ভুল নিয়ে আমার কোনো
বাড়াবাড়ি নেই । ভুল
আমার পোষা ময়না । আমি
ভুল পুষি , ছোলা খাওয়াই ,
কথা বলতে শেখাই । ভুলকে
বলি – বল , হরেকৃষ্ণ ।
ভুল বলে ওঠে ,
ছোলা দে । এবার ধমক দিয়ে
বলি , বল – ঠিক করে বল --
ভুল বলে ওঠে , ক্যা রে ,
ক্যা রে ! আমি রাগে
ছোলার বাটি উল্টে দিয়ে
চলে আসি । খাঁচার দরজা
খুলে রেখে আসি ।
নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোতে
যাই , এই ভেবে যে , কাল
সকালে আর ওর মুখ দেখতে
হবে না । বেশ দেরী করে
ঘুম থেকে উঠে খাঁচার
কাছে গিয়ে দেখি - ওমা , সে
ব্যাটা ঠিক বসে বসে গান
গাইছে । আমাকে দেখে
ডালে উঠে চারপাক নেচে
নিয়ে বলে ওঠে , দে , ছোলা
দে । খিদে পেয়েছে । আমিও
মায়ায় পড়ে যাই , একবাটি
ছোলা আর একটা পাকা
পেয়ারা দিয়ে দিই ওকে ।
গপাগপ খায় বাছাধন ,
খাওয়া শেষ হলে ঠোঁট
মোছে ডালে ঘষে ঘষে , অনেক
যত্ন করে । আমি ওকে সময়
দিই জিরিয়ে নেওয়ার ।
এরপর যখন দেখি ভুলের
মুখে বেশ তৃপ্তির ছাপ ,
তখন আবার ওকে হরেকৃষ্ণ
শেখাতে বসি । বল –
হরেকৃষ্ণ ! ও বলে , ঘুম
পাচ্ছে খুব , একটু
ঘুমিয়ে নিতে দে না বাপ !
ব্যাস আবার আমার রাগ
হয়ে যায় । আমি
দরজা-জানলা এঁটে কাজে
চলে যাই । একদম স্থির
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ,
না – আর নয় । বহুত বার
বেড়েছে ও । এইবারই শেষ ।
বাড়ি ফিরে অন্ধকারে
চুপি চুপি ওর গলা টিপে
মেরে দেব । এইটুকু তো
সরু গলা , দু আঙুলের
চাপেই মরে যাবে ও ।
পরেরদিন ময়লার গাড়িতে
ওর চুপসানো বডিটা ফেলে
দেব প্যাকেটে মুড়ে ।
প্ল্যান ফিক্স হয়ে গেল
বলে ফুরফুরে মেজাজে
কাজকম্ম সারতে লাগলাম ।
সন্ধ্যেবেলা বারে বসে
বন্ধুদের সাথে তিন
পাত্তর খেয়ে খুব বাওয়াল
করলাম । শিস দিতে দিতে
বাড়ির পথ ধরলাম ।
নিঃশব্দে দরজা
খুললাম , দেখি ব্যাটা
ঘুমোচ্ছে অঘোরে । আলতো
করে তুলে আনলাম ওকে ।
ঝটপট করে উঠল , পাখনা
দুটো মুচড়ে ধরে খুব কাছ
থেকে ওকে দেখলাম । ওর
রাতকানা চোখের দিকে
তাকিয়ে দেখলাম , সেখানে
কেবল শূন্যতা ছাড়া আর
কিছু নেই । ওই স্থির
চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন
যেন একটা গা শিরশিরে
অনুভূতি এলো । আমি কি ভয়
পাচ্ছি ? ধুর , আমার মত
ডেয়ার ডেভিল একটা
সামান্য পোষা ময়নার
রাতকানা চোখের দিকে
তাকিয়ে ভয় পাব কেন ! আসলে
এসব তরলের অ্যাকশান ।
আমার হাতের মুঠোর মধ্যে
ধুকপুক টের পাচ্ছি ।
শরীরের গরম টের পাচ্ছি
। আমার হাত ঘামছে একটু
একটু করে । কপালে , নাকেও
বিন্দু বিন্দু ঘাম
জমছে । নাহ , আজ বড্ড
ভ্যাপসা দিন । এসিটা
চালিয়ে বরং একটু বসি ।
তারপর ও ব্যাটাকে খতম
