“ দাদু ... সেজকাকার ছেলে
হয়েছে ” ।
“ তুই ভুল জানিস । যা
গিয়ে ভালো করে জেনে আয়,
মেয়ে হয়েছে। ”
“ ও দাদু ... দাদু ! হ্যাঁ
গো , তুমি ঠিক বলেছিলে ,
আমিই ভুল বলেছিলাম ।
ছেলে না, মেয়ে… ”।
দাদু জ্যোতিষী , এবং বেশ
নামকরা । নিজের গণনার
ওপর অগাধ বিশ্বাস ।
বিশ্বাসে দাগ পড়লো না ।
নাতনির জন্মের আগে
থেকেই অসুস্থ অবস্থায়
ছিলেন হাসপাতালে । নিজে
হাসপাতালের বেডে শুয়ে
জন্মের পরেই ছক কষে
দিয়েছিলেন। মেয়ে নাকি
দারুণ পয়া ।
হুঃ ! ছাই পয়া ... জন্মেই
কি কাণ্ড করলো ? ঠিক
চৌদ্দ দিনের মাথায়
ঠাকুরদাকে বেমালুম
খেয়ে ফেললো ! দাগ ধরালো
জ্যোতিষীর গণনায় ।
একান্নবর্তী পরিবার ।
সাবেকি নিয়মকানুন ।
মেয়েকে বাড়ির আর পাঁচটা
মেয়ের মতো
নয় , আরো ভালো শিক্ষা
দেবার চেষ্টা চালালেন
বাবা । মেয়ে ভর্তি হলো
শহরের একটি মাত্র
কনভেন্টে । মেয়ে ঝটাপট
ইংরেজি বলবে । সে তো
শিখলো মেয়ে , সাথে শিখলো
কিছু বেয়াড়া গুণ ... মুখ
বন্ধ করে খাবার চেবানো ,
মুখ চেপে কাশি ,হাঁচি ,
হাই, ইত্যাদি শিখলো
স্কুলের চ্যাপেলে
যাওয়া সিস্টারদের সাথে
। মেয়ে শিখলো ...
মনুষ্যত্ব । উকিল
বড়োকাকার মক্কেলকে
বাড়ির কাঁসার গ্লাসে জল
দিলে , ছ’বছরের মেয়ের
কপালে জুটলো যথেচ্ছ
তিরস্কার । কোন জাত
জানা নেই । বাড়ির
গ্লাসে জল খাইয়ে
নিজেদের জাত খোয়াতে হবে
? বাড়িতে কথা উঠলো , “
মেয়েকে সাহেব তৈরি করছে
। “ বাবা বকে বলেছিলেন ,
“ এসব বাড়িতে করে
দেখাতে হবে না । বাড়িতে
শুধু ঠাকুমার নিয়ম।
মেয়ে বুঝলো , সব শিক্ষা
সব জায়গায় ঠিক নয় ।
মেয়েকে এতো মাথায় করা
ঠিক নয় । ওই মেয়ের রূপ !
কালো , মোটা ... বিয়ে দেওয়া
যাবে না । ওকে পড়াশোনা
কম করিয়ে কিছু কিছু কাজ
শেখাও । কে শোনে কার কথা
। বিদ্যের জাহাজ মা , আর
বিদ্যানুরাগী বাবা ,
শিক্ষায় মেয়েকে
এভারেস্টে দেখতে চান ।
ইতিমধ্যে , মেয়ের
কুচ্ছিত রূপ কিভাবে
পাত্র জোটাবে ভাবনাও
এসে জুটতো বইকি । তাই , “
দিন দিন কুমড়ো হচ্ছিস ।
দিনে পঁচিশ বার সিঁড়ি
দিয়ে ওঠানামা করবি ” ।
একঘর লোকের সামনে এসব ...
মেয়ের মুখের দিকে
তাকিয়েও ঠিক ভুল বিচার
করতে পারেননি মা ।
“ খুব লোভ , না ? আজ মেরেই
ফেলবো ! কে বলেছে ,
আঁচারের বয়েম ছুঁতে ? সব
আঁচার ফেলে দিতে হবে
এবার । ওই গায়ে শিলের
কাছে কেন ? ”
” আর করবো না মা , মনে
রাখবো , এবারটা ছেড়ে
দাও। "
“ এই জন্য বলেছিলাম ,
পাঠাস না মেয়েটাকে
কেরেস্তান স্কুলে ”।
রাত্রে মাথায় ভেজা ভেজা
হাত বুলিয়ে ..." কেন যে
মেয়ে হলি রে মা... " ।
বন্ধ এবার গুলি ডাণ্ডা ,
ঘুড়ি ওড়ানো , ব্যাট
নেবার জেদি কান্না ।
শুরু আচারের থেকে বেশি
অনাচার কাকে বলে জেনে
রাখা ।
এরপর , ধাপে ধাপে সমস্ত
ইট কাঠ ভাঙ্গা ।
ছোটবেলার ছেলে সাজা ,
বাবার জামা গায়ে লটরপটর
হাত , আয়নায় কাজল গোঁফ ,
পাল্টাতে পাল্টাতে
নিজের সন্তান দেখে আবার
বলে ওঠা ... " কেন যে মেয়ে
হলি রে মা... " । দাদু ,
তোমার গণনা ভুল হলো না
কেন ? সব গণনা ভুল হয় না
কেন ? যে সব গণনার মাথায়
ভেজা হাত বোলানো বাকি
থেকে যায় ... ?
ভুলেরা রান্নাঘর , অফিস
কাছারি , বিজনেস
ওয়ার্ল্ড , শিক্ষা জগৎ
ছেয়ে ফেলে ঠিকের সাথে।
পাশাপাশি বেড়ে ওঠে
কামদুনি , দিল্লী ,
বারাসাত , বাদায়ুন ,
বেঙ্গালুরু...!