সর্ষেরাঙা রোদ
উপত্যকার ঢাল বেয়ে যখন
গোধূলির উপকণ্ঠে মিশে
যেতে চায়, পাখিরা ডানা
ঝাপটে ঝাপটে আশ্চর্য
গোপন সুদূরে মিশে যায়।
সন্ধ্যের হাট ভেঙে গেলে
পথে পথে ধুলোর
ঘূর্ণিপাত...
আমি ফিরে যাই হারানো
শৈশবে।
বেদির ওপাশেই তো নিধুবন
ছিল। সেখানে বেগুনী
অভিমানগুলো আজ প্রশাখা
মেলছে। বর্ণীল ছায়া
ছায়া কুয়াশার মতো
হেঁয়ালি স্মৃতিগুলো আর
বুকের ভিতর গজিয়ে উঠছে
সেই কচি কচি পেয়ারা
পাতার রঙ। স্কুল থেকে
ফিরে এসে ব্যাগটা কোথায়
রেখেছি জানিনা।
জুতোজোড়া খুলেছি শুধু।
বসে আছি পেয়ারা গাছের
ডালে, হাতের উপর এসে
বসলো নাকি টুনটুনি
পাখিটা ? দূরের আকাশে
ডানা মেলেছে কোন বলাকা ?
আমি বসে থাকি স্তব্ধ
হয়ে
দৃশ্যের অন্তরালে
দৃশ্যগুলো শুধু খেলা
করে...
অথচ অপেক্ষা করে আছি
অন্য কোন প্রতিধ্বনির।
জানলার ওপাশেই যেখানে
চড়ুইপাখিরা রোদ্দুর
নিয়ে খেলা করে।
কংক্রীটের রাস্তার উপর
এলিয়ে পড়ে বিহঙ্গী
ধুলোবালি, নাগরিক
ব্যস্ততা । এই বিষণ্ণ
নগরী তখনও অসহ্য
ট্রাফিক আর বানভাসি
মানুষের তপ্ত
নিঃশ্বাসে বিষাক্ত হয়ে
ওঠেনি।
আমি তখনও প্রখর
গ্রীষ্মে সেখানে পিচ
গলে গলে পড়তে দেখি।
সেখানেই আবার
উথালপাতাল বর্ষায়
কাদার নদীপথে চর জেগে
ওঠে। আমি আধোঘুম জাগরণে
সুখের ওম মাখি। উত্তরের
হিম এসে টেনে নেয় সুদূর
অতীতে হয়তোবা আরজন্মে।
কখনো বা দক্ষিণ হাওয়ায়
ভেসে যাই অচেনা
ভবিষ্যতে যেখানে
কল্পনার রাজকন্যা আর
রাজপুত্ররা পঙ্খীরাজে
করে উড়ে যায় মেঘের
রাজ্যে। তবুু হঠাৎ হঠাৎ
মন আনচান করে না কী যেন
না পাওয়ার ব্যথায়। কী
যেন কী হারানোর ব্যথায়।
তবু অপেক্ষায় থাকি।
লিলুয়া বাতাসের জন্য
অপেক্ষা.... যে মোয়াম
বাতাস শীতল করবে মন!
হঠাৎ চিবুকে বিঁধে যায়
বৃষ্টির ধূলিকণা।
থিতিয়ে যাচ্ছে ধু ধু
শূন্যতা। বৃষ্টির
টুংটাং দোতারার সুর
কেটে গেলে কোমল হয়ে যায়
মন। কর্নিয়ার উপর ভাসতে
থাকে স্বপ্নের পরীরা।
জানিনা কি পেতে চাই ?
জানিনা কোথায় যেতে চাই ?
অথচ অপেক্ষা করে থাকে
সিঁদুররাঙা চোখ। বছর
বছর নতুন বইয়ের ভাঁজে
ভাঁজে ধুপগন্ধী সৌরভ আর
দূরদ্বীপ থেকে ভেসে আসা
বাঁশিয়ালের নাভিতল
থেকে উঠে আসা বিষাদের
ধুন। চাঁদনী রাতে টলমলে
হাঁটুজলে ডুবে থেকে
ঘুমঘুম বৃত্তে ভেসে
থাকার সাধ ! তারপর দীর্ঘ
বিরতির পর রিসাইকেল
বিনে আঁটকে পড়ে ঘড়ির
টিকটিক।
চলে যাই দৃশ্যপটের
বাইরে। যেখানে
পোস্টমডার্ন কবিতার
মতো নিভে গেছে রোদ ।
যেভাবে এই সূক্ষ্ম কোমল
মুহূর্তগুলো ডিঙিয়ে
গেলে বর্গরেখার উপর পড়ে
থাকে মালবেরি অথবা তুঁত
গাছের পাতা। দূরের
জানালা দিয়ে দেখা ছাতিম
গাছের নিচে বয়ে যায়
আলোর নদী । কখনো বা জলের
ছিট এসে লাগে প্রিজমের
গায়। শীতের কুয়াশা
টুপটাপ ঝরে ঝরে
কার্নিশে উপচে পড়তেই
আমি আলসেমি নিয়ে ঝুঁকে
থাকি অনন্তের পথে।
এবং অপেক্ষা !
হাতে থাকে ধূমায়িত এক
কাপ অর্কিড চা...