2099 সালের, উনিশে
জুন,তারিখটা আরো একবার
মনে মনে বলে নিল N-14 .....আজ
ঠাকুমা আসবেন। মনের
ভাবতরঙ্গে আবার সংকেত
আসলো ও ঘর থেকে, বাবা আর
মা পাঠাল বোধহয়।
1957সালটা কে এ্যাডজাস্ট
করার সময় চলে এলো।
N-14 দৌড়ে গেল পাশের ঘরে
বাবা আর মা'কে
রিমাইন্ডার করাতে হবে
আর ব্রেন এর কিউবিকলে
নির্ঝর ডাকটাকে বসাতে
হবে। N-14 বলে ডাকা যাবে
না।
নম্বর দিয়ে ডাকলে
ঠাকুমা প্রচন্ড রেগে
যায় (নির্ঝরনাম টা
ঠাকুমার ই দেওয়া)অথচ
এখন তো নম্বর দিয়েই
ডাকার চল আগেরবার তো এই
রাগে ঠাকুমা বেশি দিন
থাকলই না।এবার অনেক
কাকুতি-মিনতিআর
ভোটদানের পর ঠাকুমা
আসতে রাজি হলো।
(পৃথিবীর বর্তমান
নিয়মে মানুষ মারা
গেলেও আবার ফিরে
আসে।যুগাতীত বলে এখন
কিছু নেই। বিজ্ঞানের
প্রভূত উন্নতি সাধনের
ফলস্বরূপ আবিষ্কৃত
যন্ত্র দ্বারা
প্রিয়জনদের ডাকে আর
ভোট দানের মাধ্যমে
আত্মারা কিছুদিন
কাটিয়ে যায়
পৃথিবীতে,একদেশ থেকে
আরেক দেশে যাবার জন্য
যেমন ভিসা টিকিট
প্রয়োজন হতো বিগত 2045
সাল পর্যন্ত ঠিক
তেমন.........তারপরই তো
আবিষ্কৃত হল সেই
যন্ত্র যার দ্বারা
গ্রহাণুতে মৃত মানুষের
আত্মা স্থানান্তকরণ
করা যায়। বিশ্ব
মহাকাশে প্রচুর
গ্রহানু সেখানে
বিজ্ঞানীরা এক একটা
নতুন জগৎ সৃষ্টি করে
তুলেছে।আত্মাদের
বাসোপযোগী করে।
আত্মাদের পছন্দ
অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন
গ্রহানুতে তেনাদের
স্থানান্তকরনের
প্রক্রিয়া শুরু
হয়েছে। আত্মারা যেন
মানুষের সাথে যোগাযোগ
স্থাপন করতে পারে সে
ব্যবস্থাও করেছে
বিজ্ঞানীরা। আত্মা
চাইলে আবার জন্ম গ্রহণ
করতে পারে।
অতীতের যেকোনো সালের
আবহাওয়া সময় কে তৈরি
করতে পারে মানুষ
এযুগে। আত্মা যখন আসে
সেই আত্মা তখন কোন সালে
বাস করবে পৃথিবীতে সেটা
সে নিজেই ঠিক করে।
এ যুগে সকলে নম্বর এর
দ্বারা একে অপরকে ডাকে।
নির্ঝর ঠাকুমাকে আজ
ডাকছে সেই ঘটনা নিয়েই
আমার আজকের অবতরণ
পাঠকদের সুবিধার্থে
ভূমিকা টা জরুরী ছিল।)
নির্ঝর বাবা আর মা তিন
জনেই দাঁড়াল সুস্বাগতম
যন্ত্রের সামনে।
উনিশশো সাতান্ন সালের
দাদু ঠাকুমার বিয়ের
ফটোটা বের করেছেন বাবা।
ঠাকুমা এগারো আর দাদু
পনেরো বছরের ছিল তখন।
নির্ঝরের খুব মজা লাগছে
এগারো বছরের ঠাকুমা
এখনই আসবে কারণ ঠাকুমা
ভাবতরঙ্গে এমনই সংকেত
দিয়েছেন যে তিনি এগারো
বছর বয়সী হয়ে আসতে চান।
মনে মনে তিন জনে ফটোটার
দিকে তাকিয়ে একাগ্র মনে
ঠাকুমাকে ডাকার দুই
মিনিটের মধ্যেই মল ঝুম
ঝুম করে ঠাকুমার অবতরণ
হল। ধোঁয়া ধোঁয়া ভাবটা
কাটতেই নির্ঝর দেখল
পুঁচকে মেয়েটা(ঠাকুমা)
এক মাথা সিঁদুর, ডুরে
শাড়ি, গা ভর্তি গয়না,
আলতা পরা দুখানি পা আর
কাজল কালো চোখ নিয়ে
মিটি মিটি হাসছে। বাবা
তো মা.. মাগো.. বলে কোলেই
তুলে নিল ঠাকুমাকে আর
ঠাকুমা নির্ঝরের হাত
দুটো টেনে নিল নিজের
কাছে...তারপরই একটা
দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল
সবই করেছিস দাদু ভাই
বাড়িটাকে মাটির
করিসনি... আমি তো তখন
মাটির বাড়ি আর খড়ের
চালের ঘরে থাকতাম। মনে
মনে জিভ কাটল নির্ঝর
সত্যিই তো এটা ভাবা
উচিত ছিল...
