তুমি বললে ‘আলো’—চরাচর
আলোকিত হয়ে উঠল। ভাসমান
বৃক্ষ-বৃক্ষা, চতুষ্পদী
প্রাণী, মুক্ত-মানালি,
ডানাহীন পরিরা সব
জ্বলছে নক্ষত্রের
আগুনে। তারা ঝরে পড়ছে
চাঁদহীন রাতে। নরম পেজা
তুলো মেঘদল নৈর্ঋতে
দৃশ্যমান।
তুমি বললে
‘অন্ধকার’-দিগ্বিদিক
ধেয়ে আসল কালবৈশাখী। এ
কি নটরাজ— তার প্রলয়
নাচন! কীট-পতঙ্গ,
মানুষের হাড়গোড়,
গুহা-গাত্রে নৃত্যরতা
সেবা-দাসীরাও ঝুরঝুরে
মৃত্তিকা হয়ে ঝরে পড়ল
সূর্যগ্রহণের
প্রতুষ্যে।
১৯৯৪ সাল। এপ্রিল বা মে
মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে
সবে ভর্তি হয়েছি, একটা
নতুন সময়ে প্রবেশ।
স্কুল-কলেজের বাঁধা-ধরা
নিয়মের বাইরে মুক্ত
একটা পরিবেশ।
জাহাঙ্গিরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়
এমনিতেই সবুজে ঢাকা।
কয়েক’শ একর জমিতে গড়ে
উঠেছে সবুজ গাছ,
লালমাটির ঢিবি আর
লেক-সমৃদ্ধ
বিশ্ববিদ্যালয়। আমার
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
নিয়েও একটু স্টোরি আছে।
প্রথমে ভর্তি হই
ভূ-তাত্ত্বিক
বিজ্ঞানে। কসমোলজি,
ভূ-তাত্ত্বিক কাল পর্ব,
পাথর, পানি, মাটি তাদের
গঠন, প্রকৃতি নিয়ে
পড়াশোনা বেশিদিন আমাকে
আকর্ষণ করতে পারল না।
কী জানি ! এখন মনে হয় ঐ
বয়সের অস্থিরচিত্ততাই
হয়তো ভু-তাত্ত্বিক
বিজ্ঞান ছেড়ে
নৃবিজ্ঞান পড়তে আমাকে
উৎসাহ যোগায়। মানসিক
সেই অস্থিরতাটাই থিতু
হয়ে বসতে দেয় না কোথাও,
যা এখনও রয়ে গেছে। তবে
আমাদের দেশে বিজ্ঞান
যেভাবে পড়ানো হয় তাও
হয়তো আমাকে ঐ বিষয়টি
পড়ার জন্য উৎসাহী করে
নাই । জাহাঙ্গিরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রান্তিক, ডেইরি
ফার্ম, লাইব্রেরি,
চৌরঙ্গি, সমাজবিজ্ঞান
অনুষদ, ক্যাফে, টিএসসি,
খেলার মাঠ, মুক্ত-মঞ্চ,
লেকের ধার সব জায়গা পড়া
বইয়ের মতো মুখস্থ করে
ফেলেও টো টো করে ঘুরছি
সারাদিন, রোদ মাথায়
করে। সে সময়
বন্ধু-বান্ধব যারা ছিল
তারা ছাড়াও আরও বহু
নতুন মানুষের সাথে
পরিচয় ঘটত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
দর্শন বিভাগের ছাত্র
রায়হানের সাথে তখন খুব
বন্ধুত্ব। পড়ন্ত
বিকালের আলোতে সবুজ
গাছগুলো তীর্যকভাবে
শরীরে ছায়া ফেলছিল।
বন্ধু সহপাঠি মিতুর
সাথে ঘুরছিলাম
এলোমেলো। সকালে একবার
রায়হানের সাথে কথা
হয়েছিল মানিকগঞ্জে
বেড়াতে যাবার বিষয়টি
নিয়ে। নাটক ও
নাট্যতত্ত্ব বিভাগের
