হঠাৎ করে চারদিক
অন্ধকার হয়ে গেলে বুকটা
কী রকম হু হু করে ওঠে,
মাথায় খুব দ্রুত ভাবে
নানান রকম দৃশ্য খেলা
করে, সব কয়টা ভাবনাই
থাকে ভয়ের আর অপেক্ষার;
কথায় আছে অপেক্ষার ফল
মিষ্টি হয়, তবে এই
মিষ্টিফল বুঝে যাওয়া
মনে হয় — তেতোই হয়!
অপেক্ষা নানানভাবে হতে
পারে, কেউ ফলের অপেক্ষা
করে আবার কেউ ফল-নিদয়ের
অপেক্ষায় থাকে।
অপেক্ষা যন্ত্রণা দেয়
তবু তাই হোক সবার জন্য,
আর আমারও। কারণ এ-ছাড়া
কোনো গুরুত্বই থাকে না,
সারাদিন জলের কাছে
থাকলে জলের কোনো
গুরুত্বই থাকে না আবার
সেই জলের কদর বাড়ে যায়
জলছাড়া পাহাড় চড়ার পরে।
প্রকৃতির কাছা-কাছি
থাকলে প্রকৃতি আর দেখা
হয় না শুধু ভোগ করাই হয়।
যারে ভোগ করা হয় তার নাম
নেয়া হয় না ভালোবাসার
খাতায়। আহারে অপেক্ষা
আর প্রকৃতি।
কতো রঙের গল্প আছে
অপেক্ষার, সব কী আর বলা
যায় সুজনের লগে, না কোনো
ভাবেই পারা যায় না, সময়ে
সময়ে অনেক গল্পই হবে
সুজনের লগে; তখন একে-একে
সব গল্পের শেষ টানা
যাবে। এবার শুধু ঝিনু’র
কথা বলি।
নাম ঝিনু। ঝিনুক নাকি?
না, ঝিনু, ঝিনুই তার নাম।
আমার আপনার মতো তার
কোনো পেশা নেই, সে
ভিক্ষাও করে না, এবং
তারা ভিক্ষাও করে না,
তার কথার ঢঙ অনেকটা
উচ্চ বংশী-দারি মানুষের
মতো। তারে ছোট করার
জন্য কথা গুলো টানছি
না। তার কথার ঢঙ এমনই, যে
কেউ শুনলে মজা পাইবে,
কাউরে কোনো পাত্তা না
দিয়া সবার মুখে উপর কথা
বলে যাবে। কারোরই খারাপ
লাগে না, ভালোই লাগে
সবার। আসলে তাদের
ব্যবসাটা তাদের মুখের
উপরেই আছে। তবে তারে
ডিল করা খুব সহজ না, তা
বুঝতে পারছি আলাপের
ঘণ্টা দু-এক পরে।
তার ভাষ্য: “না ভাই আমরা
ভিক্ষা-টিক্ষা করি না,
আমাদের কাছে সহজে
কাস্টমারও আসে না, এই
ধরেন আপনি তো সাংবাদিক,
আপনার কাজেই আপনি
আসছেন, আমার একটা ছবি
তুলবেন সেই ছবি বিক্রি
করে টাকা কামাইবেন
হেইগুলাই আপনাগো কাম,
তয় আমার ছবি তুলতে দিমু
না, ছবি নিয়া কী লিখবেন
বা কী করবেন; যেইটা কইরা
খাইতেছি সেইটাও
খুয়াইমু আপনের লাগি।
বাবা আমার এতো নায়িকা
হওয়ার হাউশ নাই। যাদের
হাউশে খেলে হেগো খুইলা
দিবো। আমার এইসবের টাইম
নাই। বাবা তোরা ভালো
মানুষ ভালো মানুষ নিয়াই
চল আমার কোনো শখ আহ্লাদ
নেই তদের নিয়া। আর আপনি
তো আমাদের কোনো
চিকিৎসা নেবেন না, তাই
না? তো কিছু না নিলে
আপনের কাছ থাইকা-তো
টাকাও নেওন যাইব না, তাই
সময় নষ্ট না কইরা চইলা
যান, আপনেরে দেখলে আমার
কাস্টমার আইবো না।’’
