তোমাকে মূলত ‘তুমি’-ই
ভাবি, যেহেতু আমাদের
মধ্যের সম্পর্কটা
প্রেম নয় এবং দীর্ঘ সময়
একসাথে যাপনের সূত্র
ধরে তোমাকে আমি ‘তুমি’
ছাড়া আর কিছুই ভাবতে
পারি না!
তোমাকে ঘিরে যে
অনুভূতুগুলো সবচেয়ে
বেশি কাতর হয়ে ওঠে
তাদেরকে ‘ভালোলাগা’
এবং ‘ভয়’ নামে ডাকা
উচিৎ হবে কিনা সে
বিষয়েও আমি নিশ্চিত নই।
যে সমস্ত বিকেলে আমরা
দোকানে বসে কফি পান করি
অথবা রাস্তার পাশে
দাঁড়িয়ে চা, এবং
সন্ধ্যায় কল্পনার
বেগুনী উপত্যকাগুলো
হেঁটে যেতে যেতে
অসংলগ্ন গল্পের খসরা
বানিয়ে চলি, সেই
সময়গুলোতে তোমাকে
কখনোই বলা হয়নি এ-সকল
আড়ষ্টতা, ভয় বা
ভালোলাগার কথাগুলো-
তুমি বলে যাও, তোমার কেন
বৃক্ষ হতে ইচ্ছা করে, যে
বৃক্ষের চোখ নেই-মুখ
নেই-কান নেই, তবু সে কষ্ট
পায়- কী আশ্চর্য তার
হৃদয় ! এরকম অসংখ্য
অর্থহীন বলার ভেতর দিয়ে
আমরা উপত্যকার পর ঝিল,
ঝিলের ওপর সাঁকো পার
হতে থাকি-
তুমি বলে যাও অজস্র
মানুষ মিলে একটি
স্বত্বা এবং একটি
স্বত্বার অজস্র রূপের
কথা। শরীরকে যেহেতু
প্রাধান্য দাওনি কোনো
দিন তাই তোমার আর
‘সিদ্ধার্থ’র চোখের
আলো আমার
দৃষ্টি-জানালায় এক হয়ে
গেছে।
তারপর আমরা যেকোনো একটা
বৃক্ষের নিচে গিয়ে বসি
এবং রক্তজবা, ফণীমনসা,
শ্বেতদ্রোণ অথবা
ধুতুরার কথা ভাবতে
ভাবতে বলে ফেলি সেই
মেয়েটার কথা- গ্রামে,
চা-বাগানে অথবা নগরের
যে-কোনো গলিতে তার
বিক্ষত লাশ পাওয়া গেলো
গত সোম অথবা
বৃহস্পতিবারে; ঐ
মেয়েটার প্রিয় ফুল কী
ছিলো জানো?- তোমার চোখে
সূর্যমুখীফুল ভেসে
উঠলো ! তারপর আবার আমরা
অনেকক্ষণ কথা বলিনি।
যা করছিলাম তা-ই করে যাই,
পথ হয়তো নির্দিষ্ট,
আমরাই যাত্রাকে দীর্ঘ
ভেবে নেই, তাই আবার ফিরে
আসি যার যার আপেক্ষিক
নীড়ে। সম্পর্কের
মানচিত্রগুলো সীমানা
বদলাতে থাকে, যেভাবে
একটা দেশের বুকে
‘অরণ্য’ মরুভূমি হয়ে
যায়!
এ-সমস্ত কথা কখনো
উচ্চারণ করেনি আমার
ঠোঁট। কেননা, উচ্চারণের
চেয়ে উপলব্ধির মূল্য
অনেক বেশি। তাই আমি
কোনোদিনই তোমাকে আরো
একটু সময় বেশি থাকতে বা
চলে যেতে কোনোটাই বলিনি
কখনো। যেহেতু তুমি কতটা
সময় আমার সাথে যাপন
করেছ অন্ধকারে-আলোতে,
প্রত্যাশা ও ব্যর্থতায়,
, বেদনা ও ভালোলাগায়,
হৃদয় ও রক্তে ,
আর্তচিৎকারে-মমতায়-
সেসব মুহূর্ত
নিঃশ্বাসে মিশে গেছে
স্মৃতির অধিক কোনো
নামে!
আমাদের এই সময়গুলো তাই
অসহ্য যন্ত্রণার এক
একটি অধ্যায় উল্টিয়ে
উল্টিয়ে এভাবেই যাচ্ছে
‘পরবর্তী’তে, যেখানে
হয়তো নতুন কিছু রঙ,
ভাবনা,বোধ,প্রাপ্তি
অথবা অপ্রাপ্তি রয়েছে-
যা তোমার-আমার সম্পর্ক
আর দূরত্বের মাঝে
একাকার হয়ে মোহনা তৈরি
করছে নতুন কোনো
নিরবতার, নতুন কোনো
মিছিলের !
-ব্যক্তিগত গদ্য