এবং আরণ্যক

অপরাহ্ণ সুসমিতো


(১৯৩০ সালের ১৪ জুলাই আইনস্টাইন তাঁর বার্লিনের বাড়িতে রবীন্দ্রনঠথকে আমন্ত্রণ করেন। স্বাভাবিকঠাবেই গভীর আলোচনা হবেই। তাঁরাও আলোচনা করেছিলেন মানব ইতিহাসের গভীর ও জটিল কিছু বিষয় নিয়ে। আলোচনার বিষয় ছিলো সত্য, সুন্দর ও চেতনা নিয়ে। একজন জগত সেরা বিজ্ঞানী, আরেকজন অন্তর্জগত নিয়ে ভাবা একজন দার্শনিক। তাদের দুজনের কথোপকথন ছিলো ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর মতো। নিচের কথোপথনটি Science and the Indian Tradition: When Einstein Met Tagore বইটির অংশ বিশেষ। ব্রেইন পিকিন্স এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই অংশ বিশেষ অনুবাদ নিচের লেখাটি।

রবীন্দ্রনঠথ: আপনি গণিত দিয়ে স্থাল-কাল ব্যাখ্যা করতে ব্যস্ত আছেন। আর আমি এ দেশে এসে চিরন্তন জগত ও বাস্তবতার জগত সম্বন্ধে লেকচার দিচ্ছি।

আইনস্টাইন: আপনি কি মনে করেন স্বর্গ পৃথিবী থেকে আলাদা কোনো বস্তু?

রবীন্দ্রনঠথ: না, আলাদা নয়। মানুষের আচরণেই মহাবিশ্বেঠরূপ ধরা পড়ে। এমন কিছু নেই যা মানুষ দিয়ে বোঝা যায় না। এ থেকে বোঝা যায় মানব সত্য মহাবিশ্বেঠসত্য এক।
কৃতজ্ঞতা : সৈয়দ মনজুর মোরশেদ )

*

[ এই একুশে আমিও ভাবছি মহাবিশ্বেঠসকল মূক ভাষা পাক ]

*
১. শেষ দিনের রবি

ছোট বোন বড় বোনকে আহ্লাদ করে বলল;
: বড়পা খাব। খিদে পেয়েছে।
: কি খাবি?
: পরোটা মাংস
ছোট বোন পেট ভরে খেয়ে আবার বলল;
: বড়পা কোক খাব।
কোক খেয়ে ছোটটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল। ওর ঘুম পাচ্ছে খুব।
: বড়পা ঘুমু পাচ্ছে।
বড় বোন মশারি টাঙ্গিয়ে দিতে দিতে গান ধরল:
- বাঁশ বাগানের মাথার উপর...

ছোট বোনটা বড় বোনকে আর দেখল না

*
২. সূর্যগ্রহঠ£

সূর্যটা চাঁদকে দেখেই হেসে দিলো।
: কি রে গোল্লা, শীত লাগছে?

অভিমানে চাঁদ কথাই বলছে না। রাগও লাগছে।
এক পশলা আলো চাঁদকে ছিটিয়ে দিতেই চাঁদ সুন্দর করে হাসল, উষ্ণ হলো।

তাপ্পর একদিন চাঁদটা পৃথিবীর সাথে খিলখিল হাসতে হাসতে সূর্যটাকে টুপ করে গিলে ফেলল

*
৩. স্বপ্নবাজ

স্বপ্না স্বপনকে দেখে হেসে বাঁচে না। বলল;

: স্বপ্নেই বুঝি তুমি আসো?

স্বপন লালন উদাস হয়ে ভাবছে স্বপ্নের আবার সময় অসময় কি?

তখন তালগাছ এক মাথা ঝাঁকড়া চুল নাড়িয়ে রবিনাথকে বলল;

: আমার স্বপ্ন আকাশ ছোঁবার তাই এক পায়ে দাঁড়ায়ে...

*
৪. অরুণা

আলো অপসৃয়মান মিলিয়ে যেতেই নীল আলো ছডিয়ে পড়ল ডান্স ফ্লোরে।
মিউজিকের বিট নেচে উঠল রক্ত ছলাতে।

আকর্ষণীয়া গোলাপী মেয়েটাকে আধো মাতাল লোকটা বলল ফিসফিসিয়ে;
: তুমি অগ্নি সুন্দর

মেয়েটা বিয়ারের ফেনা ঠোঁটে কোমল মেখে খিলখিল করে উঠল মন্থরে।
: আলো নিভে গেলেই আলো সুন্দর হয়ে ভেসে ওঠে

*
৫. জীবন

ব্যথা শুয়ে ছিল বিছানায়। বেদনা ব্যথাকে দেখে তার পাশের বালিশে গিয়ে মাথা রাখল।

সাথের সবুজ রাস্তা দিয়ে সুর তুলে হাঁটছিল সুখ। দেখল একটা গাছের পাশে স্বস্তি দাঁডিয়ে পাতার বাঁশি বাজাচ্ছে।

জানালা দিয়ে ব্যথা ও বেদনা সুখ ও স্বস্তিকে দেখে জোরে ডাক দিলো।

ওরা সবাই একসাথে বসল যত্নে। কে যেন বলে উঠল;

: আমরা আছি বলেই নেই আবার নেই বলেই আছি।

ওরা মিশে গেল মুহূর্তে

*
৬. সিনেমা

রাজ্জাক বলল কবরীকে;

: চলো ববিতা আমরা বেদের মেয়ে দেখে আসি।

কবরী বলল;

