।। ফিঙ্গার ক্রশ ।।
কাঁচের গা দিয়ে গোলা
রঙের মত সিগনালের
লাল,সামনের গাড়ির
ইন্ডিকেটরের হলুদ
দপদপানি, এম্বুলেন্সের
ফ্ল্যাশ,
রেস্টুরেন্টের বোর্ড
নেমে যাচ্ছে। রঙ য্যানো
ফুরোচ্ছেই না। বৃষ্টি
এলেই কে য্যানো রঙ
গড়িয়ে দেয় ক্যানভাসে।
তার সেই তরলতা বাচ্চার
হামাগুড়ির মত। আঙুল
দিয়ে রঙ মিলিয়ে দিলেই
খেলা এগিয়ে যাচ্ছে।
রিনির মুখে ফোনের নীলচে
নীলচে আলো এসে লাগছে।
এই খেলাটা সে ভালোই
খেলে। লেভেল আটকে গেলে
মেজাজ চড়ে থাকে। কাঁধের
কাছটা খামচে ধরি। রিনির
ক্লিভেজে, কাঁধে,কামানো
হাতে মেঘ,বৃষ্টি আরো
কিসব পড়ে পিছলে যাচ্ছে।
উঁ বলে মুখ তোলে। রেয়ার
লুকিং গ্লাস থেকে
ড্রাইভারের চোখ পরম
বৃষ্টির দিকে সরে যায়।
সে ওয়াইপার থামিয়ে দেয়।
গান জোরে করে দেয়। রিনি
ফিসফিস করে
বলে,"এখানে?"।মাথা
নেড়ে হ্যাঁ বলি। রিনি
আরেকবার লুকিং গ্লাসের
দিকে তাকায়।
ড্রাইভারটার অল্প
ঝুলপি দেখা যাচ্ছে।
ম্যাট
ফিনিশ।কেমিক্যাল
গন্ধ। মিঠি দামী
পারফিউম। কে ওপরের ঠোঁট
কে নিচের ঠোঁট নিয়ে ভুল
বোঝাবুঝি।
।। তিনি ।।
টকটক করে কাঁচে আওয়াজ
হয়।একটা হাত, বাচ্চা
হাত, জানলার জল
পরিষ্কার করে দেয়। রিনি
চুমু ছাড়িয়ে ফাক বলে।
আবার কাঁচে জল জমছে।
বাচ্চাটা এবার কাঁচে
শুধু হাত রেখে দেয়।
মোছেও না। কাঁচটা
নামিয়ে দেখে একটা
বাচ্চা মাথায়
প্লাস্টিক দিয়ে-সেটা
বেশ শেফদের টুপির মত
করে পরা। তাতে জল পড়ে
ফরফর করে আওয়াজ হচ্ছে।
হাতে কয়েক গাছা গোলাপ।
ড্রাইভারটি নিজের কাঁচ
নামিয়ে রাস্তায় গুটখার
পিক ফেলে ছ্যাড়াৎ করে।
-কত?
-বাবু কুড়িটাকা
মানিব্যাগ থেকে
কুড়িটাকা বাড় করে
পাঁচটা ফুলের ভিজে গোছা
কেনে। সেলাম বাবু বলে
একটা প্রনাম ঢুকে পরের
গাড়ির বন্ধ জানলার দিকে
এগিয়ে যায় ছেলেটা। রিনি
আবার চুমু নতুন করে
খাওয়ার সুযোগ দেবে না।
অন্যদিন হলে রেগেই যেত
বোধহয়।আজ মনে হলো না
বেশি রেগেছে। এমনিতেই
রিনি ক্যাবে একদম চুমু
খেতে চায় না।
সিগানালের টাইম
বাড়ালো। আরো দু মিনিট।
একটা গুটখাওয়ালার থেকে
ড্রাইভারটা ৫টা গুটখা
কেনে। আমরা আলাদা দুটো
ব্র্যান্ডের সিগারেট
কিনি। রিনি এসি টা বন্ধ
করতে বলে কাঁচ
নামায়।সিগারেট ধরাই
দুজনেই। বাচ্চা ছেলেটা
অধিকাংশ জানলাগুলোর
সামনে থেকে ফিরে আসছে।
সিগনাল খুলবে এবার। সে
দৌড়ে রাস্তা পার
হচ্ছে।
গুটখাওয়ালাটাও।
।। আমেন।।
বৃষ্টির গুঁড়ো জানলা
দিয়ে চোখে,কোলে এসে
বসছে। রিনির কোলে রাখা
গোলাপের তোড়াটার গায়ে
এসে বৃষ্টি এসে টলটল
করছে। রিনির সরু সরু
আঙুলগুলো দিয়ে পাপড়ির
গায়ে জমা জলগুলো তুলে
ক্যারামের শট মারার মত
করে ফেলে দিচ্ছে।
য্যানো কঠিন কোন
প্রতিপক্ষের সাথে তার
ম্যাচ চলছে। রিনি সাদা
ঘুটি না কালো ঘুটি? লাল
কি পকেট করতে পারলো সে?
