একজন মানুষ স্বপ্ন
দেখতে ভালবাসত। স্বপ্ন
দেখাতেও। চিন্তা ভাবনা
মনন সৃষ্টি সব কিছুকে
নতুন করে গড়ে তোলার
স্বপ্ন। কবিতা ছিল তার
একান্ত মাধ্যম।
বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিও যে
স্বপ্ন থেকেই শুরু তা
বারেবারে মনে করাতে
চেয়েছিল। বিজ্ঞানের
যাত্রাপথ আর কবিতার
যাত্রাপথ এক করে
দেখেছিল মানুষটা।
স্থিতিশীল দর্শনে
থাকতো, শব্দার্থের
আভিধানিক পরম্পরা,
সামাজিক বার্তার
সোচ্চার ভাষালুতা,
পরম্পরাগত
জ্ঞানতত্ত্ব বাণী এবং
ইশ্বরপ্রতীম কবির
কলমনিঃসৃত আপ্তবাক্য,
কবিতাকে এইসবের বাহন
করতে অস্বীকার করেছিল।
কবিতা ছিল তার
খেতিবাড়ি। ‘নবীন
ধান্যে হতে নবান্ন’ এই
কথা বিশ্বাস করেছিল
অন্তর থেকে আর তা ছড়িয়ে
দিতে চেয়েছিল
সৃষ্টিপ্রয়াসী
কবিতাকর্মীদের রোজকার
পৃথিবীতে। মানুষটার
নাম বারীন ঘোষাল। মরে
গেল, যেমন সবাই একদিন
যায়। মৃত্যু নিয়ে কোন
ন্যাকামি বা সৃজনরহিত
আবেগের প্রবল বিরোধী
মানুষটি মরে গেল। যেমন
সবাই।
শব্দ নামক শব্দটি ওয়র্ড
এবং সাউণ্ড এই দুইয়ের
প্রতিনিধিত্ব করতে
গিয়ে কিভাবে হোঁচট খায়
বারেবার, কিভাবে
ধ্বনিটির অস্তিত্ব
স্রেফ ভুলে গিয়ে,
অনুভবটির আবহমানতা নজর
আন্দাজ করে, কাহিনীবহুল
অর্থপরায়তা
উদ্ধৃতিসঙ্কুল
নাটকীয়তা ভাবালুতা
প্রণোদিত বক্তব্যময়
শব্দসম্ভার থেকে
কবিতার নির্মাণ
বস্তুতট আলাদা হয়,
কিভাবে নির্মাণের
আবহমানতাই প্রকৃত
বহমান তা বারেবারে কলম
দিয়েই দেখাতে চেয়েছেন
বারীন কোনরকম
গ্রদর্শকামীতা ছাড়াই।
সর্বস্ব বাজি ধরেছেন এক
কঠিন সাধনায়, কোন
জাগতিক আকাঙ্ক্ষাহীন
একজন মানুষ। কখনএ গুরু
বা কোচ হতে না চাওয়া
মানুষটি সহস্র নবীন
প্রাণের চিন্তাভাবনার
গর্ভগৃহে দুঃসাহসিক
অভিযাত্রীর জুতোর
আওয়াজ, ঋষির গায়ত্রী
ধ্বনি, নির্মাণ পাগলের
ছেনি বাটালির প্রবেশ
করিয়ে দিতে চাওয়া একজন
বারীন ঘোষাল আজ নেই।
যেভাবে সবাই একদিন।
অনেকেই চেষ্টা করেন,
ঈর্ষা করেন, আক্রমণ
করেন, কাদা ছোঁড়েন এবং
শেষ অবদি গড্ডলপ্রবাহে
নানারকম চুমকি জরি
ইত্যাদি লাগিয়ে তা
মার্কেটিং করেন আর
ঠিকঠাক যোগাযোগে
মঞ্চশোভন সঙ্কলনপূরণ
খেতাবপ্রবণ হয়ে এক
মিথ্যা আবহমানের
প্রতিনিধি হয়ে যান
জান্তে এবং অজান্তেও।
আর ঘোষাল নিজেই কবিতা
হয়ে যান। আত্মখনন থেকে
আত্মনির্মাণ, প্রশ্ন
করা এবং উত্তর খোঁজের
প্রাণবান ধারাকে সত্য
মেনে সেই খোঁজের
তীব্রটান চারিয়ে দিতে
চান কবিতাভুবনে।
‘মৃত্যু ইকোলজি’-র কথা
বলা মানুষটার মৃত্যু
উদযাপন আমি চাই না।
কিছুতেই না। ঠাকুরমশাই
লিখেছিলেন ‘এ নতুন জন্ম
নতুন জন্ম নতুন জন্ম
আমার।’ শব্দে অক্ষরে
কলমে বলপেনে সাদা বা
রুলটানা কাগজে এবং ছাপা
অক্ষরে ছড়িয়ে এইসব নতুন
নবতর জন্ম, বারীনের,
ছুঁইয়ে পেতে চাই
বারবার, একজন সামান্য
সাধ্যের যৎসামান্য
কবিতাকর্মী আমি।
যখন পরজন্ম শব্দটিকে
মাড়িয়ে গিয়ে হোঁচট খায়
নব নবতর জন্মগুলি, মনে
মনে বলতে চাই, সঙ্গে
থেকো বারীনদা।
হোক না, লোকটাকে
নিয়েই
মোড়গুলো সিঁড়ির দিকেই
ঘুরে যায়
মাধ্যাকর্ষণ, তোমার না
জানা আপেল
তার রসের পথে পাক খায়
মিক্সি
সিঁড়িগুলো যেদিকে
ব্ল্যাকহোল
পিত্তলে ছাওয়া নব্তাল
ও ত্রা আন্ধার ভাষাটি
মানুষের বড় হওয়া হে
মাধ্যম
তালা ও চাবিতে ভাগ করা
পাড়ার পড়োশী
হে আকর্ষণ, ছলাৎ ছলাৎ
শব্দে আলো হয়
আর স্পষ্ট হয় সড়কের
নাম
অটোয় এসেছো বন্ধু ব্যাগ
অ্যান্ড ব্যাগেজ
ছোট্ট ছাদের মাথায়
পাখির মৈথিলী
এক কাপ কফির মাথায়
হাওয়া অলচিকি
তালা সিঁড়ি মোড় ও আপেল
একটা লোক কবিতা হয়ে
গেল
ঘন জঙ্গলের সুইচ হয়ে
লিখল, চলে আয়