পিযূষদার বোনের বাড়ি
মানিকগঞ্জের ঘিওরে।
সেখানে বেড়াতে যাবার
কথায় খুব আনন্দ হলো,
মিতু প্রথমে যেতে রাজি
হয়েও পরে সিদ্ধান্ত
বাতিল করল। অনেকটা
ঘোরের মধ্যেই রায়হান আর
পিযূষদার সাথে চললাম
মানিকগঞ্জের পথে।
প্রান্তিক স্টপেজ থেকে
লোকাল বাসে সোজা
মানিকগঞ্জ। সারা পথ
আড্ডা, আড্ডা। কবিতা,
প্রেম, জীবন-কি ছিল না
তখনকার আড্ডায়? আর সেটা
খুব স্বতস্ফূর্ত। কোনো
পিছুটান নেই, কোনো ভয়
নেই, সংশয় নেই, ঝড়ের মতো
বেগবান, আকস্মিক,
আনন্দের, বেদনার। সামনে
নতুন জীবনের হাতছানি।
খুব নিশ্চিত কিছু নয।
অস্পষ্ট। অনেকটা বাস
থেকে দেখা দূর বনভূমির
মতো। সন্ধ্যার
আলো-আঁধারিতে যেমন
রহস্যময় আর আকর্ষণীয়
হয়ে ওঠে বনভূমি তেমন
চোখেই তখন দেখতাম
জীবনকে। আর তারুণ্যের
লাগামহীন ভাললাগায়
ভেসে যেতাম এ স্থান
থেকে সে স্থানে, একটি
কবিতা থেকে অন্য
কবিতায়, প্রেম থেকে
অ-প্রেমে। সকাল থেকে
বিকাল পর্যন্ত লেকের
ধারে বসে পাতার খসখস
শব্দ শুনতাম নয়তো
শাহবাগের আজিজ সুপার
মার্কেটের সিঁড়িতে বসে
থাকতাম ঘণ্টার পর
ঘণ্টা। বন্ধুরা আসত,
যারা বন্ধু নয় তারাও
আসত, কথা বলত, চলে যেত,
আবার আসত, আমরা, আমি তখনও
সেখানে বসে। দু-এক দিন
সকালের বাসে
ইউনিভার্সিটি যেতাম,
দুপুরে ঢাকায় আসতাম
আবার সন্ধ্যায় ফিরে
যেতাম। তবে আমি খুব কম
হলে থেকেছি। ঢাকার
রাযেরবাজার এবং পরে
ঝিকাতলা এবং শংকরের
বাসা থেকে বাসে যাতায়াত
করে ক্লাস করেছি। যে
কয়েকদিন
জাহাঙ্গিরনগরে রাতে
থেকেছি মনে হতো একটা
অন্য পৃথিবীতে চলে
এসেছি, যাকে আমি চিনি
না। হলের ২০৮ নম্বর
রুমটা ঝিম মেরে থাকত।
ধুলো ঝেড়ে নিয়ে রাত
কাটাতাম আমি আর সহপাঠি
হেলেন। সে ছিল হেলেন অফ
জাহাঙ্গিরনগর, রং তুলি
দিয়ে আঁকা মেয়ে। খুব কম
কথা বলত। তার চোখ ছিল
নিজেকে প্রকাশের একটা
প্রধান মাধ্যম।
দুপুরের জাহাঙ্গিরনগর
বিরানভূমিতে পরিণত
হতো। খাঁ খাঁ করত পুরো
বিশ্ববিদ্যালয়। শিমুল
ফোটা রোদে সবুজ ঘাস আরও
বেশি তীক্ষœ হয়ে উঠত।
লেকের জলে ফুটে থাকা
গোলাপি শাপলা-শালুকরা
তাকিয়ে দেখত তারুণ্যের
বল্গাহীন উচ্ছ্বাস।
ট্রান্সপোর্টের
কালভার্টের উপর বসে
থেকে কেটেছে ঘণ্টার পর
ঘণ্টা। শীতকালে
সারাক্ষণ অতিথথি
পাখিরা ভিড় করে থাকত
লেকের বেশ ভেতরের দিকে
একটা ঢিবির মতো জায়গায়।
পাখিদের কিচির-মিচির আর
পাখার ঝাপটানি বুকে এসে
তরঙ্গ তুলে যেত, একটা
শিরশিরানি। কুই...
