ভুল । এই ভুল নিয়ে
বিস্তর কথা হয়েছে
সাহিত্যের পাতায় ।
কবিতায় - ' অধরে অধর রাখি'
থেকে শুরু করে অতল জলের
আহ্বান , পটলচেরা চোখ -
নানান রকম ।জল অতল
হয়এসব ভুলের ব্যাখ্যা
দিয়ে লেখাটাকে কেজো
লেখা করতে চাইনা ।
জীবনে কি কি ভুল করেছি,
কে ব্যবহার করেছে সে
ভুলের সুযোগে -- সেসব
লেখার মত ' হরিদাস পাল ' -
ও হইনি এখনও । বরং এমন এক
ভুলকে তুলে ধরা যাক যা
বিশ্বে আর একটিও আছে
কিনা জানা নেই । এটাকে
ইতিহাসের ,
না ভূগোলের নাকি বোঝার -
কোন্ তালিকায় রাখা
উচিত সেটা না হয়
আপনারাই ঠিক করবেন ।
আজ থেকে প্রায় ২৫৭ বছর
আগে আমাদের দেশ আমরাই
চালাতাম । হ্যাঁ, হয়তো
সেই অর্থে আমরা চালাতাম
,
এ কথাটাও ভুল কারণ
বেশীরভাগ সময়েই
বহিরাগত শক্তিই চালনা
করেছে আমাদের । কিতু
তবুও যারা এসেছেন তারা
দেশটাকে আপন করেই
চালাতে চেয়েছেন । মাঝে
মাঝে কিছু আক্রমণ হয়েছে
, লুণ্ঠন হয়েছে তবে সে সব
বেশিদিনের জন্য না ।
আমাদের স্বাধীনতা
সূর্য অস্ত যায় ১৭৫৭
খৃষ্টাব্দের ২৩ শে জুন
পলাশীর মাঠে ইংরেজদের
কাছে সিরাজের হারের
সঙ্গে সঙ্গে ।
আশ্চর্যের ব্যাপার ,
নদীয়ার মহারাজ
কৃষ্ণচন্দ্র এই যুদ্ধে
ইংরেজ পক্ষ অবলম্বন
করেছিলেন বলে কথিত আছে !
এরপর থেকেই শুরু হয়
অন্ধকারের ইতিহাস ।
এর প্রায় একশো বছর পর
১৮৫৪ সালে চালু হয়
নদীয়া বিভাগ । যার
প্রধান কার্যালয় হয়
কৃষ্ণনগর । কিন্তু
কমিশনার কৃষ্ণনগরে না
থাকতে চাননি ফলে নদীয়া
বিভাগের প্রধান
কার্যালয় সরানো হয়
আলিপুরে । এর মধ্যে
চূর্ণী দিয়ে বয়ে যায়
সময়ের স্রোত ।
এরপর শুরু হয়
স্বাধীনতার জন্য লড়াই
আর আত্মত্যাগের দিন ।
দিনের পর দিন লড়াই ,
ক্রমাগত রক্তপাত । ১৯৪৪
সালের ২৭ শে জুলাই
মহাত্মা গান্ধী
তৎকালীন বড়লাট
ওয়াভেলকে চিঠিতে জানান
তারা সরকারকে সাহায্য
করবেন যদি যুদ্ধের শেষে
ভারতকে স্বাধীনতা
দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দেওয়া হয় । ততদিনে
যুদ্ধের গতি নির্ধারিত
হয়ে গেছে , ফলে গান্ধীর
চিঠি গুরুত্ব হারায় ।এর
ভিতরেই ১৯৪২ সালের ২০
শে আগস্ট মুসলিম লীগ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের
কাছে পৃথক মুসলিম
রাষ্ট্র গঠনের আবেদন
করেছিল । যাকে সমর্থণ
করেছিলেন গান্ধী তথা
কংগ্রেস !
