" We the people of India, having solemnly resolved to
constitute India into a SOVERIGN, SOCIALIST, SECULAR,
DEMOCRATIC, REPUBLIC and to secure to all citizens…
"
টুকরো টুকরো ঘটনা-
কোলাজ
ঘটনা - ১
স্থান - ভারতের উত্তর -
পশ্চিমপ্রান্ত -
রাজস্থান, দুঙ্গারপুর
কাল - ১৮ ই নভেম্বর,
২০১৩
পাত্র- অনুরাগ গোমেথি,
বয়স - ৭,
বাড়ির সকলের আদরের
অনমোল কে সকালে গ্রাম
থেকে অনতিদূরে এক
পুকুরে ভাসতে দেখা গেল
নিষ্পাপ খ্রীষ্টান
বালকটির নষ্ট হওয়া দেহ
। মুখ ও শরীর আঘাতে
আঘাতে বিকৃত । অথচ
পুলিসি খাতায় নথিভুক্ত
হল
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু !
ছেলেটি ঘটনার আগের দিন
সকালে রবিবারের
প্রার্থনা ক্লাসে
যোগদান করতে যাওয়ার পর
থেকেই নিখোঁজ ছিল ।
বিকেল থেকে খোঁজাখুঁজি
শুরু হয় । বারংবার
নালিশ সত্ত্বেও
প্রশাসনিক উদাসীনতায়
ক্ষুব্ধ পরিবারের
জবানবন্দি এবং মিডিয়ার
সক্রিয়তায় উঠে এল নানা
চাঞ্চল্যকর তথ্য ।
পরিবারটির দীর্ঘ এক দশক
পূর্বেকার
ধর্মান্তকরণ হওয়া মেনে
নিতে পারেনি
পারিপার্শ্বিক
বর্ণহিন্দু স্থানীয়রা
। ক্ষুব্ধতার আঁচ টের
পেয়েছে বহুবার এই
পরিবার । কখনো পেয়েছে
হত্যার হুমকি , কখনো
হয়েছে প্রার্থনাসভা
বিঘ্নিত । প্রশাসন
উদাসীন । কিন্তু অতিবড়
দুঃস্বপ্নেও পরিবারটি
ভাবেনি , ধর্মরক্ষার
দালালদের হাতে ধর্মের
নামে বলি হবে তাদের
সন্তান ।
আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ
! ?
ঘটনা ২
কাল - ২০১৪, বিধান সভা
নির্বাচন পরবর্তী সময়
।
স্থান - হিন্দী বলয়ের এক
ধর্ম প্রতিষ্ঠান ।
বিকেল থেকেই সাজো সাজো
রব, মন্দির সংলগ্ন
চত্বরে । রয়েছে ঢালাও
লাড্ডু , পেঁড়ার আয়োজন ।
ধর্ম -সংরক্ষিণী সভার
আচার্যের আশিসে এবং
উৎসাহে নির্বাচন জিতে
আশীর্বাদ নিতে আসছেন নব
নির্বাচিত সাংসদ
শশিকান্ত দুবে । তিনি
এলেন , দেখলেন , হাততালি
কুড়োলেন, নতুন নতুন
অঙ্গীকারে ভরিয়ে দিলেন
- শহরে গড়বেন বেদ
অনুশীলনের উপযুক্ত
পরিবেশ । নবসাফল্যের
কৃতিত্ব পুরোটাই দিলেন
ধর্মসভার ধ্বজাধারী
মহারাজকে । ফিরে যাওয়ার
পথে তাঁর মনে পড়ল রমজান
শুরু হয়ে গেছে ।
মুঠোফোনে মুহূর্তের
মধ্যে বার্তা ছড়িয়ে
পড়তে বেশি দেরি হল না ।
গলা থেকে স্তূপাকার
গাঁদার মালা সরিয়ে আর
কপাল থেকে
সিঁদুর - চন্দনচর্চিত
তিলককে সযত্নে মুছে
হাজির হলেন শহরেরই
বিখ্যাত নেতা ও তাঁর
এককালীন
প্রতিদ্বন্দীর বাড়িতে
। সেখানে সেদিন ইফতারের
আয়োজন হয়েছে । সেখানেও
আর এক প্রস্থ
প্রতিশ্রুতি ! সংরক্ষণ -
আসন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে
তিনি সোচ্চার হবেনই
এবার । মাননীয় এম পি'র
এহেন বদান্যতা এবং
উদারতায় মুগ্ধ শহরবাসী
। তাদের নির্বাচনে কোনও
ভুল হয়নি । দুদফা
প্রতিশ্রুতি পেয়েছে
তারা ।
অনেকদিন পর শহরের আকাশে
নিরপেক্ষতা নামক ফানুস
আবার উড়েছে ।
নাহ্ ! আমরা সত্যিই ধর্ম
- নিরপেক্ষ দেশ !!
