‘ঐহিক’ এর সম্পাদক
মহাশয় ফোন করে পরিচয়
দিলেন। জানালেন এবারে
আমাদের বিষয় ‘মিসটেক’,
তারপর কাশ্মীর থেকে
কন্যাকুমারী অবধি একটা
লিস্ট দিলেন। এর মধ্যে
থেকে আমি কোনটা নিয়ে
লিখতে ইচ্ছুক জানতে
চাইলেন। আমি তো ঘাবড়ে
ঘর্মাক্ত। এদিকে মা
স্নানে যেতে বলার লাস্ট
ওয়ার্নিংটাও দিয়ে
দিয়েছে। আমি তবুও ফোনে
স্বাভাবিক থাকার
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উনাকে জানালাম ‘আমি না,
পারব না’। আসলে কোনো
কিছুর ভুল ধরতে গেলে তো
একটা ভরপুর কনফিডেন্স,
শিক্ষাগত যোগ্যতা এইসব
লাগে। আমি জানি আমার
সেইসব নেই। আর প্রথমেই
উনি যে যে বিষয়ের
উল্লেখ করেছেন সে শুনে
তো বুকে বাজছে-- বিষ শুধু
বিষ দাও বিষয় চাই না।
মানে, ইয়ে, অ, অ্যাঁ...
আমার এই
ক্যালানেকার্তিক
মার্কা প্রতিক্রিয়া
পেয়েও উনি শান্ত
থাকলেন। তারপর জানালেন
বেশ, আপনি আপনার মতো
লিখুন। শুধু কি নিয়ে
লিখছেন সেটা সম্ভব হলে
আমায় আগে জানিয়ে দিয়েন।
যাতে না অন্য কারো
লেখায় রিপিট হয়ে যায়।
এরপর উনি মাঝেমাঝেই
বিষয় জানতে চান। আমি
আরো আরো গুটিয়ে যায়।
লিখে উঠতে পারি না। কার
না কার ভুল ধরতে গিয়ে কি
না কি ধরে এনে দেব। এখন
অন্যজন যদি বলে ওঠে ওটা
আমার সাবজেক্ট ভাই,
আপনি কে ভাইটি আমার ;
ধরতে এসেছেন ভুল। আমি
ভুলভুলাইয়ার ভিতর ঢুকে
পড়ি। নিজেরই অজান্তে।
সেখানে একটা
মঞ্জুলিকাও নেই যে
মাঝেমাঝে মাঝরাতে ভুল
করে আমাকে নাচ দেখিয়ে
গান শুনিয়ে যাবে;
শ্রেয়া ঘোষালের
প্লেব্যাকে। লেখাটা আর
হয়েই ওঠে না। এদিকে
সম্পাদকের তাড়া। এর
মধ্যে সম্পাদক মহাশয়
আমার কাছে তমালদা হয়ে
গেছে। উনি আমার প্রতি
আপনি থেকে তুমি... তুমি
থেকে স্বস্তির তুই
উচ্চারণ করা শুরু
করেছেন। আমিও আপনি থেকে
তুমিতে উঠেছি। তবু
‘মিসটেক’ এর একটা টেক’ও
নেওয়া হয়নি। চুড়ান্ত
অপরাধবোধ কাজ করছে। মনে
হচ্ছে ধার করে নেশা
সালটে সেই দোকান পাশ
কাটিয়ে যাচ্ছি। মালিক
এই ধরে ফেলল বলে আমায়
অন্য গলিতে। তারপর
নিজেকে শান্তনা দেওয়ার
জন্য ভেবে নিলাম, আসলে
এই ক্ষেত্রে বোধহয় আমি
সেই সোনার কেল্লার একই
পাড়ার অন্য মুকুল। যাকে
ধরে নিয়ে গিয়ে আবার
ফেরত দিয়ে গিয়েছিল ওরা।
আর নিজেদের মধ্যে
বলাবলি করেছিল, ‘মিসটেক
মিসটেক’। তারপর মনে হল
নিজের জীবনটায় তো
মিসটেকের এমপিথ্রি।
একটার পর একটা ট্র্যাক।
ফুরোয়ই না। কানে বেজেই
যায়। এত ভুল এত ভুল।
আবার অন্যের পুকুরে ছিপ
ফেলে ভুল ধরতে যাওয়ার
কি আছে। সেবার অনেকজন
মিলে শঙ্করপুর