করা যাবে ধীরেসুস্থে ।
তাড়া তো নেই কোনো , রাত
এখনও অনেক বাকি । ওকে
খাঁচার ভেতর চালান করে
দিয়ে সোফায় এলিয়ে বসে
পড়ি ।
বসে থাকতে থাকতে
একটু ঢুলুনি এসে গেছিল
বোধহয় । নইলে আমি
স্বপ্ন দেখে চেঁচিয়ে
উঠবই বা কেন ! স্বপ্ন বলা
যায় কি একে ? নাকি
দুঃস্বপ্ন ! দুঃস্বপ্ন
তো এরকম হয় না । সে যাই
হোক , আমি দেখলাম – আমি
নিজেই আমার ভুলের মত এক
ময়না পাখি হয়ে গেছি আর
গাছে বসে খুব শিস
দিচ্ছি । এ পর্যন্ত
ঠিকই ছিল , সন্ধ্যে হতে
দেখলাম আমি ক্রমশঃ কাক
হয়ে যাচ্ছি । আমার গলায়
আর সুর নেই । ভাবলাম ,
কাল সকালে নিশ্চই ঠিক
হয়ে যাবে । কিন্তু
সকালে নিজের কাকা ডাকে
নিজেই চমকে উঠলাম ।
তাহলে আর আমি ভুল নামের
ময়না নই ! ভালোই হল
একদিকে , আমাকে আর কেউ
পোষা পাখি বলবে না ।
স্বাধীন হয়ে ঘুরে
বেড়াবো , নাই বা গেল শিস
দেওয়া । এভাবে সারাদিন
বেশ ঘুরে বেড়ালাম ফ্যা
ফ্যা করে । বিকেল হয়ে
এলে মনটা খুব খারাপ হয়ে
গেল । মনে হল , কই গেল
আমার গান আর সুর ? এই
কর্কশ ডাক নিয়ে কাটিয়ে
দিতে হবে সারা জীবন !
পাখিরা কি আত্মহত্যা
করে ? শুনেছিলাম
অরুণাচলে বছরে একবার
দলে দলে পাখি এসে আগুনে
ঝাঁপ দেয় । কেউ জানেনা
কি কারনে পাখিদের এই
মৃত্যু অভিযান । আমিও
কি তাহলে অপেক্ষায় থাকব
ওই সময়ের , উড়ে যাব সেই
মৃত্যুর দেশে ? চোখের
সামনে দেখতে পাচ্ছি আমি
আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছি ,
আমার কালো শরীরটা
মুহুর্তের মধ্যে পুড়ে
ছাই হয়ে যাচ্ছে ।
আঃ , কি জ্বলুনী সারা
শরীরে , আমি আর সহ্য করতে
পারছি না ......
এক চটকায় ঘুম ভেঙে
গেল । কনকনে এসিতে শীতে
কুঁকড়ে সোফায় শুয়ে
থাকতে দেখলাম নিজেকে ।
কেমন যেন মায়া হল নিজের
ওপর । খুব আদর করলাম
নিজেকে । আয়না দেখে চুল
আঁচড়ালাম , বডি স্প্রে
দিলাম গায়ে । একটা
ফ্রেশ টিশার্ট গলিয়ে
বেশ ভালো লাগল । এবার
তাহলে আমার ময়না নামের
ভুল-পাখিটার একটা
ব্যবস্থা করা যাক । হয় ও
থাকবে নাহয় আমি । আর যদি
ওকে বাঁচিয়ে রাখি , আমার
কথা শুনে ওকে চলতে হবে ।
কিন্তু ও তো এখন
ঘুমোচ্ছে , ওকে জাগালেও
ও এখন দেখতে পাবে না ।
আমার সঙ্গে মুখোমুখি
বসতে হবে ওকে । তাহলে কি
আজকের রাতটা ওকে
নিষ্কৃতি দেব ? কিন্তু
তাহলে আবার সকালে উঠে
ওর বেয়াদবী সহ্য করতে
হবে । আমার কথা ও
কিছুতেই শুনবে না ,
শুনবে না , আমি বুঝে গেছি
। যাক গিয়ে , এতদিন যখন
কাটল এভাবে নাহয় আর
একটা রাত ! যা রে
রাতকানা-পাখি , ঘুমো ,
শেষ ঘুম ঘুমিয়ে নে আজ ।
ওকে ঘুমোতে দিয়ে আমার
ঘুম চলে গেল ।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে রাতের রাস্তা
