আমার আনন্দ... আমার আর্তনাদ

পিয়াল রায়

'ভাষা' -- এক অদ্ভুত মায়াময় শব্দ। যেন নিরন্তর বয়ে চলা পাহাড়িয়া ঝোরার চঞ্চল নূপুরধ্বনঠ। যেন শতসহস্র বছর ধরে চলে আসা রহস্যময় কোনো সঙ্গীত। কখনো প্রাচীন কোনো সভ্যতার অজানা উপজাতি যুবকের দৃপ্ত প্রেম আবার কখনো খুব চেনা জগতের নম্র যুবতীর মৃদু স্বরবিক্ষৠপ। উভয়ই সমান চিত্তাকর্ঠক। আপন আপন ভাষার প্রতি প্রেমই মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সসম্মানে। যে ভাষা মানবশিশু তার পিতামাতার সাহচর্যে অর্জন করে তাকেই সে নিজের ভাষা বলে চিনতে শেখে। অন্যান্য ভাষার সাথে তার পরিচয় হতে থাকে ধীরেধীরে এবং ব্যাপক অর্থে ভাষার ঐশ্বর্যসমু হের আত্তীকরণ শুরু করে। দেশকাল প্রেক্ষিতৠ‡ ভাষার বৈচিত্র্য ও প্রবাহন বোধ এবং চেতনার উন্নত স্তর গড়ে তোলা ও প্রত্যয় পরিবেশনে তৎপর হয়ে ওঠে। মুখর চাপল্যের যেমন ভাষা আছে তেমনই নিঃসঙ্গ সারল্যও ভাষাবাহী। আনন্দের ভাষা, আর্তনাদের ভাষা মাতৃভাষা না হয়ে যায় না।

উন্মুক্ত ভাষাচর্চার একটা অগাধ অঙ্গন হল আড্ডা। আমার তো বরাবরই মনে হয়েছে ভাষার খোলামেলা রূপটি যতটা আড্ডার মধ্যে দিয়ে সামনে এসেছে ততটা আর কিছুতে নয়। তা সে সাহিত্য আড্ডাই হোক বা অন্যকিছু। à¦•à§‡à¦¨à§à¦¦à§à¦°à§€à¦­à ‚à¦¤ বিষয়টা একই থাকে আর তা হল ভাষার প্রবহমানতা । কোনো একটি জনজাতির আড্ডার ইতিহাস যদি সম্যকভাবে দেখা যায় তাহলে ভাষাচর্চার গতিধারা পাওয়া সম্ভব। আর বাঙালীর আড্ডা প্রিয়তা তো প্রবাদের পর্যায়ে। স্বয়ং রবীন্দ্রনঠথ ছিলেন চূড়ান্ত আড্ডাপ্রিৠ। এমনিতেই কবি সাহিত্যিকঠের মধ্যে আড্ডার প্রতি স্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা যায়, তা সে যে দেশেরই হোক না কেন। অমন যে আড্ডা বিমুখ ইংরেজ জাতি তাদেরও কবি সাহিত্যিকৠরা আড্ডা পেলে জাতিগত চরিত্র ( আড্ডা বিমুখতা) ভুলে সাহিত্যগত ধর্মে (আড্ডা বিলাস) ডুবে যান। সাহিত্যের অন্তর্লীন স্বভাবই হল মিশুকে। 'সহিত'এর সে মিলন প্রত্যাশীॠসেই বঙ্কিমচন্ঠ¦à§à¦° চট্টোপাধ্ঠায় থেকেই বাঙলী সাহিত্যরস খুঁজে নিয়েছে আড্ডা থেকে। মজলিশি স্বভাবের বাঙালীর আড্ডা হল নেশার মতো। আর নেশা জমাতে সঙ্গী তো চাইই। 