|| পুতুল নাচের
ইতিকথা ।।
ভারতবর্ষের ইতিহাস
অনুধাবন করলে দেখা যাবে
জাতীয়তা ভাবাবেগ
হিসাবে যতটা স্পষ্ট,
দৃষ্টিভঙ্গী হিসাবে
ততটা নয় । মুসলমান
শাসকদের অধীনে উগ্র
ইসলামীয় মৌলবাদের
শোষণে শ্বাসরুদ্ধ
হিন্দু - ভারতবাসীদের
একটা অংশ মধ্যযুগ থেকেই
হয়ে উঠেছিল মুসলমান -
বিদ্বেষী । ঠিক যেই
কারণে জাতীয়বাদের
মাঝেও রাণা প্রতাপ এবং
শিবাজী মহারাজ কেমন যেন
মুসলমান মুঘোল শাসকদের
শোষণের প্রতিবাদের
হিন্দু - প্রতিবাদের
উদাহরণ স্বরূপ তুলে
ধরতে চায়
হিন্দুত্ববাদীগোষ্ঠীর
া । এমন লোকমান্য তিলকও
সেই আওতার বাইরে ছিলেন
না । আবার উলটোদিকে ,
কালক্রমে উচ্চবর্ণ
হিন্দুদের সামাজিক
শোষণ পীড়িত লঘু
সম্প্রদায়ের মানুষরাও
ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিল
বিরূপ । জমিদার
রবীন্দ্রনাথও এর
প্রত্যক্ষ প্রমাণ
পেয়েছেন তাঁর প্রজাদের
মাঝে , কি ভাবে
সেঁরেস্তার
উচ্চবর্ণের হিন্দু
কর্মচারীরা জমিদারের
অবর্তমানে নিম্ন -
বর্গের প্রজাদের ওপর
শোষণ চালিয়ে যায় । সব
পরিস্থিতি বুঝে - শুনে
ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ
ব্যবচ্ছেদের ফাঁদ পাতল
সুকৌশলে ... কোনও পক্ষই
সেই ফাঁদে পা দিতে
দ্বিধা করেনি ।
তীব্র গণআন্দোলনের
চাপে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও
সাম্প্রদায়িকতার যে
বীজ ব্যপন হয়ে গেছিল
সেই সময় , তা ক্রমে
গগনচুম্বী মহীরুহ হতে
থাকে। বলা যায় ,
পরিস্থিতিকে ক্রমশ
অগ্নিগর্ভ করার
প্রয়াসে ইংরেজের
সক্রিয় প্ররোচনায়
ভারতবর্ষে গড়ে ওঠে
দু'টি বিভেদপন্থী
সাম্প্রদায়িক মত, যার
অমোঘ পরিণতি
পাকিস্তানের জন্ম ।
স্বাধীনতা উত্তর
ভারতবর্ষে প্রথম থেকেই
উত্তাল ছিল
ধর্মনিরপেক্ষতার
স্বপক্ষ ও বিপক্ষের
কোন্দল । রাজনীতির
গলিতে প্রায়ই যে
সরলীকরণ শোনা যায় তা হল -
পণ্ডিত নেহেরু
ধর্মনিরপেক্ষতার
প্রবর্তক এবং প্রবক্তা
... আর সর্দার প্যাটেল
সংঘ মনস্তত্ত্বের
প্রতিভূ । উদাহরণ
স্বরূপ বিহার ও দিল্লীর
দাঙ্গার সময় প্যাটেলের
প্রতিক্রিয়া ও
অন্যান্য কিছু ঘটনাকে
তুলে ধরা হয় । অথচ , যে
ভাবে তিনি মাস্টার তারা
সিংকে বন্দী করে
অকালিদের দিল্লী
অভিযান ঠেকিয়েছিলেন তা
কিন্তু সমান
দৃষ্টান্তমূলক ।
ধর্মনিরপেক্ষতার
প্রশ্নে নেহেরু বনাম
প্যাটেল দ্বৈরথ
কংগ্রেস অন্দরমহলের
চৌকাঠ পার করে ক্রমশ
সংবাদপত্রের শিরোনামে
স্থান পেতে থাকে ।
ধর্মনিরপেক্ষতার
প্রশ্নে দোলাচলে এবং
প্রেক্ষাপটে ১৯৫০ - এ
আইনমন্ত্রী ভীমরাও
আম্বেদকরের নেতৃত্বে
প্রকাশিত হয় ভারতীয়
সংবিধান , যেখানে
ভারতবর্ষকে সার্বভৌম
গণতান্ত্রিক বলে
সনাক্ত করা হয় । সেই
সংবিধানেরই ৪২তম
সংশোধনে , ১৯৭৭ সালে
ভারতবর্ষকে
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র
হিসেবে আখ্যা দেওয়া হল (
সেই ৪২তম সংশোধন , যার
অনেকটাই তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী
শ্রীমতী ইন্দিরা
গান্ধীর প্রশাসনিক
নীতিকে নিষ্কণ্টক করার
জন্য উল্লেখযোগ্য হয়ে
আছে )। বিভিন্ন
গণতান্ত্রিক