দেখে কাটালাম , দুএকজন
মাতালের প্রলাপ শুনলাম
, ভোর রাতে যখন ঘুম এলো
অবশেষে , আর বিছানায়
গেলাম না । একটু বাদেই
আলো ফুটবে , জেগে উঠবে
আমার ভুল-পাখি । আজ
সকালেই চোখাচোখি ,
মুখোমুখি বসব ওর সাথে ।
শেষবারের মত ওর সাথে
বোঝাপড়া সেরে নেব ।
আমার কথা শুনেই ওকে
চলতে হবে , কথার
অবাধ্যতা আমি পছন্দ করি
না । অবশেষে অন্ধকার
ফিকে হয়ে এলো , কা কা ডাক
শুনতে পেলাম । আমিও
ছুটে গেলাম খাঁচার কাছে
। খাঁচার ঢাকনাটা
একটানে খুলে দিলাম ।
দেখি ও একটু নড়েচড়ে বসল
। ডানার খসখস শব্দ ঊঠল ।
আমার দু চোয়ালের রগ
শক্ত হয়ে যাচ্ছে ।
নিজেকে খুনীর মত
দেখাচ্ছে নিশ্চই ।
লাগুক গিয়ে তাই , আমি
কারুর পরোয়া করি না । আজ
এসপার নয় ওসপার ! তার আগে
এক কাপ চা নিয়ে আসি বরং ।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে
এলাম খাঁচার সামনে । এর
মধ্যেই ও চেঁচামেচি
শুরু করে দিয়েছে ছোলার
জন্য । আমাকে দেখেই বলে
উঠল – খেতে দে , খেতে দে ,
খেতে দে ... আমি
হিসহিসিয়ে উঠলাম , আমার
চেরা জিভ বেরিয়ে এলো
মুখ থেকে , শেষবারের মত
ওকে শেখাতে চাইলাম , বল
পাখি – হরেকৃষ্ণ ,
হরেকৃষ্ণ ! ও বলল – ছোলা
দে । আমার রাগের পারদ
উঠে গেছে শেষ ধাপে ।
খাঁচার ভেতরে হাত
ঢুকিয়ে খপ করে ধরলাম
ওকে । এই প্রথমবার মনে
হয় ও ভয় পেয়েছে । খুব
ছটপট করতে লাগল হাতের
ভেতর , তারপর ঠোকরাতে
লাগল । আমি একবারের
জন্যও বাঁধা দিই নি ।
নে - তোর জীবনের শেষ
ইচ্ছে পূরণ করে নে । আর
তো কয়েক মুহুর্ত থাকবি
এই পৃথিবীতে । হাত
ঠুকরে ও রক্ত বের করে
ফেলল শেষ পর্যন্ত ।
এবার ওকে থামালাম ।
হাতে খুব ব্যথা করছে ,
মাথায় রাগ চড়ছে । আর
তোকে সময় দেবো না , আমার
ভুল-পাখি ! হাতের রক্ত ওর
পালকে মুছে নিলাম , দু
আঙুল দিয়ে ওর গলায় আলতো
চাপ দিতে শুরু করলাম ।
দেখি ওর ঠোঁট ফাঁক হয়ে
জিভ বেড়িয়ে আসছে । ওর
এলিয়ে আসা তুলতুলে
জিভটায় আমার বুড়ো
আঙুলের নখ দিয়ে একটু
সুড়সুড়ি দিলাম । দেখলাম
সাড় নেই কোনো । নাঃ , এত
সহজ মৃত্যু তো তোকে আমি
দেবো না । মৃত্যু
যন্ত্রণা তিল তিল করে
ভোগ করাবো তোকে । ছেড়ে
দিয়ে দাঁড়ে বসিয়ে দিলাম
ওকে । জল দিলাম এক বাটি ,
চুকচুক করে জল খেলো
একটু । দেখলাম ঝিমোচ্ছে
, গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ
বেরোচ্ছে না আর । নিয়ে
এলাম এক বাটি কল বের করা
ছোলা আর এক টুকরো পাকা
পেয়ারা । খা , বেটা খা –
গায়ে তাগদ আন । আবার কাল
তোকে দাওয়াই দেব ।
সারাদিন চুপচাপ রইল ও ।
আমিও আর ওর দিকে ঘেঁসি
নি সারাদিন ।
পরেরদিন সকালে দেখি
আবার যে কে সেই !
