“ ভুল সবই ভুল
এই জীবনের পাতায় পাতায়
যা লেখা সে ভুল .. .”
না না প্রথমেই আপনার
ভুল ভেঙে দিই , এটা খুব
সিরিয়াস লেখা নয় । মানে
এমন নয় যে পাতায়
পাতায় , পরতে পরতে
জীবনের ভুলগুলি তুলে
ধরে ঠিক ধরে ফেলব কোনটা
ঠিক আর
কোনটা ভুল । মানে আমি
ভুল ঠিক ঠিক করার কে ? যা
হচ্ছে বা যা হবে
সেক্ষেত্রে তো আমি
নিমিত্ত
মাত্র , দায় নিতে পারি
কিন্তু দায়িত্ব কেন
নিতে যাব বলুন তো ।
পাঠকদের সুবিধার জন্য
জানিয়ে রাখি যে অতল
জলের আহবানের এই গানটি
সবাই ভুল করে ভাবে যে
গীতা দত্তের গাওয়া ,
আসলে সুজাতা চক্রবর্তী
নাম্নী অভিজিতের পিসি
ভদ্রমহিলা গেয়েছিলেন ।
কিন্তু সত্যি বলতে কি
ভুলকে ভুল বলা বা ঠিককে
ঠিক বলার মতো অবস্থায়
কি আমরা পৌঁছেছি ? মানে
এই যে শাহরুখ খান কোলে
তুলে নাচাগানা করলেন তা
ভুল না ঠিক ? এই যে সারা
ভারতবর্ষ যুক্তি করে
নরেন্দ্র মোদীকে
প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে
ছেড়ে দিল সেটা ? অথবা
ওভালে ছয় ব্যাটসম্যানে
খেলার দুর্যোধনোচিত
সিদ্ধান্ত ? অথবা
সংরক্ষণকে বছর বছর
নির্বাচনের ভোটবাজীর
মোড়কে মুড়ে
ল্যাবেঞ্চুস হিসাবে
পেশ করা ? অথবা উন্নয়নের
নামে মনরেগার মতো
স্কিম? বা ফুড
সিকিউরিটি ? অথবা
অ্যামেরিকার ইরাক ছাড়া
আর তার পরে পরেই আবার
হামলা করা। হামাসের
ছায়াযুদ্ধ আর
ইজরায়েলের
রোডরোলার ? সঠিক অর্থে
কোনটা ঠিক ? ভগত সিং
স্বাধীনতা সংগ্রামী
নাকি উগ্রপন্থী ?
পরিপ্রেক্ষীর
পরিবর্তনে ভুল ঠিক হয়ে
যায় আর ঠিক ভুল ।
আরে দাঁড়ান দাঁড়ান !
করছেন কি মশাই ? এ তো
মশাই মারতে কামান দাগতে
শুরু করেছেন ? সেই একটা
চুটকি আছে না ? অরুণ
জেটলীর স্ত্রী তাঁকে
খেজুরে প্রশ্ন করায় বকে
দিয়েছেন খুব - কি খালি
একই প্রশ্ন কর রোজ রোজ !
আমি এখানে
গুরুত্বপূর্ণ কাজ করি ,
অর্থমন্ত্রী ইত্যাদি ।
তখনই জেটলী পত্নী
বোমাটা ফেললেন - আচ্ছা
তাহলে বল রেপোরেট বাড়া
উচিত না কমা ? ইজরায়েল
হামলা করে ঠিক করেছে না
ভুল ? ইত্যাদি এবং
প্রভৃতি ! আর তাতেই তো
জানা গেল যে অরুণ জেটলী
মধ্যাহ্ন ভোজনে ডাল
রুটি চিবোন , আর খামোখা
এসব জামাই ঠকানো
প্রশ্নের উত্তর দেবার
চেষ্টাও করেন না ।
তা যাই হোক , মোদ্দা কথা
হল কত্তা , এই ভুল আর
ঠিকটা ঠিক করে কে ? মানে
রাষ্ট্রপুঞ্জের
নিরাপত্তা পরিষদের
বিশিষ্ট কোন গোপন সভায়
কি ঠিক হয় যে গোপাল বড়
সুবোধ ছেলে , সে কানাকে
কানা বলে নি আর খোঁড়াকে
খোঁড়া বলে নি বলেই সে
ঠিক আর রাখাল সরল মনে
কাস্তেকে কাস্তে বলে
ভেবেছে যে নিজের বাস্তব
সম্পর্কে তাকে অবহিত
করেছে আর সেটাই ভুল ?