গানটা কমে এসেছে।
বৃষ্টিও। এই সিগনালটা
খেলাম না আমরা।
- ওর হাতে মাত্র আর চারটে
ছিল
-হ্যাঁ?
-কিনেই নিতে পারতে...১০০
টাকা হতো...
-হ্যাঁ?
রিনি ব্যাগ খুঁজে
সিগারেট এর প্যাকেট বার
করে। ওর কাছে থাকা
সত্ত্বেও কেন যে রাস্তা
থেকে লুজ কেনে,এটার কোন
ব্যাখ্যা নেই। রিনির
কিছু জিনিসের ব্যাখায়
হয় না।
।।তিনি রিটার্নস।।
- গাড়ি ঘুমাও...জলদি
ঘুমাও...
- অ্যাঁ?
- আব্বে আগলে সিগনাল সে
গাড়ি ঘুমাও
রিনি ফোনে আবার রঙ
মেলাতে শুরু করেছে।
সারাদিন মেলাচ্ছে। কি
এত মেলায়,কেন মেলায় কে
জানে। কিছু বলতে গেলেই
এড়িয়ে যায়। রেগে যায়।
চোখ মুখ পালটে যায়।
-উত্তেজনায় হিন্দি বলার
অভ্যেসটা তোর গেলো না
বল?
সিগনালে হতবাক গাড়িটা
বলেই চলেছে, I wanna meet him again...he is
waiting beside a calm river...। কান্ট্রি
মিউজিক।
- অ্যাই...শোন
-...
- আউড় ফুল হ্যায়?
-...
- এক তোড়া ভি নেহি
হ্যায়?
-...
- কিঁউ?
-...
- কুইক। মতলব জলদি।
ছেলেটা ছুট লাগালো একটা
গলির দিকে। যেহেতু একটু
আগে অব্ধি সে
ভিজেছে,ফলে তার জামাও
উড়ছে না। উড়লে বেশ
দেখতে লাগতো। গাড়ি থেকে
নেমে এসে দাঁড়াই।
- তোর একটা সিগারেট দে
তো
রিনি ফোন এর দিকে
তাকিয়েই প্যাকেটটা
ব্যাগ থেকে খুঁজে জানলা
দিয়ে এগিয়ে দেয়।
সিগারেট টা ধরিয়ে
চারপাশ টা দেখছি। একটু
আগেই কত রঙ গলে
যাচ্ছিলো।এখানেই।এখন
কেমন ভিজে মুটে গুলোর
মতো মুখচোখ জায়গাটার।
রিনি গাড়ির মধ্যে থেকে
ইয়েস করে ওঠে। কোন কঠিন
লেভেল ক্রশ করলে রিনি
এরকম করে। জানলা দিয়ে
মুখটা বাড় করে বল্লো,
- ছেলেটা সমানে বাংলায়
কথা বলে গেল,আর তুই
হিন্দিতে...কি বাজে রে...
ছেলেটা একটা মাত্র
ফুলের তোড়া নিয়ে ফিরে
এসেছে। তাও শুধু
গোলাপের না। বিভিন্ন
ফুল মেশানো।
হাঁফাচ্ছে। মানিব্যাগ
থেকে একশোর নোট বার করে
তাকে দেয়।
- খুচরো নেই তো
-রেখে দে
-কেন?
-এমনি...রেখে দে লজেন্স
খাস
-আমি লজেন্স খাই না
-তাহলে ভাত খাস
।। পুনরাবৃত্তি
মানুষের আদি প্রবণতা।।
রিনির পেটে মাথা দিয়ে
শুয়ে। বলা ভালো কান
দিয়ে। রিনি চুলে বিলি
কেটে দিচ্ছে। ঘাড় ধরে
টানি। রিনির
ঘাড়ে,চিবুকে,
গলায়,কপালে ম্লান বিকেল
লেগে। কদিন বমি করে করে
চোখের নিচে কালি পড়ে
গেছে।তবুও কেমন বউ দেখা
আলো ওঠা বিকেলের মত
লাগছে রিনিকে। রিনি বলে
ওঠে,
-ওঠ...এত তাড়াতাড়ি কিছুই
শুনতে পাবি না
-পাচ্ছি তো
- কচু পাচ্ছো...ওঠ
রিনির ঘাড় ধরে টানি।
রিনি ফিসফিস করে বলে,
এখানে?
- এখানে কোন ছোট জুলফি
নেই...কেউ ফুল বেচতেও
আসবে না...
- ওইজন্যেই তো..