গেছিলাম। দুপুর থেকে
সমুদ্র সমুদ্র স্নান
সমুদ্র গান বালি বিয়ার
সমুদ্র। বিকেল।
সমুদ্র। বিকেলেরও যখন
আলোর স্টক ফুরিয়ে আসছে;
তখন আমাদের কাছে মাপার
মতো কোনো তূলাযন্ত্র
ছিল না যে -- কে পেয়েছে
শরীরে বেশি; খিদে না
ক্লান্তি। ছড়িয়ে
ছিটিয়ে পিছিয়ে এগিয়ে
একে একে হোটেলে ফেরা।
কোথাও বেড়াতে গেলে কোনও
দিনই হোটেলের রুমের
চাবি আমার কাছে থাকে
না। বন্ধুরা জানে।
থাকলেই হারাবে। বেড়াতে
গিয়ে বাইকের চাবিটাও
থাকে না বলে, ভরপুর একটা
ছুটি পায় পকেটগুলো।
হাঁটতে হাঁটতে আমি
পিছিয়ে পড়ছি তো পড়ছিই।
মনেমনে ঠিক করে নিয়েছি
রুমে ঢুকেই আগে বিছানা,
তারপর খাওয়াদাওয়া। আগে
ল্যাদ খাব, তারপর
খাবার। একটা অদ্ভুদ
আনন্দ- বিষন্নতা-
তোলপাড় -ঘোর এর ভিতর
দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
হোটেল এসে গেল। হোটেলের
সিঁড়ি এসে গেল। এসে গেল
রুমের দরজা। কলিং বেলে
আঙুল এসে গেল। দরজা
খুলতেই আমি সোজা
বিছানায় ধপাস।
ফ্র্যাকসন অফ সেকেন্ডে
ঘটে গ্যাছে ঘটনাটা।
দেখি আমার পাশে একটি
মহিলা শুয়ে। ঢাকাঢুকি
দিয়ে। আরে এটা কী হল !
দরজার দিকে তাকাতেই
দেখি একটি লোক
স্যান্ডোগেঞ্জি আর
বারমুডা পরে অসহায় চোখে
আমায় জুলজুল চোখে জুম
করে দেখছেন। তড়াক করে
যেন কারেন্ট খেয়ে উঠে
দাঁড়ালাম। কারো মুখে
কোনো কথা নেই। দু’দুটো
পায়ে কিটোটা আবার পড়তে
গিয়েই যা বেশি সময়টুকু
লেগেছিল। একটা ‘উম্মম’
আর একটা ‘হুম্ম’ মুখ
দিয়ে বের করে টোটাল
গাম্ভীর্য নিয়ে নিজেকে
ছিটকে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম
দরজার বাইরে। দরজা আবার
লেগে গেছিল। আসলে
আমাদের রুমটা ওই ডানদিক
বামদিক নির্দেশেই
তিনতলায় ছিল। আর আমি ওই
নির্দেশ মেনেই দো’তলায়
চলে গেছিলাম। মিসটেক আর
কি।
ভুল হয়ে গেছিল।
একশোএকবার উচ্চারণ
করলাম। যতই ঘোর থাকুক
অন্যের বাড়িতে তো এই
ভাবে ঢুকে পড়তে পারে না
ক্লান্তির প্রকাশ। এ
সবই অন্যমনস্কতা। এ সবই
নতুন নতুন পা ছুঁয়ে
যাওয়া ঢেউ। এ সবই আসলে
অপরাধবোধ। আমি’টা তো
কোনওদিন ফ্ল্যাট আর
ভাড়াবাড়িতেও থাকিনি,
ধেয়ে আসা হাওয়াকেও আই
ডি দেখিয়ে নিজের শরীরে
পৃথিবীর প্রবেশ দ্বার
চেনায় নি... মিসটেকে
ক্লান্তি আর রুম
নাম্বার আমায় ক্ষমা কর
প্রভু।
এইবার এতক্ষনে লেখাটা
শেষ হয়ে এসেছে বলে বেশ
হালকাফুলকা লাগছে।
‘লিখতে পারছি না লিখতে
পারছিনা’র গুমোট
আবহাওয়া ছেড়ে বেরিয়ে
বারান্দা থেকে তুমুল
বৃষ্টির লাইভ শো। কি আর
করা যাবে, কেউ ঠেকে শেখে
কেউ মিসটেকে...