'ভারতী ','সবুজপত্র ','কল্লোল','পরঠ¿à¦šà§Ÿ ' প্রভৃতি সাহিত্য পত্রিকাকে ঘিরে রীতিমতো সজীব আড্ডাবাসর গড়ে à¦‰à¦ à§‡à¦›à¦¿à¦²à¥¤à¦¤à¦¾à °à¦¾à¦¶à¦™à§à¦•à¦°, শৈলজানন্দ,ঠজরুল, প্রেমেন্দৠà¦° মিত্র,বুদ্ঠদেব বসু,অচিন্তৠà¦¯ সেনগুপ্ত,à¦ªà à¦°à¦¬à§‹à¦§ সান্যাল,মনৠষ ঘটক - এঁরা সকলেই ছিলেন 'কল্লোল'এর প্রাণ। এঁদেরই কারো কারো হাতে 'শনিবারের চিঠি'র জন্ম।সজনীঠান্ত দাসকে মধ্যমণি করে যোগানন্দ দাশ,অশোক চট্টোপাধ্ঠায়, পরিমল গোস্বামী, প্রমথনাথ বিশি, বনফুল বেশ বড় রকমের আড্ডা জমিয়ে à¦¤à§à¦²à§‡à¦›à¦¿à¦²à§‡à¦¨à ¤ 'পরিচয়'এর আড্ডায় কখনোসখনো সরোজিনী নাইডুর মতো প্রথম সারির রাজনীতি সচেতন মানুষও এসে যোগদান করেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রমথনাথ বিশী, রানী চন্দ শান্তিনিকৠতনের এমনই সরস আড্ডার ফসল। আড্ডা থেকেই জন্ম হয়েছে কত বিখ্যাত রচনার। মনের মরচে কাটিয়ে রঙে রেখায় সঙ্গীতে আপনাকে প্রকাশের জন্যই তো সঙ্গ চাওয়া, সংসর্গ চাওয়া।

" আড্ডার আসরে যে আলোচনা সেটা শিল্পসাহিত ্যের হোক, রাজনীতির হোক,à¦¤à¦¾à¦°à¦®à¦§à§à ¯à§‡ একটা স্বতঃস্ফূঠ্ত সহজের আমেজ আছে। সে জিনিসই যখন অধ্যাপনার আওতায় আসে তখন তার কি গলদঘর্ম মূর্তি। তাকে তখন বাংলামতে বলা যায় হয়রানি আর ইংরেজি মতে অদৃষ্টের আয়রনি।... একটির পরিবেশ যতখানি সরস, অপরটি ততখানি নীরস। একটি বলে, আরও পাই তো আরও শুনি,অপরটি বলে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।" সাহিত্য আড্ডা সম্পর্কে অধ্যাপক হীরেন্দ্রঠ¨à¦¾à¦¥ দত্তের এমন উপলব্ধিটি যে বেশ কৌতুককর তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রত্যক্ষ আড্ডার অভিমুখ এবার একটু ভিন্নতর দিকে ঘুরিয়ে পরোক্ষ আড্ডায় যাক। এবারের আড্ডা সাহিত্যের সাথে পাঠকের। আর এজন্য আমি বেছে নিয়েছি সাহিত্যধার ার সবচেয়ে বলিষ্ঠ অঙ্গ à¦‰à¦ªà¦¨à§à¦¯à¦¾à¦¸à¦•à§‡à ¤ কবিতায় উচ্ছাসের মায়াকানন যতই আত্মগত, উপন্যাসে জীবনের কল্লোল ততই উদগত। একদিকের উপাদান নিশ্চিন্ত মেঘের স্বর্ণাভ বর্ণালী অন্যদিকে রয়েছে বাস্তবের প্রত্যক্ষ যোগ। প্রতি ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়। রং বদলায়। জীবনের এ এক চমৎকার স্ফূর্তি। উপন্যাস বাস্তববাদৠ, তা গড়ে ওঠে মনের সর্ব স্বীকৃত ভাষাকে অবলম্বন করে। বহির্জাগতঠক বাস্তবতা মনের ভাষায় হয়ে ওঠে রম্য। আর এভাবেই উপন্যাসে ফুটে ওঠে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপঠŸ পরিবর্তনেঠনিরিখে মানবরুচি তথা মানসপট। সমাজের এক পূর্ণ প্রতিকৃতি নিয়ে সাহিত্যজগঠেও মূল্যবোধ রক্ষার অন্যতর সংকেত সম্ভাবিত হয়ে ওঠে। আর এভাবেই আমরা পেয়ে যাই বাংলা উপন্যাসের ত্রিরত্নকৠ। বিভূতিভূষঠ£ বন্দ্যোপাঠ্যায়ের রচনায় দেখা মেলে Naturalism এর। তারাশঙ্কর তৈরি করেন Critical realism এবং মাণিক বন্দ্যোপাঠ্যায়ের হাত ধরে Social realism এর সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে। আড্ডা জমে ওঠে বিভূতিভূষঠ£à§‡à¦° উপন্যাসে মানুষ ও অরণ্যপ্রকৠƒà¦¤à¦¿à¦° সাথে আমাদের। প্রকৃতির মধ্যেও মানবসত্তার প্রকাশ ঘটে অভিনব পন্হায়। 'আরণ্যক' পটভূমিতে আমরা ছড়িয়ে পড়ি উত্তরে আজমাবাদ থেকে দক্ষিণে কিষনপুর ও ফুলকিয়া বইহার থেকে লবটুলিয়ার প্রাচীন সৌন্দর্যময় à¦…à¦°à¦£à§à¦¯à¦œà¦—à¦¤à§‡à ¤ অলৌকিক অথচ এক বিশ্বাসের জগত গড়ে ওঠে। প্রকৃতির মনের ভাষাকে এমন ভাবে পড়তে এবং পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে বোধহয় কম জনই পেরেছেন যেভাবে পেরেছেন বিভূতিভূষঠ£à¥¤
" সবুজ বনশীর্ষ আমার পায়ের তলায়, আকাশ যেন আমার মাথায় ঠেকিয়াছে--- দূর,à¦¦à§‚à¦°à¦¦à¦¿à¦—à ¦¨à§à¦¤à§‡à¦° নীল শৈলমালার রেখা বনভূমিকে ঘিরিয়া যেন মায়ালোক রচনা করিয়াছে --- আমি যে মায়ালোকের অধিবাসী -- বহুদূর স্বর্গের দেবতা। কত মেঘের তলায় তলায় পৃথিবীর কত শ্যামল বনভূমির উপরকার নীল বায়ুমন্ডল ভেদ করিয়া যেন আমার অদৃশ্য যাতায়াত।" [ আরণ্যক]
'পথের পাঁচালী'র নিশ্চিন্দি পুরের নিশ্চিন্ত জীবন যেন আমাদের এই ইঁদুরদৌড়েঠ° জীবনে একটুকরো আরাম এনে দেয়।
" বৈকালের দিকটা হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার করিয়া à¦•à¦¾à¦²à¦¬à§ˆà¦¶à¦¾à¦–à§€à ° ঝড় উঠিল। অনেকক্ষণ হইতে মেঘ মেঘ করিতেছিল,à¦¤à ¦¬à§à¦“ ঝড়টা যেন খুব শীঘ্র আসিয়া পড়িল। অপুদের বাড়ির সামনে বাঁশঝাড়ের বাঁশগুলো পাঁচিলের উপর হইতে ঝড়ের বেগে হটিয়া ওধারে পড়াতে বাড়িটা যেন ফাঁকা ফাঁকা দেখাইতে লাগিল -- ধুলা,বাঁশপঠতা,à¦•à¦¾à¦à¦ à¦¾à¦²à¦ªà ¾à¦¤à¦¾,খড় চারিধার হইতে উড়িয়া তাহাদের উঠান ভরাইয়া ফেলিল।... ধুলায় চারিদিক ভরিয়া গিয়াছে -- বড় বড় গাছের ডাল ঝড়ে বাঁকিয়া গাছ ন্যাড়া- ন্যাড়া দেখাইতেছে । গাছে গাছে সোঁ সোঁ, বোঁ বোঁ শব্দে বাতাস বাধিতেছে -- বাগানে শুকন
ডাল,কুটা, বাঁশের খোলা উড়িয়া পড়িতেছে-- শুকনা বাঁশপাতা ছুঁচালো আগাটা উঁচুদিকে তুলিয়া ঘুরিতে ঘুরিতে আকাশে উঠিতেছে -- কুকশিমা গাছের শুঁয়ার মতো পালকওয়ালা সাদা সাদা ফুল ঝড়ের মুখে কোথা হইতে অজস্র উড়িয়া আসিতেছে -- বাতাসের শব্দে কান পাতা যায় না " [ পথের পাঁচালী ]
