রঙিন মার্বেল , সাহেব
বুলবুল ও নটিলাস
পাখিটার ঘাড় থেকে ঝুঁটি
সবটাই কালো , অথচ নাম কেন
সাহেব ? সাহেব মানে তো
ফর্সা ...!ফুরুৎ ফুরুৎ
এডাল ওডাল কেমন লাফিয়ে
বেড়াচ্ছে !
ইলেক্ট্রিকের তারে
গিয়ে বসছে , ওর শক লাগে
না ! বৃষ্টিতে ভিজে গা
ফুলিয়ে কেমন ঘাড় ঘুড়িয়ে
ঘুড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছে
মাতব্বরের মতো ।
বৃষ্টিতে ভিজলে ওর মা
ওকে বকে না ... কি ভালো কি
ভালো ! পাখিদের স্কুল
নেই , পড়া নেই বৃষ্টিতে
ভেজা আছে , ডালে ডালে
,তারে তারে ঘোরা আছে ! ...
আমার থেকে বুলবুল ভালো
আছে ...
মাঠের এদিকে অনেকটা
ঝোপঝাড় , এদিকে আসা বারন
। সাপ টাপ আছে নাকি !
কিন্তু ঋজুদা আর
তিতিররা তো আফ্রিকার
জঙ্গলেও চলে যায়
!যেখানে রক্ত খাওয়া
শেৎসি মাছিরা থাকে
!গোরিলা আছে , ব্ল্যাক
প্যান্থার আছে ...
আমাদেরও অভিযান এই
আমাদের আফ্রিকায় , একটা
গুপ্তধন আছে , ননাইয়ের
খবর এইখানেই কোথাও
চিঙ্কুদা তার চাইনিজ
রঙীন মার্বেল পুঁতে
রেখেছে , এইখানেই ... ওই
ঢিপিটাতে ? হতে পারে ,
আমার পকেটে খুরপি ...
বাবার বাগান করার
সরঞ্জাম থেকে লুকিয়ে
পকেটে করে নিয়ে এসেছি ।
খুঁড়ছি খুঁড়ছি ... ননাই
একবার করে উঁকি মেরে
দেখে নিচ্ছে ঝোপের ফাঁক
দিয়ে ,কেউ আসছে না তো !
...কৈ মার্বেল !...মার্বেল
কৈ ! ... হাত ব্যাথা করছে ...
একটা পুরানো বেল্টের
বাতিল বকলেশ উঠে এলো ।
মার্বেল পাওয়া গেল না ,
চিঙ্কুদার চাইনিজ
মার্বেল ...
...ম্যানড্রেকের জাদু
বাড়ির মতো আমারও একটা
বাড়ি চাই , লোথারের মতো
বন্ধুও , টিনটিননের
কুট্টুসের মতো একটা
কুকুর চাই , বেতালের
তুফানের মতো ঘোড়া ...
গুপি বাঘার জুতো চাই.... ।
ক্যাপ্টেন নিমো আমায়
টুপি খুলে দেবে , আমিই
হবো নটিলাসের পরবর্তী
ক্যাপ্টেন। যেদিন
প্রথম সমুদ্রে ডুব দেবো
, মা ফুলকপির সিঙাড়া করে
দেবে...
যৌবন – মৌবন ও পাথুরে
সংলাপ
“ তুমি বলেছিলে তাই ...
পাথুরে পথ রয়ে গেছে
অনায়াসে , এ পথের দুধারে
রডোড্রেনডন নেই !
কৃষ্ণচূড়ার অবিরাম পড়ে
থাকা । জুলাই অগাস্ট
ভিজে ওঠে পায়ের পাতা,
বর্ষাতি ভেদে শরীর
স্বচ্ছ হয়,
চুঁইয়ে পড়ে চিবুক বেয়ে
...কত মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে
পাথরের আনাচে কানাচে
...“
স্কুলছুটদিন , গেরুয়া
বিকেল ...গুনে গুনে তুলে
রাখা সময়ের ম্যাজিক
বক্স । অসংলগ্ন
দিনকালের অন্তহীন
সংলাপ ইথারে জমা হয়ে
হয়ে ফসিল হতে থাকা
কাব্য , এসব জড়িয়ে রয়েছে
নেশার মতো এক কূয়াশা
ঘেরা বনাঞ্চল । শহর
থামেনি , ছুটে গেছে
উর্ধ্বশ্বাস ... কারা
থেকে গেল বন্দরে ,
চ্ছিন্ন ! প্রবাল
দ্বীপের মতো অঙ্গজরা
প্রবাসী ডানা মেলে
একদিন ... একদিন হারিয়ে
গেল !
