ভগবান অতি সন্তর্পণে
তার বুটিকে
এক্সক্লুসিভ এক পিস
করেই সৃষ্টি
করেছিলেন ! কিন্তু
তাতেও কি রক্ষা আছে !!
ভগবান আমার মত ‘ঘেঁটে
ঘ’ করা কিছু মানুষও
সৃষ্টি করেছেন ! উদোর
মুখ বুধোর ঘাড়ে চাপাতে
আমি ওস্তাদ ! প্লিজ
হাসবেন না ! মাইরি বলছি !
চকোলেট হিরো ফারদীন
খানের সাথে আমার ডান্স
টীচার ঊর্মিমালাদির
প্রবল সাযুজ্য ! কি !!
চোখের মিল নেই ! থুতনিটা
দেখুন ! অবিকল এক !
ডানকানের লতিটা দেখুন !
ঠিক ঐ রকম ! এসব সুক্ষ্ম
ব্যাপার মশাই ! আপনি
বুঝবেন না ! এ হোলো
জহুরীর চোখ !
এ হেন জহুরীর চোখে আমি
আজন্ম রাহুলের পিসিকে
পারুলের মাসি বানাই ,
অমিতার জামাইবাবুকে
সুমিতার নাতজামাই করে
ফেলি ! এক বার নয় দু বার
নয় , টাইটানিক দেখার মত
বারবার ! বারবার আমি ঐ
প্রকারের বেঠিক কাজ করে
থাকি ! এই না! প্লিজ ! ভুল
বলবেন না ! সন্মান দিয়ে
কথা বলুন ! ভুলটা শুনতে
কেমন যেন ইসে ইসে লাগে !
যতই হোক দুশো ছয়টা
অস্থি আমার ,
অ্যাপেন্ডিক্সও
লুপ্তপ্রায় , জন্মের
সময় ল্যাজ খসে গেছে !
কাজেই ভুল বলবেন না দয়া
করে ! মানুষমাত্রে হয়
বটে তবে মানুষমাত্রে
স্বীকৃতও নয় !
ইদানীং আরেক ধরনের
বেঠিক কাজ পিছু নিয়েছে
আমার ! আপাততঃ সমস্যাটা
মাছির মত উড়ে উড়ে ঘুরে
ঘুরে বসছে নাকের ডগায় !
লোকটাকে কোথায় যেন
দেখেছি ! মরুভূমির
মধ্যে একটুকরো
মরুদ্যানের মত জেগে
উঠছি আমি ! আমার চারপাশ
যেন স্নিগ্ধ খেজুর গাছ !
আমার অন্তঃস্থল এক
টলটলে
জলাশয় ! না না ! আমি ভাবছি
না ! ঐ লোকটা ভাবছে ! আর
ভেবে ভেবে দূর থেকে
ভীড়ের মধ্যে হাত নাড়তে
নাড়তে এগিয়ে আসছে !
এ কে রে বাবা !!! পাড়ার
মুদিখানা না কি স্টেশন
রোডের মুদিখানা ?
দোকানদারদের সাথে কুশল
বিনিময়ের অদ্ভুত রসায়ন
আমার ! অর্থাৎ
মাছওয়ালাকে ‘মা তারা
বস্ত্রালয়’ এ দেখলে
চিনতে পারিনা ! হাতে
পেল্লায় গোব্দা কাতলা
ধরিয়ে দিন সামনে
রাক্ষুসে বঁটি ! ব্যাস !
এক সেকেন্ডে চিনে ফেলব !
কিংবা ধরুন মিষ্টির
দোকানদার যদি
সিগন্যালে আটকে থাকে
তাহলে ব্যাপারটা
দাঁড়ায় এরকম যে বাকী
লোক অপেক্ষা করে
সিগন্যাল সবুজ হলেই
রাস্তা পার হবে আর আমি
অপেক্ষা করি
স্মৃতিশক্তি ফেরার !
সিগন্যাল সবুজ
হয় ! লোকটা রাস্তা
পেরিয়ে দূরে চলে যায় ...
আরও দূরে ... বিন্দু হয়ে
মিলিয়ে যায় ! আমি তখনো
আটকে আছি লাল বাতিতে !