ঝড়ের এমন নিখুঁত বর্ণনায় লেখক পাঠককে সত্যি সত্যিই দাঁড় করিয়ে দেন ঝড়ের সম্মুখে। আর এই ঝড় কখন যেন যুগপরিবর্ঠনের নিশানা হয়ে যায়। আবার পাশাপাশি 'অশনি সংকেত' উপন্যাসে দেখি বাংলার মন্বন্তরেঠভয়াল ভয়ঙ্কর সর্বনাশী রূপ। দুর্ভিক্ষঠীড়িত গ্রামগুলিঠ° শ্বাসরুদ্ধ কারি যন্ত্রণার বর্ণনা। গ্রামবাংলঠ¾à¦° প্রকৃতি সেখানে উপস্হিত ভাতের অভাবে দিনের পর দিন কচুর ডাঁটা সেদ্ধ, সজনে শাক সেদ্ধ, এক মগ ফ্যান ভিক্ষের হাত ধরে।

বিভূতিভূষঠ£à§‡à¦° প্রশান্তি আমরা তারাশঙ্করৠ‡à¦° রচনায় পাই না। সমাজ সচেতন এই লেখকের সাথে আমাদের আড্ডা জমে ওঠে সামন্ততন্ত ্রের সাথে ধনতন্ত্রেঠদ্বন্দ্ব নিয়ে। 'আমার সাহিত্যজীঠন ' এ তারাশঙ্কর জানান, ক্রমশ বিলিয়মান জমিদার শ্রেণী তাঁর রচনায় বারবার এসেছে।
" সেকালকে আমি শ্রদ্ধা করি,প্রণাম করি,তার মহিমার কাছে আমি নতমস্তক। তার ত্রুটি -বিচ্যুতি অপরাধ, তার স্খলন আমি সবই জানি আমার পৈতৃক চরিত্রের ত্রুটির মতো। " এই অবক্ষয়ের চিত্রই কখন যেন আমাদেরও চোখের কোণে জল এনে দেয়। ভিজে ভিজে মন নিয়েই আমরা শুনি চিরকালের জন্য ঘোমটা খসে যাওয়ার গল্প।চরমতঠদূর্গতির মধ্য দিয়েই মুক্তির গল্প। গ্রামীণ সমাজবোধ ধীরেধীরে ভেঙে গিয়ে সেখানে জন্ম নেয় শহরমুখী নতুন জীবনবোধ। 'গণদেবতা' উপন্যাসে বিশ্বনাথ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় " চন্ডীমন্ডঠটা বুড়ো হয়েছে, ও মরবে এইবার"। চন্ডীমন্ডঠের প্রাচীন ঐতিহ্য নতুন অর্থনীতি অবস্হার চাপে নতি স্বীকার করে। ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫ -- যুদ্ধ যেন মানবসভ্যতা কে এক সংকটের মুখে এনে ফেলেছিল। সাহিত্য যেহেতু দেশকালের ঊর্ধে নয় ফলে সেই সর্বনাশা কালের পরিবর্তিত মূল্যবোধ, অর্থসংকট, খাদ্যসংস্ঠ¥à¦¾à¦¨à¦¹à§€à¦¨à¦¤à¦¾, নিস্তরঙ্গ গতানুগতিক জীবনকে ছিন্নভিন্ঠকরে দেবে আর তা সাহিত্যের উপকরন হয়ে উঠবে এ আর আশ্চর্য কী? 'চৈতালী ঘূর্ণি ',' কালিন্দী',' গণদেবতা',' মন্বন্তর ' এ তারই সাক্ষী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ের কারনে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নারী শরীরকে পুঁজি করে তোলার যন্ত্রণাবৠধ আমরা দেখি। তারাশঙ্করৠ‡à¦° প্রায় প্রতিটা উপন্যাসেই আমরা দেখি পুরোনো মূল্যবোধ ভেঙে তার জায়গায় জন্ম নিচ্ছে ধনতন্ত্রেঠকরাল গ্রাস। চাষী ক্রমে ক্রমে শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে।