সংবিধানের ভালো ভালো
অংশ জুড়ে যে তিলোত্তমার
সৃষ্টি হল ,
কার্যক্ষেত্রে দেখা
গেল সেই সব মিলিয়ে একটা
খিচুড়ির মত হয়ে গিয়ে
ক্রমশঃ সমস্যার সৃষ্টি
করেছে ।
গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থায় এভাবে চলতে
পারে না । রাজ্যের দাবী
বাড়ে । যা না মেটালে
রাজ্য নিজেকে বঞ্চিত
বোধ করতেই পারে । এক
রাজ্যের প্রতি
রাষ্ট্রের অনুদান
স্বাভাবিক কারণেই আর এক
রাজ্যের কাছে ভবিষ্যৎ
উদাহরণের মত হয়ে যায় ।
সংবিধানের সংরক্ষণ
নীতি সম্পর্কেও একই কথা
বলা যেতে পারে ।
পরস্পরবিরোধী ধারা
ক্রমশঃ ঐক্যের বদলে
ডেকে এনেছে বিরোধ ,
সংঘাত । এবং সর্বপরি "
ধর্মনিরপেক্ষতা "
শব্দটিও প্রায়শই
ব্যবহার করা হল কখনও
বুঝে কখনও না বুঝে
অপব্যাখ্যার মধ্যে ।
|| ধর্ম, রাজনীতি এবং
নিরপেক্ষতা ||
আমরা সাধারণতঃ ধর্ম
বলতে সদাচারকে বুঝি ।
যে অনুষ্ঠান সৎ তাই
ধর্ম , এভাবে অর্থ করলে
কার্যত কোনো অসুবিধা হয়
না বটে । তবে এই বোধহয়
ধর্মের প্রকৃত
স্বরূপের অতিসরলীকরণ
।
অজ্ঞানের প্রভাব থেকে
নিজেকে মুক্ত করতে
পারলে যে প্রকাশের
উপলব্ধি হয় তাই ধর্ম ।
যা অদ্বৈত , ঐক্য - তাই
ধর্ম ।
প্রত্যেক কে বাঁচানোর
পথে যা এগিয়ে নিয়ে যায়
তাই ধর্ম ।...
" Dharma is the providential flow to uphold life and
growth or the law of uphold by which the existence is
prolonged ."
ঠিক যেমন , পদার্থ -
বিজ্ঞানে পদার্থের
ধর্মকে ' Property ' অথবা ' Virtue '
বলে চিহ্নিত করা হয় , ঠিক
সেইরকম সভ্যতা এবং
যাপনের ' Virtue ' হল ধর্ম ।
বিশেষ বিশেষ
সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট
আচরণকে যে আমরা ধর্ম
বলে থাকি , তা ধর্মের
আভাস মাত্র । হিন্দু
ধর্ম , ইসলাম ধর্ম ,
খ্রীষ্ট ধর্ম ... এসবই
ধর্মের আভাস , এদের
কখনওই ধর্মের
প্রকৃতস্বরূপ বলা চলে
না । আর ধর্মের
আভাসযুক্ত এই
প্রাতিষ্ঠানিক রূপকে
প্রকৃতধর্মসার ধরে
নিয়ে চলা এই রাষ্ট্র আজ
ছয় দশক ধরে নিরপেক্ষতার
বাণী চিৎকার করে চলেছে
। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম
মানেই কিছুটা
প্রচ্ছন্ন পরধর্ম
অসহিষ্ণুতা । ঠিক যেমন
এক বর্ধিষ্ণু
সাম্রাজ্য আর এক
বর্ধিষ্ণু
সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে
বিদ্বেষ পুষে রাখে ,
সেইরকম এই সম্প্রদায় -
দ্বন্দর জন্মলগ্ন
থেকেই এক সম্প্রদায়ের
উত্থান দেখলে আর এক
সম্প্রদায়
আত্মবিলুপ্তির
দুশ্চিন্তায়
অসুরক্ষিত বোধ করে , এবং
সেখানে থেকেই হিংসার
গরল ক্ষরিত হয় । কোনও
কোনও সাধুব্যক্তি
সর্বধর্ম সমন্বয়ের
প্রচেষ্টা করেন ,
কিন্তু তা সত্ত্বেও
অসহিষ্ণুতার দূষণ থেকে
যায় । যা থেকে থেকেই
দাঙ্গার মৌষল প্রসব করে
। এবং ধর্মনিরপেক্ষতার
তত্ত্ব থেকে আমরা অনেক
দূরে সরে গিয়ে
প্রকারান্তে
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে
তোষামোদ করে পরিপুষ্ট
করে তুলতে থাকি ।
বঞ্চিত হয় শিক্ষা ,
জর্জরিত হয় সমাজ ।
অপব্যাখ্যিত হয়ে পড়ে
থাকে ধর্ম নিরপেক্ষতা ...