মনের ভেতর ফলুই মাছের
কাঁটা বিঁধতে থাকে ...
কোথায় যেন দেখেছি
লোকটাকে ! কোথায় যেন
দেখেছি লোকটাকে !
‘আপনি এখানে দিদি ?’
রুবি হসপিটালের
ফার্ষ্ট ফ্লোর ! ছেলেটা
এগিয়ে এল ! যথারীতি আমার
ভুলভুলাইয়া সিন্ড্রোম
শুরু ! কিন্তু হলে হবে কি
! আমার দিদিমা বলতেন ‘
ভাংবে তবু মচকাবে না’ !
দু পেয়ের জাত আমি ডলফিন
হলে আরো কি কি করত জানা
নেই ! স্মৃতি যাক চুলোয় !
ফেসবুকে তো কত লোককে না
চিনে এন্তার গেঁজিয়ে
যাই ! কুশল জানতে
আটকাচ্ছে কোথায় ! নিজের
মুখের ভৌগলিক অবস্থান
অক্ষুণ্ণ রেখে প্রাচীন
ইতিহাস একটুও না ঘেঁটে
বললাম এই আমার পিসতুতো
দিদি ভর্তি আছে ! তা
তুমি এখানে ? দু এক কথায়
বুঝলাম ছেলেটির মা
ভর্তি ! হার্ট অ্যাটাক !
ছেলেটা অনেক কিছু বলে
যাচ্ছে ! কিন্তু শ্রোতা
কে? আমি তো পুরোনো
ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে
কাঁথা , ন্যাতা , তুলো
বের করা বালিশ হাতড়ে
চলেছি ! এই মূহুর্তে আমি
শক্তিপদ স্যারের
ক্লাসের সেই অমনোযোগী
ছাত্র ! ‘ এই তুমি !
দাঁড়াও তো ! বলোতো হোয়াট
ইজ লার্নিং ?’ ছেলেটা
থতমত ! কিচ্ছু শোনেনি !
স্যার বললেন ‘ আমি
তোমার চোখ দেখেই বুঝেছি
! অমন নির্লিপ্ত মরা
মাছের চোখ আর যাই হোক
জ্ঞান আহরণ করছে না এটা
পরিষ্কার আমার কাছে’ !
আহারে বেচারী ছেলেটা !
ওর শক্তিপদ স্যারের মত
চোখ নেই ! ও জানেও না আমি
এখন ওকে চেনার চেষ্টায়
বিভোর ! হেল্প ডেস্ক
থেকে মহিলাকন্ঠ ভেসে
আসে ! ‘দুশো বারো নম্বর
এর বাড়ির লোক কে আছেন ?”
ছেলেটি সচকিত ! যাই দিদি
! ওরা ডাকছে ! ঘাড় নাড়লাম !
ছেলেটি মিলিয়ে গেল ভারী
দরজার ওপাশে ! আর ঠিক
ততটাই ভারী দরজা চেপে
বসল আমার মনের ওপর !
ইসস্ ! কোথায় যেন
দেখেছি ছেলেটাকে !
কোথায় যেন দেখেছি ! লাট
খাওয়া ঘুড়ির মত ওলট
পালট হয়ে হেল্প ডেস্কে
পৌঁছোলাম ! নার্স
জানালো ডাক্তারবাবু
রাউন্ডে আসতে আরো আধ
ঘন্টা ! অতএব স্বল্প
প্রস্থের ইস্পাতীয়
কেদারায় হেলান দিয়ে
বসলাম ! ক্ষুদ্র মোবাইল
ভরসা ! ‘ব্রিক ব্রেকার’
গেমটি চমৎকার টাইম পাস !
পাসোয়ার্ড দিতেই চক্ষু
চড়কগাছ ! চার্জ এসে
তলানিতে ঠেকেছে !
অনেকটা আমার মতই দশা !
কাজেই গেম নৈব নৈব চ !
এদিক ওদিক তাকালাম !