টু...ঝিক ঝিক কতরকম
বিচিত্র, না জানা শব্দে
ডাকত পাখিরা। মানুষ তার
ভাষাকে তৈরি করেছে তো
প্রকৃতির এই সব শব্দ
থেকে, পাখির ডাক থেকে,
প্রাণীকূলের নিজেকে
ব্যক্ত করবার ভাষা
থেকে। জাহাঙ্গিরনগরের
খেলার মাঠেই প্রথম আমি
লেমন গ্রাস দেখতে পাই,
অবশ্য তার অনেক আগেই
"গ্রাস” শব্দটির সাথে
পরিচয় ঘটেছিল বন্ধুদের
কাছ থেকে। জ্যোৎস্না
রাতে জাহাঙ্গিরনগর
পরিণত হতো ধূ ধূ
মরীচিকায়, যাকে স্পর্শ
করা যায় না। শুধু দূর
থেকে মনে হয় সে আছে
ধারেকাছে কোথাও। এক
ফালি চাঁদের টুকরোর মতো
লাগত তখন
জাহাঙ্গিরনগরকে।
চাঁদের আলোয় ঝলসাচ্ছে
প্রকৃতি ও মানুষ।
২. মানিকগঞ্জ থেকে
ঘিওরের দিকে যাত্রা।
রাস্তা খুব ভাল নয়।
এদিকটা দিয়ে একেবারে
পদ্মার পাড়ে চলে যাওয়া
যায বলেই কিনা বাতাসে
নদীর গন্ধ পাচ্ছিলাম,
খুব ঝাঁঝালো কোনো জলজ
লতার গন্ধ। রিকশায়
তিনজন যেতে যেতে
উঁচু-নীচু পথে কয়েকবার
নামতে হলো। রাস্তার
দুপাশে কোথাও খাল,
কোথাও ধানখেত। চলতে
চলতে রাস্তা যখন খুব
সরু হয়ে আসে চোখ বন্ধ
করে রাখি যাতে করে পার
হয়ে যাওয়া যায়
পুলসিরাত। একটা নীচু
জমিতে কলমি ফুল ফুটে
থাকতে দেখলাম। পুরো
জলাশয় জুড়ে বেগুনি
প্রজাপতি যেন ফ্রেমের
মধ্যে আঁটকে আছে।
আমাদের দেশের কলমি ফুল
অনেকটা মর্নিং গ্লোরির
(গড়ৎহরহম মষড়ৎু) মতো
দেখতে। মাঠে বেগুনি
লজ্জাবতী ফুটে আছে ।
বাতাসের ঝাপটায়
লজ্জাবতীর পাতা চোখ
বুজছে আবার মেলছে।
রিকশা ছেড়ে গ্রামের
পায়ে হাঁটা পথ ধরে
এগোচ্ছিলাম। মুহুর্তে
আকাশ ঘন কৃষ্ণ বর্ণ
ধারণ করল। বিকাল থেকেই
বাতাস বইছিল তবে তা খুব
ভাল লাগছিল। একটা ঝড়ো
ঝড়ো হাওয়া। কিন্তু
গ্রামে ঢোকার মুখে
সন্ধ্যা হওয়ার আগেই
জোড়ে বাতাস বইতে শুরু
করল। চারপাশ থেকে নাকে
ভেসে আসছে নানা জাতের
গাছ, লতা-পাতা, শস্যের
গন্ধ। মাটির একটা সোদা
গন্ধও নাকে এসে লাগল।
খুব দ্রুত বাতাসের গতি
বাড়তে লাগল। হাঁটতে
অসুবিধা হচ্ছিল।
আশেপাশে কোনো বাড়ি-ঘরের
চিহ্ন নাই। রায়হান,
পিযূষদা মাঝে মাঝে
অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আবার
বিদ্যুৎ চমকে দৃশ্যমান
হচ্ছে। ঝড়টা শুরু হয়ে
গেল যখন আমরা একটা সরু
রাস্তায় আর দুপাশে ঢালু
পথ নেমে গেছে। রাস্তার
একপাশে জলাশয় মতো
অন্যপাশে ধানের খেত।
একটা কালো ঘূর্ণি দেখতে
পেলাম গোলকের মতো ছুটে
আসছে। শো শো শব্দ।
ধুলায় চোখ বন্ধ হয়ে
গেল। পিযূষদা বলল,
নভেরা মাটিতে শুয়ে পড়ো।
কিছু বুঝে উঠবার আগেই