" জাত! কুলকম্ম! কুলকম্ম তো জাঙলের চাষীদের মান্দেরি কৃষানি রাখালি? পেটে ভাত জোটে না, পরণে কাপড় জোটে না।... যে যাবে কারখানায় খাটতে, আমি কাজ করে দোব। দিনে পাঁচ সিকে মজুরি। কোম্পানি দিবে সস্তা চাল, সস্তা ডাল, সস্তা কাপড়। " [ হাঁসুলী বাঁকের উপকথা ]
তবু এত দৈন্যের মধ্যেও মাথাচাড়া দেয় আশা, স্বপ্ন দেখে মানুষ ভাবীকালের নতুন আলোর।

বিশ্বব্যাপ ী অর্থনৈতিক মন্দা ব্যক্তিজীঠ¬à¦¨ ও সমষ্টিগত জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছিল। ভারসাম্যহৠন সমাজভাবনার সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ি মাণিক বন্দ্যোপাঠ্যায়ের উপন্যাসে। শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন দেখা মাণিক আমাদের বারবার দেখিয়ে দিতে চান যতদিন না শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্ থা গড়ে উঠছে ততদিন শোষণের হাত থেকে মানুষের মুক্তি নেই। মানুষ পুতুল হয়ে থাকবে অন্য মানুষের। লেখক নিজের লেখার স্বপক্ষে বলেছেন,
" প্রথম বয়সে লেখা আরম্ভ করি দুটি স্পষ্ট তাগিদে। একদিকে চেনা চাষী,মাঝি, কুলি, মজুরদের কাহিনী রচনা করার, অন্যদিকে নিজের অসংখ্য বিকারের মোহে মূর্ছাহত মধ্যবিত্ত সমাজকে নিজের স্বরূপ চিনিয়ে নিয়ে সচেতন করার "।

এবং এ কাজটি তিনি অতি দক্ষতার সাথে করেছেন, কোনো সন্দেহ নেই। যুদ্ধে গোষ্ঠী সংঘাত বদলে হয়েছে ব্যক্তি সংঘাত। একান্নবর্ঠী পরিবার ভেঙে ভেতর হয়েছে বাহির। দেশবিভাগ ও উদ্বাস্তু সমস্যা প্রবল করে তুলেছে দুর্ভিক্ষ, কালোবাজারৠ€, মনুষ্যত্বৠর মৃত্যু। সে বিভৎসতার খন্ডচিত্র পাই 'চিন্তামণি ' উপন্যাসে,
" আমি কাজ করিতেছি জানিবা। ভগবান মুখ তুলিয়া চাহিয়াছেনॠ¤ কী দুঃখ পাইয়াছি না খাইয়া উপাস করিয়াছি এখানে পোড়া পেটের জ্বালায় বজ্জাত à¦¡à¦¾à¦•à¦¾à¦‡à¦¤à¦—à§à¦²à ¾à¦° দাসী হইলাম ইহা অদৃষ্টে ছিল। কিরূপ হৈ চৈ হইয়াছে লম্বা লম্বা বড় বাড়ী উঠিতেছে অবাক কান্ড দেখিয়া তুমি চোখের পলক ফেলিতে পারিবা না। ইহাকে বারাক বলিয়া জানিবা। ইহার মধ্যে গাদায় গাদায় মাতাল গিজগিজ করিতেছে। আমার মতো শতাধিক পোড়াকপালী কি কাজ করিতে আসিয়াছে কাহারো ধর্ম নাই সতীত্ব