ইতিহাসের ভুল

জিনাত ইসলাম

" Fall down seven times,stand up eight " চীনাদের এই সাতবার পড়ে যাওয়ার প্রবাদটি কি ভুলের নাকি সাফল্যের উত্তরণের সোপান ? নাকি এই ভুলেই লুকিয়ে আগামীর ভবিষ্যৎ! নাকি এই ভুলের নাম অন্ধগলি , চোরাবালি । নাকি সেই অজানা আতংকের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের সঙ্গে আলিঙ্গনের গা শিরশির করা ভয়ের দোসর এই ভুল । ভুল কে না করে ? কিন্তু ভুলের বিজয়পতাকা ক'জন বুক ফুলিয়ে ওড়াতে পারে ?
নেপোলিয়ন থেকে রুজভেল্ট , আইনস্টাইন থেকে আল ফ্রাস্কেন , অস্কার ওয়াইল্ড থেকে সিসেরো সকলেই ভুলের দেবতাকে আবাহন করেছেন ভোরের আকাশের সূর্যের অনিবার্যতঠর মতো করে । রুজভেল্ট তো মানব সম্পাদিত বিরাট কাজের মধ্যেই ভুলকে রেখেছিলেন এমনি করে "The only man who never mistake makes a mistake is the man who never does anything "
আল ফ্রাস্কেন বললেন " Mistakes are part of being human. Appreciate your mistake. " আইনস্টাইন বললেন " Anyone who has never made a mistake has never tried anything
new " ভুল কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পৃথিবীর চাকা ঘুরতে থাকল দোর্দণ্ডপৠরতাপ সফল মানুষদের হাত
ধরে । আবার তুর্কীরাও এগিয়ে এলো ভুলের সান্ত্বনা নিয়ে , " No matter, how far you have gone , on the wrong road turn back ." শুধু অর্দ্ধসফল, অসফল মানুষেরা ভুলের পাহাড়ে আটকে
থাকল । মুখরিত হতে থাকল মধ্যবিত্তৠর রাতের নৈঃশব্দ্য, গোঙানি , কাতরানি আর দীর্ঘনিঃশৠবাসে ।

এবার যদি ভুলের এক টাইম মেশিনে বসিয়ে দিই পাকিস্তানৠর রূপকার জিন্নাহ ও আধুনিক ভারতের নির্মাতা রামমোহন রায়কে , তবে কি ভুল বিজয় তিলক মহিমান্বিত হবে? নাকি ঘন কালো মেঘে মুখ লুকাবে ?

তবু দেখিনা চলমান ভুলের হরেক মিছিলে কোনটি স্থান পেয়েছিল মনীষীদের ফেস্টুনে । কার উত্তোলনে পরাজয় স্বীকার করেছিল সত্য , কেঁদেছিল বিচারের বাণী , ফেটেছিল ধরিত্রীর
বুক , হেসেছিল চিরশত্রু বারংবার ।

" We Muslim and Hindus never interdine ,.We do not intermarry , our national custom, calendar even our diet, dress are different "
আজকের দিনে এই তত্ত্বটি ভুল এবং হাস্যকর। অনেক ক্ষেত্রেই অবজ্ঞাসূচঠ• । কংগ্রেস আর নেহেরুর কাছেও জিন্নাহর এই উক্তি গুরুত্বহীঠ¨ ছিল । কংগ্রেসের নেতা ও নেহেরু জিন্নাহ ও মুসলিম লীগ নিয়ে এই মত পোষণ করতেন "small upper class organization controlled by feudal element,No influence on muslem mass "
কিন্তু অবশেষে এই ভুল বোঝাবুঝি জন্ম দিয়েছিল আর একটি ভুলের যার নাম ভারতের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ পাকিস্তানॠজিন্নাহ হিন্দুদের অত্যাচার ও বঞ্চনার যে আবেগ কে মুসলিমদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্যবহার করতে পেরেছিলেন তাতে বিজয়ী হয়েছিলেন । গান্ধীজীর অহিংসা ভারতকে স্বাধীনতা এনে দিতে পারেনি ।কিন্তু জিন্নাহর সাম্প্রদায় িক বিশ্বাস ও প্রতিহিংসঠএকটি ভুল দাবিকে প্রতিষ্ঠা করেছিল ইতিহাসে ।মুসলিম সমাজে হিরো হয়ে উঠেছিলেন জিন্নাহ । তিনি ছিলেন ফাইটার । এই ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকার করতে গিয়ে বিজেপি নেতা আডবানীকে রোষের মুখে পড়তে হয় । আর যশবন্ত সিং এর উপর নেমে আসে কোপ । ছাড়তে হয় তাঁকে পুরোনো সাথী ও দল । এই ভুলের সমর্থনে বিজেপি এগিয়ে আসে দলের নীতি ও বিশ্বাসের মানদন্ড নিয়ে । সেই জিন্নাহর মুসলিমদের বিশ্বাস অর্জনের
মত । বক্তব্যের সমর্থনে মাথা হাজির । মত পথকে বিশুদ্ধ বিশ্বাসে পরিণত করা । হোক না তা নিরাধার বা সংস্কারের মত অস্পষ্ট দোদুল্যমাঠকিছু একটা ।