নিশ্চিত পূর্ণ
স্বাধীনতাকে খণ্ডিত
করার জন্য ব্রিটিশ
প্রধানমন্ত্রী
অ্যাটেলি ১৯৪৬ সালের ২
রা সেপ্টেম্বর লর্ড
ওয়াভেলের মাধ্যমে
জওহরলালকে
অন্তর্বর্তী সরকারের
প্রধানমন্ত্রী করা হয় ।
এরপর নানা
ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতরেই
আসে সেই মহার্ঘ্য দিনের
ঘোষণা । ১৯৪৭ সালের ১৪ ই
আগস্ট বিকেলে কৃষ্ণনগর
কলেজস্টিটের জেলা
কংগ্রেস কার্যালয়ের এক
সভায় স্বাধীনতা দিবস
কীভাবে পালন করা হবে তা
স্থির করা হয় ।
এমন সময় সন্ধ্যার
রেডিওবার্তায় ঘোষণা
করা হয় নদিয়া , ২৪ পরগনা ,
মালদা ,মুর্শিদাবাদ
চূড়ান্ত ঘোষণা
সাপেক্ষে পাকিস্থানের
অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং
খুলনা অস্থায়ীভাবে
ভারতের মধ্যে থাকবে ।
এরপরই ১৫ ই আগস্ট নদীয়া
জেলায় পাকিস্থান দিবস
পালনের তোড়জোড় শুরু হয়
। কৃষ্ণনগর শহরে
তারকদাস
বন্দ্যোপাধ্যায়কে
দিয়ে পাকিস্থানের
জাতীয় পতাকা উত্তোলন
করানো হয় এবং চাকদহের
পৌরসভায় পৌরপিতা কমল
ভট্টাচার্য পতাকা না
তোলায় সহপৌরপিতা কাজী
আবুতইয়ব সালেহ
পাকিস্থানের পতাকা
তোলেন । এরফলে দেশ জুড়ে
দেখা দেয় প্রচণ্ড
বিতর্ক । শ্যামাপ্রসাদ
মুখোপাধ্যায়
,লক্মীকান্ত মৈত্র সহ
নেতৃবৃন্দের চাপে
অবিভক্ত নদীয়া জেলার
তিনটি মহকুমা -
কুষ্টিয়া ,মেহেরপুর ও
চুয়াডাঙ্গা , পূর্ব
পাকিস্থানের সঙ্গে
যুক্ত হয় এবং বাকি দুটি
মহকুমা -- কৃষ্ণনগর ও
রাণাঘাট প্রথমে
'নবদ্বীপ জেলা' নামে
ভারতের সাথে যুক্ত হয় ।
এই অন্তর্ভুক্তিতে
তিনদিন সময় লাগায় ১৮ই
আগস্ট সোমবার নবদ্বীপ
তথা নদীয়া স্বাধীন
ভারতের মানচিত্রে
স্থান পায় ।
১৫ থেকে ১৮ ই আগস্ট
মাত্র তিনটি দিন আর
তাতেই নদীয়া জেলার
দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হয় ।
যারা চেয়েছিলেন ভারতে
থাকতে তাদের ঠাঁই হয়
পাকিস্থানে ।
শুধু নদীয়াই নয়
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে
বনগাঁও ম্যাপের ভুলে
পাকিস্থানের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে
পড়েছিল । শুরু হয়েছিল
সাম্প্রদায়িক
অবিশ্বাস ও ' খেদাও
অভিযান ' । যদিও ১৭ই
আগস্ট রেডিওবার্তায়
বনগাঁর মানুষ জানতে
পারেন এটা ম্যাপের ভুল
। ১৮ই আগস্ট বনগাঁয়
পতপত করে ওড়ানো হয়
স্বাধীন ভারতের
তেরঙ্গা পতাকা । সেই
থেকেই বনগাঁর
স্বাধীনতা পালিত হয় ১৮
ই আগস্ট। এখনও বনগাঁর
আইনজীবীরা এই দিনটি
মহাসমারোহে
পালন করেন ।
ইতিহাস বলে ভুলটা ছিল
র্যা ডক্লিফের ম্যাপে ,
তিনিই তৈরি করেন খণ্ডিত
ভারতের প্রথম মানচিত্র
। আর তাতেই রাণাঘাট ও
বনগাঁ মহকুমা চলে যায়
পাকিস্থানে !
আজও ১৮ই আগস্ট নদীয়ার
রাণাঘাট ও কৃষ্ণনগরে
পালিত হয় স্বাধীনতা
দিবস ।
ভুলের এমন ভুলভুলাইয়া
আর কোনো দেশে আছে কিনা
জানা নেই । ভুলের যে
বাতাস এই তিনটি দিনে
বয়ে গেছিল রাণাঘাট ও
বনগাঁ মহকুমার ওপর দিয়ে
তারফলে বড় অঘটন ঘটতেই
পারতো , নিশ্চিহ্ন হয়ে
যেতে পারতো কিছু অমূল্য
প্রাণ । প্রবীণ
নাগরিকরা বলেন
রাণাঘাটের যে অংশে আজ
বেশি ধূমধাম সেখানেই
সৃষ্টি হয়েছিল দাঙ্গার
পরিবেশ ।
ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করা
উচিৎ না হলেও বৃহত্তর
স্বার্থে ও সম্প্রীতির
লক্ষ্যে একটি দেশেই
দুটি স্বাধীনতা দিবস
পালন করা কি উচিৎ ?
ঠিক না ভুল -- এর উত্তর
পাঠকের জন্যই ছেড়ে
রাখলাম ।
তথ্যসূত্র : -
রাণাঘাটের সেকাল একাল
বিপ্লবী যুগান্তরের
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রাম
নদিয়া স্বাধীনতার
সংখ্যা
১৮ই আগস্ট নদিয়ার
স্বাধীনতা ।