নির্লজ্জ পাখি আবার
খেতে দে , খেতে দে শুরু
করেছে । আমি ভাবলাম ,
দেখাই যাক – এবার যদি
একটু শুধরোয় । খাবার
দিলাম , তারপর বললাম , বল
পাখি , এবার তো বল –
হরেকৃষ্ণ , হরেকৃষ্ণ ! কে
কার কথা শোনে , আমাকে
বলতে লাগল – কে রে তুই ,
কে রে তুই ! আচ্ছা !! এবার
সত্যিই আমি তোকে দেখাবো
, কে আমি । আমি তোর
সাক্ষাৎ যম , আবার এই
আমিই তোকে সেদিন মরতে
দিলাম না , এখন আবার
জিজ্ঞেস করিস কে আমি ! এই
খাঁচায় তোর আর জায়গা
হবে না আজ থেকে । খাঁচার
দরজা খুলে ওকে বের করে
দিলাম । ওর বোধহয়
বিশ্বাস হল না ঠিক ,
মেঝেতে ধপ করে গিয়ে বসল ,
লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে
ঘুরে আমার মতিগতি
লক্ষ্য করল কিছুক্ষণ ।
তারপর ডানা ঝাপটা দিয়ে
উড়বার চেষ্টা করল ।
একটু উড়ে গিয়ে বসল
বারান্দার রেলিঙে ।
আবার আমার দিকে মুখ
ঘুরিয়ে দেখল । আচ্ছা ওর
চোখে কি মায়া দেখলাম
একটু ! নাকি আমার মনের
ভুল , নিজেই ঠিক বুঝলাম
না ।
মনটা বেশ হালকা লাগছে
। যাক , আর ও নেই , আপদ
বিদেয় হয়েছে ।
সারাদিনের শেষে বাড়ি
ফিরে অভ্যেসবশে খাঁচার
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ।
বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল
খালি খাঁচা দেখে , মনকে
বোঝালাম – দুএকদিনেই এই
না থাকাটাও অভ্যেস হয়ে
যাবে । আর ও তো আমার কোনো
উপকারে লাগছিল না , বরং
মনের শান্তি নষ্ট করছিল
। এ একদিক থেকে ভালোই হল
। মারতেও হল না , জোর
করতেও হল না , ওর
বন্দীদশা থেকে মুক্তি
দিলাম । যা রে পাখি ,
মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়া ,
যা খুশি বল , যা খুশি খা ,
যা খুশি কর গিয়ে । আমার
কর্তালি আর তোকে ভোগ
করতে হবে না । আমিও
বিরক্তির শেষ সীমায় চলে
গেছিলাম আর তুইও বোধহয়
নিজের মত চলতে চাইছিলি
। তাহলে আর কি ভালোই
হয়েছে যা হওয়ার । রোজ
রাতে টিভি দেখার সময়ে
খাঁচাটা ঘরে নিয়ে আসতাম
, আজও আনতে যাচ্ছিলাম আর
কি একটু হলে ! থাক পড়ে আজ
থেকে ওই খাঁচা
সারাদিন-রাত বারান্দায়
পড়ে । আমার কি ! … ধুর ছাই
, টিভির সব নিউস
চ্যানেলে একই খবর আর
বাংলা চ্যানেলে একই
ঢঙের সিরিয়াল ,
স্পোর্টস চ্যানেলে এ
আবার কোন দেশী খেলা
দেখাচ্ছে কে জানে ! একটা
মনের মত সিনেমাও দেখার
নেই … ধুর ধুর আমাদের
দেশের সিস্টেমটাই একদম
যাচ্ছেতাই , জীবন উপভোগ
করতে হলে পশ্চিমে যাও –
এই জন্যই বলে ! ঘুমও আসছে
না ছাই , খুব অস্থির
লাগছে কেন কে জানে । মনে
হয় গ্যাস হয়েছে । হ্যাঁ ,
তাই হবে , সন্ধ্যেবেলায়
একটা শিঙাড়া খেয়েছিলাম
, তারই ফল ভোগ করি এখন !