একটি অর্দ্ধবৃতৠতাকার বা পূর্ণ বৃত্তাকার পরিধির মধ্যে আটকে থেকে গেছে এই মহান নায়কদের পদচারণা । ইতিহাসের উন্মুক্ত আলোয় ছায়াপথ ঘিরে এসেছে হাজারো জল্পনা । কিছু সত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে , কিছু মিথ্যাও ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসে । ঘটনার ধারাবাহিকঠা যদি এমন অভিমুখের নির্দেশনা দেয় যে নেহেরু ভারতের প্রধান ও জিন্নাহ পাকিস্তানৠর প্রধান হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন, কেন না তাঁরা নিজেদের নিয়ে ছিলেন সুনিশ্চিত যে এক দেশে দুই রাষ্ট্র নায়ক থাকতে পারেনা , তাই চাই পৃথক দেশ।তবে কি এমনটাই নির্জলা সত্য ? নাকি অর্দ্ধ সত্য ? নাকি মিথ্যা? মুখোমুখি বসে কি দিতেন কখনও এই à¦¸à§à¦¬à§€à¦•à¦¾à¦°à§‹à¦•à §à¦¤à¦¿ দুই ক্ষমতাশালৠরাষ্ট্র চিন্তকরা ? তাদের ভুল ছিল এটাই তাঁরা আকাঙ্ক্ষা শ্রমিক হয়ে উঠেছিলেন । তখন দেশ, দল, রাজনীতি, দর্শন সব গ্যালারির পিছনের সিটে নিস্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল, প্রাধান্য আর ইচ্ছার প্রতিষ্ঠাঠমুখ্য হয়েছিল।
নেহেরু চায় ভারত আর জিন্নাহ পাকিস্তান । দেশভাগের পর জিন্নাহর দ্রুত মৃত্যু এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় দেশভাগের রূপকারদের উদ্দেশ্য । একটু অপেক্ষা আর একটু ধৈর্য্য কি জরুরী ছিলো ? একটা ভয়ংকর ভুল কি এড়িয়ে যেতে পারত তবে ইতিহাস?
সম্ভাবনার মৃত্যু নেই তাই আলোচনার প্রবেশ দ্বারও দুই হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করতে চায়
সব ঠিক ভুলের অণু পরমাণুকে । স্ট্যাটিক কিছুই নেই । সব এক্স ফ্যাক্টর । মান বদলের অপেক্ষায় থাকে ঠিক ভুলের ইতিহাস ।

" His ideals of womanhood and of man's duty towards them were far ahead of his age and were inspired by the memories of golden age of India. ''
R.C.Majumdar বলেছিলেন রামমোহন রায় à¦ªà§à¦°à¦¸à¦™à§à¦—à§‡à¥¤à ¤à¦¿à¦¨à¦¿ ছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যৠর ভারসাম্য রক্ষার সূত্রধর । এই দুইয়ের সংমিশ্রিত ভাবধারা তাঁকে আন্তর্জাতঠকতাবাদে বিশ্বাসী করে তোলে।
এই প্রেক্ষাপঠŸà§‡ তাঁর সঙ্গে জিন্নাহর অসাধারণ মিল। জিন্নাহ বিশ্বাস করতেন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ৠর টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি পৃথিবীর সর্বত্র সামিল , রামমোহন ও পৃথিবীর সর্বত্র স্বাধীনতাঠদাবিতে ছিলেন আন্তরিক ভাবে সামিল ।
জিন্নাহ যেমন মুসলিমদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন ও তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মরিয়া ছিলেন তেমনিই রামমোহন নারীর শিক্ষা, বিবাহ ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষায় সংগ্রামী ছিলেন । তাঁরা নিজেদের ক্ষেত্রে কখনো কম্প্রোমাঠ‡à¦œà§‡à¦° অবকাশ রাখেননি।

রামমোহন সমাজ সংস্কারের যে আদর্শ অনুসরণ করেছিলেন এবং যে দুর্গম পথ তিনি প্রবল প্রতিরোধেঠ° সঙ্গে অতিক্রম করেছিলেন তার দিকে আলোকপাত করলে পরাস্ত হয় সব সমালোচনা । তবু তাঁর কিছু ভুল অভিমত ও পদক্ষেপ থেকে দৃষ্টি সরায়নি ইতিহাস । দেশের আধুনিকতার রূপকারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাঁর সামাজিক সাম্য ও মানবিকতার , ভাবনার সততার মূলধনকে । বলা হয় " Ray's intellectual and spiritual roots have been misunderstood even by those who have been most lavish in their praise "