খোঁজযন্ত্রটায়( এই
যন্ত্রের দ্বারা
আত্মার জীবদ্দশার
পুঙ্খনাপুঙ্খ বিবরণ
মেলে)আরেকবার ঢুঁ
মারলেই এ ভুল হতো না যা ই
হোক ঠাকুমাকে ভোলানোর
জন্য সে বলল," দূর
তুমিও না কিচ্ছু বোঝো
না তখন যেমন যেমন করে
ছিলে এখনও কি তেমন তেমন
করবে নাকি?? তোমায় সব
কিছু নতুন করে করাব এ
যুগের মতো হয়েই তুমি
থাকবে।
ঠাকুমা নির্ঝরের
কানদুটো ধরে বলল, ওরে
পাকা বুড়ো নিজে ভুল করে
আমায় বোঝানো? জানিস এটা
আমার ঊনিশতম বার
পৃথিবীতে আসা সব দেখে
নেওয়া হয়ে গেছে নতুন কী
আর দেখব? নির্ঝর বলল,
দেখো ঠাকুমা এখনই যদি
কান না ছাড়ো তবে কিন্তু
দাদু কোথায় জন্মেছে
দেখাতে নিয়ে যাব না.... আর
বলব ও না.. তাড়াতাড়ি
নির্ঝরের কান ছেড়ে
ঠাকমা বলে উঠল, ওরে না না
এটা করিসনা বুড়োকে
চোখের দেখা দেখব বলেই
পৃথিবীতে আসলাম। মির্গ
গ্রহানু থেকে শুনে
আসলাম কার বাড়ির ছেলে
হয়ে জন্ম নিয়েছেন
তিনি। তুই কিন্তু
দাদুভাই একবার তাঁর
কাছে নিয়ে যাবি। সেখানে
একবার গিয়ে তাঁকে কোলে
নেব আর প্রাণ ভরে আদর
করব। তারপর তো
গ্রহানুতে ফিরে আমায়
জন্ম নেওয়ার
প্রস্তুতি নিতে হবে....
উনাকে আবার সাত পাকে
বাঁধতে হবে যে, গদগদ
মুখে বলেছিল ঠাকুমা
বাবা আর মায়ের হো হো
হাসি শুনে মুখে কপট রাগ
দেখিয়ে বলল ও তোরা মজা
করছিস আমার সাথে?? তবে
আমি ফেরত চলে গেলাম।এই
বলে ঘুরতেই ...নির্ঝর
ঠাকুমার ডুরে শাড়ির
আঁচল ধরে বলল ,ওরে বুড়ি
খুব তো তুমি....আমরা কষ্ট
করে ডেকে আনলাম আর নিজে
খালি পালাই পালাই করা..
কি না বরের জন্য জন্ম
নেবে... তা আমাদের সাথে
সময় কাটানোর কী
হবে??গতবার যখন এসেছিলে
মুড়ি ঘণ্ট আর মোচার
কোপ্তাটাখাইয়ে যাওনি...