বারান্দায় গিয়ে একটু
ফ্রেশ এয়ার নিয়ে আসি
তার চেয়ে ।
ঘড়ি দেখি নি ,
মোবাইলটাও ফেলে এসেছি
ঘরে । তবু রাত যে অনেক হল
বোঝা যাচ্ছে নীচের
শুনশান রাস্তা দেখে ।
একটা টানা রিক্সা
রাস্তার ধারে সাইড করে
দেহাতী রিক্সাওয়ালা
বন্ধ চায়ের দোকানের
খালি বেঞ্চের ওপর শুয়ে
পড়ল । আর শোওয়ার সাথে
সাথেই যে ঘুমিয়ে পড়ল
সেটা এখান থেকেই ওর
শরীর ছেড়ে দেওয়া থেকে
বেশ বোঝা যাচ্ছে । এরাই
বোধহয় চরম সুখী
পৃথিবীতে । দিনভোর খাটে
, খায় , শান্তির ঘুম
ঘুমোয় । আর আমি এক
হতচ্ছাড়া মানুষ , যে
কিনা এক ভুল-পাখির
ফাঁকা খাঁচার পাশে
দাঁড়িয়ে রাত জাগছি ।
কোনো মানে হয় এই সব
ন্যাকামোর ! অথচ বাস্তব
এটাই , আমার মন খারাপ ,
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর
জন্য , আমার ভেতরটা ওই
বেইমান পাখির জন্য ছটফট
করছে , এমনকি একা একা এই
বারান্দায় , যেহেতু কেউ
দেখছে না , কাউকে এখন আর
লুকোনোর নেই , তাই আমার
গাল বেয়ে অঝোরে কান্না
নামছে । আমি কাঁদছি ,
অনেক অনেকদিন বাদে আমি
কাঁদছি , মিস করছি ভয়ানক
ওই শয়তান পাখিটাকে । আর
ও এখন না জানি , কোথায়
আরামসে ঘুমোচ্ছে !
সারাদিন কি খেলো কে
জানে ! ওনার তো আবার
হাবিজাবি রুচত না !
এতদিন খাঁচায় ছিল , ওড়ার
অভ্যেস চলে গেছে ,
চিল-শকুনে ঠুকরে মেরে
দিল কিনা কে জানে ! রাতে
হয়ত কোনো ডালে বসে
ঘুমোবার চেষ্টা করছে ,
তখনই হয়ত কোনো প্যাঁচা
এসে ধরল ওকে ! ওঃ , আর
ভাবতে পারছি না ! ধুর ধুর
, আমি কেন ভাবতে যাচ্ছি
এসব । আমার তো আপদ বিদেয়
হয়েছে , আজ খারাপ লাগছে ,
কয়েকদিন বাদে সব ঠিক
হয়ে যাবে । কথায় বলে
মৃতের শোক তিনদিনের ।
রাতশেষে ঘুমিয়ে
পড়লাম । বেশ বেলায় ঘুম
ভাঙল । ঘরের মধ্যে
রোদের কড়া ধাতানি দেখে
হুড়মুড় করে বিছানা
ছাড়লাম । অলস পায়ে
বারান্দায় গিয়ে
দাঁড়ালাম । কাল রাতেই
ঠিক করে ফেলেছিলাম , ওই
খাঁচার দিকে আর তাকাবো
না । রদ্দিওয়ালার কাছে
কিলো দরে বেচে দেব ।
আমার এক প্যাকেট
সিগারেট খরচা তো উঠবে !
কোনো স্মৃতি রাখবো না
ওর এই বাড়িতে । সরগরম
রাস্তার দিকে তাকিয়ে
আছি , মনটা চা চা করছে –
এমন সময়ে একটা খসখস
আওয়াজ শুনলাম যেন ।
ভাবলাম মনের ভুল ।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরে
আবার সেই একই আওয়াজ ।
খাঁচার দিক থেকেই
আওয়াজটা আসছিল যেন ।
যেহেতু প্রতিজ্ঞা
করেছি , তাই তাকাতেও
পারছি না ওই দিকে । কান
খাড়া করে রইলাম । আর ঠিক
যা ভাবছিলাম তাই !! একটু
বাদেই শিস দিয়ে উঠল
শয়তানটা ! রাগে গা জ্বলে
গেল , চিৎকার করে জানতে
চাইলাম , কেন ফিরে
এসেছিস তুই ? বেশ তো চলে
গিয়েছিলি ড্যাংড্যাং
করে ! আবার এসেছিস আমাকে
জ্বালাতে ! আমাকে কি
একটুও শান্তি দিবি না ! ও
যথারীতি আমার কোনো কথায়
কান দিল না । এক পাক নেচে
নিয়ে বলল , ক্যা রে –
ক্যা রে ! আবার ধমকাতে
শুরু করায় , এবার বলল ,
খেতে দে , খেতে দে , খেতে
দে ......