হল না হল না ! ফেলু
মিত্তিরও “ মিসটেক ,
মিসটেক ” করে চার চক্কর
লাগিয়ে নিয়েছিলেন আর
আপনি তো সাধারণ হারাধণ
চক্কোত্তি আর আমি হরিপদ
কেরানী ।
তাইলে কি করা যায় বলুন
তো ? রামবাবুর আমবাগানে
মধুবাবুর প্রিয়তম অজটি
অজ - শুলভ কাজ করিয়াছে
বলে রামবাবু মধুবাবুকে
ধরে যারপরনায় বকা
লাগিয়েছেন আর মধুবাবু
তাতে রেগে মেগে অজটিকে ,
“ ছাগল ” বলে গাল পেড়ে
দুদিন খাওয়া বন্ধ
রেখেছেন । তবে এমন কোন
নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে
না যে মধুবাবুর ছাগল আর
গাল খাবে না ! কারণ
কাঁঠাল পাতা তার
দুর্বলতা আর রামবাবুর
বাগানের কাঁঠাল পাতার
ভুবন জোড়া নাম ।
বহুবছর আগে এক জায়গায়
পড়েছিলাম জীবনে ভুল
সিদ্ধান্ত বলে কিছু হয়
না , সেই সিদ্ধান্ত সেই
সময়ে নেওয়া হয়েছিল কারণ
তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে
সেটাই ছিল ঠিক , পরে
সিচুয়েশন আর হালাত বদলে
গিয়ে তালে গোলে মালে
গেছে ভুল হয়ে । তা সে
কথাটা কিন্তু ভুল নয় ! এই
দেখুন, নিজেই বিচারে
বসে গেছি ! তার থেকে
এভাবে ভেবে নিই না কেন ,
সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে
যাহা ঠিক তাহাই
সার্বজনীন ঠিক হিসাবে
পরিচিত । আর মিসটেকের
গোড়ার কথাতেই রয়ে গেছে
ভুলের আখাড়া ।
সেই যে অমিতাভ বচ্চন
অবস্থার ফেরে নিজের
ভাইকে বলেছিল সেই
লোকটার সাক্ষর আনতে , যে
ওর হাতে লিখে দিয়েছিল , “
আমার পিতা
তস্করচূড়ামণি ” । সে কি
আর এমনি এমনি বলেছিল ?
সাদা কালো দিয়ে তো আর
জীবন হয় না । দাবার
বোর্ডের রঙগুলি
বাস্তবে এদিক ওদিক থেকে
উড়ে এসে মিশে যায় এক হয়ে
নতুন পথের বাঁকে ।
আলাদা করা যায় না যে ,
সাদাকে সাদা কালোকে
কালো বলিও না । দুধে
আলকাতরা মিশে গেলে যে
কে বড় আর কে দর তার হিসাব
হারিয়ে যায় । যুদ্ধের
বন্দরে জার্মানির
জাহাজ ভরাডুবি হলেই ভুল
আর মিত্র শক্তি জাঁকিয়ে
বসে সত্যের সফেদ চাদরে
ঢাকা সিংহাসনে ।
আহা , “ তুমি মহারাজ সাধু
হলে আজ আমি আজ চোর বটে! ! ”
রাবণকে মনে আছে , রাবণ ?
সেই যে সেই রামায়ণের
বৃদ্ধ রাজা , যে
ভগ্নীনিগৃহের বদলা
নিতে গিয়ে আর্যপুত্রের
স্ত্রীকে অপহরণ করেছিল
। তা, সে তো ভদ্র ছিল না ,
তার সোজা মাথায় ওটুকুই
ঢুকেছিল । খুন কা বদলা
খুন , নাক কা বদলা নরুণ !
আহা তারপর সীতার প্রেমে
হাবুডুবু খেয়ে ভাইয়ের
দুনম্বরির চোটে জান মাল
সকলই খোয়ালো । অথচ সেই
অবস্থার ফেরে , রাম হয়ে
গেল ভগবান ! আহা কি ভগবান
বাওয়া ! বালীর কাছে
পাত্তা পাবে না বলে
পিছন থেকে ছোরা মেরে
সুগ্রীবকে রাজা বানিয়ে
ছেড়ে দিল । নিকুম্ভিলা
যজ্ঞে অপরাজেয় হয়ে যাবে
বলে যুদ্ধের সমস্ত
ভদ্দরলোকের চুক্তিতে
বাড়ি মেরে
বিশ্বাসঘাতকের
সহায়তায় ভাই পাঠিয়ে
গুপ্ত হত্যা করালো
ইন্দ্রজিতকে । রাবণকে
হারিয়ে টারিয়ে দিয়ে
বিশ্বাসঘাতক বিভীষণের
সঙ্গে বৌদির বিয়ে দিয়ে
রাজ্যপাট হাতে ধরিয়ে
দিল । তা সে যতই অযোগ্য
হোক না কেন ! তারপর যার
জন্য এতকিছু সেই বৌকেই
শুধুমাত্র পাড়ার লোকের
কথায় আগুনে পুড়িয়ে
মারতে গেল । আর সদ্য
বিবাহিত ভাইকে
ভাতৃবধুর থেকে আলাদা
করা বা শূদ্রকে বেদ
পাঠের অপরাধে
মৃত্যুদণ্ডের কথা বলে
আর পাপের বোঝা ভারী করি
কেন বলুন ?