সেটা কিন্তু ডিউ আছে
মনে আছে এ কথা?? শুনে
ঠাকুমা ফিক করে হেসে
বলল ওরে আছে রে আছে আমি
তো একটু রঙ্গ করেছিলাম
তোদের সাথে... তার পরই
মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
বৌমা তোমাদের ওই
ফ্যাশনের রান্নাঘর
সরিয়ে আমার কাঠের উনুন
এর ব্যবস্থা করো, এ কয়
দিন রান্নাটা আমিই
করব.... আর বাবাকে বলল,
খোকা মনে মনে বাজারটা
আনার আগে আমায় ডাকবি
আমিও তরঙ্গ পাঠাতে তোকে
সাহায্য করব তুই ও বড্ড
ভুলোমন.. তোর বাবার মতো...
মুড়ি ঘণ্ট বানাতে গিয়ে
দেখব মুড়োটাই হয়তো
চাসনি বাজার থেকে।
(এখন মনে মনে নিত্য
প্রয়োজনীয় জিনিস চাইলে
ঘরে এসে তা হাজির হয়
...টাকার অঙ্কটা
দোকানদার বলে দেয়। মনের
অ্যাকাউন্ট থেকে সেটা
ট্রান্সফার হয়... মনই হলো
এখন সব কিছুর মাধ্যম
তাই তো এখন এ পৃথিবীর
বুকে কোনও রকম অপরাধ
ঘটে না। কার মনে কী
হচ্ছে তা প্রকাশিত হয়ে
যায়... একজন অপরজনের মন
পড়তে
পারে....ঠগবাজি,জোচ্চুরি,
মিথ্যাচারন,খুন, ধর্ষণ,
মারামারি, হানাহানি,
রাহাজানি কিচ্ছুটি এখন
ঘটে না মানুষ যে
মুখোশের আড়ালে থাকতে
পারে না... গোপন রাখতে
পারে না কিছুই.. তাই তো
ভালোবাসা,
সততা,পবিত্রতা, এ সবই
মানুষের মধ্যে অবাধ
ভাবে বিচরণ করে।তাই তো
এ যুগে প্রত্যেকে এক
একটা নির্মল মনের
অধিকারী।)
পুনশ্চ
যাই হোক, ঠাকুমাকে নিয়ে
কয়েকটা দিন নির্ঝর বেশ
কাটিয়েছিল তারপর...
দুপুরে মিঠে রোদে ছাদে
বসে কুলের আচার খাওয়া,
রাতে ঠাকুমার কাছে
রূপকথার গল্প শুনে
ঘুমানো, ঠাকুমার হাতে
বানানো ভাল ভাল আমিষ
নিরামিষ রান্না খেয়ে,
ঠাকুমার সাথে এক্কা
দোক্কা খেলে দিনগুলো
আনন্দে কেটে গেছিল হুশ
করে। যাবার আগে অবশ্য
ঠাকুমাকে দাদুর সাথে
দেখা করিয়ে এনেছিল... চার
বছরের দাদুর সাথে
ঠাকুমা খুব খেলা করেছে...
কোলে নিয়ে আদর করেছে,
আসার সময় প্রণাম করে
ছলছল চোখে পৃথিবীতে
আবার জন্ম নেবার
অঙ্গীকার করে ফিরে
গেছিল নিজের
গ্রহানুতে।
এখন নির্ঝর আবার বসেছে
দিন, তারিখ, ক্ষন সবঠিক
করতে দিদিমা ঘন ঘন
সঙ্কেত পাঠাচ্ছে...
পৃথিবীতে আসবে বলে।
ঠাকুমার দেখাদেখি
তিনিও এখন পৃথিবীতে
আসবেন বলে আবদার
জুড়েছেন...(কারণ টা ভেবে
একচোট হেসে নেয়
নির্ঝর)নির্ঝরের দাদাই
যে বছর দুয়েক আগেই
পাশের বাড়িতে জন্ম
নিয়েছেন.... হয়তো তাঁরই
টানে। মন দিয়ে দিদিমার
পৃথিবীতে আগমনের ক্ষন,
পরিবেশ, পরিস্থিতি,দিন
সাজাতে বসে নির্ঝর ওরফে
N-14.