নাই এইরূপ কান্ড "। অবক্ষয়ের যুগে à¦®à§‚à¦²à§à¦¯à¦¬à§‹à¦§à§‡à ° ভরাডুবির এক করুণ চিত্র। রুশ সাহিত্যে সোস্যালিসৠট রিয়ালিজমেঠযে চর্চা আমরা দেখি ম্যাক্সিক গোর্কির রচনায় বাংলা সাহিত্যে তারই যোগ্য সাধক মাণিক বন্দ্যোপাঠ্যায়। মানুষের মনের অতল ভূমিতে বিচরণ তাঁর মতো মনস্বত্ব সম্পর্কে সজাগ লেখকের পক্ষেই সম্ভব। উপন্যাসে মনোবিকলন একটি পরিচিত বিষয়। " বিস্ময়ের বিস্ময় মানুষ পরচিত্ত অন্ধকার জেনেও অন্যকে জানতে আগ্রহী, অথচ নিজের অন্তর্গত বহুতর রহস্যের সন্ধান তার জানা নেই"। কোনো এক মুহূর্তের লোভ ও ইচ্ছার বশবর্তী মানুষ মনোলোকের গহনে কত দুর্মর বাসনা বয়ে নিয়ে বেড়ায়। মনস্তত্বেঠপ্রবল বাসনায় ক্ষতবিক্ষঠ¤ তাঁর চরিত্ররা অসুস্থ জীবনের শিকার। 'পুতুলনাচেঠ° ইতিকথা'য় কুমুদ ও মতি তার উদাহরণ। 'অহিংসা' উপন্যাসে সদানন্দ ও মাধবীর মধ্যকার সম্পর্ক যথার্থ মনোবিকলন।ঠ•à§‹à¦¨à§‹ সহজসরল সমীকরনে তাঁর আস্হা নেই। নারীপুরুষৠর ভালোবাসার এক জটিল পাঠক্রমের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন তিনি। দাম্পত্যে অনুভব আর অনুভূতি হারিয়ে পড়ে থাকে শুধু একরাশ শূণ্যতার হাহাকার। অপমানাহত,à¦…à ¬à¦®à¦¾à¦¨à¦¨à¦¾à¦° করুণ ছবি। এক গভীর অস্হিরতায় আক্রান্ত। আদর্শ চ্যুতির যন্ত্রণায় তারাশঙ্করৠ‡ যেখানে চাষীকে দেখি পৈতৃক বৃত্তি ছেড়ে শ্রমিকে পরিণত হতে সেখানে মাণিকে দেখি সেই শ্রমিক শ্রেণীর সাথে শিল্পপতির শ্রেণীগত দ্বন্দ্ব। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে এবার হার হয় শ্রমিকের। যুগযন্ত্রঠার স্বীকার হয় প্রথমে সহজসরল চাষি ও পরে শ্রমিক।

একদিন ঘটা করে ভাষাদিবস পালনে আমাদের আড্ডা এখানেই শেষ হয়ে যায় না। এরপরেও আছেন সতীনাথ ভাদুড়ী, অদ্বৈত মল্লবর্মন, সমরেশ বসু, মহাশ্বেতা দেবী, কমলকুমার মজুমদার, বুদ্ধদেব বসু,ভগীরথ মিশ্র, আবুল বাশার, রমাপদ চৌধুরী, অমর মিত্র, শরদিন্দু বন্দ্যোপাঠ্যায়, শীর্ষেন্দৠ মুখোপাধ্যঠ¾à§Ÿ, নবারুণ ভট্টাচার্য । বাদ থেকে গেলেন তবুও অনেকেই। আড্ডাতো এমনই। এলোমেলো। পথহীন। নিয়ম না মানার আনন্দে ভরপুর। পৃথিবীতে যতদিন মানুষ আছে ততদিন তাদের নিয়ে বলারও অনেক কথা আছে। গোটা পৃথিবীটাই একটা সভাঘর। গল্পের কারখানা। গল্পগুজব, হাসিতামাসা ,আবোল তাবোলে ভরপুর এক আড্ডাখানাॠ¤ তাই আমাদের আড্ডাও জারি থাকবে। আনন্দ থেকে আর্তনাদ -- কিছুই বাদ যাবে না।