কিন্তু ওই যে আছে না ? “
কিষ্ণ কললে লীলা আর
আমরা কললে বিলা ”
সেখানেই তো মানব জাতি
ফেঁসে গেল । অ্যামেরিকা
দাদা ভীষণ বলশালী ,
আমাকে নিয়মিত
ল্যাবেঞ্চুস দেয় বলে
তার বন্ধু
প্যালেস্টাইনের উপর
দিয়ে চিনে বাদাম চাষ
করলেও আমরা ট্যাঁ ফোঁও
করি না । চোখ বুজে হুম
হুম শব্দে কর্ণবিদারণ
করি ।
আহা , আমরা বলি সত্য বচন
তোমরা বল ঘেঁচু
আমরা নাচি শিবের নাচন
তোমরা কাঁচুমাচু !
আমরা খাব মণ্ডা মিঠাই
তোমরা কাঁচা কলা
আমরা চিবোই মুর্গির
ঠ্যাঙ তোমরা পাবে গলা !
আমরা যতই হাসতে থাকি
তোমরা ততই কাঁদো
আমরা সাধু সন্ত হলে
তোমরা গল্প ফাঁদো ।
আরে আর কে নারায়ণের
রাজু গাইড বলেই তো গেছে ,
“ বাস ম্যায় হি ম্যায়
হুঁ বাকি সবই হাওয়া ”
তাই সত্যি বলতে কি এই
দুনিয়ায় আমি যে বেঁচে
আছি আর হাওয়ায় খাবি
খাচ্ছি সেটাই পরম সত্য
আর বাকি সব ধোঁয়া । অর্থ
যশ ধন সম্পত্তি আজ আছে
কাল নেই , জন্ম মরণ খেলায়
দুঃখ সুখের মিলন মেলা
সবই তো মিথ্যা ।
ক্ষণিকের অথিতি । শুধু
আমার আমিকে চিরদিনের
জন্য ভাসিয়ে রেখে বাকি
সব ভুলে যাওয়াই ঠিক । কে
ভুল কে ঠিক, কি ঠিক কি
ভুল সব ভুলে যাই শুধু
ভুলি না পৃথিবীতে এসেছি
মানুষ হয়ে বাঁচতে ।
সেটাই আমার একমাত্র
উদ্দেশ্য , বিধেয় কার্য
কারণ পরিণতি ।
আরে এমন মানব জনম আর কি
হবে ?
মন যা করবার তরাই কর এ
ভবে !
তাই প্রশ্নটাকে দাঁড়
করাই ভুল আর ঠিক এই দুই
পৃথিবীর মাঝখানে। যে
দুই পৃথিবী বিকল্প
বিশ্ব মনন হাতে ধরিয়ে
দিয়ে যায়। অল্টারনেট
ইউনিভার্স। যা চোখের
সামনে দেখছি তা এই আছে
কিন্তু আদতে নেই। কিছুই
নেই। সময় স্থান কাল
পরিবর্তনে নেই হয়ে যায়
আছে আর ভুল ঠিকের
সংজ্ঞা যায় গুলিয়ে।
“গুল গুল সবই গুল,
তোমার চিঠির পাতায়
পাতায়
যা লেখা সে গুল...।”
আচ্ছা বিষয়বস্তুটা কি
ছিল বলুন তো? ভুল? না ঠিক?
কে জানে! সবই তো কেমন গুল
মনে হচ্ছে। যাহা ঠিক
তাহাও গুল যাহা ঠিক নয়
তাহাই কি ভুল? এহেহে সবই
ঘেঁটে ফেললাম দেখছি!
আসলে সত্যি কথাটা হল,
আমি না এদ্দিন নিজের
ফেকু জন্ম পেরিয়ে এসেও
ধরতে পারলাম না কোনটা
ঠিক আর কোনটা ভুল! তাই
করছি কি ভুলটাকে ছেড়ে
দিয়ে ঠিকটাকেই ধরে
রেখেছি। সেই নবাব সাহেব
ছিলেন না? যিনি এক চোখ
দিয়ে দুটো বল দেখতেন,
কিন্তু শিখে ফেলেছিলেন
বাইরের বলটা ছেড়ে দিয়ে
ভিতরের বলটা খেলার
গুরুমন্ত্র। সেটাই
চেষ্টা করছি। আপনারা
বলতে পারবেন কি? সেটা
ঠিক না ভুল?