বারীন ঘোষাল নামক বৃক্ষ
এখন 'অতিচেতনা'-র দেশে ,
হয়ত সেখানেও তরুণ
কবিদের ছায়া দিচ্ছেন ,
যেমন দিয়ে এসেছেন সারা
জীবন। বাংলা কবিতায়
অন্য ধারা এনে ফেলা
'কৌরব' নামের যে বিপ্লব,
বারীন তার অন্যতম
কান্ডারি, পরবর্তীকালে
'নতুন কবিতা'
মুভমেন্টের
পথপ্রদর্শক - এ সব সবাই
জানে। বারীনদার সঙ্গে
আমার যে নিয়মিত যোগাযোগ
হতো, তা নয়, কিন্তু তাঁর
সঙ্গে যেখানেই দেখা হোক
না কেন, মনে হত যেন
গতকালই দেখা হয়েছে,
এমনই ভালোবাসা আর
উষ্ণতা ছড়াতে পারতো
বারীনদা। জীবনে 'কৌরবে'
লিখিনি, 'নতুন কবিতা'-র
ধারায় নিজেকে সেভাবে
খুঁজেও পাইনি , কিন্তু
সে সব কোনোদিনই আমার আর
বারীনদার মধ্যে
কোনোরকম দূরত্ব তৈরী
করতে পারেনি। মনে আছে,
বারীনদা বলেছিল -
"লেখা অনেক রকম , তুই
অন্যরকম লিখিস, কিন্তু
তোর মধ্যেও একটা কৌরব
আছে .." ; বইমেলার মাঠে,
কৌরবের স্টলের সামনে
চেয়ার পেতে , লিটল ম্যাগ
মেলায় লুকোনো হুইস্কির
মধ্যে , ভালোপাহাড়ের
জ্যোৎস্নায় মহুয়ার
জারিকেনের ভেতর - আমি আর
বারীনদা , কত কত আড্ডা,
যা এখন অজানা উড়ন্ত
বস্তু হয়ে গেল ! কতবার
জামশেদপুরের বাড়িতে
ডেকেছে বারীনদা, আমিই
গিয়ে উঠতে পারিনি, এখন
ভাবলে আফসোস আর কষ্ট
হয়। বারীনদা বোধ হয়
একমাত্র মানুষ যিনি
অপেক্ষাকৃত তরুণ
কবিদের বই পড়ে তাদের
উৎসাহ দেবার জন্যে চিঠি
লিখতেন, আমার 'প্রিয় ২৫'
বইটি পরেও একটা দারুন
চিঠি দিয়েছিলেন, শেষে
লিখেছিলেন - "আশীর্বাদ
করি, কবিতায় থাকে
তুই..."..বাংলা কবিতার
একনিষ্ঠ , লড়াকু সৈনিক ,
অপর ধারার কবিতাকে
এগিয়ে নিয়ে যাবার
জন্যে, লিটল ম্যাগ
মুভমেন্টের জন্যে
বারীনদা যা করে গেছে,
ভোলার নয়। টেলকোর
নিশ্চিন্ত ,
হাই-প্রোফাইল কর্পোরেট
জীবন ছেড়ে বারীনদা ঝাঁপ
দিয়েছিল কবিতা এবং
আনুষঙ্গিক নানা
কর্মকান্ডে - রুক্ষ
পুরুলিয়ার বুকে
'ভালোপাহাড়'-এর মতো এক
চিরসবুজ দ্বীপ তার
মধ্যে অন্যতম। আদিবাসী
বাচ্চাদের জন্যে স্কুল,
হাজার হাজার গাছ -
'ভালোপাহাড়' এক অন্য
পৃথিবী যা অতি যত্নে
গড়ে তুলেছিলেন বারীনদা
আর কমলদা , কমলদা কতটা
একা হয়ে গেলেন, বুঝতে
পারি।
ইস্ট সিংভূমে সন্ধে
নেমে আসছে, ঘরে ফিরছে
পাখিরা , হিমেল বাতাসে
ভেসে যাচ্ছে বারীনদা ,
'অতিচেতনা'-র দেশে চলে
যাচ্ছে, পরনে সেই
পরিচিত লাল-কালো
ফুলহাতা চেক শার্ট ,
মুখে হাসি…বলে উঠছে -
"পলাশমেলায়
ভালোপাহাড়ে আসিস.."
অনেকটা ভালোবাসা আর
সাহস দিয়ে গেছো বারীনদা
, ভালো থেকো , কবিতায়
থেকো।
---------------------------------------------