বাতাসের কুণ্ডুলি
আমাকে প্রায় দলা পাকিয়ে
ফেলল। প্রাণপণে মাটি
আঁকড়ে পড়ে থাকলাম, হাতে
ছোটো ছোটো লতার স্পর্শ
পেলাম, ধরে থাকলাম
ওদেরকে। ঝড়ের বেগ এত
প্রবল ছিল আর ধুলো
কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম
না। বাতাস এসে ধাক্কা
দিচ্ছে, যেন উড়িয়ে নিয়ে
যেতে চায়। মাটিতে শুয়ে
বন্ধুদের ডাকলাম
কিন্তু কারো কোনো
সাড়া-শব্দ পেলাম না।
অদ্ভূত একটা অনুভূতি,
ভাষায় প্রকাশ করা যায়
না। দানবের মতো একটা ঝড়
শরীরের ভেতর দিয়ে
অতিক্রম করে গেল, তার
শক্তিটা হাড়ে হাড়ে টের
পেলাম। রক্তের মধ্যে
কাঁপন ধরিয়ে দিল। ঐ
মুহূর্তে আসলে কীভাবে
নিজেকে মাটির সাথে
মিশিয়ে রাখতে পারি সে
চেষ্টাই করছিলাম। কোনো
কিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল
না। প্রাণের সবচেয়ে বড়
চাহিদা বেঁচে থাকা।
প্রতিকূল অবস্থায়
প্রাণ হয়তো নিজেকেই
বাঁচাতে চায়, অন্য কারো
চিন্তা করার অবকাশ তখন
সে খুব কম পায়। কোনো
উপায় থাকে না। মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়ের
"প্রাগৈতিহাসিক” এর
কথা মনে পড়ছে। জলে
তলিয়ে যাবার সময়
আরেকজনকে আঁকড়ে ধরে
প্রাণ নিজেকে বাঁচাতে
চায়, আরেকজনের মৃত্যু
ঘটিয়েও সে বেঁচে থাকতে
চায়। এর ব্যতিক্রমও ঘটে
কখনো কখনো, শিশুকে
বাঁচাতে গিয়ে মা-বাবা
নিজেদেরকে সেক্রিফাইস
করে। আরও অনেক কারণেই
প্রাণ উৎসর্গ করে
মানুষ। কেউ ভাষার জন্য,
কেউ দেশের জন্য, জাতির
জন্য, একটা সত্যের জন্য,
কবিতার জন্য, ছবির জন্য,
ভাতের জন্য। কতক্ষণ
ঝড়ের সাথে মিশে ছিলাম
জানি না। একটা সময় টের
পেলাম বড় বড় ফোঁটা
ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে
গায়ে। চারদিকের
অন্ধকার ক্রমশ কমে গিয়ে
চাঁদের আলো ফুটে উঠছে।
মাটি থেকে উঠে দেখি আমি
পড়েছিলাম রাস্তার ঢালে,
নীচে জলাশয়, হাতে ছেঁড়া
লতা-পাতা। রাস্তা থেকে
রায়হান আর পিযূষদা
ডাকছে। কী অবস্থা
নভেরা? তোমাকে নিয়ে খুব
ভয় পাচ্ছিলাম। আমি
বললাম, ্খুব অদ্ভূত এক
অভিজ্ঞতা হলো, আজ মনে
হচ্ছিল এখানেই হয়তো
শেষ। এখানে এই সন্ধ্যায়
মিশে যাব ঝড়ের সাথে।
তবু কেমন যেন একটা
ভাললাগা ছিল ঐ
সন্ধ্যায়। ঝড়ের
তাণ্ডবে, প্রকৃতির
প্রচণ্ড শক্তির রূপ
দেখে একটা নিরবচ্ছিন্ন
ভাললাগায় ছেয়ে গিয়েছিল
মন। ঝড় বরাবরই আমাকে
আকর্ষণ করে, ঝড়ের দমকা
হাওয়া জীবনের প্রচণ্ড
গতি আর উদ্যমতা; তার
নৃসংশতা আর ভয়ঙ্কর
রূপকেও মনে করিয়ে দেয় ।