বয়সের টুপিতে পালক
বৃদ্ধির সাথে সাথে
হসপিটালে আসার
অভিজ্ঞতাও
চক্রবৃদ্ধিহারে
বেড়েছে ! অদ্ভুত এক
ছোঁয়াচে রোগের মত এই
হসপিটালগুলো ! রোগী হয়ে
ঢুকলে চরম অসুস্থ লাগে
আর রোগীর আত্মীয় পরিজন
হয়ে ঢুকলে স্বল্প
অসুস্থ লাগে ! মোদ্দা
কথা অসুস্থতাটা ‘আপনি
থাকছেন স্যার’ এর মত !
স্যাভলন , স্পিরিট , হুইল
চেয়ার , লিফটে শায়িত
অচৈতন্য রোগী , চারপাশে
রেড ক্রশ সব মিলে যেন
একটা ভয়ঙ্কর
ক্যানসারের মত
অপ্রতিরোধ্য হয়ে চেপে
বসে ! দূর ছাতা ! শেষমেষ ঐ
ভারী ভারী মেডিক্যাল
জার্নালগুলোই ওল্টাতে
হবে ! টেবিলের তলা থেকে
ধুলো ঝেড়ে বইটা টানতেই
মনে পড়ল ! ‘ইউরেকা !
চিনেছি ! চিনেছি ! নাহ
চেঁচাচ্ছি না ! এখনও
অতটা ভীমরতি হয়নি ! এটা
হসপিটাল ! ঐ যে দরজায়
লেখা ‘কিপ সাইলেন্স ‘ !
সে যাই হোক ! চিনেছি তো !
‘জগদ্ধাত্রী বুক হাউস’
! ঐ বইএর দোকানেই তো বসে
ছেলেটি ! ও না বললে তো
জানতামই না জয় গোস্বামী
এত ভাল গল্প লেখেন ! জোর
করে ধরিয়ে দিয়েছিল ‘
দাদাভাইদের পাড়া ’ ! ‘
দিদি নিয়ে
যান ! পড়ে বলবেন ’ !
‘ আহারে ! বেচারীর
ফ্যামিলিতে সঙ্গী বলতে
ঐ বৃদ্ধা মা ! ’ এতক্ষনে
আমার প্রকৃত হর্মোন
ক্ষরণ শুরু হোলো ! উফফ্
এতক্ষণে ভারী পাল্লাটা
সরলো ! প্রাণ ভরে
অক্সিজেন নিলাম !
বন্ধুবান্ধবদের আজকাল
ভয়ে জানাই না এসব ! বয়সের
দোষ বলে এমন খ্যাক
খ্যাক করে হাসে দেখে
পিত্তি জ্বলে যায় ! একজন
তবু অন্ধের মধ্যে ঝাপসা
! বিজ্ঞের মত কাউন্টার
পার্টে টান দিয়ে বলল
‘থাইরয়েড ! থাইরয়েড !
আমার মায়ের সেম কেস !
খালি ভুলে যেত ! শুরুতেই
হান্ড্রেড ডোজ চার্জ
করল ডাক্তার’ ! হিসেব
কষলাম ! মাংস , মিষ্টি
,আলু , মুসুরডাল ! নাহ !
কোনটাই বাদ পড়ছে না !
অতএব ‘ জয় মা’ নাম নিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ত
পরীক্ষা !
হ্যাঁ ! ঠিক ! বন্ধু তো নয়
যেন চলমান বেদ ! নাকের
ডগায় চশমা এঁটে খসখস
করে দু কলমে আমার সারা
জীবনের হিসেব কষে দিলেন
ডাক্তারবাবু ! ওষুধ
খাওয়ার একটাই শর্ত !
ভোলা চলবে না ! মনে করে
একটা ডোজ খালি পেটে
সকালে ! যাহ্ কেলো ! এটা
কি হোলো ! একটু আধটু
ভুলের মাশুল আমৃত্যু
গুনতে হবে ! এই যাহ্
গুলিয়ে গেল ! মানুষ ভুলে
গিয়ে ভুল করে না কি ভুল
করে ভুলে যায় ! কি
জ্বালাতন ! সে যাকগে !
আটা , বেলন চাকী , উনান
দিয়ে দিলাম ! একটু নিজের
মত করে এপিঠ ওপিঠ সেঁকে
নেবেন !