তার সাথে নানান রকমের
ভুজুং-ভাজুং কথা বলে
শ’দুয়েক টাকা দেয়ার
ব্যবস্থা করলাম। তবু
কোনো ছবি তুলতে দিলো না
ঝিনু।
আমাদের মতো পোষাকি
মানুষ পাইলে তাদের
মুখের বিষ তারা এমন
করেই ঝাড়ে। তাদের সব
কথা শুনে বুঝে খারাপই
লাগে কিন্তু সাধ্যের
বাইরে-তো কিছু করাও যায়
না, তাই আমরা তাদের চোখে
মানে অনেকটাই ভাবপূর্ণ
বা তাদের নাগালের
বাইরের মানুষ হিসেবেই
পরিচিত।
অনেক আলাপের পরেও তার
কাছ থেকে তার বাড়ির
ঠিকানা বা কোথা থেকে
তার আসা তা নিতে পারলাম
না, সে নানান শহরে যায়
ঔষধ বিক্রি করে, আগে তার
জাতি ভাই বোনেরা সাপের
খেলা দেখাইত, শহরের
নানান বাসায় যাতায়াত
ছিলো, ঘরের মেয়েরা বা
বাচ্চারা সাপের খেলা
দেখানোর লাগি বাড়ির
উঠানে ডাকতো। কারো
শরীরে বাত থাকলে তা
ঝেরে দিতো, শিঙ্গা
লাগাইত, কারো দাঁতে
ব্যথা থাকলে পোকা
ছাড়াইয়া দিতো, কারো
বাচ্চা বেশি দুষ্টুমি
করলে বাচ্চা না হইলে
অনেক রকম সমস্যার
সমাধান দিতে পারতো
তারা।
কিন্তু সময় অনেক বদলে
গেছে, শহরে শহরে
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে
গেছে চিন্তার জগত এবং
ব্যবহারিক সামগ্রীও।
কিন্তু এই মানুষগুলো
বদলায়নি তারা এখনো
অপেক্ষা করে
কাস্টমারের, সময়ের সাথে
নিজেকে না বদলাতে পারলে
সময়ের কঠিন চোখের
সম্মুখীন হতে হয়।
অপেক্ষাগুলো
নিষ্ঠুরতায় রূপ নেয়, আর
নিজের অবস্থা থেকে
জগতটারেও মনে হয়
নিষ্ঠুর।
সবারই একটা ধর্ম থাকে,
ধর্ম জ্ঞান থাকুক না
থাকুক একবার অন্তত তার
কাছে চাওয়া-পাওয়ার
হিসেব দেয়, নেয়ও। কারো
কারো ধর্মই ব্যবসা,
ধর্মের দোহাই দিয়ে করে
নিয়েছে বাড়ী গাড়ি কেউ
আবার দানবীরও হয়ে গেছে
ধর্মকে বিক্রি করে।
কিন্তু এই ঝিনুকের যে
কি ধর্ম তার কোনো হিসাব
করতে পারলাম না। লম্বা
আড্ডার সুবাদে চা-বিড়ি
খাওয়াইতে পারছি, তার
বাচ্চারে একটা চিপস
দিতে পারছি, কিন্তু
তারে আমার প্রেমে ফেলতে
পারি নাই। কারণ এতো
আলাপের পরেও তার বাড়ী
ঘরের কোনো ঠিকানা, বা
তার পুরুষ কী কাজ করে,
কোথায় থাকে তারও কোনো
হদিস দিলো না। আগামী
কালই-যে সে এই শহর ছেড়ে
চলে যাবে তাও সে আমাকে
জানায়নি। পড়ে যখন তার
খোঁজ নিতে গেলাম পাশের
দোকানি বলল “সেতো আর
আইবো না, সে এখন অন্য
শহরে গেছে, আবার আইবো তয়
তা মাসের মধ্যেই আইতে
পারে আবার বছরও গড়াইতে
পারে।তার এই কঠিন
ব্যবহারে আমিই তার
প্রেমে পড়ে গেছি, দিনে
দিনে সময় চলছে বেয়ে
আমার অপেক্ষা আর শেষ হয়
না ঝিনুকের জন্য।
--