নতুন রাজার অভিষেক হবে
খবর শোনা গেল। গাঁয়ের
ছেলে বুড়ো মেয়েমদ্দ সে
খবর শুনেই চলল
বনপেরিয়ে-মাঠ উজিয়ে-নদী
সাঁতরিয়ে রাজার বাড়ি।
সবার মুখে একই কথা, নতুন
রাজা অনেক ভালো হবে
আগের রাজার চেয়ে।
আমাদের দেখবে, ঋণ মকুব
করবে, কথায় কথায়
রাজবাড়িতে ডেকে এনে
চাবুক মারবে না।
ঝুমকো রুমকো দুই বোন,
তারাও শুনল সেসব, তারাও
শুনে ভাবল যাই রাজার
বাড়ি। ওদের ঘরে একটা
তোতাপাখি ছিল। ওরা
পাখিটাকে বলল, হীরামন
হীরামন আমরাও চললুম
রাজার বাড়ি। আমরাও নতুন
রাজাকে দেখে আসি একবার।
তুই ঘরটা দেখিস কেমন।
জল দিলাম, দানা দিলাম,
খাস!
তারপর মাঠ পেরিয়ে বন
উজিয়ে নদী ভেঙে দুই বোন
গেল রাজার বাড়ি। রাজার
বাড়ি কি একটুখানি?
পেল্লায় রাজপ্রাসাদ।
কোনটা দেউড়ী কোনটা
দুয়ার, কোনটা কপাট
কোনটা জানালা কিছুই
বোঝার উপায় নেই।
চারদিকে লোকলস্কর,
পাইক, লেঠেল, হাতি, ঘোড়া,
পালকি। ওরা দেখে ভয়
পেল। কোথায় রাজা এখানে?
ওরা ঘুরতে ঘুরতে একদিকে
এসে দেখন একটা সুন্দর
বাগান। জায়গাটা ছিল
নিরিবিলি। ওরা বাগানের
সুন্দর ফুলগুলো দেখে
সেখানে চুপিচুপি ঢুকে
পড়ল। বাগানটা ছিল
যাদুবাগান। ওরা একটা
ফুলের গায়ে হাত দিতেই
হয়ে গেল ফুল। আর রাজাও
দেখা হল না, ফেরাও হল
না।
এদিকে দিনের পরে দিন
যায়। পাখি হীরামন দুই
বোনের অপেক্ষায় থেকে
খিদে তেষ্টায় কাতর হয়ে
পড়ল। সে শুধুই ডানা
নাড়ে খাঁচার ভেতর,
কিন্তু কিছুতেই উড়তে
পারে না।
একদিন হল কি সকালবেলার
আলোর রেখা ঘরে এসে ঢুকে
অবিকল একটা হাতের মত
তার খাঁচা খুলে দিল।
পাখি অবাক হয়ে শুনল আলো
বলছে, যতক্ষণ আমি আকাশে
থাকব ততক্ষণ তুই মুক্ত।
যা উড়ে যা!
সে মুক্তি পেয়ে
মহানন্দে উড়ে বেড়ালো
আকাশে। ফসলের মাঠে ফসল
পেকে হাওয়ায় ঝুমঝুম
করছিল, সেখানে সে নেমে
এলো। ঠোঁটের ডগায়
কুড়িয়ে নিল দানা।
কিন্তু আশ্চর্য তার
ডানার ছোঁয়া লেগে মাঠের
ফসল সত্যি সত্যি সোনা
হয়ে গেল। গাঁয়ের চাষীরা
খুশি হয়ে তাকে ধন্যধন্য
করতে লাগল। কিন্তু দুঃখ
করল দুই বোন রুমকো
ঝুমকোর জন্য। তারা
পাখিকে বলল, হীরামন
তুমি রাজার বাড়ি যাও,
আমাদের দুই মেয়েকে
খুঁজে আনো।
পাখি তাদের কথা শুনে
রাজার বাড়ি গেল। তারপর
একে একে রাজার ঘর, রানির
ঘর, পাকশালা,
চাকরানিদের ঘর কিচ্ছু
বাদ রাখল না সে। কিন্তু
দুই বোনের দেখা পেল না।
সে উড়তে উড়তে বাইরে
এলো। একটা জারুলগাছে
এসে বসল। মন তার খুব
খারাপ। কোথায় হারালো
সেই দুই বোন?
সেই জারুলগাছের তলায়
ছিল রাজার যাদুবাগান।
বাগানে দুটো ফুল পাখিকে
দেখে চিৎকার করে ডেকে
উঠল, হীরামন!
পাখি এদিক ওদিক তাকালো
কিন্তু কিছুই বুঝতে
পারল না। এদিকে বিকেল
হয়ে আসছে। সূর্য নিভে
আসছে। ফুলদুটো আবার
মাথা নেড়ে ডাকল, হীরামন,
হীরামন!
এবার পাখি দেখল দুটো
ফুল তাকে দেঝে হাত নেড়ে
ডাকছে। সে তখন নিচে
নেমে এলো। ফুলদুটো বলল,
আমরা তোমার রুমকো ঝুমকো
আমাদের মুক্ত করে নিয়ে
যাও পাখি। পাখি বুঝতে
পারল না কেমন করে সে
মুক্ত করবে তাদের। তখন
সে ঠোঁটে করে ছিঁড়ে নিল
ফুল আর উড়ে চলল বাগানের
বাইরে। যেই না যাওয়া
অমনি দুটো ফুল হয়ে উঠল
জলজ্যান্ত দুটি মেয়ে।
তাকে পেয়ে পাখি খুব
খুশি হল, মেয়েরাও
মুক্তি পেয়ে খুশি হল
অনেক বেশী।
আলো নিভে গেছে, পাখির গা
থেকে সোনারঙ খসে পড়ছিল
অন্ধকারে। কিন্তু
সেসবে আর তার খেয়াল
নেই। সে চলল উড়ে উড়ে
রুমকো ঝুমকোর পিছু
পিছু।