ভোট - ব্যাঙ্ক রাজনীতির
ইন্ধন হয়ে ।
নতুন প্রজন্মের কাছে আজ
তাই নিরপেক্ষতার
দায়সারা সংজ্ঞা একটাই –
“ আমরা ধর্মেও আছি,
জিরাফেও আছি”
|| তোমরা আমাকে ভোট দাও
আমি তোমাদের
নিরপেক্ষতা দেবো ||
প্রকৃত পক্ষে ভোট এমন
এক মহার্ঘ্য মূলধন যে
সেই অলীক কাগজকুচির কথা
ভেবে সকলেরই বুকের রক্ত
হিম হয়ে যায় । তাই ,
স্বাধীনতার ছয় দশক পার
করে আজও দলমত
নির্বিশেষে প্রার্থী
নির্বাচন জনপদের
সম্প্রদায়ের ওপর
নির্ভরশীল , ধূর্ত
শৃগালের মত ওঁত পেতে
থাকা রাজনীতি
ব্যবসায়ীরা , ধর্মরক্ষা
, ধর্ম - নিরপেক্ষতার
নামে দেশ , সমাজ -
ব্যবস্থা , শিক্ষা সব
কিছুকে করতে থাকে
রক্তাপ্লুত ।
রাজা আসে , রাজা যায় ...
রক্তের দাগ আর ম্লান হয়
না ।
প্রত্যেকেই প্রমাণ
করতে চান নিজেদের ছাতি -
ফোলানো
অসাম্প্রদায়িকতা , চলতে
থাকে নিরপেক্ষতা নামক
বিরতিহীন টেনিস ম্যাচ ...
বল কখনও কোনও
ধর্মাধিকারীর
জন্মোৎসব পালনের দিকে ...
আবার কখনও ইফতারের
দাওয়াতে । তারই মাঝে
দাঁত - নখ নিয়ে বারবার
বেরিয়ে আসে ধর্মরক্ষার
নামে আদিম মনোবৃত্তির
রক্তাক্ত চেহারাটা ।
কখনো অনার কিলিং এর
নামে , কখনো ধর্ম - রক্ষা
যজ্ঞের নামে !...
বস্তুত,
ধর্মনিরপেক্ষতার
নীতিকে ভারতবর্ষে
যেভাবে প্রয়োগ করা
হয়েছে তাতে
প্রাতিষ্ঠানিক
ধর্মকেই উস্কে দেওয়া
হয়েছে বারবার ।
ভক্তিবাদের দুর্গের
প্রাচীরে আঁচড় কাটা
হয়নি । যদি একটু খতিয়ে
দেখা যায় , এই
সেকুলারিজ্ম বা
ধর্মনিরপেক্ষতার
তত্ত্বের মূল সুরই
বাঁধা আছে ধর্মের সঙ্গে
সম্পর্কহীন রাষ্ট্র -
চিন্তার তারে যেখানে
শাসন এবং
শিক্ষাব্যবস্থার
মধ্যে কোনও ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠানের হাত
থাকবে না । ওই সার
সত্যটুকু আবৃত রেখে ,
ধর্মনিরপেক্ষতার একটা
ঝোপ বানিয়ে , তার আশে
পাশে খুব খোঁজাখুঁজি
চলতে পারে ... কিন্তু যে
দেশ ভাগই হয় শুধুমাত্র
ধর্মের ভিত্তিতে সে দেশ
কি আদৌ কখনও
ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠতে
পারে ? ? ?