: চলো ফারুক।

ওরা হাসতে হাসতে রূপবাণী সিনেমা হলে ঢুকল। পান খেতে খেতে রূপের রানী চোরের রাজা সিনেমাটা দেখল। ওরা প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিল। দর্শকের হাততালিতে ঘুম ভাঙ্গল।

কবরী রাজ্জাককে বলল;

: চলো সাকিব। ছবি শেষ।

রাজ্জাক মুচকি হেসে কবরীর হাত ধরে বলল;

: চলো অপু

*
৭. প্রিয় দুশমনী

ঠোঁটের ছায়া কফির পেয়ালার কাছে আসতেই পেয়ালাটা রুমঝুম করে উঠল নূপুরে।

কফি অভিমানী কণ্ঠে নীপবন হলো। উদাসী সুরে ঠোঁটকে বলল;

: তোমার প্রতি চুমুকে আমি শেষ হয়ে যাই। সরাও তোমার ঠোঁট।

পেয়ালাটা তখনই নিবিড় হলো ঠোঁটের কাছে। কফি তার মূর্ছনায় ঢেউ তুলে কাঁপলো।

আহ মরণ !

*
৮. বিশালত্ব

একটা খালি পানির বোতল হেঁটে হেঁটে একদিন দিঘির কাছে গেল। দিঘিকে বলল;

: আমাকে পূর্ণ করবে তুমি?

দিঘি হেসে বলল;

: এত ক্ষুদ্র তুমি! আমাকে ধারণ করতে পারবে না তুমি।

বোতলটা মন খারাপ করে গডিয়ে গডিয়ে তাপ্পর সমুদ্দুরেঠকাছে গেল। এত বিশাল গর্জনে সে ভয় পেল। ফিরে আসবে ভেবে রওয়ানা দিতেই সমুদ্দুর চেঁচিয়ে বোতলটাকে বলল;

: এই নাও আমার লোণা পানি। মিষ্টি করে নিও প্রিয়

*
৯. এবং আরণ্যক

ধর এই একটা কাগজ, তুই আঁকলি তোর স্বপ্ন। আমাকে বললি এই ছবিটার একটা নাম দেয়া দরকার।
কুমিটুমি নামে একটা গ্রাম আছে, তোকে বললাম আয় গ্রামটা দেখি। তুই বললি যেদিন ঝুপঝুপ রোদ নামবে সেদিন গ্রাম দেখব। আবার যেদিন কঙ্কণ বৃষ্টি হবে সেদিনও দেখব।
এভাবেই তুই আমি একটা বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিনের কর্মসূচি ঠিক করে ফেললাম।
তারা মিয়া নামে আমাদের মন গ্রামে একজন নুলো মানুষ থাকবে, অধোমুখী, কথায় কথায় রাষ্ট্র তাকে নিগ্রহ করবে। তুই আমি তারা মিয়ার সামনে প্ল্যাকারৠড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। কুটুম গোছের একটা পাখি যার লেজ ঝোলা..à¦²à¦¾à¦«à¦¾à¦¬à ‡ আমাদের কাগুজে প্ল্যাকারৠডের উপর।

তুই চোখ মুছে দিবি মানুষের।

বাবার মতো দেখতে একটা লোক বাজারের ব্যাগে করে আনবে অনেকগুলো পেয়ারা..আমি তার সামনে নত হয়ে বলব : আমাদের গ্রামে পেয়ারার ভাসমান বাজার আছে সবুজ পাতার নিচে।
লোকটা হেসে বলবে : আমার নৌকা বাঁধা ওখানে।
তুই বলবি চলুন আপনাকে পৌঁছে দিই।

কুমিটুমি গ্রামের বাড়িগুলোতৠ‡ উঠান আছে। একটা উঠানে মুরগীর কাজল চোখ বাচ্চাগুলৠখুদ খাবে খুঁটে খুঁটে। তুই আজকালকার মতো একটাও ছবি তুলবি না। আমাকে বলবি: এসো বাচ্চাগুলৠ, উঠানটুকু, কৃষকের অভাবী মুখ আমরা মুখস্থ করি।

গ্রামের পেছন রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে একটা পুলিশী জিপ চলে যাবে ভয় ছড়িয়ে। খালি গায়ে যে শিশুটা এক বাটি মুড়ি খাবে খেজুড়ের গুড় কুটুস করে, তাকে তোর স্বপ্নে নিবি তো?

স্বপ্নে কত স্পেস থাকে !

গ্রামে নদী না থাকলে কি হয়? একটা বাউলা নদী থাকবে খলবল..বর্ষা নামবে মাতাল। কেউ কেউ ছাতা মাথায় অপেক্ষা করবে। মাথার কেশর দুই ভাগ করা দেখন এই নদীর পাশে জনপদ, দূর থেকে দেখবি যে ক্লান্ত নয় গ্রাম ঘ্রাণ নারীরা হাসছে।
জেলে নদীতে জাল ফেলেই বলবে : যেদিকে তাকাই শুধু মাছ আর মাছ..

কমলা নামের যে সুন্দরী থমকিয়া থমকিয়া নাচ করে, তার উঠানের গাছে লাল মরিচ ধরেছে, সবুজ টিয়া পাখি মরিচ খাচ্ছে। টিয়া ঝালে আহা উহু করছে না একফোটা।

তুই অবিকল মিশে যেতে থাকবি দৃশ্যে দৃশ্যে। মাথা ঝুঁকে আমি কাগজটার দিকে তাকিয়েই থাকব সৌর বৎসর ধরে।

আচানক কী ভীষণ শব্দে দুজন চমকে দেখব শহরগুলো একুশে রঙের মতো মিশে যাচ্ছে তোর মন গ্রামে...