ফিরে এসো প্রবাল
দ্বীপেরা ! ফিরে এসো
ফসিল কাব্যের সংলাপেরা
...ফিরে এসো অর্বাচীন সেই
সব মুগ্ধতা ... আবার শুরু
থেকে শুরু করি এক্কা
দোক্কা ... সবজে মাঠের
হলদে ফড়িংখেলা ।
অবাধ্য লিলিথ ও
নিষেধের গাছ
বাধ্যতার ...বশ্যতার
উঠোন পেরিয়ে গেছে সেই
কবে ...লিলিথ , প্রথম নারী
। নিষেধ মাড়িয়ে চলে
যাওয়া মেয়েরাই তো
নিষিদ্ধ ...অন্ধকার !
দৈত্য সহবাসে বেড়ে
উঠেছে আত্মস্পর্ধার
অসংখ্য গাথা ।
অন্ধকারের রানী সেতো ,
অর্ধেক আকাশের প্রথম
দাবীদার ! নির্বাসন
থেকে আলোয় এসো লিলিথ !
নিষিদ্ধ গাছ , নিষিদ্ধ
গাছের সে ফল ইভ ও আদমের
কামড়ে পবিত্র হয় নি ,
তোমার বাগানে এনে রেখো
সে গাছ ... প্রতিদিন সে
নিষেধের ফল খাক প্রতিটি
মানব মানবী ।
আদমের সেই শৌখিন পাঁজর
বেজে বেজে উঠুক অদম্য
বাঁশির সুরে , মেয়েরা
মানবী হয়ে উঠুক
নিরিবিলি নিজস্ব আয়নায়
। চলকে যাক সভ্যতার
এযাবত দর্প পেয়ালা ...
ইচ্ছেগুলো পাখনা পাক
তোমার হাত ধরে লিলিথ ,
অবাধ্যতার ,অবশ্যতার
মিছিল জেগে উঠুক এ
পৃথিবীর আনাচে কানাচে –
অলিতে গলিতে ।
আঙ্গারা ও
গন্ডোয়ানা
জুড়ে যাক টেটনিক সব ,
জুড়ে যাক আঙ্গারা ও
গন্ডোয়ানা ল্যান্ড ।
টেথিসের নোনা আদীম
বাতাসে পাল তুলুক
রাষ্ট্রহীন , মহাদেশহীন
পৃথিবীর নাবিকেরা । এক
প্রান্তে থাকুক
মহাসমুদ্র , আর এক পাশে
শুধুই মাটি পাথরের ,গাছ
গাছালির , প্রানীকুলের
মহাচারনভূমি ! রাজা নেই ,
রাজত্ব নেই , সীমারেখা
নেই ... নেই ট্রয়ের যুদ্ধ ,
নেই বাস্তিলের পতন ...
নেই অসউইচের মৃত্যু
উপত্যকা !
মাচ্চুপিচ্চুর রহস্য
উপত্যকায় মেষপালকেরা
ফিরে আসুক
ব্যাস্ততাহীন অলস
আড়বাঁশি নিয়ে ।যৌনতায়
ফিরুক খাজুরাহোর পাথর
প্রতিমারা।
মায়া - ইনকার সুর্য সময়
নিয়ন্ত্রক হোক বয়ে চলা
মুহুর্তের ক্ষণ
প্রতিক্ষনের ।
অনায়াসে প্রেমে পড়ুক
অসংখ্য বিম্বিসার ,
প্রেমে উন্মাদ হতে
দেখিনি কাউকে কতদিন হলো
! বর্ষাবন জুড়ে নামুক না
ঝির ঝির বৃষ্টির দিন ।
সংকলিত হয়ে উঠুক
অব্যক্ত সমস্ত কবিতারা
, অভিশাপ মুক্ত হোক
রাশহীন কলমের স্পর্ধা ,
পড়ে বাঁচি , শুনে বাঁচি ,
দেখে বাঁচি ...
হরিপদ কেরানীর
তিনবাটির টিফিন বক্সে
ভরে অফিসে অফিসে
সংক্রমণ হোক, আটপৌরে
গুমরে থাকা ইচ্ছের
প্রবল জ্বর – জ্বর
প্রলাপের খেরোর খাতায়
আঁকা থাক একদিন ঠিক
রোদ্দুর হয়ে ওঠার লাল
নীল কালির নকশা ।
শুনলেও যে কথা পাপ হয়
সেকথা বাজুক তীব্র
স্বরে রাস্তার মোড়ে ,
ইচ্ছেরা শুধুই
ইচ্ছাধীন হোক ।
হোকা না কলরব ! মেলে ধরি
আমার তোমার নিমিত্তের
ডালপালা ... মধ্যবিত্তের
মধ্যবর্তী ছায়াপথ
পেরিয়ে নক্ষত্রছটার
আলোক সরণীতে । ... এসো ,
দিক ভুল করি , অনিশ্চিত
করে তুলি গন্তব্য ।