নদীর ঝড় আরও ভয়ঙ্কর।
পদ্মার ঝড়ে পড়েছিলাম ৯১
সালে, কুষ্টিয়ায় মামার
বাসায় যাবার পথে।
৩. মানিকগঞ্জের সেই
সন্ধ্যায় ঝড়ের
কিছুক্ষণ পরে সারা আকাশ
জুড়ে তারার ফুল ফুটে
উঠতে শুরু করল।
ঝড়,বৃষ্টি-ধোয়া চাঁদের
আলোতে আমরা পথ চলতে
শুরু করলাম। গ্রামের
পথে কোনো
ইলেকট্রিসিটির আলো ছিল
না সেই রাতে। পিযূষদার
বোনের বাড়িতে
পৌঁছালাম যখন তখন সবে
রাত নেমে্েছ,
ব্রাক্ষ্মন বাড়ি।
বাড়িতে অনেক গাছ, পুকুর,
পাখি, মানুষ। আমাদের
দেশের গ্রামের
বাড়িগুলো আঁকা ছবির মতো
আর এত পরিচ্ছন্ন! ঢাকা
শহরের সাথে কোনো তুলনাই
হয় না। ঐ বাড়ির সকলে
আমাদেরকে খুব
আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ
করল, বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রদের প্রতি সকলের
একটা আলাদা ভালবাসা,
সম্মানবোধ কাজ করে। আগে
আরও বেশি ছিল এই
সম্মানবোধ। দেশের ভাষা,
স্বাধীনতা, স্বাধীকার
এবং অন্যান্য অধিকার
রক্ষার আন্দোলনে
বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রদের গৌরবোজ্জ¦ল
অংশগ্রহণের জন্যই এই
সম্মান তারা পেয়ে থাকে।
বর্তমানে অবশ্য
রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে
ছাত্র সংগঠনগুলোর
ন্যাক্কারজনক
কর্মকাণ্ডের জন্য
ছাত্রদের প্রতি
মানুষের মনোভাব
পরিবর্তন হয়ে গেছে।
পিযূষদার দিদির বাড়িতে
খুব সুস্বাদু খাবার
খেলাম রাতে। একটা বড়
কাসার থালাতে ভাত আর
ছোট ছোট বাটিতে পটলের
তরকারি, বেগুন ভাজা, টক,
ডাল, মাছের মুড়ো ঘণ্ট
আরও কত কী, সব মনেও নেই।
কিন্তু সে খাবারের
স্বাদ এখনও ভুলিনি।
প্রতিটা খাবারের আলাদা
গন্ধ টের পেয়েছিলাম,
আলাদা স্বাদ। সারারাত
জেগে গল্প করার জন্য
আমাদেরকে কাচারি ঘর
খুলে দেয়া হলো। সত্যি
সেসব আড্ডা এত প্রাণের
আর আনন্দের ছিল যা এখন
আর কিছুতেই পাই না।
কাচারির সামনে একটা
পুকুর নির্জন দাঁড়িয়ে
থাকল সারা রাত। সুপুরির
বাগানে হেঁটেই আমরা রাত
পার করে দিলাম। পুকুর
পাড়ের আশেপাশের কোনো
গাছ থেকে অচেনা একটা
পাখির ডাক আসছিল। ট্রি..
ট্রি... মিষ্টি একটা ডাক
থেমে থেমে, গ্রামের
নির্জন রাতে একটা
রাতজাগা পাখির ডাক তার
সকল সৌন্দর্য নিয়ে
আমাদের সামনে উপস্থিত
হয়েছিল। রাতের
নৈঃশব্দ্যতার শব্দ
স¦প্নতাড়িত করে
তুলেছিল। কোনো পাখির
ডাক তেমন করে আর
কোনোদিন শুনতে পাই নি।
সে পাখিও হয়তো হারিয়ে
গেছে আর নির্জন রাতে
পাখির ডাক শোনবার মতো
মন, মানুষ।