার জমবে মজা।’ বড়ো
হতে হতে শিখলাম আমার
কোলকাতা কেমন বদলে
গেছে। পুজোর আনন্দকে
ছাপিয়ে পুরস্কার আর
থিমের ছড়াছড়ি। ভিড়ের
হয়রানি, পুজো ঘিরে
রাজনীতি এবং তৎসহ
মানিয়ে নেওয়া।
কর্পোরেট পুজোর ধাঁচে
সেজে ওঠা শহর। কেমন যেন
দম আটকে আসে।
তবুও, আজ ৫ অক্টোবর।
মহাসপ্তমী। স্কুল থেকে
ফিরছি। ২.৪২ ডাউন
শিয়ালদহ লোকাল। পুজো
শুরু হয়ে গেছে। বন্ধুরা
অপেক্ষা করছে...। আমার আজ
ঘরে ফেরার তাড়া নেই
কারন ‘সফরের’ ‘হাম’ আজ
দুর্গা পুজো দেখতে
যাবে, প্যান্ডেলে
প্যান্ডেলে...।