সতীদাহ নিয়ে তিনি বিচলিত হয়েছিলেন ভারতীয় নারীদের দুর্দশা দেখে নয় তাঁর মা এই কুপ্রথার শিকার হয়েছিলেন তাই,এমন করেই আক্রমণে শানিত করা হয় তাঁর ত্যাগবাদ ও প্রাতিষ্ঠা নিক à¦•à§à¦¸à¦‚à¦¸à§à¦•à¦¾à¦°à ‡à¦° বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের পরিক্রমণকৠ‡à¥¤

কে জানত রবীন্দ্রনঠথের "ভারত পথিক " আখ্যায়িত মানুষটি তাঁর অস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্ঠি ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণে অপারগ বলে অভিযুক্ত হবেন সময়ের তরঙ্গে।

à¦¬à§‡à¦¨à§à¦Ÿà¦¿à¦™à§à¦•à ‡à¦° সতীদাহ নিয়ে পদক্ষেপকে রামমোহন আন্তরিকতাঠ° সাথে গ্রহণ করতে পারেননি এমন একটি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে সতীদাহ প্রথা বন্ধের à¦‰à¦¦à§à¦¯à§‹à¦•à§à¦¤à¦¾à •à§‡ । তাঁর নির্ভীক মননশীলতা ও চিন্তার স্বচ্ছতাকৠ‡ অবলীলায় চ্যালেঞ্জ জানাবে তাঁর জীবনবোধ ও ব্যক্তিচরৠচার অঙ্গন ।তাঁর উপবীত ধারণ ও ব্রাম্ভন পাচক সঙ্গে নিয়ে লন্ডন যাত্রা তাঁর হিন্দু রীতিনীতি,à¦­à ‡à¦¦à¦¾à¦­à§‡à¦¦à§‡à¦° à¦…à¦¯à§Œà¦•à§à¦¤à¦¿à¦•à¦¤à ¾ নিয়ে আন্দোলনকে প্রশ্নের মুখে এনে হাজির করে।
রামমোহনের ব্রাম্ভসভা উদ্বোধনে ব্রাম্ভনদৠর পৃথক ঘরে বসানো তাঁর বেদান্ত দর্শনের ভাবনাকে ভ্রান্ত দর্শনের উপাসনা বলে চিহ্নিত করে। রামমোহনের মানুষের হৃদয় জয়ের ধর্মীয় শাস্ত্রের ব্যাখ্যা তাঁর ভুল না কৌশলকে অগ্রগামী করে তা বিতর্কিত কিন্তু এখানে তিনি à¦†à¦‡à¦¨à¦¸à§à¦Ÿà¦¾à¦‡à¦¨à ‡à¦° প্রকৃত শিষ্য।ভুল তাঁকে নতুন অনুসন্ধানৠপ্রবৃত্ত করে।তাঁর ভুলটি তবে আসল ভুল যা থেকে শিক্ষা পাওয়া গিয়েছিল। তাই তিনি জন পাওয়েলের দিশারী ।

এমনি করেই উত্তরাধুনঠক যুগেও চলছে ভুলের পূজা । যুব সমাজের কানে ফিসফিস , " take chances, make mistakes, that how you grow ..... "

ভুল স্বীকারের যে লজ্জা, অনুতাপ, সঙ্কোচ তার অনেকটাই আজ গর্ব ও সাহসীকতার প্রদর্শনেঠস্থান নিয়েছে। কিশোর কন্ঠস্বরে একযোগে ধ্বনিত হয়েছে, "without mistake how would we know what we had to work on?

অনেক সময় এই ভুল ঔদ্ধত্যের শরিকও হয়েছে । à¦†à¦¤à§à¦®à¦œà§€à¦¬à¦¨à§€à ¤à§‡ ভুলের কথা স্বীকার করা বা ভুলের ওপর থেকে পর্দা সরানো, ব্যক্তি বিদ্বেষ যতই বাড়িয়ে তুলুক না কেন ক্ষণিকের জনপ্রিয়তা লেখকের ঝুলিতে এসে পড়েছেই । আলোড়িত হয়েছে স্তব্ধ জলাশয় একটুকরো পাথরের অযাচিত প্রক্ষেপণৠ‡ । পায়ে পায়ে চলা সময় অবিরাম গেয়ে গেছে , সত্য এক ভুল হাজারের পাঁচালি ।

ভুল মানে দোষের কথা এ এক মধ্যযুগীয় ধারণা । বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিঠপুনরাধুনিঠযুগে চলবে কনফুসিয়াস, পিটার ম্যাকুইলিৠŸà¦¾à¦®à¦¸ , হেনরী ফ্রেডারিক এমিয়েলের জয়গান ।

ভুল আর অসতর্ক পদক্ষেপ , গোপন অলৌকিক এক নীরব গাঁথা নয় যার করুণ আত্মত্যাগৠ‡ বেঁচে যাবে অনেক অপরাধী বা অনেক নামী , দামী অভিজাত সম্মান ।
এই শতাব্দীতে উঠল স্লোগান , বাজল দামামা। "Do not ashamed of mistakes and thus make them crimes "